কৌতুকটৌতুক by আনিসুল হক
আজকে একটা নির্ভেজাল কৌতুক বলি।
একজন প্রকৌশলী আর একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার ট্রেনে ভ্রমণ করছেন পাশাপাশি আসনে বসে।
অনেক দূরের পথ। দীর্ঘ সময় লাগবে। কম্পিউটার প্রোগ্রামার বললেন, আসুন, সময় কাটানোর জন্য একটা মজার খেলা খেলি।
প্রকৌশলী বললেন, প্রকৌশলীরা মজার খেলা কী, তা জানে না।
প্রোগ্রামার বললেন, খুব সোজা। আমি শিখিয়ে দিচ্ছি। আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করব। আপনি যদি উত্তর পারেন, আমি আপনাকে দেব ১০ ডলার। আর আপনি যদি উত্তর না পারেন, আপনি আমাকে দেবেন ১০ ডলার। একই ভাবে আমাকে প্রশ্ন করবেন আপনি। আমি পারলে আপনি আমাকে দেবেন ১০ ডলার, না পারলে আমি আপনাকে দেব ১০ ডলার।
প্রকৌশলী হাই তুলে বললেন, ভাই, আমি ক্লান্ত, একটু ঘুমিয়ে নিই।
প্রোগ্রামার বললেন, আচ্ছা, আপনি দেবেন ১০ ডলার, কিন্তু আমি দেব ১০০ ডলার।
প্রকৌশলী বললেন, আচ্ছা।
প্রোগ্রামারের প্রথম প্রশ্ন: বলুন তো পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব কত?
প্রকৌশলী বললেন, জি না। জানি না। তিনি পকেট থেকে ১০ ডলার বের করে প্রোগ্রামারের হাতে দিয়ে দিলেন। তারপর বললেন, এবার আপনি বলুন, কোন প্রাণী তিনটা পা নিয়ে পাহাড়ে ওঠে আর চারটা পা নিয়ে পাহাড় থেকে নামে।
প্রোগ্রামার বললেন, ঠিক আছে। আমি গুগল করে বলছি। তিনি গুগল করলেন। বন্ধুদের ই-মেইল করলেন। এই প্রশ্নের উত্তর কারও জানা নেই।
তিনি তখন ১০০ ডলার বের করে প্রকৌশলীর হাতে দিয়ে বললেন, এবার আপনি বলুন তো এই প্রশ্নের উত্তর কী? কোন প্রাণী তিন পা নিয়ে পাহাড়ে ওঠে, চার পা নিয়ে নামে।
প্রকৌশলী পকেটে হাত দিয়ে ১০ ডলার বের করে প্রোগ্রামারের হাতে দিয়ে দিলেন।
প্রকৌশলী আর ডাক্তারের বাহাসের কৌতুকটা পুরোনো।
দুজন ডাক্তার আর দুজন ইঞ্জিনিয়ার ট্রেনে উঠেছেন।
প্রকৌশলীরা জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা ডাক্তার ভাইয়েরা, আপনারা কটা টিকিট কেটেছেন।
ডাক্তাররা বললেন, দুইটা। আপনারা?
একটা।
চেকার এলে কী করবেন?
দেখেন কী করি।
যখন চেকার এল, তখন দুই প্রকৌশলী গিয়ে এক বাথরুমে ঢুকল। চেকার বাথরুমের দরজায় টোকা দিলে তাঁরা একটা টিকিট বের করে দিলেন। চেকার টিকিট পরখ করে চলে গেল।
ডাক্তার দুজন অবাক।
ফেরার সময় আবার প্রকৌশলী দুজন জিজ্ঞেস করলেন ডাক্তার দুজনকে, আপনারা কটা টিকিট করেছেন?
ডাক্তাররা বলল, একটা। আপনারা?
আমরা করি নাই।
কী করবেন চেকার এলে?
দেখেন না কী করি।
চেকার আসছে। ডাক্তার দুজন গিয়ে বাথরুমে ঢুকল। ইঞ্জিনিয়ার সেই দরজায় গিয়ে নক করল। ডাক্তাররা টিকিট বের করে দিল। সেই টিকিট নিয়ে দুই ইঞ্জিনিয়ার আরেকটা বাথরুমে ঢুকে গেল।
কৌতুক দুইটাই হাসির। কিন্তু এর অন্তর্নিহিত বাণী প্রকৌশলীদের জন্য ভালো নয়। কারণ, এর মাধ্যমে আমরা এই বার্তা পাই যে প্রকৌশলীরা চালাক, কিন্তু সেই চালাকি তাঁরা ফাঁকি দেওয়ার জন্য ব্যবহার করেন। একজন প্রকৌশলী হিসেবে আমি এই কৌতুক দুইটারই প্রতিবাদ জানাই। বিশেষ করে দ্বিতীয়টার। আমরা প্রকৌশলীরা সব সময় টিকিট কেটেই ট্রেনে উঠি। টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠার অপবাদ আমাদের কেউ দিতে পারবে না।
বিভিন্ন পেশাজীবীর বাহাস নিয়ে অনেক কৌতুক প্রচলিত আছে।
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, রাজনীতিবিদদের মধ্যে কথার প্রতিযোগিতা হচ্ছে।
কোন পেশা সবার আগে পৃথিবীতে এসেছে।
ডাক্তার বললেন, অবশ্যই ডাক্তারি পেশা। প্রথম মানুষ এল পৃথিবীতে, তাদের সন্তান জন্ম নিল, শুরু হয়ে গেল ডাক্তারি।
ইঞ্জিনিয়ার বললেন, না, না। তারও আগে মহাবিশ্ব ছিল লন্ডভন্ড। সৃষ্টিকর্তা সেসবকে সুশৃঙ্খল করলেন। সেটা অবশ্যই একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ। কাজেই প্রকৌশলবিদ্যাই পৃথিবীর আদিতম বিদ্যা।
পাত্রী চাই, পাত্রী চাই, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের জন্য পাত্রী চাই। মাসিক আয় দুই লাখ টাকা। ঢাকায় বাড়ি আছে এমন পাত্রী চাই। বাড়ির ফটোসমেত যোগাযোগ করুন রাজনীতিবিদ তখন মিটিমিটি হাসছেন।
বাকি দুজন বললেন, কী ব্যাপার, আপনি হাসেন কেন?
রাজনীতিবিদ বললেন, ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যা মহাবিশ্বকে সুশৃঙ্খল করল বটে, কিন্তু মহাবিশ্বটাকে বিশৃঙ্খল করলটা কে?
এসবই কৌতুক। কৌতুক বলা শেষ। এবার বলি একটা টৌতুক। শুনতে পেলাম, আমাদের ঢাকা শহরের একটা ফ্লাইওভার বানানো যখন প্রায় শেষ, তখন টের পাওয়া গেছে, এগুলো আসলে যেসব গাড়ি রাস্তার ডান দিক দিয়ে যায়, সেসবের জন্য ডিজাইন করা। আমাদের দেশে এবং বিলাতে ড্রাইভাররা বসেন গাড়ির ডান পাশে। আমেরিকায় ড্রাইভাররা বসেন গাড়ির বাঁ দিকে। আমরা রাস্তার বাঁ দিকে চলি। আমেরিকানরা রাস্তার ডান দিকে চলে। এই জন্য ব্রিটিশরা বলে থাকে, আমেরিকার সবকিছু উল্টো। তারা রাস্তার ডান দিক দিয়ে চলে, তেলকে বলে গ্যাস আর ফুটবল খেলে হাত দিয়ে।
তো আমরা চলি ব্রিটিশ নিয়মে, ফ্লাইওভার নাকি বানিয়ে ফেলেছি আমেরিকান নিয়মে, এখন নাকি অনেকটা কেঁচে গণ্ডূষ করতে হবে। ভেঙে আবার বানাতে হবে। এটার সত্য-মিথ্যা জানি না। যদি সত্য হয়, বোঝাই যাচ্ছে ডিজাইনাররা আমেরিকান কোনো কপি বুক থেকে ডিজাইনটা নিয়ে ঢাকার রাস্তায় হুবহু বসিয়ে দিয়েছেন।
আমরা এ ধরনের ঘটনা ডাক্তারির ক্ষেত্রে ঘটেছে বলে সংবাদপত্রে কখনো কখনো পড়েছি। যেমন, ডান পায়ে সমস্যা, ডাক্তার সাহেব ভুলে বাঁ পা কেটে ফেলেছেন। কৌতুক আছে, রোগী বলছে, ডাক্তার সাহেব গতবার যে দাঁত তুলেছিলেন, খুব ব্যথা পেয়েছিলাম, এবার যে সহজেই উঠে গেল, ব্যাপার কী! ডাক্তার বললেন, ইয়ে মানে, ভুলে দাঁত ভেবে আমি আপনার আলজিব তুলে ফেলেছি।
কৌতুকের কোনো আগা-মাথা নেই, আলজিব তুললে মানুষ কথা বলবে কী করে?
সম্প্রতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রকৌশলীদের নিয়ে একটা বক্তৃতা দিয়েছেন। তাতে তিনি আফসোস করেছেন, দেশের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্ররা প্রকৌশলী হয়, তা সত্ত্বেও দেশের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে প্রকৌশলীদের অংশ নেওয়ার সুযোগ খুব কম। বিষয়টা অবশ্যই চিন্তা করার মতোই। মেধাবীরা দেশের উন্নয়নে ও নীতিনির্ধারণে আরও বেশি করে অংশ নিক, সেটা সবাই চাইব। যেমন চাইব, মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসুন। এবং মর্যাদা পান। সম্মান পান।
আমরা ছোটবেলায় কবিতা পড়েছিলাম, ‘বাদশাহ আলমগীর—/ কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলভী দিল্লীর।’ সেই শাহজাদা তার শিক্ষকের পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছিল, তা দেখে বাদশা রেগে যান এবং বলেন, আমি খুব দুঃখ পেয়েছি, আপনার ছাত্র কেন শুধু পানি ঢেলে দেবে। কেন সে নিজ হাতে আপনার পা প্রক্ষালন করে দেয়নি।
সেই দিল্লিও নেই। সেই আলমগীরও নেই। কিন্তু সেই শিক্ষকও কি আছেন? আমাদের মূল্যবোধের ব্যাপক বদল ঘটেছে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে—পাত্রী চাই, পাত্রী চাই, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের জন্য পাত্রী চাই। মাসিক আয় দুই লাখ টাকা।
তাহলে আর এই বিজ্ঞাপনকে আমরা কেন দোষ দেব? পাত্রী চাই। ঢাকায় বাড়ি আছে এমন পাত্রী চাই। বাড়ির ফটোসমেত যোগাযোগ করুন।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
একজন প্রকৌশলী আর একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার ট্রেনে ভ্রমণ করছেন পাশাপাশি আসনে বসে।
অনেক দূরের পথ। দীর্ঘ সময় লাগবে। কম্পিউটার প্রোগ্রামার বললেন, আসুন, সময় কাটানোর জন্য একটা মজার খেলা খেলি।
প্রকৌশলী বললেন, প্রকৌশলীরা মজার খেলা কী, তা জানে না।
প্রোগ্রামার বললেন, খুব সোজা। আমি শিখিয়ে দিচ্ছি। আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করব। আপনি যদি উত্তর পারেন, আমি আপনাকে দেব ১০ ডলার। আর আপনি যদি উত্তর না পারেন, আপনি আমাকে দেবেন ১০ ডলার। একই ভাবে আমাকে প্রশ্ন করবেন আপনি। আমি পারলে আপনি আমাকে দেবেন ১০ ডলার, না পারলে আমি আপনাকে দেব ১০ ডলার।
প্রকৌশলী হাই তুলে বললেন, ভাই, আমি ক্লান্ত, একটু ঘুমিয়ে নিই।
প্রোগ্রামার বললেন, আচ্ছা, আপনি দেবেন ১০ ডলার, কিন্তু আমি দেব ১০০ ডলার।
প্রকৌশলী বললেন, আচ্ছা।
প্রোগ্রামারের প্রথম প্রশ্ন: বলুন তো পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব কত?
প্রকৌশলী বললেন, জি না। জানি না। তিনি পকেট থেকে ১০ ডলার বের করে প্রোগ্রামারের হাতে দিয়ে দিলেন। তারপর বললেন, এবার আপনি বলুন, কোন প্রাণী তিনটা পা নিয়ে পাহাড়ে ওঠে আর চারটা পা নিয়ে পাহাড় থেকে নামে।
প্রোগ্রামার বললেন, ঠিক আছে। আমি গুগল করে বলছি। তিনি গুগল করলেন। বন্ধুদের ই-মেইল করলেন। এই প্রশ্নের উত্তর কারও জানা নেই।
তিনি তখন ১০০ ডলার বের করে প্রকৌশলীর হাতে দিয়ে বললেন, এবার আপনি বলুন তো এই প্রশ্নের উত্তর কী? কোন প্রাণী তিন পা নিয়ে পাহাড়ে ওঠে, চার পা নিয়ে নামে।
প্রকৌশলী পকেটে হাত দিয়ে ১০ ডলার বের করে প্রোগ্রামারের হাতে দিয়ে দিলেন।
প্রকৌশলী আর ডাক্তারের বাহাসের কৌতুকটা পুরোনো।
দুজন ডাক্তার আর দুজন ইঞ্জিনিয়ার ট্রেনে উঠেছেন।
প্রকৌশলীরা জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা ডাক্তার ভাইয়েরা, আপনারা কটা টিকিট কেটেছেন।
ডাক্তাররা বললেন, দুইটা। আপনারা?
একটা।
চেকার এলে কী করবেন?
দেখেন কী করি।
যখন চেকার এল, তখন দুই প্রকৌশলী গিয়ে এক বাথরুমে ঢুকল। চেকার বাথরুমের দরজায় টোকা দিলে তাঁরা একটা টিকিট বের করে দিলেন। চেকার টিকিট পরখ করে চলে গেল।
ডাক্তার দুজন অবাক।
ফেরার সময় আবার প্রকৌশলী দুজন জিজ্ঞেস করলেন ডাক্তার দুজনকে, আপনারা কটা টিকিট করেছেন?
ডাক্তাররা বলল, একটা। আপনারা?
আমরা করি নাই।
কী করবেন চেকার এলে?
দেখেন না কী করি।
চেকার আসছে। ডাক্তার দুজন গিয়ে বাথরুমে ঢুকল। ইঞ্জিনিয়ার সেই দরজায় গিয়ে নক করল। ডাক্তাররা টিকিট বের করে দিল। সেই টিকিট নিয়ে দুই ইঞ্জিনিয়ার আরেকটা বাথরুমে ঢুকে গেল।
কৌতুক দুইটাই হাসির। কিন্তু এর অন্তর্নিহিত বাণী প্রকৌশলীদের জন্য ভালো নয়। কারণ, এর মাধ্যমে আমরা এই বার্তা পাই যে প্রকৌশলীরা চালাক, কিন্তু সেই চালাকি তাঁরা ফাঁকি দেওয়ার জন্য ব্যবহার করেন। একজন প্রকৌশলী হিসেবে আমি এই কৌতুক দুইটারই প্রতিবাদ জানাই। বিশেষ করে দ্বিতীয়টার। আমরা প্রকৌশলীরা সব সময় টিকিট কেটেই ট্রেনে উঠি। টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠার অপবাদ আমাদের কেউ দিতে পারবে না।
বিভিন্ন পেশাজীবীর বাহাস নিয়ে অনেক কৌতুক প্রচলিত আছে।
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, রাজনীতিবিদদের মধ্যে কথার প্রতিযোগিতা হচ্ছে।
কোন পেশা সবার আগে পৃথিবীতে এসেছে।
ডাক্তার বললেন, অবশ্যই ডাক্তারি পেশা। প্রথম মানুষ এল পৃথিবীতে, তাদের সন্তান জন্ম নিল, শুরু হয়ে গেল ডাক্তারি।
ইঞ্জিনিয়ার বললেন, না, না। তারও আগে মহাবিশ্ব ছিল লন্ডভন্ড। সৃষ্টিকর্তা সেসবকে সুশৃঙ্খল করলেন। সেটা অবশ্যই একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ। কাজেই প্রকৌশলবিদ্যাই পৃথিবীর আদিতম বিদ্যা।
পাত্রী চাই, পাত্রী চাই, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের জন্য পাত্রী চাই। মাসিক আয় দুই লাখ টাকা। ঢাকায় বাড়ি আছে এমন পাত্রী চাই। বাড়ির ফটোসমেত যোগাযোগ করুন রাজনীতিবিদ তখন মিটিমিটি হাসছেন।
বাকি দুজন বললেন, কী ব্যাপার, আপনি হাসেন কেন?
রাজনীতিবিদ বললেন, ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যা মহাবিশ্বকে সুশৃঙ্খল করল বটে, কিন্তু মহাবিশ্বটাকে বিশৃঙ্খল করলটা কে?
এসবই কৌতুক। কৌতুক বলা শেষ। এবার বলি একটা টৌতুক। শুনতে পেলাম, আমাদের ঢাকা শহরের একটা ফ্লাইওভার বানানো যখন প্রায় শেষ, তখন টের পাওয়া গেছে, এগুলো আসলে যেসব গাড়ি রাস্তার ডান দিক দিয়ে যায়, সেসবের জন্য ডিজাইন করা। আমাদের দেশে এবং বিলাতে ড্রাইভাররা বসেন গাড়ির ডান পাশে। আমেরিকায় ড্রাইভাররা বসেন গাড়ির বাঁ দিকে। আমরা রাস্তার বাঁ দিকে চলি। আমেরিকানরা রাস্তার ডান দিকে চলে। এই জন্য ব্রিটিশরা বলে থাকে, আমেরিকার সবকিছু উল্টো। তারা রাস্তার ডান দিক দিয়ে চলে, তেলকে বলে গ্যাস আর ফুটবল খেলে হাত দিয়ে।
তো আমরা চলি ব্রিটিশ নিয়মে, ফ্লাইওভার নাকি বানিয়ে ফেলেছি আমেরিকান নিয়মে, এখন নাকি অনেকটা কেঁচে গণ্ডূষ করতে হবে। ভেঙে আবার বানাতে হবে। এটার সত্য-মিথ্যা জানি না। যদি সত্য হয়, বোঝাই যাচ্ছে ডিজাইনাররা আমেরিকান কোনো কপি বুক থেকে ডিজাইনটা নিয়ে ঢাকার রাস্তায় হুবহু বসিয়ে দিয়েছেন।
আমরা এ ধরনের ঘটনা ডাক্তারির ক্ষেত্রে ঘটেছে বলে সংবাদপত্রে কখনো কখনো পড়েছি। যেমন, ডান পায়ে সমস্যা, ডাক্তার সাহেব ভুলে বাঁ পা কেটে ফেলেছেন। কৌতুক আছে, রোগী বলছে, ডাক্তার সাহেব গতবার যে দাঁত তুলেছিলেন, খুব ব্যথা পেয়েছিলাম, এবার যে সহজেই উঠে গেল, ব্যাপার কী! ডাক্তার বললেন, ইয়ে মানে, ভুলে দাঁত ভেবে আমি আপনার আলজিব তুলে ফেলেছি।
কৌতুকের কোনো আগা-মাথা নেই, আলজিব তুললে মানুষ কথা বলবে কী করে?
সম্প্রতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রকৌশলীদের নিয়ে একটা বক্তৃতা দিয়েছেন। তাতে তিনি আফসোস করেছেন, দেশের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্ররা প্রকৌশলী হয়, তা সত্ত্বেও দেশের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে প্রকৌশলীদের অংশ নেওয়ার সুযোগ খুব কম। বিষয়টা অবশ্যই চিন্তা করার মতোই। মেধাবীরা দেশের উন্নয়নে ও নীতিনির্ধারণে আরও বেশি করে অংশ নিক, সেটা সবাই চাইব। যেমন চাইব, মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসুন। এবং মর্যাদা পান। সম্মান পান।
আমরা ছোটবেলায় কবিতা পড়েছিলাম, ‘বাদশাহ আলমগীর—/ কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলভী দিল্লীর।’ সেই শাহজাদা তার শিক্ষকের পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছিল, তা দেখে বাদশা রেগে যান এবং বলেন, আমি খুব দুঃখ পেয়েছি, আপনার ছাত্র কেন শুধু পানি ঢেলে দেবে। কেন সে নিজ হাতে আপনার পা প্রক্ষালন করে দেয়নি।
সেই দিল্লিও নেই। সেই আলমগীরও নেই। কিন্তু সেই শিক্ষকও কি আছেন? আমাদের মূল্যবোধের ব্যাপক বদল ঘটেছে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে—পাত্রী চাই, পাত্রী চাই, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের জন্য পাত্রী চাই। মাসিক আয় দুই লাখ টাকা।
তাহলে আর এই বিজ্ঞাপনকে আমরা কেন দোষ দেব? পাত্রী চাই। ঢাকায় বাড়ি আছে এমন পাত্রী চাই। বাড়ির ফটোসমেত যোগাযোগ করুন।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
No comments