পাসপোর্ট পাচ্ছেন না শতাধিক সাবেক মন্ত্রী-এমপি by দীন ইসলাম
শতাধিক
সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট
(এমআরপি) পাচ্ছেন না। এ তালিকায় রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও
সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল, শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা
মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম, সাবেক স্বাস্থ্য
উপ-মন্ত্রী মো. সিরাজুল হক, বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন
চৌধুরী, আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি, বিএনপির ভাইস
চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ও ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক
সালাহউদ্দিন আহমেদসহ অনেকে। এদের মধ্যে অনেকেই পাসপোর্টের আশায় দুই বছরের
বেশি সময় ধরে ঘুরছেন। সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী পাসপোর্ট
চেয়ে সম্প্রতি হাইকোর্টে একটি রীট মামলা দায়ের করেন। পাসপোর্ট অধিদপ্তর
আপত্তি না জানালেও তিনি পাসপোর্ট পাননি। পাসপোর্ট না পাওয়া রাজনীতিবিদরা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মাধ্যমে বার্তা
দিচ্ছেন চিকিৎসার জন্য তাদের বিদেশ যাওয়া প্রয়োজন। তাই এখন পাসপোর্টের
প্রয়োজন জরুরি। পাসপোর্ট না পেলে গুরুতর শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দিতে
পারে। এরপরও অনেক নাগরিককে পাসপোর্ট দেয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দায়ের
করা বিভিন্ন মামলার কারণে বেশির ভাগ সাবেক মন্ত্রী ও এমপি পাসপোর্ট পাচ্ছেন
না। পাসপোর্ট চেয়ে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে কেউ আবেদন করলে তাদের
আবেদনপত্র পেন্ডিং দেখানো হয়। সশরীরে যোগাযোগ করলে বলা হয়, সরকারি
সিদ্ধান্ত না হলে আপনাকে পাসপোর্ট দেয়া যাবে না। চাপাচাপি করলে তখন
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। পাসপোর্ট অধিদপ্তর
সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিক পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে
পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাছে মতামতসহ প্রতিবেদন চাওয়া হয়। তখন পুলিশের
স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে রিপোর্ট আকারে বলা হয় বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ঠিক
আছে কিনা। এরপর কারও বিরুদ্ধে মামলা থাকলে তারও বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়।
পুলিশের কাছ থেকে মামলা সংক্রান্ত নেতিবাচক প্রতিবেদন পেলে পাসপোর্ট দেয়ার
সিদ্ধান্ত দেয় না বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। বিষয়টি তখন সিদ্ধান্তের
জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয় তারা। ফাইল প্রক্রিয়ার পর তখন এ
বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়ে
থাকেন। কারও বিরুদ্ধে মামলা থাকলে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের চিঠিতে
বলা হয়, পাসপোর্ট আবেদনকারীর বিরুদ্ধে আদালতে কোনো মামলা বিচারাধীন থাকলে
অর্থাৎ অনিষ্পন্ন থাকলে ১৯৭৩ সালের ৬(১)(ই) ধারা অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ
পাসপোর্ট ইস্যু থেকে বিরত থাকতে পারে। চিঠির শেষে পাসপোর্ট আবেদনকারী
ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন থাকায়
পাসপোর্ট ইস্যুর ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।
যাদের পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে না তাদের প্রায় সবার আবেদনে একই কাজ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের অক্টোবরে
পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপ-মন্ত্রী ও
বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সিরাজুল হক। কিন্তু এখনও পাসপোর্ট বুঝে
পাননি তিনি। এ বিষয়ে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর
থেকে একটি চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো হয়। ওই
চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার
কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী ও বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী
কমিটির সদস্য মো. সিরাজুল হক মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য
আগারগাঁওয়ের বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে আবেদন করেন। তাকে পাসপোর্ট
দেয়ার বিষয়ে পুলিশের মতামতসহ প্রতিবেদন চাওয়া হয়। তদন্ত করে পুলিশের
স্পেশাল ব্রাঞ্চ জানায় মো. সিরাজুল হকের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা সঠিক আছে।
তার বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২০শে এপ্রিল বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে পল্টন থানার
মামলায় আসামি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, ২০১৩ সালের ২৮শে মার্চ
মামলাটির চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এ মামলায় তিনি জামিনে আছেন। একই সঙ্গে
আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। এ কারণে তাকে পাসপোর্ট দেয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য বলা হয়। পাসপোর্ট না পাওয়ার বিষয়টি
স্বীকার করে সাবেক উপ-মন্ত্রী মো. সিরাজুল হক মানবজমিনকে বলেন, ২০১৪ সালের
অক্টোবরে আবেদন করে এখনও পাসপোর্ট পাইনি। আমার ভাই গুরুতর অসুস্থ। তাকে
দ্রুত ভারতের মাদ্রাজে নিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় আজীবনের জন্য ভাই অন্ধ হয়ে
যাবেন। কিন্তু পাসপোর্টের কারণে নিয়ে যেতে পারছি না। তিনি বলেন, এর আগে
একবার আমাকে এয়ারপোর্টে বসিয়ে রেখে ফেরত পাঠানো হয়। কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রেখে
বলা হয়, স্যার প্লেন চলে গেছে, আপনি যেতে পারবেন না। আপনার বিদেশযাত্রায়
কোনো ক্লিয়ারেন্স নেই। লাগেজ প্লেনে উঠে গেলেও যেতে পারিনি। এখন বাধ্য হয়ে
পাসপোর্টের জন্য রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সিরাজুল হক বলেন, আমার মতো
অনেক বিএনপি নেতা পাসপোর্ট না পাওয়ায় বিদেশ যেতে পারছেন না। তারাও রিট করার
প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জেনেছি।
No comments