মাটির টানেও ফিরতে ভয় পাচ্ছে রোহিঙ্গা যুবকেরা
রোহিঙ্গা
যুবকেরা পিতৃপুরুষের ভিটেমাটির মায়া কাটাতে পারেনি। মাটির টানে তারা ফিরতে
চায় নিজ বসতভিটায়। তবে কোনো শরণার্থী শিবিরে বন্দী থাকতে নয়। প্রত্যাবাসন
শুরু হলে মিয়ানমারে ফিরে যাবেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে মনজুর আহমদ
জানান, মিয়ানমারে ফিরলে নানান অজুহাতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রুজু
হবে। আমাদের গ্রেফতার করে আজীবন কারারুদ্ধ করে রাখা হবে।
নয়তো বা গুপ্ত
হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হবে। উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত কয়েকজন
যুবক শ্রেণীর রোহিঙ্গার সাথে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তারা এ
কথা বলেন। তারা আরো বলেন, তাদের পরিবার-পরিজন আত্মীয়-স্বজন স্বদেশে ফিরে
যেতে ইচ্ছুক। তবে স্বদেশে ফেরার ক্ষেত্রে যাতে বাধা না আসে, সেখানে ফিরে
তারা স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারবে তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। ক্যাম্পে
আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা যুবকেরা অনেকেই বেকার দিন কাটাচ্ছে। এদের মধ্যে
মোহাম্মদ আলম (২৫), মন্জুর আহমদ (২২), জামাল উদ্দিন (৩০), আবদুল্লাহ (২০) ও
রাকিব উল্লাহ (২৭) ঘাসের ওপর বসে তাস খেলছিল। সাংবাদিক দেখেই তারা তাসগুলো
লুকিয়ে ফেলে। কিছু জানার আগেই তারা বলতে শুরু করল, বোঝাতে চাইল এখানে কোনো
কাজকাম নেই। তাই চার-পাঁচ বন্ধু বসে গল্প-গুজব করছিলাম। তাদের হাতে দেখা
গেল দামি মোবাইল সেট। জানতে চাইলাম প্রত্যাবাসন শুরু হলে মিয়ানমারে ফিরে
যাবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে মনজুর আহমদ জানান, তাদের বাড়ি রাশিডং
কাওয়ারবিল গ্রামে। তাদের সহায়সম্পদ, জমিজমা, গরু-মহিষ সব আছে তবে নিজের
ইচ্ছামতো চলাফেরা বা কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। অদূরে দেখা গেল বেশ কয়েকটি
মুদির দোকান, দোকানের মালিক সবাই মিয়ানমারের নাগরিক সালামাতুল্লাহ (৫৫)
নামে এক দোকানি জানান, তারা মিয়ানমারে নিজ গ্রামে ছোটখাটো ব্যবসায় বাণিজ্য
করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।
তার কাছে জানতে চাওয়া হয় প্রত্যাবাসন
শুরু হলে মিয়ানমারে চলে যাবেন কি না? জবাবে জানান নিজ দেশে ফিরতে কে না
চায়? তবে কথা হচ্ছে ২০১২ সালে জাতিগত দাঙ্গায় রোহিঙ্গারা এ দেশে পালিয়ে
রেজিস্ট্রার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে আশ্রয় নেয়। তাদেরকে প্রশাসন
তাৎক্ষণিকভাবে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে ব্যর্থ হয়। পরে জেলা প্রশাসক ওই সব
রোহিঙ্গাকে কোনো ত্রাণসামগ্রী না দেয়ার জন্য এনজিওদের নির্দেশ প্রদান করেন।
তিনি বলেন, এই অবস্থায় সরকার যদি তাদের জানমালের নিরাপত্তাসহ নাগরিক
অধিকার আদায় করে দিতে পারে তাহলে যুবক ছেলেরা না গেলেও তারা সপরিবারে
স্বদেশে ফিরে যাবেন।বুচিডং মুরুনে তমবাজার এলাকার রোহিঙ্গা মৌলভী জাফর
উল্লাহ (৩৮) বলেন, রাখাইনে এখনো চার দিকে তাক করে আছে বন্দুকের নল। চলছে
নির্বিচারে গুলি। এখনো পোড়ানো হচ্ছে ঘরবাড়ি। এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে
তারা কিভাবে স্বদেশ ফিরবেন প্রশ্ন করেন তিনি।
No comments