‘ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ককে ‘নতুন উচ্চতায়’ নিয়ে যেতে চায় দিল্লি’
বাংলাদেশে নবনিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা বলেছেন, নয়া দিল্লি ঢাকার সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় এবং এই সম্পর্ককে ‘নতুন উচ্চতায়’ নিয়ে যেতে চায়। এ প্রসঙ্গে তিনি সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের মধ্যে নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সুষমা স্বরাজের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, ‘ভারত শেখ হাসিনার সরকারকে সর্বাত্মক সমর্থন দেবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রোববার সকালে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে ভারতীয় হাইকমিশনার একথা বলেন। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের একথা জানান। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে তার সরকারের লক্ষ্যসমূহ অর্জনে প্রতিবেশীদের সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের সরকারের লক্ষ্য দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবেশী দেশগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। বর্তমান বিশ্বে সকলেই পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। বৈঠকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে এক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তার সরকার সমুদ্রবন্দর প্রতিবেশীদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহারের জন্য আরো উন্নয়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভুটান, ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) মোটর ভেহিকেল চুক্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪টি দেশের মধ্যে যোগাযোগ সংযোগ জোরদারে তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া রেলরুট বাংলাদেশ পুনরায় চালু করতে চায়। বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় দূতকে স্বাগত জানান এবং বাংলাদেশে তার দায়িত্ব পালনকালে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় ঐতিহাসিক এলবিএ বিল সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়ায় ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও পার্লামেন্ট সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ভারতীয় হাইকমিশনার বিগত ৭ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক খাতে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এক্ষেত্রে বিশেষ করে বিগত ৭ বছরে বাংলাদেশের ৬.৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি এক অসাধারণ অগ্রগতি এবং এ দেশ সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। হাইকমিশনার বর্তমান সরকারের ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১’কে বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে অভিহিত করেন। শ্রীংলা জনগণের যাতায়াত সহজ করতে সীমান্তে আরো চেকপোস্ট বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মোটর ভেহিকেল চুক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, সম্প্রতি নয়া দিল্লিতে এ নিয়ে চার দেশের মধ্যে সফল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাইকমিশনার বলেন, ভারতের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। সার্ক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে ভারতের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এতে যোগ দিতে পারে। শ্রীংলা বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত জীবনী হিন্দিসহ ভারতের অন্যান্য ভাষায় অনুবাদের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ভারতের পশ্চিমবাংলার দার্জিলিংয়ের অধিবাসী শ্রীংলা ১৪ জানুয়ারি কূটনৈতিক দায়িত্ব নিয়ে ঢাকায় আসেন। এর পূর্ববর্তী ভারতীয় হাইকমিশনার পংকজ সরন তার কার্যকাল শেষে ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। নবনিযুক্ত হাইকমিশনার তার ৩০ বছরের অধিক কূটনৈতিক জীবনে নয়াদিল্লী এবং প্যারিস, হ্যানয় ও তেলআবিবে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশনের কাউন্সিলর, ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি ও দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে কনসাল জেনারেল এবং নর্দান বিভাগে (নেপাল ও ভুটান) পরিচালক এবং উরোপ ওয়েস্ট ডিভিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
No comments