সুদমুক্ত আর্থিক লেনদেনের ধরন by অধ্যক্ষ মো: ইয়াছিন মজুমদার
ইসলাম
একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। ইসলামে লেনদেন ও বেচাকেনার সুনির্দিষ্ট নিয়ম
রয়েছে। রাসূল সা: ও সাহাবায়ে কেরাম রা:-এর সময়ের আমানত, করজ, বাঈ
(ক্রয়-বিক্রয়) ইত্যাদির আধুনিক ও যুগোপযোগী সংস্করণ ইসলামি ব্যাংক। ইসলামি
ব্যাংক ইসলামি বিধান অনুযায়ী লেনদেন করে নাকি অন্যান্য সুদভিত্তিক পরিচালিত
ব্যাংকের মতোই লেনদেন করে- এ বিষয়টি এ লেখার প্রতিপাদ্য বিষয়। কিছু
ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়- ইসলামি ব্যাংক একটু ঘুরিয়ে সুদ খায়। কেউ কেউ
বলেন, অন্যান্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করলে যেমনিভাবে সুদ দিতে হয় ইসলামি
ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করলেও লাভ দিতে হয়। অন্যান্য ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে
যেমন সুদ পাওয়া যায় ইসলামি ব্যাংকে টাকা জমা রাখলেও তেমনি লাভ পাওয়া যায়।
এমনকি নির্দিষ্ট মেয়াদে নির্দিষ্ট পরিমাণ লভ্যাংশ পাওয়া যায়। তা হলে
প্রচলিত সুদি ব্যাংক ও ইসলামি ব্যাংকের মধ্যে প্রার্থক্য কী? শুধু মানুষকে
ধোঁকা দেয়ার জন্য ইসলামের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
নবী মুহাম্মাদ সা: মদিনাকেন্দ্রিক ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর সব সুদি কারবার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পবিত্র কুরআনের চারটি সূরার বারোটি আয়াতের মাধ্যমে সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়। তা ছাড়া রাসূল সা:-এর অসংখ্য হাদিসে সুদের পাপের ভয়াবহতার বর্ণনা রয়েছে। সুদ হারাম ঘোষণার পর কাফিররা বলাবলি করতে লাগল, ‘অর্থ বিনিয়োগ করে কোনো দ্রব্য ক্রয় করে বিক্রয় করলে লাভের টাকা পাওয়া যায়। আবার সুদে টাকা বিনিয়োগ করলে বাড়তি টাকা পাওয়া যায়- বেচাকেনা তো সুদেরই মতোই।’ অর্থাৎ আধুনিক যুগের ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞদের ভাষা ও জাহিলি যুগের কাফিরদের ভাষায় খুব বেশি তফাত নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন, ‘যারা সুদ খায় তারা হাশরের দিন সে ব্যক্তির ন্যায় দণ্ডায়মান হবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দিয়েছে। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলে- নিশ্চয় ব্যবসা তো সুদেরই অনুরূপ। অথচ আল্লাহ ব্যবসায়কে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন হারাম’ (সূরা বাকারা : ২৭৫)।
এ প্রসঙ্গে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরছি- ধরা যাক, এক ব্যক্তি বাজার থেকে দু’টি ছাগল কিনে আনল। সে একটি ছাগল বিসমিল্লাহ বলে অর্থাৎ আল্লাহর নাম নিয়ে জবেহ করল। অপর ছাগলটি ইচ্ছাকৃত বিসমিল্লাহ বাদ দিয়ে জবেহ করল। এমতাবস্থায় বিসমিল্লাহ বলে জবেহ করা ছাগলটি খাওয়া হালাল, অপর ছাগলটি খাওয়া হারাম হয়ে গেল। কেউ যদি প্রশ্ন করে- একই জাতীয় প্রাণী একই ব্যক্তি একই রকমভাবে একই ছোরা দিয়ে জবেহের কাজ করল, তবে কেন একটি খাওয়া হারাম, অপরটি হালাল? এর উত্তরে এ প্রশ্নকারীকে কী বলা যাবে?
এক যুবক এক যুবতীকে নিয়ে ইজাব কবুল অর্থাৎ বিবাহ ব্যতীত একটি কক্ষে দৈহিক মিলনসহ আনন্দ করে রাত কাটাল। অপর দিকে অন্য দু’জন যুবক-যুবতী দু’জন সাক্ষীর সামনে ইজাব কবুল বলে একই রকম রাত কাটাল। প্রথম দু’জন যুবক-যুবতীর কর্ম হবে মারাত্মক পাপ। পরবর্তী দু’জন যুবক-যুবতীর কাজ হবে সওয়াবের অর্থাৎ পুণ্যের। যদি কেউ প্রশ্ন করে, একই রকম কাজ করে এক জোড়া যুবক-যুবতীর হবে পাপ, অপর জোড়া যুবক-যুবতীর হবে পুণ্য- এ পার্থক্য কেন? এর উত্তরে এ প্রশ্নকারীকে কী বলা যাবে? কেউ যদি বলে একজন মূর্তিপূজারী ঈশ্বরে বিশ্বাস করে মাটি বা পাথরের মূর্তির সামনে সিজদা দিয়ে ঈশ্বরের নৈকট্য লাভ করতে চায়, অপর দিকে একজন মুসলিম আল্লাহকে বিশ্বাস করে আল্লাহকে পেতে পাথরের কাবাঘরকে সামনে নিয়ে সেজদা দেয়। উভয় কাজ তো একই রকম। তা হলে মূর্তির সামনে সিজদাদানকারী জাহান্নামে এবং কাবার সামনে সিজদাকারী জান্নাতে যাবে- এ পার্থক্য কেন? এ ধরনের প্রশ্নকারীকে নিঃসন্দেহে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ ও বোকা বলা হবে।
উল্লিখিত তিনটি উদাহরণের প্রতিটিতে দু’ধরনের কাজের মধ্যে বাহ্যিক তেমন কোনো পার্থক্য না থাকলেও একটি কাজ ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক করা হয়েছে তাই তা পুণ্যের, অপরটি শরিয়াহ মোতাবেক না হওয়ায় পাপের। ঠিক তেমনিভাবে সাধারণ ব্যাংক সুদযুক্ত হওয়ায় ও শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত না হওয়ায় ইসলামি বিধানমতে তাতে লেনদেনে পাপ হবে। ইসলামি ব্যাংক শরিয়াহর নিয়ম অনুসরণ করায় তাতে লেনদেনে পুণ্য হবে।
পাঠকের যেন বিরক্তির কারণ না হয় তাই অতি সংক্ষেপে ইসলামি ব্যাংক লেনদেনে শরিয়াহর যে পদ্ধতি অনুসরণ করে তার কিছু অংশ তুলে ধরছি-
মুদারাবা পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে দু’টি পক্ষ থাকে। এক পক্ষ সাহিবুল মাল অর্থাৎ অর্থ জোগানদাতা। অপর পক্ষ ওই অর্থ দ্বারা তার মেধা, শ্রম ও চেষ্টার মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালনা করে। দ্বিতীয় পক্ষকে বলে মুদারিব। ইসলামি ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাবের ও সঞ্চয়ী আমানতের লেনদেনে টাকা জমাকারী সাহিবুল মাল আর ব্যাংক মুদারিব। বিনিয়োগকৃত টাকায় যে লাভ হবে শর্তানুযায়ী উভয় পক্ষ তার লভ্যাংশের ভাগ পাবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক তার পূর্ব অভিজ্ঞতা ও ব্যবসায়ের অবস্থার আলোকে স্বল্পহারে মাসিক নির্দিষ্ট লভ্যাংশ প্রদান করতে পারে। বছরান্তে পূর্ণাঙ্গ লভ্যাংশ হিসাব করে পূর্বে প্রদত্ত লভ্যাংশ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট লাভ সাহিবুল মালকে প্রদান করতে পারে। লোকসান হলে লোকসানের ভাগও নিতে হয়। অপর দিকে ব্যাংক যখন কোনো ব্যক্তিকে ওই পদ্ধতিতে বিনিয়োগ দেয়, তখন ব্যাংক হবে সাহিবুল মাল আর বিনিয়োগগ্রহিতা মুদারিব।
আলওয়াদিয়া পদ্ধতি : চলতি হিসাবে গ্রাহক যে টাকা হিফাজতের জন্য জমা রাখে মধ্যবর্তী সময়ে তা ব্যাংককে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। চাহিবামাত্র ব্যাংক তার অর্থ তাকে ফেরত দিতে বাধ্য। এ হিসাবের ক্ষেত্রে লাভ-ক্ষতির কোনো সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংক বেশির ভাগ বাঈ (ক্রয়-বিক্রয়) পদ্ধতি অনুসরণ করে; যেমন- শিরকাত ফিলবাই (অংশীদারি পদ্ধতি), ইজারা (ভাড়া, মজুরি), বাইয়েমুরাবাহা (লাভে বিক্রি), বাইয়েমুয়াজ্জাল (মুনাফার ভিত্তিতে বাকিতে মাল বিক্রি), বাইয়েসালাম (আগাম মূল্যশোধে বিক্রি), বাইয়েইসতিসনা (কোনো নির্ধারিত দামে কোনো বস্তু তৈরি করে দেয়া) ইত্যাদি পদ্ধতি অনুসরণ করে। ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ইসলামে নিষিদ্ধ কোনো ব্যবসায় সম্পদ বিনিয়োগ করে না। ইসলামি ব্যাংকগুলো আমানত গ্রহণের ক্ষেত্রে মুদারাবা ও মুশারাকা পদ্ধতি গ্রহণ করলেও বিনিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে বাঈ (ক্রয়-বিক্রয়) পদ্ধতি বেশি ব্যবহার করে মুশারাকা মুদারাবা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ প্রদান করলে জনগণ বেশি উপকৃত হতো। নিদির্ষ্ট লাভে বিনিয়োগ অবৈধ নয়; যেমন- কেউ কাউকে এক শত টাকা দিয়ে এক শত দশ টাকা গ্রহণ করলে বাড়তি দশ টাকা সুদ; কিন্তু এক শত টাকার পণ্য কারো কাছে এক শত দশ টাকায় বিক্রি করলে বাড়তি দশ টাকা লাভ ও বৈধ। ইসলামি ব্যাংকগুলো শুধু লাভ করে, লোকসান দেয় না- এ কথাটিও সঠিক নয়, কেননা ব্যাংকে সব শাখার মধ্যে কিছু শাখা লোকসান দিলেও বেশির ভাগ শাখা লাভ করলে গড়ে লাভ হয়। যদি কেউ বলে ইসলামি ব্যাংকগুলো থেকে এসব বিক্রয়সংক্রান্ত ঋণ নিতে গেলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে বলা হয়, মাল কিনে ভাউচার নিয়ে আসুন। তখন গ্রাহক ভুয়া একটি ভাউচার বানিয়ে টাকা নিয়ে যায়। এটা তো টাকা নিয়ে টাকা দেয়া সুদেরই মতো। এর জবাবে বলা যায়, ব্যাংকের লোকজন গিয়ে সরাসরি মাল কিনে দিলেই উত্তম হতো। কিন্তু একটি ব্যাংকের পক্ষে বিভিন্ন কারণে সব সময় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ব্যাংক গ্রাহককে মাল কিনে ভাউচার জমা দিতে বলে মূলত তাকে মাল কেনার উকিল নিযুক্ত করে। এখন গ্রাহক যদি ভুয়া ভাউচার এনে দেয়- গ্রাহক উকালতির দায়িত্ব পালনে ত্র“টি করল। এ জন্য ব্যাংককে দায়ী করা যায় না।
উকিল নিযুক্ত করে লেনদেন, বিবাহশাদী, ক্রয়-বিক্রয় করা ইসলামি শরিয়তে বৈধ। ইসলামি আইনশাস্ত্রে বাবুল উকালাত (উকিল নিযুক্ত করণ) বিষয়ে আলাদা অধ্যায় রয়েছে। আপনি যদি আপনার বাড়িঘর ও সম্পদ বিক্রি করার জন্য কাউকে উকিল নিযুক্ত করেন, তবে ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে আপনাকে যেতে হবে না। যাকে উকিল (আমমোক্তার) নিযুক্ত করেছেন তিনি রেজিস্ট্রি করে দিলেই আপনার বাড়িঘর-সম্পদ বিক্রি হয়ে যাবে। তাহলে ব্যাংক কাউকে দায়িত্ব দিলে, তা অবৈধ হবে কেন? বিক্রয়-পদ্ধতিতে বিনিয়োগে ব্যাংক সাধারণত লোকসানের ভাগ নেয় না। যেমন- আপনি বাজার থেকে একহালি ডিম কিনলেন, ক্রেতা আপনাকে তা বুঝিয়ে দিলো; বাড়িতে আসার পথে আপনি ডিমগুলো ভেঙে ফেললেন। এর দায়ভার কি বিক্রেতা নেবে? বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত ইসলামি ব্যাংকিংয়ের অনুমতি দিয়েছে। ইসলামি ব্যাংকিং যেন শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত হয় সে জন্য ‘গাইড লাইন্স ফর ইসলামিক ব্যাংকিং’ নামে নীতিমালা জারি করেছে। ইসলামি ব্যাংকগুলো সে নীতিমালা মানছে কি না, তার তদারকি বাংলাদেশ ব্যাংক করে। দেশের সব ব্যাংক তাদের তলবি ও মেয়াদি আমানতের এসএলআর হিসাবে একটি নিদিষ্ট অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। ইসালামি ব্যাংক এ জমা ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও এবং ইসলামি বিনিয়োগ বন্ড হিসাবে জমা রাখে- এ বন্ড মুদারাবা পদ্ধতিতে ও আন্তঃইসলামি ব্যাংকিং লেনদেনে ব্যবহৃত হয়; ফলে তা সুদমুক্ত কিন্তু প্রচলিত সুদভিত্তিক ব্যাংক এ জমার বিপরীতে সুদ নেয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে ইসলামি ব্যাংকগুলো ফরেন কারেন্সি ক্লিয়ারিং অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা জমা রাখতে হয়। এবং লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেট অনুযায়ী সুদ পেয়ে থাকে, যা অবৈধ। অপর দিকে বাংলাদেশে ঋণখেলাপির প্রবণতা বেশি থাকায় ঋণখেলাপি প্রবণতা রোধে ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি বিনিয়োগের ওপর ক্ষতি পূরণ আদায় করে। যেসব দেশে ঋণখেলাপি প্রবণতা নেই এবং রাষ্ট্র খেলাপি ঋণ আদায়ের দ্রুত ব্যবস্থা করে দেয়, সেখানে শরিয়াহ বোর্ড ক্ষতিপূরণ আদায়ের অনুমতি দেয় না। ওই ক্ষতিপূরণ আদায় অবৈধ। এসব অবৈধ অর্থ এবং প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইনের ফাঁকফোকরে অন্য উৎস থেকেও ইসলামি ব্যাংকগুলোতে সুদের টাকা আসতে পারে। ইসলামি ব্যাংকগুলো এ সুদের টাকা তার মুনাফা হিসেবে গণ্য করে না। শরিয়াহ বোর্ডের পরামর্শমতো দাতব্য খাতে ব্যয় করে এবং আলাদা করে রেখে দিয়ে হাসপাতাল-ক্লিনিকের মাধ্যমে দরিদ্র অসহায় রোগীর সেবায় ব্যয় করে। দরিদ্রদের মধ্যে শীতবস্ত্র, কম্বল বিতরণ করে, ত্রাণতহবিলে দান করে, ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দান করে।
সুদি ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করা হয়, চাকরিজীবীদের বেতন সুদি ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়া হয়, সুদি ব্যাংকের লোনের মাধ্যমে রাস্তাঘাট তৈরি ও দেশের উন্নয়নকাজ করা হয়। আমরা কি সেই খাদ্য খাই না? সে সামগ্রী ব্যবহার করি না? সে বেতন তুলি না? সে রাস্তায় চলি না? রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কারণে তা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় আইন কি অমান্য করা যাবে? এ ক্ষেত্রে আমরা কি সুদের পাপে পাপী হবো? এ ক্ষেত্রে আমাদের পাপ হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে যদি সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থার পরিবর্তন কামনা না করে খুশি মনে তা করা হয় এবং স্বাভাবিক লেনদেন সুদি ব্যাংকে করা হয় তবে পাপ হবে। ইসলামি ব্যাংকগুলো একেকটি লি: কোম্পানি, যদি কোনো কোম্পানি তাদের লাভের জন্য গোপনে শরিয়াহ নীতি লঙ্ঘন করে লেনদেন করে তার পাপ গ্রাহকের হবে না, ওই পাপ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। ইসলামি ব্যাংকগুলো শরিয়াহভিত্তিক পরিচালনার জন্য রয়েছে বিজ্ঞ আলেমদের সমন্বয়ে শরিয়াহ বোর্ড। ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লি: নামে প্রথম বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। এ ব্যাংকের সুফল দেখে বর্তমানে বাংলাদেশে নয়টির বেশি ইসলামি ব্যাংকের শত শত শাখা ইসলামি ব্যাংকিং পদ্ধতি অনুসরণ করছে। এসব ব্যাংকের নিজস্ব শরিয়াহ বোর্ড ছাড়াও রয়েছে সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস্ অফ বাংলাদেশ। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে বিভিন্ন নামে শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকিংব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (ওউই)। অন্যান্য ব্যাংক জামানত ছাড়া ঋণ দেয় না; ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী উপকৃত হয় না। এ জন্য ইসলামি ব্যাংক পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প, আরবান পুউর ডেভেলপমেন্ট স্ক্রিমের মাধ্যমে প্রায় জামানতবিহীন বিনিয়োগ করে দরিদ্র জনগণের উপকার করছে; ফলে ইসলামি ব্যাংকিং কল্যাণকর ব্যাংকিং। ইসলামি ব্যাংকিং স্বাভাবিক লেনদেন করে মুসলমানগণ সুদের ভয়াবহ পাপ থেকে রক্ষা পেতে পারে।
লেখক : অধ্যক্ষ, ফুলগাঁও ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসা, কুমিল্লা
নবী মুহাম্মাদ সা: মদিনাকেন্দ্রিক ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর সব সুদি কারবার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পবিত্র কুরআনের চারটি সূরার বারোটি আয়াতের মাধ্যমে সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়। তা ছাড়া রাসূল সা:-এর অসংখ্য হাদিসে সুদের পাপের ভয়াবহতার বর্ণনা রয়েছে। সুদ হারাম ঘোষণার পর কাফিররা বলাবলি করতে লাগল, ‘অর্থ বিনিয়োগ করে কোনো দ্রব্য ক্রয় করে বিক্রয় করলে লাভের টাকা পাওয়া যায়। আবার সুদে টাকা বিনিয়োগ করলে বাড়তি টাকা পাওয়া যায়- বেচাকেনা তো সুদেরই মতোই।’ অর্থাৎ আধুনিক যুগের ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞদের ভাষা ও জাহিলি যুগের কাফিরদের ভাষায় খুব বেশি তফাত নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন, ‘যারা সুদ খায় তারা হাশরের দিন সে ব্যক্তির ন্যায় দণ্ডায়মান হবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দিয়েছে। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলে- নিশ্চয় ব্যবসা তো সুদেরই অনুরূপ। অথচ আল্লাহ ব্যবসায়কে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন হারাম’ (সূরা বাকারা : ২৭৫)।
এ প্রসঙ্গে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরছি- ধরা যাক, এক ব্যক্তি বাজার থেকে দু’টি ছাগল কিনে আনল। সে একটি ছাগল বিসমিল্লাহ বলে অর্থাৎ আল্লাহর নাম নিয়ে জবেহ করল। অপর ছাগলটি ইচ্ছাকৃত বিসমিল্লাহ বাদ দিয়ে জবেহ করল। এমতাবস্থায় বিসমিল্লাহ বলে জবেহ করা ছাগলটি খাওয়া হালাল, অপর ছাগলটি খাওয়া হারাম হয়ে গেল। কেউ যদি প্রশ্ন করে- একই জাতীয় প্রাণী একই ব্যক্তি একই রকমভাবে একই ছোরা দিয়ে জবেহের কাজ করল, তবে কেন একটি খাওয়া হারাম, অপরটি হালাল? এর উত্তরে এ প্রশ্নকারীকে কী বলা যাবে?
এক যুবক এক যুবতীকে নিয়ে ইজাব কবুল অর্থাৎ বিবাহ ব্যতীত একটি কক্ষে দৈহিক মিলনসহ আনন্দ করে রাত কাটাল। অপর দিকে অন্য দু’জন যুবক-যুবতী দু’জন সাক্ষীর সামনে ইজাব কবুল বলে একই রকম রাত কাটাল। প্রথম দু’জন যুবক-যুবতীর কর্ম হবে মারাত্মক পাপ। পরবর্তী দু’জন যুবক-যুবতীর কাজ হবে সওয়াবের অর্থাৎ পুণ্যের। যদি কেউ প্রশ্ন করে, একই রকম কাজ করে এক জোড়া যুবক-যুবতীর হবে পাপ, অপর জোড়া যুবক-যুবতীর হবে পুণ্য- এ পার্থক্য কেন? এর উত্তরে এ প্রশ্নকারীকে কী বলা যাবে? কেউ যদি বলে একজন মূর্তিপূজারী ঈশ্বরে বিশ্বাস করে মাটি বা পাথরের মূর্তির সামনে সিজদা দিয়ে ঈশ্বরের নৈকট্য লাভ করতে চায়, অপর দিকে একজন মুসলিম আল্লাহকে বিশ্বাস করে আল্লাহকে পেতে পাথরের কাবাঘরকে সামনে নিয়ে সেজদা দেয়। উভয় কাজ তো একই রকম। তা হলে মূর্তির সামনে সিজদাদানকারী জাহান্নামে এবং কাবার সামনে সিজদাকারী জান্নাতে যাবে- এ পার্থক্য কেন? এ ধরনের প্রশ্নকারীকে নিঃসন্দেহে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ ও বোকা বলা হবে।
উল্লিখিত তিনটি উদাহরণের প্রতিটিতে দু’ধরনের কাজের মধ্যে বাহ্যিক তেমন কোনো পার্থক্য না থাকলেও একটি কাজ ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক করা হয়েছে তাই তা পুণ্যের, অপরটি শরিয়াহ মোতাবেক না হওয়ায় পাপের। ঠিক তেমনিভাবে সাধারণ ব্যাংক সুদযুক্ত হওয়ায় ও শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত না হওয়ায় ইসলামি বিধানমতে তাতে লেনদেনে পাপ হবে। ইসলামি ব্যাংক শরিয়াহর নিয়ম অনুসরণ করায় তাতে লেনদেনে পুণ্য হবে।
পাঠকের যেন বিরক্তির কারণ না হয় তাই অতি সংক্ষেপে ইসলামি ব্যাংক লেনদেনে শরিয়াহর যে পদ্ধতি অনুসরণ করে তার কিছু অংশ তুলে ধরছি-
মুদারাবা পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে দু’টি পক্ষ থাকে। এক পক্ষ সাহিবুল মাল অর্থাৎ অর্থ জোগানদাতা। অপর পক্ষ ওই অর্থ দ্বারা তার মেধা, শ্রম ও চেষ্টার মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালনা করে। দ্বিতীয় পক্ষকে বলে মুদারিব। ইসলামি ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাবের ও সঞ্চয়ী আমানতের লেনদেনে টাকা জমাকারী সাহিবুল মাল আর ব্যাংক মুদারিব। বিনিয়োগকৃত টাকায় যে লাভ হবে শর্তানুযায়ী উভয় পক্ষ তার লভ্যাংশের ভাগ পাবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক তার পূর্ব অভিজ্ঞতা ও ব্যবসায়ের অবস্থার আলোকে স্বল্পহারে মাসিক নির্দিষ্ট লভ্যাংশ প্রদান করতে পারে। বছরান্তে পূর্ণাঙ্গ লভ্যাংশ হিসাব করে পূর্বে প্রদত্ত লভ্যাংশ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট লাভ সাহিবুল মালকে প্রদান করতে পারে। লোকসান হলে লোকসানের ভাগও নিতে হয়। অপর দিকে ব্যাংক যখন কোনো ব্যক্তিকে ওই পদ্ধতিতে বিনিয়োগ দেয়, তখন ব্যাংক হবে সাহিবুল মাল আর বিনিয়োগগ্রহিতা মুদারিব।
আলওয়াদিয়া পদ্ধতি : চলতি হিসাবে গ্রাহক যে টাকা হিফাজতের জন্য জমা রাখে মধ্যবর্তী সময়ে তা ব্যাংককে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। চাহিবামাত্র ব্যাংক তার অর্থ তাকে ফেরত দিতে বাধ্য। এ হিসাবের ক্ষেত্রে লাভ-ক্ষতির কোনো সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংক বেশির ভাগ বাঈ (ক্রয়-বিক্রয়) পদ্ধতি অনুসরণ করে; যেমন- শিরকাত ফিলবাই (অংশীদারি পদ্ধতি), ইজারা (ভাড়া, মজুরি), বাইয়েমুরাবাহা (লাভে বিক্রি), বাইয়েমুয়াজ্জাল (মুনাফার ভিত্তিতে বাকিতে মাল বিক্রি), বাইয়েসালাম (আগাম মূল্যশোধে বিক্রি), বাইয়েইসতিসনা (কোনো নির্ধারিত দামে কোনো বস্তু তৈরি করে দেয়া) ইত্যাদি পদ্ধতি অনুসরণ করে। ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ইসলামে নিষিদ্ধ কোনো ব্যবসায় সম্পদ বিনিয়োগ করে না। ইসলামি ব্যাংকগুলো আমানত গ্রহণের ক্ষেত্রে মুদারাবা ও মুশারাকা পদ্ধতি গ্রহণ করলেও বিনিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে বাঈ (ক্রয়-বিক্রয়) পদ্ধতি বেশি ব্যবহার করে মুশারাকা মুদারাবা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ প্রদান করলে জনগণ বেশি উপকৃত হতো। নিদির্ষ্ট লাভে বিনিয়োগ অবৈধ নয়; যেমন- কেউ কাউকে এক শত টাকা দিয়ে এক শত দশ টাকা গ্রহণ করলে বাড়তি দশ টাকা সুদ; কিন্তু এক শত টাকার পণ্য কারো কাছে এক শত দশ টাকায় বিক্রি করলে বাড়তি দশ টাকা লাভ ও বৈধ। ইসলামি ব্যাংকগুলো শুধু লাভ করে, লোকসান দেয় না- এ কথাটিও সঠিক নয়, কেননা ব্যাংকে সব শাখার মধ্যে কিছু শাখা লোকসান দিলেও বেশির ভাগ শাখা লাভ করলে গড়ে লাভ হয়। যদি কেউ বলে ইসলামি ব্যাংকগুলো থেকে এসব বিক্রয়সংক্রান্ত ঋণ নিতে গেলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে বলা হয়, মাল কিনে ভাউচার নিয়ে আসুন। তখন গ্রাহক ভুয়া একটি ভাউচার বানিয়ে টাকা নিয়ে যায়। এটা তো টাকা নিয়ে টাকা দেয়া সুদেরই মতো। এর জবাবে বলা যায়, ব্যাংকের লোকজন গিয়ে সরাসরি মাল কিনে দিলেই উত্তম হতো। কিন্তু একটি ব্যাংকের পক্ষে বিভিন্ন কারণে সব সময় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ব্যাংক গ্রাহককে মাল কিনে ভাউচার জমা দিতে বলে মূলত তাকে মাল কেনার উকিল নিযুক্ত করে। এখন গ্রাহক যদি ভুয়া ভাউচার এনে দেয়- গ্রাহক উকালতির দায়িত্ব পালনে ত্র“টি করল। এ জন্য ব্যাংককে দায়ী করা যায় না।
উকিল নিযুক্ত করে লেনদেন, বিবাহশাদী, ক্রয়-বিক্রয় করা ইসলামি শরিয়তে বৈধ। ইসলামি আইনশাস্ত্রে বাবুল উকালাত (উকিল নিযুক্ত করণ) বিষয়ে আলাদা অধ্যায় রয়েছে। আপনি যদি আপনার বাড়িঘর ও সম্পদ বিক্রি করার জন্য কাউকে উকিল নিযুক্ত করেন, তবে ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে আপনাকে যেতে হবে না। যাকে উকিল (আমমোক্তার) নিযুক্ত করেছেন তিনি রেজিস্ট্রি করে দিলেই আপনার বাড়িঘর-সম্পদ বিক্রি হয়ে যাবে। তাহলে ব্যাংক কাউকে দায়িত্ব দিলে, তা অবৈধ হবে কেন? বিক্রয়-পদ্ধতিতে বিনিয়োগে ব্যাংক সাধারণত লোকসানের ভাগ নেয় না। যেমন- আপনি বাজার থেকে একহালি ডিম কিনলেন, ক্রেতা আপনাকে তা বুঝিয়ে দিলো; বাড়িতে আসার পথে আপনি ডিমগুলো ভেঙে ফেললেন। এর দায়ভার কি বিক্রেতা নেবে? বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত ইসলামি ব্যাংকিংয়ের অনুমতি দিয়েছে। ইসলামি ব্যাংকিং যেন শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত হয় সে জন্য ‘গাইড লাইন্স ফর ইসলামিক ব্যাংকিং’ নামে নীতিমালা জারি করেছে। ইসলামি ব্যাংকগুলো সে নীতিমালা মানছে কি না, তার তদারকি বাংলাদেশ ব্যাংক করে। দেশের সব ব্যাংক তাদের তলবি ও মেয়াদি আমানতের এসএলআর হিসাবে একটি নিদিষ্ট অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। ইসালামি ব্যাংক এ জমা ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও এবং ইসলামি বিনিয়োগ বন্ড হিসাবে জমা রাখে- এ বন্ড মুদারাবা পদ্ধতিতে ও আন্তঃইসলামি ব্যাংকিং লেনদেনে ব্যবহৃত হয়; ফলে তা সুদমুক্ত কিন্তু প্রচলিত সুদভিত্তিক ব্যাংক এ জমার বিপরীতে সুদ নেয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে ইসলামি ব্যাংকগুলো ফরেন কারেন্সি ক্লিয়ারিং অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা জমা রাখতে হয়। এবং লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেট অনুযায়ী সুদ পেয়ে থাকে, যা অবৈধ। অপর দিকে বাংলাদেশে ঋণখেলাপির প্রবণতা বেশি থাকায় ঋণখেলাপি প্রবণতা রোধে ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি বিনিয়োগের ওপর ক্ষতি পূরণ আদায় করে। যেসব দেশে ঋণখেলাপি প্রবণতা নেই এবং রাষ্ট্র খেলাপি ঋণ আদায়ের দ্রুত ব্যবস্থা করে দেয়, সেখানে শরিয়াহ বোর্ড ক্ষতিপূরণ আদায়ের অনুমতি দেয় না। ওই ক্ষতিপূরণ আদায় অবৈধ। এসব অবৈধ অর্থ এবং প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইনের ফাঁকফোকরে অন্য উৎস থেকেও ইসলামি ব্যাংকগুলোতে সুদের টাকা আসতে পারে। ইসলামি ব্যাংকগুলো এ সুদের টাকা তার মুনাফা হিসেবে গণ্য করে না। শরিয়াহ বোর্ডের পরামর্শমতো দাতব্য খাতে ব্যয় করে এবং আলাদা করে রেখে দিয়ে হাসপাতাল-ক্লিনিকের মাধ্যমে দরিদ্র অসহায় রোগীর সেবায় ব্যয় করে। দরিদ্রদের মধ্যে শীতবস্ত্র, কম্বল বিতরণ করে, ত্রাণতহবিলে দান করে, ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দান করে।
সুদি ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করা হয়, চাকরিজীবীদের বেতন সুদি ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়া হয়, সুদি ব্যাংকের লোনের মাধ্যমে রাস্তাঘাট তৈরি ও দেশের উন্নয়নকাজ করা হয়। আমরা কি সেই খাদ্য খাই না? সে সামগ্রী ব্যবহার করি না? সে বেতন তুলি না? সে রাস্তায় চলি না? রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কারণে তা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় আইন কি অমান্য করা যাবে? এ ক্ষেত্রে আমরা কি সুদের পাপে পাপী হবো? এ ক্ষেত্রে আমাদের পাপ হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে যদি সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থার পরিবর্তন কামনা না করে খুশি মনে তা করা হয় এবং স্বাভাবিক লেনদেন সুদি ব্যাংকে করা হয় তবে পাপ হবে। ইসলামি ব্যাংকগুলো একেকটি লি: কোম্পানি, যদি কোনো কোম্পানি তাদের লাভের জন্য গোপনে শরিয়াহ নীতি লঙ্ঘন করে লেনদেন করে তার পাপ গ্রাহকের হবে না, ওই পাপ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। ইসলামি ব্যাংকগুলো শরিয়াহভিত্তিক পরিচালনার জন্য রয়েছে বিজ্ঞ আলেমদের সমন্বয়ে শরিয়াহ বোর্ড। ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লি: নামে প্রথম বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। এ ব্যাংকের সুফল দেখে বর্তমানে বাংলাদেশে নয়টির বেশি ইসলামি ব্যাংকের শত শত শাখা ইসলামি ব্যাংকিং পদ্ধতি অনুসরণ করছে। এসব ব্যাংকের নিজস্ব শরিয়াহ বোর্ড ছাড়াও রয়েছে সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস্ অফ বাংলাদেশ। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে বিভিন্ন নামে শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকিংব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (ওউই)। অন্যান্য ব্যাংক জামানত ছাড়া ঋণ দেয় না; ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী উপকৃত হয় না। এ জন্য ইসলামি ব্যাংক পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প, আরবান পুউর ডেভেলপমেন্ট স্ক্রিমের মাধ্যমে প্রায় জামানতবিহীন বিনিয়োগ করে দরিদ্র জনগণের উপকার করছে; ফলে ইসলামি ব্যাংকিং কল্যাণকর ব্যাংকিং। ইসলামি ব্যাংকিং স্বাভাবিক লেনদেন করে মুসলমানগণ সুদের ভয়াবহ পাপ থেকে রক্ষা পেতে পারে।
লেখক : অধ্যক্ষ, ফুলগাঁও ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসা, কুমিল্লা
No comments