নিজস্ব মুদ্রা, পুলিশ-সেনাবাহিনী আছে, নেই রাষ্ট্রের স্বীকৃতি by নাজমুল আহসান
আদেন
উপসাগরের দক্ষিণ তীরে সোমালি অধ্যুষিত দেশ সোমালিল্যান্ড। একটি রাষ্ট্রের
যা যা থাকা প্রয়োজন, তার প্রায় সবই আছে ছোট এ অঞ্চলটির। নিজস্ব মুদ্রা,
কার্যকরী আমলাতন্ত্র, প্রশিক্ষিত পুলিশ ও সেনাবাহিনী আছে দেশটির। রাজধানী
শহর হার্গেইসাভিত্তিক সরকার পুরো অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে। মোটের ওপর
শান্তিপূর্ণ দেশটি দক্ষিণের সোমালিয়ার চেয়ে পুরোপুরি বিপরীত। সোমালিয়ার
রাজধানীতে গত সপ্তাহান্তেই একটি জনপ্রিয় হোটেলে বোমা হামলা ও ছোটাছুটিতে
মারা গেছে ১৪ জন। সোমালিল্যান্ড বিভিন্ন আইনি চুক্তিতে (যেমন: বিদেশী
করপোরেশনের সঙ্গে তেল অনুসন্ধান করার লাইসেন্সের চুক্তি) প্রবেশ করেছে।
দেশটি কূটনৈতিক কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে জাতিসংঘ, আরব লীগ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন
এবং বৃটেন, আমেরিকা ও ডেনমার্কের মতো দেশের সঙ্গে। কিন্তু ১৯৯১ সালে
স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে এখনও একটি বিদেশী রাষ্ট্রের স্বীকৃতিও মিলেনি
সোমালিল্যান্ডের। বহির্বিশ্বের কাছে দেশটি সোমালিয়ার একটি স্বশাসিত অঞ্চল,
যার মূলে রয়েছে মোগাদিসুভিত্তিক সোমালি কেন্দ্রীয় সরকার (এসএফজি)। কিন্তু
রাষ্ট্র কেন নয় সোমালিল্যান্ডের? এ প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছে বৃটেনের
প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য ইকনোমিস্ট।
ইকনোমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাধীনতা-উত্তর যুগে আফ্রিকার ভূ-রাজনীতিতে ‘উপনিবেশিক সীমান্তে’র (১৯ শতকে ইউরোপের উপনিবেশ শক্তির বেঁধে দেয়া সীমান্ত) প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর একটি প্রবণতা দেখা গেছে। ১৯৬০-এর পর পুরো মহাদেশে উপনিবেশিক মানচিত্রের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনই দেখা গেছে কেবল। একটি হলো, ১৯৯৩ সালে ইথিওপিয়া থেকে ইরিত্রিয়ার পৃথক হওয়া, আরেকটি হলো ২০১১ সালে সুদান থেকে দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতা অর্জন। কিন্তু সোমালিল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) পূর্বের নীতিতেই বহাল আছে। তাদের মতে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিলে এ অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি বৃদ্ধি পাবে। আর এইউ’র ওপরই আফ্রিকার সীমান্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নির্ভর করে জাতিসংঘ। এইউ’র মতে, শুধুমাত্র বৃহত্তর সোমালিয়ার সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সোমালিল্যান্ড স্বাধীনতা পেতে পারে। কিন্তু সোমালিল্যান্ডারদের মতে, এ যুক্তি ধোপে টিকে না। কেননা, সোমালিল্যান্ড পুরনো ঔপনিবেশিক সীমান্ত রক্ষা করে চলেছে, বরং সোমালিয়াই তা করেনি। এছাড়া, স্বাধীনতার পূর্বেই পৃথক একটি বৃটিশ উপনিবেশ হিসেবে শাসিত হতো সোমালিল্যান্ড। ৫ দিনের জন্য সার্বভৌম দেশ হিসেবে মর্যাদাও পেয়েছিল দেশটি। ১৯৬০ সালে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ওই বৃটিশ সোমালিল্যান্ড ও দক্ষিণের ইতালীয় সোমালিল্যান্ড মিলেই গঠিত হয়েছিল সোমালিয়া। তাই সোমালিল্যান্ডের স্বাধীনতা আলাদা কিছু নয়, অনেকটা বিয়ে বিচ্ছেদের মতো।
সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধ প্রায় আড়াই দশক ধরে চলছে। ২০১২ সালে নতুন সংবিধান ঘোষণার পরও এসএফজি যেসব অঞ্চলের কর্তৃত্ব দাবি করে তা নড়বড়ে। অনেকের আশঙ্কা, এ অঞ্চলে নতুন রাষ্ট্রের (সোমালিল্যান্ড) উত্থান ঘটলে তা সোমালিয়ার অন্যান্য প্রদেশ, যেমন পুটল্যান্ড, জুব্বাল্যান্ড, হিরণল্যান্ডের প্রদেশকেও স্বাধীনতা ঘোষণা করতে অনুপ্রাণিত করবে। এতে করে সোমালিয়া বিভক্ত হয়ে যাবে। শুরু হবে পূর্বের মতো আঞ্চলিক উত্তেজনা, যেমনটি হয়েছিল সোমালি ও ইথিওপিয়ানদের মধ্যে। তাছাড়া, সোমালিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার ঐক্যবদ্ধ সোমালি রাষ্ট্র বৈ কিছুই মানতে রাজি নয়। যদি মোগাদিসুকে দুর্বল করা হয়, তবে উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে নতুন করে বিবাদ শুরু হবে। কয়েক বছর ধরে চলা দু’ পক্ষের শান্তি আলোচনার সফলতা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। সোমালিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো তো বটেই, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের জন্যও এটি একটি প্রলয়ঙ্করী পরিস্থিতি। অনেকের যুক্তি, এ ধরনের পরিস্থিতিই বিরাজ করছে আজকের দক্ষিণ সুদানে।
অপরদিকে দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতার জন্য যেমন লবি কাজ করেছে, সোমালিল্যান্ডের স্বাধীনতার জন্য চিৎকার করা লোকেরা তেমন উঁচু দরের নয়। দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতার পক্ষে আমেরিকার কংগ্রেসে অনেকেই উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। অপরদিকে অনেকগুলো সিটি কাউন্সিল সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেয়। যেমনটি দিয়েছে বৃটেনের কার্ডিফ শহর। কিন্তু এখন পর্যন্ত সোমালিল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বহু দূরের স্বপ্ন। যতদিন পর্যন্ত সোমালিল্যান্ডের ‘মাতৃরাষ্ট্র’ সোমালিয়া হর্ন অব আফ্রিকা’র মূল নিরাপত্তা উদ্বেগের অন্তর্ভুক্ত থাকবে, ততদিন দেশটির স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে ওঠার চিৎকার কেউ শুনবে না।
ইকনোমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাধীনতা-উত্তর যুগে আফ্রিকার ভূ-রাজনীতিতে ‘উপনিবেশিক সীমান্তে’র (১৯ শতকে ইউরোপের উপনিবেশ শক্তির বেঁধে দেয়া সীমান্ত) প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর একটি প্রবণতা দেখা গেছে। ১৯৬০-এর পর পুরো মহাদেশে উপনিবেশিক মানচিত্রের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনই দেখা গেছে কেবল। একটি হলো, ১৯৯৩ সালে ইথিওপিয়া থেকে ইরিত্রিয়ার পৃথক হওয়া, আরেকটি হলো ২০১১ সালে সুদান থেকে দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতা অর্জন। কিন্তু সোমালিল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) পূর্বের নীতিতেই বহাল আছে। তাদের মতে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিলে এ অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি বৃদ্ধি পাবে। আর এইউ’র ওপরই আফ্রিকার সীমান্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নির্ভর করে জাতিসংঘ। এইউ’র মতে, শুধুমাত্র বৃহত্তর সোমালিয়ার সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সোমালিল্যান্ড স্বাধীনতা পেতে পারে। কিন্তু সোমালিল্যান্ডারদের মতে, এ যুক্তি ধোপে টিকে না। কেননা, সোমালিল্যান্ড পুরনো ঔপনিবেশিক সীমান্ত রক্ষা করে চলেছে, বরং সোমালিয়াই তা করেনি। এছাড়া, স্বাধীনতার পূর্বেই পৃথক একটি বৃটিশ উপনিবেশ হিসেবে শাসিত হতো সোমালিল্যান্ড। ৫ দিনের জন্য সার্বভৌম দেশ হিসেবে মর্যাদাও পেয়েছিল দেশটি। ১৯৬০ সালে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ওই বৃটিশ সোমালিল্যান্ড ও দক্ষিণের ইতালীয় সোমালিল্যান্ড মিলেই গঠিত হয়েছিল সোমালিয়া। তাই সোমালিল্যান্ডের স্বাধীনতা আলাদা কিছু নয়, অনেকটা বিয়ে বিচ্ছেদের মতো।
সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধ প্রায় আড়াই দশক ধরে চলছে। ২০১২ সালে নতুন সংবিধান ঘোষণার পরও এসএফজি যেসব অঞ্চলের কর্তৃত্ব দাবি করে তা নড়বড়ে। অনেকের আশঙ্কা, এ অঞ্চলে নতুন রাষ্ট্রের (সোমালিল্যান্ড) উত্থান ঘটলে তা সোমালিয়ার অন্যান্য প্রদেশ, যেমন পুটল্যান্ড, জুব্বাল্যান্ড, হিরণল্যান্ডের প্রদেশকেও স্বাধীনতা ঘোষণা করতে অনুপ্রাণিত করবে। এতে করে সোমালিয়া বিভক্ত হয়ে যাবে। শুরু হবে পূর্বের মতো আঞ্চলিক উত্তেজনা, যেমনটি হয়েছিল সোমালি ও ইথিওপিয়ানদের মধ্যে। তাছাড়া, সোমালিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার ঐক্যবদ্ধ সোমালি রাষ্ট্র বৈ কিছুই মানতে রাজি নয়। যদি মোগাদিসুকে দুর্বল করা হয়, তবে উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে নতুন করে বিবাদ শুরু হবে। কয়েক বছর ধরে চলা দু’ পক্ষের শান্তি আলোচনার সফলতা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। সোমালিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো তো বটেই, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের জন্যও এটি একটি প্রলয়ঙ্করী পরিস্থিতি। অনেকের যুক্তি, এ ধরনের পরিস্থিতিই বিরাজ করছে আজকের দক্ষিণ সুদানে।
অপরদিকে দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতার জন্য যেমন লবি কাজ করেছে, সোমালিল্যান্ডের স্বাধীনতার জন্য চিৎকার করা লোকেরা তেমন উঁচু দরের নয়। দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতার পক্ষে আমেরিকার কংগ্রেসে অনেকেই উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। অপরদিকে অনেকগুলো সিটি কাউন্সিল সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেয়। যেমনটি দিয়েছে বৃটেনের কার্ডিফ শহর। কিন্তু এখন পর্যন্ত সোমালিল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বহু দূরের স্বপ্ন। যতদিন পর্যন্ত সোমালিল্যান্ডের ‘মাতৃরাষ্ট্র’ সোমালিয়া হর্ন অব আফ্রিকা’র মূল নিরাপত্তা উদ্বেগের অন্তর্ভুক্ত থাকবে, ততদিন দেশটির স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে ওঠার চিৎকার কেউ শুনবে না।
No comments