রাজধানীমুখীদের নিরুৎসাহিত করতে হবে by মোহাম্মদ অংকন
রাজধানী
ঢাকায় সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অনেক। উচ্চশিক্ষিত হওয়ার
অনবদ্য সুযোগ রয়েছে। লেখাপড়া শেষ করে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ রয়েছে। অথচ
বিভিন্ন শহরে তেমন কোনো বড় ধরনের শিক্ষাপ্র্রতিষ্ঠান নেই। কিছু বিভাগীয়
শহরে বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও তার প্রতি মানুষের আগ্রহ কম।
নেই কোনো বড় ধরনের
চাকরির প্রতিষ্ঠান বা কলকারখানা, গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি ইত্যাদি। রাজধানীতে
কর্মসহ শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা অনেক। এত সব সুবিধার জন্য শিক্ষার্থীসহ চাকরি
প্রত্যাশীরা প্রতিনিয়ত রাজধানীমুখী হচ্ছে। তাদের রাজধানীতে আগমনকে এখনই
নিরুৎসাহিত করতে হবে। আমাদের দেশে প্রতি বছর বর্ষাকালে ঢল নামে, পাহাড় ধসে
অগণিত মানুষের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চল তীব্র বন্যায় প্লাবিত
এবং এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। খাদ্যের প্রকট সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময়
দুর্যোগ মহামারী আকার ধারণ করে। বন্যা ও নদীভাঙনেও মানুষ রাজধানীতে চলে
আসে। এভাবে রাজধানীমুখী হওয়ার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নগর মানেই যেন
অঢেল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা কিংবা বিলাসবহুল জীবন। কিন্তু এটাও সত্য, আমরা
বেপরোয়া নগরায়নের পাশাপাশি নগরে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারছি
না। পরিকল্পিত ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে অনেক প্রকল্পই কাজে আসছে না। ঢাকায়
এত মানুষের বসবাস নিশ্চিত করায় দিন দিন ভূমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। খাল-বিলে
পর্যন্ত বিল্ডিং গড়ে উঠছে। বস্তির সংখ্যা বাড়ছে। জনসংখ্যার তীব্র চাপে
রাজধানী অপরিকল্পিত ও হতশ্রী শহর হয়ে যাচ্ছে। পল্লী জনপদের মানুষকে
রাজধানীর মতো সুযোগ-সুবিধা দিতে জেলা ও উপজেলা শহরগুলো যথাযথভাবে গড়ে তুলতে
হবে। উচ্চশিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং কর্মসংস্থানের জন্য
শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। যাতায়াত ব্যবস্থা করতে হবে উন্নত। কৃষির
ওপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়ে তুলতে হবে। যখন গ্রামের মানুষজন শহরের মতো সুবিধা
পাবে, উন্নয়নের সুফল ভোগ করবে, তখন কেউ আর সহজে রাজধানীমুখী হবে না।
চিকিৎসাসেবা নিতেও রাজধানীতে আসবে না। বিভাগীয় শহরগুলোর আধুনিকায়নই পারে
ঢাকার ওপর চাপ কমাতে। এ জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। আমাদের কৃষি
জমির পরিমাণ ক্রমাগত কমে যাচ্ছে।
তাহলে গ্রামের মানুষের জন্য
কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা কোথায় হবে? সবাই হয়তো কৃষির সাথে জড়িত নন। কিন্তু
কৃষির ওপর নির্ভরশীল অনেক ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আছে; সেগুলোর ব্যবস্থা
করা যেতে পারে। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশে অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা
তৈরি হয়েছেন। সবার কর্মসংস্থানের জন্য আরো বেশি উদ্যোক্তা তৈরি করা
প্রয়োজন। তারা স্থানীয় পর্যায়ে সবার জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে
পারবেন। অন্য দিকে, নগরায়নের ঝুঁঁকিগুলো কমানো, তথা পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে
নজর দেয়া যেতে পারে। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে প্রশাসনিক
কাঠামো বিকেন্দ্রীকরণ করে রাজধানীমুখী মানুষের চাপ কমানো যেতে পারে। মোট
কথা, শহরের নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রামেও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা
বাড়াতে হবে। তখন রাজধানী ঢাকায় মানুষের চাপ কমবে এবং ধীরে ধীরে প্রতিটি
জেলাশহর রাজধানীর মতোই হবে। জনসংখ্যার সুষ্ঠু বণ্টন বজায় থাকবে। দেশের
রাজধানী পরিকল্পিতভাবে চললে, দেশও পরিকল্পিতভাবে চলে। সর্বোপরি রাজধানীর
উন্নয়ন হলে বাংলাদেশ একটি সুখী, সমৃদ্ধ দেশ হবে।
লেখক : সম্পাদক, কাঁচাগোল্লা ম্যাগাজিন
লেখক : সম্পাদক, কাঁচাগোল্লা ম্যাগাজিন
No comments