‘৫ লাখ টাকা দিচ্ছি, বউয়ের দাবি ছেড়ে দে’ by রোকনুজ্জামান পিয়াস
সুফিয়া
বেগম। ৩ বছর আগে পাচার হয়েছেন লেবাননে। সেখান থেকে স্বামীকে ফোন করে
বলেছিলেন তাকে ১০ বছরের জন্য বিক্রি করে দিয়েছে সাহিদা। এরপর থেকে আর কোন
খোঁজ নেই তার। কিন্তু আশা ছাড়েননি সুফিয়ার স্বামী গরিব রিকশাচালক আসাদ
মিয়া। স্ত্রীকে ফেরত পেতে তিনি প্রতিনিয়ত চেষ্টা-তদ্বির করে যাচ্ছেন
বিভিন্ন মাধ্যমে। এরই মধ্যে দালালচক্রের একজন জানায়, রোববার (গত ২২শে
নভেম্বর) দেশে ফিরবেন সুফিয়া। স্বামী আসাদকে তাকে নিয়ে আসতে এয়ারপোর্টে
যেতে বলে। তাই ওই দিন সকাল থেকেই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে
তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন আত্মীয়স্বজন। কিন্তু দিন গড়িয়ে রাত এলেও
সুফিয়া আর ফেরেননি। অবশেষে এক বুক হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তারা। তাদের
আশঙ্কা, সুফিয়ার স্বামী আসাদ মিয়াকে নতুন কোন ফাঁদে ফেলতেই তার ফিরে আসার
মিথ্যা তথ্য দেয় চক্রটি। এর আগে সাহিদার পরিবারের কাছে স্ত্রীকে দেশে ফেরত
আনার দাবি জানালে তাকে নানা ধরনের হুমকি দেয় পাচারকারীরা। লেবানন থেকে
সাহিদা আসাদকে হুমকি দিয়ে বলে ‘৫ লাখ টাকা দিচ্ছি, বউয়ের দাবি ছেড়ে দে’। ওই
প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে হত্যারও হুমকি দিয়েছে সাহিদার পরিবার। এমনকি
নিরাপত্তাহীনতায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। ভয়ে বাড়িতেও থাকতে পারছেন না। এই
শঙ্কার কারণে পরিবারের ৬ সদস্য ওই দিন এয়ারপোর্টে গেলেও যাননি আসাদ।
সূত্র জানায়, ২০১১ সালের শেষের দিকে নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার যোশর গ্রামের রিকশাচালক আসাদ মিয়ার স্ত্রীকে তিন মাসের ভ্রমণ ভিসা দিয়ে লেবাননে নিয়ে যায় একই গ্রামের আবদুল আজিজের মেয়ে লেবানন প্রবাসী সাহিদা। ৩ বছর আগে দেশে এসে এলাকার প্রায় ৪০ জন নারীকে লেবাননে নিয়ে যায়। এজন্য একেক জনের ক্ষেত্রে একেক ধরনের কৌশল নেয় সে। দেশটিতে ভালো বেতনে ভালো কাজ দেয়ার কথা বলে কারও বিনা পয়সায় আবার কারও কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে দেশটিতে নিয়ে যায়। আবার কারও পরিবারের অগোচরেই ঢাকার একটি নির্দিষ্ট জায়গায় কিছুদিন রেখে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র করিয়ে সেদেশে পাচার করে। লেবাননে পা রাখার পরই পাচারের শিকার গ্রামের ওইসব সহজ-সরল মানুষেরা সাহিদার আসল রূপ দেখতে পান। এরমধ্যে অনেকে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে কৌশলে দেশে ফিরে আসলেও খোঁজ নেই অনেকের। এদেরই একজন সুফিয়া। ৪ সন্তানের এই জননীকে প্রথমে এক বাসায় ৩ হাজার টাকা বেতনে কাজ দেয়ার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসে। সেখান থেকে কাগজপত্র করিয়ে লেবাননে পাচার করে। সাহিদার স্বামী আসাদ জানান, লেবাননে যাওয়ার পর প্রথম দুই মাস তার সঙ্গে পরিবারের কথা হতো। সে বাড়িতে ফোন করে কান্নাকাটি করতো। বলতো, সাহিদা তাকে ১০-২০ বছরের জন্য বেচে দিচ্ছে। তার ওপর নানা ধরনের নির্যাতন চালাচ্ছে। সেখানে তাকে কোন কাজ দেয়া হয়েছে কিনা বা কি কাজ দেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে কোন কথাই বলতো না। আসাদ বলেন, কয়েক দিন পর সে পাগলের মতো কথা বলতে থাকে। এরপর গত তিন বছরে তার সঙ্গে আর কথা হয়নি। খোঁজ জানতে সাহিদার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে বলে, ‘৫ লাখ টাকা দিচ্ছি, বউয়ের দাবি ছেড়ে দে’। আসাদ তাকে জানিয়ে দেয়, তার কোন টাকা পয়সার দরকার নেই। বউকে দেশে ফেরত চান। বলেন, তার চার সন্তানের মধ্যে দুই সন্তান খুব ছোট। তারা মায়ের জন্য অস্থির থাকে। সাহিদার পরিবারের কাছে গিয়ে একই কথা বললে তার পিতা আবদুর আজিজ আসাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এমনকি হত্যারও হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। আসাদ দাবি করেন, স্ত্রীকে ফেরত পাঠানো বাবদ সাহিদার পরিবারকে তিনি ৬০ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি কিচ্ছু চাই না। আমার বউ সুফিয়াকে ফেরত চাই। এদিকে দীর্ঘদিনেও স্ত্রী সুফিয়ার কোন খোঁজ-খবর না পেয়ে মামলা করতে গেলে সংশ্লিষ্ট থানা তা গ্রহণ করেনি। অবশেষে গত ১৯শে আগস্ট নরসিংদী জেলা জজ আদালতে মানবপাচার আইনে মামলা করেন আসাদ। মামলায় সাহিদা ছাড়াও তার পিতা আবদুল আজিজ, ভাই আলামিন ও মহসিনকে আসামি করা হয়। এরপর থেকে তার ওপর হুমকিধমকি আরও বেড়ে যায়। প্রাণভয়ে নিজ এলাকা ছেড়ে সন্তান-সন্ততি নিয়ে বর্তমানে তিনি শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছেন। এদিকে হঠাৎ করেই সাহিদার পিতা আবদুল আজিজ এসে জানায়, সুফিয়া রোববার (গত ২২শে নভেম্বর) দেশে ফিরবে। বিকাল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে আসবে। বলেন, আসাদ যেন এয়ারপোর্টে গিয়ে তাকে নিয়ে আসে। তবে পরিবারের লোকজন আসাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাকে না পাঠিয়ে সুফিয়ার বোনের ছেলে, ভাই ইয়াসিন, আরব আলী, মোরশেদসহ ৬ জনকে এয়ারপোর্টে পাঠান। কিন্তু তারা গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও সুফিয়ার কোন সন্ধান পাননি। দেশে ফেরেননি তিনি। লেবাননে সাহিদার ফোন নম্বরও বন্ধ পান তারা। বাড়ি ফিরে সাহিদার পরিবারে যোগাযোগ করে ফোন নম্বর চাইলে তারা দিতে অস্বীকৃতি জানান। সুফিয়ার বোনের ছেলে বলেন, তাদের ধারণা খালুকে বিপদে ফেলার জন্য তারা এয়ারপোর্টে যেতে বলেছিল। তিনি বলেন, স্ত্রীর শোকে তার খালু আসাদ এখন পাগলপ্রায়। মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক আচরণ করেন। এদিকে একই সময়ে সাহিদার মাধ্যমে লেবানন গিয়েছিলেন যোশর গ্রামের রহিমা। তিনি বলেন, আমাকে ২০ হাজার টাকা বেতনে ভালো চাকরি দেয়ার কথা বলে লেবাননে নিয়ে গিয়েছিল। এজন্য আমার কাছ থেকে সাহিদা ৯০ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু ওখানে নিয়ে গিয়ে যে বাসায় কাজ দিয়েছিল সেই বাসার মালিকের জামাই আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের চেষ্টা করতো। পরে সেখান থেকে মালিকের বউ আমাকে জহিরুল নামে এক লেবাননীর কাছে রেখে আসে। সে আমাকে কয়েক বাসায় কাজ দেয়। কিন্তু বেতনের টাকা সেই-ই তুলে নিতো। নানাভাবে অসম্মান করার চেষ্টা করতো। পরে সেখান থেকে পালিয়ে এক বাঙালির মাধ্যমে নানা সমস্যা উতরিয়ে দেশে ফিরেছি। রহিমা বলেন, ওই সময় সাহিদাকে ফোন করলেও সে আসেনি। আমার কোন খোঁজও নেয়নি। উল্লেখ্য, আসাদের করা মামলার সাক্ষী লেবানন ফেরত এই রহিমা।
সূত্র জানায়, ২০১১ সালের শেষের দিকে নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার যোশর গ্রামের রিকশাচালক আসাদ মিয়ার স্ত্রীকে তিন মাসের ভ্রমণ ভিসা দিয়ে লেবাননে নিয়ে যায় একই গ্রামের আবদুল আজিজের মেয়ে লেবানন প্রবাসী সাহিদা। ৩ বছর আগে দেশে এসে এলাকার প্রায় ৪০ জন নারীকে লেবাননে নিয়ে যায়। এজন্য একেক জনের ক্ষেত্রে একেক ধরনের কৌশল নেয় সে। দেশটিতে ভালো বেতনে ভালো কাজ দেয়ার কথা বলে কারও বিনা পয়সায় আবার কারও কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে দেশটিতে নিয়ে যায়। আবার কারও পরিবারের অগোচরেই ঢাকার একটি নির্দিষ্ট জায়গায় কিছুদিন রেখে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র করিয়ে সেদেশে পাচার করে। লেবাননে পা রাখার পরই পাচারের শিকার গ্রামের ওইসব সহজ-সরল মানুষেরা সাহিদার আসল রূপ দেখতে পান। এরমধ্যে অনেকে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে কৌশলে দেশে ফিরে আসলেও খোঁজ নেই অনেকের। এদেরই একজন সুফিয়া। ৪ সন্তানের এই জননীকে প্রথমে এক বাসায় ৩ হাজার টাকা বেতনে কাজ দেয়ার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসে। সেখান থেকে কাগজপত্র করিয়ে লেবাননে পাচার করে। সাহিদার স্বামী আসাদ জানান, লেবাননে যাওয়ার পর প্রথম দুই মাস তার সঙ্গে পরিবারের কথা হতো। সে বাড়িতে ফোন করে কান্নাকাটি করতো। বলতো, সাহিদা তাকে ১০-২০ বছরের জন্য বেচে দিচ্ছে। তার ওপর নানা ধরনের নির্যাতন চালাচ্ছে। সেখানে তাকে কোন কাজ দেয়া হয়েছে কিনা বা কি কাজ দেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে কোন কথাই বলতো না। আসাদ বলেন, কয়েক দিন পর সে পাগলের মতো কথা বলতে থাকে। এরপর গত তিন বছরে তার সঙ্গে আর কথা হয়নি। খোঁজ জানতে সাহিদার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে বলে, ‘৫ লাখ টাকা দিচ্ছি, বউয়ের দাবি ছেড়ে দে’। আসাদ তাকে জানিয়ে দেয়, তার কোন টাকা পয়সার দরকার নেই। বউকে দেশে ফেরত চান। বলেন, তার চার সন্তানের মধ্যে দুই সন্তান খুব ছোট। তারা মায়ের জন্য অস্থির থাকে। সাহিদার পরিবারের কাছে গিয়ে একই কথা বললে তার পিতা আবদুর আজিজ আসাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এমনকি হত্যারও হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। আসাদ দাবি করেন, স্ত্রীকে ফেরত পাঠানো বাবদ সাহিদার পরিবারকে তিনি ৬০ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি কিচ্ছু চাই না। আমার বউ সুফিয়াকে ফেরত চাই। এদিকে দীর্ঘদিনেও স্ত্রী সুফিয়ার কোন খোঁজ-খবর না পেয়ে মামলা করতে গেলে সংশ্লিষ্ট থানা তা গ্রহণ করেনি। অবশেষে গত ১৯শে আগস্ট নরসিংদী জেলা জজ আদালতে মানবপাচার আইনে মামলা করেন আসাদ। মামলায় সাহিদা ছাড়াও তার পিতা আবদুল আজিজ, ভাই আলামিন ও মহসিনকে আসামি করা হয়। এরপর থেকে তার ওপর হুমকিধমকি আরও বেড়ে যায়। প্রাণভয়ে নিজ এলাকা ছেড়ে সন্তান-সন্ততি নিয়ে বর্তমানে তিনি শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছেন। এদিকে হঠাৎ করেই সাহিদার পিতা আবদুল আজিজ এসে জানায়, সুফিয়া রোববার (গত ২২শে নভেম্বর) দেশে ফিরবে। বিকাল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে আসবে। বলেন, আসাদ যেন এয়ারপোর্টে গিয়ে তাকে নিয়ে আসে। তবে পরিবারের লোকজন আসাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাকে না পাঠিয়ে সুফিয়ার বোনের ছেলে, ভাই ইয়াসিন, আরব আলী, মোরশেদসহ ৬ জনকে এয়ারপোর্টে পাঠান। কিন্তু তারা গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও সুফিয়ার কোন সন্ধান পাননি। দেশে ফেরেননি তিনি। লেবাননে সাহিদার ফোন নম্বরও বন্ধ পান তারা। বাড়ি ফিরে সাহিদার পরিবারে যোগাযোগ করে ফোন নম্বর চাইলে তারা দিতে অস্বীকৃতি জানান। সুফিয়ার বোনের ছেলে বলেন, তাদের ধারণা খালুকে বিপদে ফেলার জন্য তারা এয়ারপোর্টে যেতে বলেছিল। তিনি বলেন, স্ত্রীর শোকে তার খালু আসাদ এখন পাগলপ্রায়। মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক আচরণ করেন। এদিকে একই সময়ে সাহিদার মাধ্যমে লেবানন গিয়েছিলেন যোশর গ্রামের রহিমা। তিনি বলেন, আমাকে ২০ হাজার টাকা বেতনে ভালো চাকরি দেয়ার কথা বলে লেবাননে নিয়ে গিয়েছিল। এজন্য আমার কাছ থেকে সাহিদা ৯০ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু ওখানে নিয়ে গিয়ে যে বাসায় কাজ দিয়েছিল সেই বাসার মালিকের জামাই আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের চেষ্টা করতো। পরে সেখান থেকে মালিকের বউ আমাকে জহিরুল নামে এক লেবাননীর কাছে রেখে আসে। সে আমাকে কয়েক বাসায় কাজ দেয়। কিন্তু বেতনের টাকা সেই-ই তুলে নিতো। নানাভাবে অসম্মান করার চেষ্টা করতো। পরে সেখান থেকে পালিয়ে এক বাঙালির মাধ্যমে নানা সমস্যা উতরিয়ে দেশে ফিরেছি। রহিমা বলেন, ওই সময় সাহিদাকে ফোন করলেও সে আসেনি। আমার কোন খোঁজও নেয়নি। উল্লেখ্য, আসাদের করা মামলার সাক্ষী লেবানন ফেরত এই রহিমা।
No comments