কানাডার জঙ্গি সালমানের খোঁজে গোয়েন্দারা
কানাডার জঙ্গি সালমান হোসেন বাংলাদেশে অবস্থান করছে দাবি করে কানাডার একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এরপর তার বিষয়ে খোঁজ শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। জঙ্গি ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে পুলিশের বিশেষায়িত সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। কানাডার ন্যাশনাল পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়ে, ইহুদি গণহত্যায় উসকানি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে সালমান হোসেনের বিরুদ্ধে। ওন্টারিও রাজ্য পুলিশ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। ইন্টারপোলের রেড নোটিশও রয়েছে সালমানের নামে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, রোববার এক ফটোগ্রাফার সালমানকে ঢাকায় দেখেছেন। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) এনসিবি (ইন্টারপোল) মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, সালমান কানাডায় মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি। সে বাংলাদেশে অবস্থান করছে কিনা তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তারপরও তার বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। পুলিশের জঙ্গি দমন বিভাগ সিটিটিসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সালমান বাংলাদেশে অবস্থান করছে কানাডার গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশের পর তারা সালমানের বিষয়ে জানতে পেরেছেন। গুলশানের একটি হোটেলে এবং উত্তরায় তাকে দেখা গেছে এমন ছবি প্রকাশ করেছে কানাডার গণমাধ্যম। প্রকাশিত সংবাদ ও ছবি সত্য কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে সিটিটিসি ইউনিটকে কানাডা বা বাংলাদেশের কোনো সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। এ বিষয়ে সিটিটিসির উপ-কমিশনার (ডিসি) মহিবুল ইসলাম খান মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সালমানের বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি। তার বিষয়ে আমরা খোঁজ করছি। তবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে আমাদের কেউ কিছু জানায়নি। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, সালমান সত্যিই বাংলাদেশে অবস্থান করছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কানাডার সরকার কিংবা সে দেশের কোনো সংস্থা এ বিষয়ে কোনো তথ্য আদান-প্রদান করেনি। তবে সংবাদ প্রকাশের পর সালমানের পুরো প্রোফাইল সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে।
এ দেশের কোনো জঙ্গির সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, কানাডা বলছে, সালমান ৭ বছর ধরে নিখোঁজ। সে কোথায় আছে তারা জানে না। একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সালমান বাংলাদেশে অবস্থান করছে। কানাডার গণমাধ্যম সালমানের বিষয়ে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। এ দেশে আইএসের সমর্থক জঙ্গিগোষ্ঠী জেএমবি বা নব্য জেএমবির সঙ্গে তার কোনো কানেকশন রয়েছে কিনা তাও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এখনই সালমানের অবস্থান এবং বাংলাদেশি জঙ্গিদের সঙ্গে কানেকশন রয়েছে কিনা এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। সিটিটিসি সূত্র জানায়, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে সারা দেশে একের পর এক টার্গেট কিলিংয়ের মিশন বাস্তবায়ন করেছিল নব্য জেএমবি। পরে তারা ২০১৬ সালের জুলাইয়ে গুলশান ও শোলাকিয়ায় ভয়াবহ হামলা করে। ওই সময় নব্য জেএমবির সমন্বয়ক ছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী। পরে পুলিশের এক অভিযানে তামিম মারা যায়। তামিমের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল কিনা এ বিষয়েও খোঁজ করা হচ্ছে। কানাডার ন্যাশনাল পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে একটি ভিডিওতে সালমানকে দেখা গেছে। সেখানে বাংলা ভাষাও শোনা যায়। জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকে উদ্দেশ করে কথা বলে সালমান। ২০১০ সালের জুলাইয়ে সালমান হোসেনের বিরুদ্ধে গণহত্যায় উসকানি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাকে ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
No comments