পাথরঘাটায় বেড়েই চলছে বাল্যবিয়ে
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় বেড়েই চলছে বাল্যবিবাহ। বছরে এই উপজেলার বিভিন্ন স্কুল,মাদ্রাসার ৮ম থেকে ১০ম শ্রেণীতে পড়ুয়া অর্ধশত ছাত্রীর বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটে। প্রশাসন, বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ও সে¦চ্ছাসেবী সংগঠন বাল্য বিবাহ অনেকটা বন্ধ করলেও শেষ পযন্ত স্থানান্তরিত হয়ে বিবাহ সম্পন্ন করে। পাথরঘাটা পৌর শহর কিংবা পাথরঘাটা উপজেলার গ্রামে প্রতিনিয়ত কিশোরী মেয়েদের বাল্য বিবাহ হচ্ছে। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ওই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে। যে বয়সে ছেলে-মেয়েদের বই-খাতা হাতে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা এবং সাথীদের নিয়ে বাড়ির উঠোন কিংবা বাগানে খেলাধুলা করবে, ঠিক সেই বয়সেই লেখাপড়া কিংবা খেলাধুলার পরিবর্তে স্বামীর বাড়িতে সংসার বুঝে নেয়ার দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের। ফলে বছর পেরুতে না পেরুতেই বিচ্ছেদের ঘটনাও ঘটে। সমাজিক নিরাপত্তার অভাব, যৌতুক প্রথা, দারিদ্রতা ও কাজীদের অসহযোগিতার কারণে পাথরঘাটায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।
যে কারণে বেড়ে চলছে বাল্যবিবাহ। তবে সরকারি ঘোষনা, বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনের সভাসেমিনারে সচেতনতা বাড়ানোর কারণে নিকাহ রেজিষ্ট্রার অনেকটাই সচেতন হয়েছে। পাথরঘাটা উপজেলার বাদুরতলা, চারলাঠিমারা, হরিনঘাটা,রুহিতা, পদ্মা, হাজিরখাল, কালমেঘা, কাকচিড়াসহ গ্রাম অঞ্চলে ১৪ বা ১৫ বছর বয়সের বা তার চেয়ে একটু বেশী বয়সের শিশুদের বিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই অনেকেই আবার মা হয়েছে। বিচ্ছেদের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। বেসরকারি সংস্থা সুশীলন হিসাব মতে দেখা যায়, এ উপজেলায় ২০১২ সালে বাল্যবিবাহ হয়েছিল ৯০টি, পরবর্তী বছর ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৬৮টি। পর্যায়ক্রমে গত বছর পর্যন্ত বাল্যবিবাহ কমতির দিকে ছিল। ২০১৪ সালে ৫৯টি, ২০১৫ সালে ৪৬ ও ২০১৬ সালে ৩৬টি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটে। আবার ২০১৭ সালে এসে গত ৫ মাসে অন্তত অর্ধশত বাল্য বিবাহ ঘটে। পাথরঘাটা উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আস্থার সভাপতি সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং আমাদের সার্বিক প্রচেষ্টায় তাৎক্ষনিক বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সক্ষম হলেও অনেকে স্থান্তরিত হয়ে বিবাহ সম্পন্ন করে। তিনি আরও বলেন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ১৯ ধারাটি অপব্যাখ্যা করে প্রান্তিক জনপদে বাল্যবিবাহ হঠাৎ বেড়ে যায়। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলনের পাথরঘাটা উপজেলা সমন্বয়ক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, চলতি বছরের ৫ মাসে যেভাবে বাল্যবিবাহ বেড়েছে, তাতে ২০১২ সালের হিসাবকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
পাথরঘাটা পৌরসভার কাউন্সিলর ও নারীনেত্রী মুনিরা ইয়াসমিন বলেন, মূলত বিশেষ বিধান রেখে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাস হওয়ার পর জনমনে ধারণা হয়েছে, ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ে দিলেও আইনগত তেমন সমস্যা হবে না। এ কারণে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকারি কর্মকর্তা বা বেসরকারি সংস্থার আগ্রহ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এটি প্রতিরোধে বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধিও তেমন ভূমিকা পালন করছেন না। পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মো. জাবির হোসেন বলেন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ রাখা হলেও বিশেষ ক্ষেত্রে মেয়েদের ‘সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশে’ এবং মা-বাবার সম্মতিতে যেকোনো ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ মেয়ের বিয়ে হতে পারবে। আর ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ নারীর বিবাহ মানেই তা বাল্যবিবাহ। বিশেষ ধারার সুযোগ নিয়ে অভিভাবকেরা প্রায়ই তাঁদের ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ মেয়েদের বাল্যবিবাহ দিয়ে থাকেন। তাই এ বিশেষ ধারার কারণে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বাড়ছে। পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি শাহ মো. কামরুল হুদা বলেন, সম্প্রতি তিন দিনে নয়টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছি। তারপরও বাল্যবিবাহ হচ্ছে। অভিভাবকেরা সচেতন না হলে এভাবে প্রতিরোধে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
No comments