বিএনপির ‘রূপকল্প ২০৩০’ কোন পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন হবে তা স্পষ্ট নয় : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০৩০’ কিভাবে কোন পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হবে, কিভাবে অর্থায়ন হবে, তা স্পষ্ট নয়। তিনি বলেন, আর এই ‘রূপকল্প ২০৩০’ এর অধিকাংশই বর্তমান সরকার পূরণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে একটি রূপকল্প ২০৩০ ঘোষণা করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। রাষ্ট্র পরিচালনায় গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে কি কি বিষয় অগ্রাধিকার দিতে চান, তা উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন উপস্থাপিত রূপকল্পটিতে তারা ক্ষমতায় গেলে কি কি করা হবে তার দীর্ঘ ফর্দ দেয়া হলেও কিভাবে কোন পদ্ধতিতে এটা বাস্তবায়ন করা হবে, কিভাবে অর্থায়ন হবে, তা স্পষ্ট নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা অনেকটা নির্বাচনী ইশতেহারের মতোই হয়ে গেছে। এই ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে হলে তাদের আগে ক্ষমতায় যেতে হবে। শুধু তাই নয়, পার্লামেন্টারি পদ্ধতি ও গণভোট পদ্ধতির পরিবর্তনসহ আরও যেসব মৌল পরিবর্তন তারা আনতে চাচ্ছেন, তার জন্য তো সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট লাগবে। শেখ হাসিনা বলেন, তাদের শাসনামলে অনিয়ম-দুর্নীতি, জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতার যে দৃষ্টান্ত রেখেছেন, এরপর ক্ষমতার বাইরে থেকে জ্বালাও-পোড়াওসহ অনিয়মতান্ত্রিক তৎপরতা দিয়ে যে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করেছেন তা কাটিয়ে উঠে এতটা জনআস্থা অর্জন তাদের জন্য যে কঠিন চ্যালেঞ্জ তা বলাই বাহুল্য। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে অবৈধভাবে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে নিজেই নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। এরপর বিএনপি নামে দল সৃষ্টি করে প্রতি রাতে কারফিউ দেয়। মার্শাল ’ল দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে। খালেদা জিয়ার আমলে বাংলাদেশ পাঁচবার বিশ্বের দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। সাধারণ মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এই মৌলিক অধিকার কোনটাই পূর্ণ করতে পারেনি। তবে জিয়ার পরিবার বাংলাদেশের জনগণের সম্পদ লুট করে সবচেয়ে ধনী পরিবার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলা, সংসদ সদস্য হত্যাসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কাজে বিএনপি পারদর্শী তারা আবার জনগণকে কি আশার বাণী শোনাবে? শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত মেয়াদে ‘রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করা হয়। এ ‘রূপ ২০২১’ কে সামনে রেখে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ‘বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ‘২০১০-২১’ প্রণয়ন করা হয়। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০১৬-২০২০ প্রণয়ন করেছে, যা ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবরে এনইসি কর্তৃক অনুমোদন লাভ করেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের বর্তমান উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রের পর্যায়ে উন্নীত করতে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায় অর্জিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থারও নজর কেড়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, জাপান এক্সটারনাল ট্রেড ওরগানাইজেশন (জেটরো)-এর মতে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায় রয়েছে। এছাড়াও, প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারসের মতে, বাংলাদেশ ২০৫০ সালের মধ্যেই পরিণত হবে পৃথিবীর ২৩তম বৃহত্তর অর্থনীতিতে এবং পেছনে ফেলবে মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াকে, যা আমাদেরকে অত্যন্ত উজ্জ্বীবিত করে। তিনি বলেন, রূপকল্প-২০২১ এর বাস্তব রূপান্তরের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে আগামী দিনের বাংলাদেশকে বিশ্বে অগ্রগামী ও উন্নত জনপদে পরিণত করতে সরকার জাতিকে এই মেয়াদের মধ্যেই রূপকল্প-২০৪১ উপহার দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১৪ তে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথমসারির উন্নত দেশগুলোর সমপর্যায়ে উন্নীত করার রূপরেখা অঙ্কিত হয়েছে। সূত্র : বাসস
No comments