ভ্যাটের একক হারে দাম বাড়বে গ্যাস-বিদ্যুতের
নূরুল আমিন। রামপুরা বনশ্রীর বাসিন্দা। গত মাসে তিনি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছেন ৯৭৬ টাকার। এর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের ডিমান্ড চার্জ পরিশোধ করেছেন ৬০ টাকা, সার্ভিস চার্জ ২০ টাকা। মোট বিদ্যুতের জন্য ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৫৬ টাকা। এই বিলের ওপর বিদ্যমান ৫ শতাংশ হিসাবে ভ্যাট দিয়েছেন ৫২ টাকা। ফলে গত মাসে বিদ্যুতের জন্য তাকে সর্বমোট বিল পরিশোধ করতে হয়েছে ১১০৯ টাকা। কিন্তু নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হলে তাকে ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। ১ হাজার ৫৬ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করলে তাকে পরিশোধ করতে হবে (১০৫৬+১৫৮.৪০) ১২১৪ টাকা। অর্থাৎ গত মাসের সমপরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে আগামী মাসে নূরুল আমিনকে বাড়তি পরিশোধ করতে হবে ১০৫ টাকা। এভাবে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হলে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসনির্ভর শিল্পকারখানায় পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। আর পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই গ্রাহকপর্যায়ে দাম বেড়ে যাবে। অর্থাৎ নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সবক্ষেত্রেই প্রভাব পড়বে। এখন বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলের সাথে রেয়াতি হারে ৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করতে হচ্ছে। কিন্তু আগামী মাস থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হলে একক হার হিসেবে সবক্ষেত্রেই ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। এতে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে। আর বিদ্যুতের দাম বেড়ে গেলে চাপে পড়বে ভোক্তারা। তবে এনবিআরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন ভ্যাট আইনে একক হার হিসেবে থাকলেও বিদ্যুৎ ও গ্যাসে উপকরণ কর রেয়াদ দেয়া হতে পারে। ফলে সেবা খাত হিসেবে কর রেয়াদ দেয়া হলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বাড়বে না। এ বিষয়ে বিবেচনা করা হতে পারে বলে ওই কর্মকর্তা গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন। এ দিকে শিল্প উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হলে তাদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দেবে।
নতুন মূল্যসংযোজন কর (ভ্যাট) আইন প্রযুক্তি ও রেয়াতনির্ভর। এ আইনে হিসাব সংরণসহ ভ্যাটের যাবতীয় কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমেই পরিচালিত হবে। অথচ বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এখনও অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনা করে না। একই সঙ্গে নতুন এ আইনে অনেক েেত্র উপকরণে কর রেয়াত নেয়া সম্ভব হবে না। ফলে আইনটি কার্যকর হলে দ্রব্যমূল্য বাড়বে। সামগ্রিকভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ভোক্তাপর্যায়ে। উদ্যোক্তারা মনে করেন, ভ্যাট আইনটি কার্যকর হলে বিদ্যুৎ ও শিা উপকরণের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়লে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয়ও বাড়বে। আইনটি কার্যকর হলে শুধু জনগণই চাপে পড়বে তা নয়, তিগ্রস্ত হবে দেশীয় শিল্পও। সরকার আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর। বর্তমানে ১৯৯১ সালের আইনে ‘একাধিক হ্রাসকৃত হারে’ ভ্যাট আদায় করা হয়। নতুন আইনে সবেেত্র একই হারে (১৫ শতাংশ) ভ্যাট আদায় করা হবে। ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা বলেন, নতুন আইন কার্যকর হলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। চাপ বাড়বে ভোক্তার ওপর। নতুন আইনে উপকরণে কর রেয়াতের সুযোগ নেই। এতে করে পণ্যমূল্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কষ্ট বাড়বে সাধারণ মানুষের। নতুন আইন কার্যকর হলে বাজারে তিনভাবে প্রভাব পড়তে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। বিদ্যমান আইনে স্থানীয় অনেক পণ্যে বিশেষ ছাড় দিয়ে নির্ধারিত ট্যারিফের ভিত্তিতে ভ্যাট আদায় করা হয়। এ ব্যবস্থায় কর আদায় করায় পণ্যের উৎপাদন খরচ কম হয়। এমন পণ্যের মধ্যে গুঁড়ো দুধ, বিভিন্ন মসলা, বিস্কুট, এলপি গ্যাস, কাগজ, ইট, বৈদ্যুতিক খুঁটি, রড, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাল্বসহ আরো কিছু পণ্য রয়েছে। নতুন আইনে এগুলোর উপকরণে কর রেয়াত নেয়া সম্ভব নয়। ফলে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে।
No comments