জিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমীন, মারাত্মক ভুল হয়ে গেছে
মুক্তি
পাওয়ার পর আমি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম খালেদ মোশাররফের অধীনে
যুদ্ধ করার। গত কয়েক মাসের নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণেই এ সিদ্ধান্ত
নিয়েছিলাম। কিন্তু এ সময় আবার দেখা হলো জিয়ার সঙ্গে। তিনি তখন কনফারেন্সে
যোগ দেওয়ার জন্য কলকাতায় অবস্থান করছিলেন। একেই বলে বোধহয় নিয়তি। ১৩ এপ্রিল
সাব্রুম বিওপিতে তার সঙ্গে আমার সর্বশেষ দেখা হয়েছিল এবং তার সন্দেহের
জন্যই আমাকে জেলে থাকতে হয়েছে। মাঝখানে কেটে গেছে দুঃখ, বেদনা আর বঞ্চনার
আড়াই মাস। জিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘আমীন, মারাত্মক ভুল হয়ে গেছে, আই
অ্যাম ভেরি সরি। এখন কোন ব্যাটালিয়নে যেতে চাচ্ছ?
প্রয়াত মেজর জেনারেল আমীন আহম্মেদ চৌধুরী তার ‘১৯৭১ ও আমার সামরিক জীবন’ শীর্ষক বইতে এসব কথা লিখেছেন। প্রথমা থেকে সদ্য প্রকাশিত ওই বইতে আরও লেখা হয়েছে- আমি বললাম, ফোর ইস্ট বেঙ্গলে। তিনি বললেন, বেটার ইউ ক্যান গো উইথ মি। বললাম, আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্তু আপনি যেহেতু আমার সম্পর্কে খুব বেশি সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, সেজন্য আমি আপনার সঙ্গে না যাওয়াই শ্রেয় মনে করেছিলাম। জিয়া মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করে বললেন, চলো যাই, একসঙ্গে যুদ্ধ করবো। তারপর একই বিমানে করে জিয়ার সঙ্গে তুরাতে আসি এবং অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলে যোগ দেই। তখন অষ্টম বেঙ্গলের অধিনায়ক ছিলেন মেজর আমিনুল হক (বীর উত্তম। পরবর্তী সময়ে ব্রিগেডিয়ার)।
আমি আজও বুঝে উঠতে পারিনি, জিয়া কেমন করে এমন একটি উদ্ভট সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন যে আমি পাকিস্তানিদের চর হয়ে ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে তাদের হাতে তুলে দিয়ে আরও বড় ধরনের স্যাবোটাজ করার জন্য মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিচ্ছি। আমার ধারণা, এর প্রধান কারণ, আমি ঢাকা থেকে ২৪ মার্চ টেলিফোনে তাকে এবং কর্নেল এম আর চৌধুরীকে জানিয়েছিলাম, আমাদের (ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ও আমি) এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। ক্যাপ্টেন রফিক যেন এখনই কোন ধরনের অ্যাকশনে না যান। ২৫ মার্চ আমি আবার ফোন করেছিলাম। তখন কর্নেল এম আর চৌধুরীর সঙ্গে আমার কথা হয়। ওনাকে বলেছিলাম, লাল ফিতা উড়িয়ে দিন। সে কথা আগের অধ্যায়ে লিখেছি। এ কথোপকথন সমন্বন্ধে জিয়া ওয়াকিবহাল ছিলেন না। তাই তিনি ধরে নিয়েছিলেন, ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে আমি পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছি এবং কৌশলে তাদের সবাইকে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আগাম কোন ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত রেখেছি। পরে নিজে আবার ভারতে গিয়েছি মুক্তিযুদ্ধে বড় ধরনের স্যাবেটাজ করার জন্য।
স্ত্রী ও সন্তানদের ফেলে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন জিয়া। তাদের নিয়ে তিনি শঙ্কায় ও চিন্তিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই তার মন সুস্থির ছিল না। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে তিনি অদম্য সাহসের সঙ্গে প্রবল প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করতে কখনও পিছপা হতেন না। নির্দ্বিধায় শক্ত শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে মোটেও বিচলিত এবং প্রয়োজনে নির্মমতার আশ্রয় নিতেও পিছপা হতেন না।
প্রয়াত মেজর জেনারেল আমীন আহম্মেদ চৌধুরী তার ‘১৯৭১ ও আমার সামরিক জীবন’ শীর্ষক বইতে এসব কথা লিখেছেন। প্রথমা থেকে সদ্য প্রকাশিত ওই বইতে আরও লেখা হয়েছে- আমি বললাম, ফোর ইস্ট বেঙ্গলে। তিনি বললেন, বেটার ইউ ক্যান গো উইথ মি। বললাম, আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্তু আপনি যেহেতু আমার সম্পর্কে খুব বেশি সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, সেজন্য আমি আপনার সঙ্গে না যাওয়াই শ্রেয় মনে করেছিলাম। জিয়া মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করে বললেন, চলো যাই, একসঙ্গে যুদ্ধ করবো। তারপর একই বিমানে করে জিয়ার সঙ্গে তুরাতে আসি এবং অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলে যোগ দেই। তখন অষ্টম বেঙ্গলের অধিনায়ক ছিলেন মেজর আমিনুল হক (বীর উত্তম। পরবর্তী সময়ে ব্রিগেডিয়ার)।
আমি আজও বুঝে উঠতে পারিনি, জিয়া কেমন করে এমন একটি উদ্ভট সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন যে আমি পাকিস্তানিদের চর হয়ে ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে তাদের হাতে তুলে দিয়ে আরও বড় ধরনের স্যাবোটাজ করার জন্য মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিচ্ছি। আমার ধারণা, এর প্রধান কারণ, আমি ঢাকা থেকে ২৪ মার্চ টেলিফোনে তাকে এবং কর্নেল এম আর চৌধুরীকে জানিয়েছিলাম, আমাদের (ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ও আমি) এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। ক্যাপ্টেন রফিক যেন এখনই কোন ধরনের অ্যাকশনে না যান। ২৫ মার্চ আমি আবার ফোন করেছিলাম। তখন কর্নেল এম আর চৌধুরীর সঙ্গে আমার কথা হয়। ওনাকে বলেছিলাম, লাল ফিতা উড়িয়ে দিন। সে কথা আগের অধ্যায়ে লিখেছি। এ কথোপকথন সমন্বন্ধে জিয়া ওয়াকিবহাল ছিলেন না। তাই তিনি ধরে নিয়েছিলেন, ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে আমি পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছি এবং কৌশলে তাদের সবাইকে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আগাম কোন ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত রেখেছি। পরে নিজে আবার ভারতে গিয়েছি মুক্তিযুদ্ধে বড় ধরনের স্যাবেটাজ করার জন্য।
স্ত্রী ও সন্তানদের ফেলে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন জিয়া। তাদের নিয়ে তিনি শঙ্কায় ও চিন্তিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই তার মন সুস্থির ছিল না। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে তিনি অদম্য সাহসের সঙ্গে প্রবল প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করতে কখনও পিছপা হতেন না। নির্দ্বিধায় শক্ত শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে মোটেও বিচলিত এবং প্রয়োজনে নির্মমতার আশ্রয় নিতেও পিছপা হতেন না।
No comments