সংকটে সয়াবিন চাষ
জলবায়ু
পরিবর্তন এখন বাংলাদেশের এক নির্মম বাস্তবতা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে
ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বাড়ছে ভারি ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের
পরিমাণ। গলছে হিমালয়ের বরফ। বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। এসব কারণে সবচেয়ে
মারাত্মক আঘাত আসছে বাংলাদেশের কৃষি খাতের ওপর।
যদিও বর্তমানে মোট দেশজ
উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষি খাতের অবদান ২০ শতাংশ, তা সত্ত্বেও দেশের প্রায় ৬০
ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি
পেয়ে এবং বৃষ্টিপাতের ধারা পরিবর্তন হয়ে দেশে ঘনঘন জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ও
বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেছে। দেখা
দিচ্ছে অসময়ে বৃষ্টিপাত, পাশাপাশি তীব্র খরা, যা দেশে কৃষি উৎপাদনে
মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে রবিশস্য
(খেসারি, সরিষা, তিসি) উৎপাদন, সবচেয়ে সংকটে পড়তে যাচ্ছে সয়াবিন চাষ। ‘সয়াল্যান্ড’ খ্যাত একক রবি ফসলের জেলা লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন চাষ বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর প্রধান কারণ নিন্মরূপ :
বিগত ২০১৬-২০১৭ সালের এপ্রিলের শেষদিকে টানা ৬ দিনের বৃষ্টিতে সয়াবিনের মাঠ ৪ ফুট পানিতে ডুবে গিয়েছিল। ফলে উপকূলীয় এলাকায় ৫০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির সয়াবিন হারিয়ে কৃষক হয়ে পড়ে নিঃস্ব।দেনার দায়ে অনেক কৃষক পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হয়। সৃষ্টি হয় পরবর্তী বছরে সয়াবিন আবাদের বীজ সংকট। এ সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য কৃষক খরিপ মৌসুমে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) বাড়ির আঙিনা, উঁচু স্থান, আমন ধানের বীজতলায় খরিপ সয়াবিন চাষের উদ্যোগ নেয়। এ সময় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে ২-৩ বার সয়াবিনের বীজ বপন করেও কৃষক গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের গড় ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কারণে খরিপ সয়াবিনের ফলন থেকে বঞ্চিত হয়। অন্যদিকে এই অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে আমন ক্ষেতে হাঁটু পানি জমে যাওয়ায় ধান কাটা হয়ে পড়ে বিলম্বিত ও ঝামেলাপূর্ণ। এদিকে হাতে নেই সয়া বীজ। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে, উপকূলীয় এলাকায় সয়াবিনের আবাদ এলাকা চার ভাগ থেকে একভাগে নেমে আসতে পারে। এ অবস্থায় সয়া চাষীরা হতাশ না হয়ে সয়াবিনের পরিবর্তে ফেলন ও মুগ ডাল আবাদের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতে পারেন। নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার প্রায় সব উপজেলায় গত রবি মৌসুমে অন্তত ৭১৭৭৮ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার শস্য পরিক্রমায় রবিশস্য সয়াবিন একক ও অনন্যসাধারণ ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। সয়াবিন উঠানোর পর ওই জমিতে আউশ ধানের ফলন খুব ভালো হয়। দেশে মুরগি ও মৎস্য খামার বৃদ্ধি পাওয়ায় মুরগি ও মাছের খাবার হিসেবে সয়াবিনের চাহিদা ব্যাপকহারে বেড়েছে। দেশের অন্তত ৩৩ জেলার ৭২টি উপজেলায় ৩-৪ লাখ হেক্টর জমিতে বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদন করা সম্ভব। এর ফলে আমদানিনির্ভরতা কমানো, পোলট্রি ও ফিশ ফিড তৈরি, সয়ামিট, সয়াবিস্কুটসহ নানা পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার তৈরি করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়সহ দেশের পুষ্টি সমস্যার সহজ সমাধান, জমির উর্বরতা বাড়ানো, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা সম্ভব। এজন্য সয়াবিনের আবাদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা নিয়ে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসা উচিত।
ড. মুহাম্মদ মহী উদ্দীন চৌধুরী : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বিএআরআই, নোয়াখালী
বিগত ২০১৬-২০১৭ সালের এপ্রিলের শেষদিকে টানা ৬ দিনের বৃষ্টিতে সয়াবিনের মাঠ ৪ ফুট পানিতে ডুবে গিয়েছিল। ফলে উপকূলীয় এলাকায় ৫০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির সয়াবিন হারিয়ে কৃষক হয়ে পড়ে নিঃস্ব।দেনার দায়ে অনেক কৃষক পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হয়। সৃষ্টি হয় পরবর্তী বছরে সয়াবিন আবাদের বীজ সংকট। এ সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য কৃষক খরিপ মৌসুমে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) বাড়ির আঙিনা, উঁচু স্থান, আমন ধানের বীজতলায় খরিপ সয়াবিন চাষের উদ্যোগ নেয়। এ সময় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে ২-৩ বার সয়াবিনের বীজ বপন করেও কৃষক গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের গড় ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কারণে খরিপ সয়াবিনের ফলন থেকে বঞ্চিত হয়। অন্যদিকে এই অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে আমন ক্ষেতে হাঁটু পানি জমে যাওয়ায় ধান কাটা হয়ে পড়ে বিলম্বিত ও ঝামেলাপূর্ণ। এদিকে হাতে নেই সয়া বীজ। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে, উপকূলীয় এলাকায় সয়াবিনের আবাদ এলাকা চার ভাগ থেকে একভাগে নেমে আসতে পারে। এ অবস্থায় সয়া চাষীরা হতাশ না হয়ে সয়াবিনের পরিবর্তে ফেলন ও মুগ ডাল আবাদের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতে পারেন। নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার প্রায় সব উপজেলায় গত রবি মৌসুমে অন্তত ৭১৭৭৮ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার শস্য পরিক্রমায় রবিশস্য সয়াবিন একক ও অনন্যসাধারণ ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। সয়াবিন উঠানোর পর ওই জমিতে আউশ ধানের ফলন খুব ভালো হয়। দেশে মুরগি ও মৎস্য খামার বৃদ্ধি পাওয়ায় মুরগি ও মাছের খাবার হিসেবে সয়াবিনের চাহিদা ব্যাপকহারে বেড়েছে। দেশের অন্তত ৩৩ জেলার ৭২টি উপজেলায় ৩-৪ লাখ হেক্টর জমিতে বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদন করা সম্ভব। এর ফলে আমদানিনির্ভরতা কমানো, পোলট্রি ও ফিশ ফিড তৈরি, সয়ামিট, সয়াবিস্কুটসহ নানা পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার তৈরি করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়সহ দেশের পুষ্টি সমস্যার সহজ সমাধান, জমির উর্বরতা বাড়ানো, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা সম্ভব। এজন্য সয়াবিনের আবাদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা নিয়ে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসা উচিত।
ড. মুহাম্মদ মহী উদ্দীন চৌধুরী : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বিএআরআই, নোয়াখালী
No comments