সিসিকে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে by ডেভিড হার্স্ট
সিসি
রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলে মিসর ধ্বংসের পথে ধাবিত হবে। এতে দেশটি বিভিন্ন অংশে
বিভক্ত হয়ে যেতে পারে এবং দেশের মানুষ ব্যাপকভাবে অভিবাসন গ্রহণের জন্য
ইউরোপে পাড়ি জমাতে পারে। মিসর ভ্রমণে আসা প্রত্যেক বিমান থেকে রুশ এবং
ব্রিটিশ পর্যটকদের সরিয়ে নেয়া হলে পর্যটননগরী শারম আল শেখে আর্থিক বিপর্যয়
নেমে আসবে। ২৫৩ ডলার নির্ধারিত বেতনের (মিসরের ন্যূনতম ৬৩ ডলার বেতনের
বেশি) কর্মী থাটুর বলেন, ‘আমি জানি না ওই বিমানে কী ঘটেছিল। আমি মনে করি
আমাদের ব্যবহার করা হয়েছে, আমি সে সম্পর্কে চিন্তা করতেই চাই না। আমি ভাবছি
পশ্চিমারা যা চায় মিসরকে তা জোরপূর্বক করাতে চেষ্টা করছে। এই দুর্ঘটনা সে
জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ এবং সে জন্য আমাদের বাধ্য করা হচ্ছে। আমাদেরকে
আর্থিকভাবে অসহায় করা হচ্ছে।’ ডুবুরির প্রশিক্ষক থেকে ট্যাক্সিচালকের পেশা
গ্রহণকারী আহমদ বলেন, ‘তারা আমাদেরকে হত্যা করতে চায়।’ আমি অন্য কোনো
ব্যাখ্যা দেখছি না। এমনিতে কেবল ইংরেজ এবং রুশ পর্যটকেরা প্রধানত এখানে
আসতো। তারা তাদের বাড়িতে চলে যাচ্ছে। সরকারপন্থী মিডিয়ায় ভাষার মারপ্যাঁচে
সুনিপুণভাবে শারম আল শেখকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য পশ্চিমারা ষড়যন্ত্র আঁটে।
একজন অসহায় ব্রিটিশ পর্যটক তার দেশের রাষ্ট্রদূতের বাগাড়ম্বরপূর্ণ
বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, রাষ্ট্রদূত জন কেসন সরকার সমর্থক আল আহরাম
পত্রিকাকে বলেছেন, ‘আমরা আমাদের ছুটির দিন অব্যাহত রাখতে চাই এবং এখন আমরা
শারম আল শেখ পর্যটননগরী ত্যাগ করতে চাই না।’ অথচ তিনি সত্যিকারভাবে যা
বলেছিলেন ইউটিউব ক্লিপে তার দালিলিক প্রমাণ রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘সমস্যা
কী? প্রকৃত সমস্যা কী? আমরা এখানে কেন?... এখানে আজ সকালে নিরাপত্তা সমস্যা
দেখা গেছে এবং এখন আপনারা সমস্যা সমাধানের জন্য এখানে এসেছেন। তারপরও আমরা
এখানে কেন? অবশিষ্ট সবাই যখন বাড়ি চলে গেছে তখন আমরা এখানে থাকব কেন?’
আলেক্সান্দ্রিয়ায়ও স্পষ্টত বৈদেশিক হস্তক্ষেপ কাজ করেছে। মিসরের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটিতে প্রচুর ভারী বৃষ্টিপাত ও ব্যাপক বন্যার কারণে ১৭ জনের প্রাণহানি ও ২৮ জন লোক আহত হলেÑ এর জন্য দায়ী হিসেবে সরকার মুসলিম ব্রাদারহুডের ১৭ জন সদস্যকে গ্রেফতার করে। অথচ শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার সমস্যার কারণে প্রায়ই এ ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হয়ে থাকে। ব্রাদারহুড সদস্যদেরকে পয়ঃপ্রণালীর পাইপ বন্ধ করে দেয়ার জন্য দায়ী করা হয়। বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার ধ্বংসের অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়। অথচ রাষ্ট্রের ব্যর্থতার জন্য অন্য বলির পাঁঠা রয়েছে। সম্প্রতি সরকারি কৌঁসুলি মিসরের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং তার ছেলে সালাহ এবং তওফিক দায়াবকে তিন রাত আটক রাখার পর ছয় হাজার ৩৮৫ ডলারের বিনিময়ে জামিনে মুক্তি দিয়েছে। এর আগে একটি ফৌজদারি আদালত দিয়্যাব, মোহাম্মদ আল গামাল এবং অন্য ১৬ জনের আর্থিক সম্পদ আটক করার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়। কেবল নিউ লিজা হাউজিং কম্পাউন্ড প্রজেক্টের সম্পদ এখনো আটক করে রাখা হয়েছে। জনাব দিয়্যাবকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ অবৈধভাবে দখলের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। অথচ তারা হচ্ছেন মিসরের অত্যন্ত ধনী লোক এবং তারা ২০১৩ সালের অভ্যুত্থানের সমর্থক। দিয়্যাব মিসরের বৃহত্তম বেসরকারি মালিকানাধীন দৈনিক সংবাদপত্র আল মাশরি আল ইউমেব সহপ্রতিষ্ঠাতা। তার সহযোগী হিসাম কাশেম বলেন, আমি মনে করি পত্রিকার কাভারেজের জন্যই দিয়্যাবকে গ্রেফাতর করা হয়েছে। মোবারক আমলের ১৬ জন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করাটা সরকারের পক্ষ থেকে একটি বার্তা। সিসিপন্থী ড্রিম টিভির সাংবাদিক ওয়াহেল আল ইবরাশিকে টিভি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
বাদশাহ ফারুকের সময় থেকে মিসরের পাউন্ডের মান দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পরিবর্তন করে সুদের হার বাড়িয়ে এবং ব্যাংকের ডলারকে অনুপ্রাণিত করে পাউন্ডের প্রতি সমর্থন দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এসব ব্যবস্থা নেয়ার পরও অবমূল্যায়ন বা মুদ্রাস্ফীতি থামানো যাচ্ছে না। বিশ্লেষকেরা আরো মুদ্রাস্ফীতি অবশ্যম্ভাবী বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে মাত্র ১০ মাসে মিসরীয় পাউন্ড ১৪ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে। মোহাম্মদ আয়েশ আল কুদস আল আরবিতে লিখেছেন, মুদ্রার পতন ও মূল্য হ্রাসের তিনটি কারণ রয়েছে। রাস্তায় সেনাবাহিনীকে মোতায়েন রাখার ব্যয়, পর্যটনের পতন যেটি মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ১১ শতাংশ জোগান দেয় এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের পঞ্চম উৎস, সর্বশেষ হচ্ছে দুর্নীতি। মিসরকে অর্থ দিয়ে (যেখানে অর্থনীতির ৪০ শতাংশেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করে সেনাবাহিনী) আক্ষরিক অর্থে ওই অর্থ একটি কালো গর্তে ফেলানো হয়। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদেশী মুদ্রা বর্তমানে প্রতি মাসে ১০০ কোটি ডলার করে কমে যাচ্ছে। মিসরের মুদ্রা সঙ্কটকে অবশ্য আর্থিক ব্যবস্থাপনার ব্যতিক্রমধর্মী অনিয়মের জন্য চিহ্নিত করতে হবে। মাত্র দুই বছর আগে আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি ক্ষমতা দখল করার সময়ও উপসাগরীয় এলাকার সবচেয়ে ধনী দু’টি দেশের সমর্থন পেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং তেল ও গ্যাসের অধিকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সমর্থন তিনি পেয়েছিলেন। একপর্যায়ে সিসি তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের সাথে যে কথাবার্তা বলেছেন তার নির্ভরযোগ্য টেপ ফাঁস হয়ে যায়। তাতে জানা যায়, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েত মিসরকে নগদ তিন হাজার ৯৫০ কোটি ডলার দিয়েছে। (৯.৫ বিলিয়ন ডলার) ২০১৩ সালের অভ্যুত্থানের সময় তারা এই অর্থ প্রদান করে।
২০১৪ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতেও তারা অর্থ প্রদান করে। তখন থেকে কেউ কেউ হিসাব করেছেন এই অর্থের পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার কোটি ডলারে গিয়ে পৌঁছবে। এত অর্থ কোথায় গেল? এখন একটা বিষয় নিশ্চিত মিসরে উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে আর কোনো অর্থ সহায়তা যাবে না। বর্তমানে আপনি মিসরের যে দিকেই তাকান সে দিকেই নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা দেখতে পাবেন। এর জন্য এক ব্যক্তি সিসি এবং একটি প্রতিষ্ঠান মিসরের সেনাবাহিনীর প্রতিই সবাই অঙ্গুলি নির্দেশ করছে। সিসি এবং সেনাবাহিনীÑ কোনো বিদেশী হাত দেশটির অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী নয়।
স্বৈরশাসকেরা রক্তপাত ঘটাতে পারে। তারা কোনো যুবককে গুলি করে হত্যা করতে কোনো দ্বিধা করে না। পিতা-মাতার দুঃখ কান্না তাদের দ্বিধাগ্রস্ত করতে পারে না। রাবা এবং তিয়ানানমেন স্কোয়ার বা আন্দিজানের মতো গণহত্যার মধ্যে তাদের কাছে কোনো পার্থক্য নেই। আটক বা জেলহাজতে মৃত্যু কারাগারে নির্যাতন, ক্যাঙারু আদালতের বিচার, গণহারে মৃত্যুদণ্ড প্রদান মানবাধিকার লঙ্ঘনের রিপোর্টের ব্যাপারে কোনো ছোট লাইব্রেরি এবং তাদের বিবৃতি বা বক্তব্যের প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণের মতো অপরাধের প্রমাণ যে রয়েছে তার তালিকা প্রস্তুত করলে দেখা যাবে এগুলো সবই সিসি অতিক্রম করেছেন।
সিসি ক্ষমতা দখলের পর থেকে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে দোর্দণ্ড শাসক হয়েও এখন দুর্বল অবস্থায় পড়েছেন। তিনি সত্যিকার অর্থে এখন অর্থনীতি, রাজনীতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন। রাষ্ট্র নিজেই এখন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। এ ধরনের অবস্থায় উদগ্রীব হয়ে তিনি লন্ডন সফর করেন। তিনি অনেক আশা নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন যাতে সেটি তার প্রেসিডেন্সিতে টার্নিং পয়েন্ট প্রমাণিত হতে পারে। তিনিই চুক্তির প্রধান বাস্তবায়নকারী হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারিপার্শি¦ক অবস্থার কারণে সেটি তিনি বাতিল করে দেন। সিসি সিনাই ও ইসলামিক স্টেট (আইএস) সন্ত্রাসী গ্রুপ তার নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়ে সপ্তাহব্যাপী লন্ডনে অবস্থান করেন। কম্পার্টমেন্টে বোমা স্থাপন করে রুশ বিমানকে ভূপাতিত করার বিষয়টি তিনি নিছক প্রচারণা বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিজেকে দৃঢ় অবস্থানে প্রমাণ করে বাণিজ্য বৃদ্ধির সুবিধা আদায় করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শারম আল শেখে বিমান যোগাযোগ বাতিল করে দিয়ে ক্যামেরুন তার আশাবাদকে নিরাশায় পরিণত করে। পরে ডাচ, জার্মানি, আইরিশ ও রাশিয়া তাদের বিমান যোগাযোগ বাতিল করে দেয়। সিসি দেখতে পেলেন তার গোয়েন্দাদের বুদ্ধির রশি ছিঁড়ে গেছে। এটি কেবল সিনাইর ক্ষেত্রে নয় লিবিয়া ও সিরিয়ার ক্ষেত্রেও। আমেরিকান, ব্রিটিশ ও রুশরা একে অপরের সাথে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করছেÑ সিসির সাথে নয়। ব্রিটিশ-মিসর নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি করার জন্য একটি সফরের আয়োজন করা হয়েছিল। মিসরের বৃহত্তম বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য এবং বাণিজ্যচুক্তি করার লক্ষ্যে এই সফরের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু মিসরের পর্যটন শিল্পে গোয়েন্দা বিপর্যয়ের পর সিসির পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
টিকে থাকার যুদ্ধের অনেকগুলো ফ্রন্টে সিসি হেরে যাচ্ছেন। সর্বপ্রথম তিনি সিনাইয়ে হেরে গেছেন। ওয়ালিয়াত সিনাই নামে পরিচিত সিনাই প্রদেশে আইএস বিদ্রোহীরা ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠেছে। ২০১২ এবং ২০১৫ এর মধ্যে তারা এবং তাদের পূর্বসূরিরা ৪০০-এর বেশি হামলা চালিয়ে মিসরের সাত শতাধিক সামরিক অফিসার ও সৈন্যকে হত্যা করেছে। এটা ১৯৯২ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত গোটা দেশে বিদ্রোহের যত নিহত হয়েছিল তার চেয়েও বেশি। চলতি বছরের জুলাই মাসে সিনাই প্রদেশে সবচেয়ে দুর্ধর্ষ হামলা চালানো হয়। ওই সময় ১৫টি সামরিক ও নিরাপত্তা চৌকিকে টার্গেট করে দু’টিকে ধ্বংস করা হয়।
তিন শতাধিক লোক এই অভিযানে অংশ নেয়। তারা মিসরের সেনাবাহিনীতে আমেরিকার সরবরাহকৃত এপাসিকে ভূপাতিত করার জন্য বিমানবিধ্বংসী ইগলা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। এই অপারেশন ২০ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। সিনাইয়ের বিদ্রোহ সামরিক অভ্যুত্থানের নজির সৃষ্টি করে। কিন্তু অভ্যুত্থান তার চরিত্র ও গুণাগুণ পরিবর্তন করেছে। তাহরির ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্ট পলিসি যে সংখ্যার কথা বলেছে তাতে দেখা যায়, ২০১৩ সালের জুন মাসের আগে ২৩ মাসে ৭৮ বার হামলা চালানো হয়। গড়ে প্রতি মাসে ৩ দশমিক চারবার হামলা। অভ্যুত্থানের পর একই সময়ে ১২২৩ বার হামলা বা প্রতি মাসে ৫৩ দশমিক ২ বার হামলা করা হয়। অর্থাৎ হামলা ১৪৬৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সিসি সব কিছুর জন্য উত্তর সিনাইয়ের জনসংখ্যার ওপর দোষ দিচ্ছেন। তিনি ১৩৪৭ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যা, ১১ হাজার ৯০৬ জনকে ডিটেনশন এবং ২২ হাজার ৯৯২ জনকে নির্বাসনে পাঠিয়েছেন। কমপক্ষে ৩,২৫৫টি ভবনকে ধ্বংস করেছেন। তার ইসরাইলি সমর্থকেরা এখন স্বীকার করছেন, সিসি বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে পদে পদে ভুল করেছেন। তিনি সিনাইকে দক্ষিণ সুদানে পরিণত করেছেন। অথচ তিনি মুরসির অধীনে কাজ করার সময় নিজেই সেনাকর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন।
শারীরিকভাবে যুদ্ধ করার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে যুদ্ধ করা। সিসি যেমন তার সমর্থকদের ব্যাপারে যতœবান নন তেমনি সাধারণভাবে মিসরের ব্যাপারেও সতর্ক নন। সিসি পোলিং বুথগুলোকে খালি করে দিয়েছেন। কথিত এই নির্বাচনে নাটকীয়ভাবে ভোটার উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। এই পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম দিন ভোটার উপস্থিতি ছিল ৩ শতাংশ। এ ব্যাপারে ইজিপশিয়ান ক্লাব ফর জাজেস-এর প্রধান আবদুল্লাহ ফাতি বলেন, ‘কোনো ভুল হয়নি, কোনো অনিয়ম হয়নি, কোনো হইচই বা চিৎকারের ঘটনা ঘটেনি এবং এমনকি কোনো ভোটারও ছিল না।’ এ কথা বলার পর তিনি হাসেন।
লায়লা সুয়েক এবং তার ছেলে ব্লগার ও সেকুলার বামদের হিরো আলা আবদ আল ফাত্তাহ উভয়ে সেনাবাহিনীকে রাবা এবং আন নাহদায় অবস্থান কর্মসূচি ভেঙে দিতে উৎসাহিত করেছিলেন। লায়লা বলেন, ‘বিশেষভাবে আন নাহদার প্রতিবাদ পুলিশ দিয়ে অবিলম্বে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া উচিত।’ অন্য দিকে আলা বলেন, ‘এটি হচ্ছে সশস্ত্র প্রতিবাদ। এটির কোনো রাজনৈতিক সমাধান নেই। এটির নিরাপত্তা সমাধান প্রয়োজন। ‘বর্তমানে আলা জেলে আছেন। এখন ৪১ হাজার রাজবন্দী কারাগারে আটক আছেন। লায়লা কারাগারে অনশন ধর্মঘট পালন করছেন। লায়লা বলেন, ‘আমার বয়স এখন প্রায় ৬০ বছর। মিসরে আমার জীবনে সিসির মতো অত্যাচারী ও অপরাধী শাসক আর দেখিনি।’ তার কথাই সঠিক। মিসরের আধুনিক ইতিহাসে সিসিই হচ্ছে সবচেয়ে অত্যাচারী শাসক। তাকে যেতে হবে। যদি তিনি ক্ষমতা ছেড়ে না দেন তাহলে মিসর বিপর্যয়ের পথে ধাবিত হবে। এই বিপর্যয়ে পড়ে রাষ্ট্রটি খণ্ড বিখণ্ড হয়ে যেতে পারে এবং ইউরোপের পথে গণ-অভিবাসন শুরু হবে। ওই ধরনের ঘটনা ঘটার আগে কাউকে না কাউকে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। হয়তো অন্য কোনো সেনাকর্মকর্তা এই পদক্ষেপ নিতে পারেন। লেখক : ডেভিড হার্স্ট মিডল ইস্ট আইয়ের প্রধান সম্পাদক ও গার্ডিয়ানের ফরেইন লিডার রাইটার। লেখাটির ভাষান্তর করেছেন মুহাম্মদ খায়রুল বাশার
আলেক্সান্দ্রিয়ায়ও স্পষ্টত বৈদেশিক হস্তক্ষেপ কাজ করেছে। মিসরের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটিতে প্রচুর ভারী বৃষ্টিপাত ও ব্যাপক বন্যার কারণে ১৭ জনের প্রাণহানি ও ২৮ জন লোক আহত হলেÑ এর জন্য দায়ী হিসেবে সরকার মুসলিম ব্রাদারহুডের ১৭ জন সদস্যকে গ্রেফতার করে। অথচ শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার সমস্যার কারণে প্রায়ই এ ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হয়ে থাকে। ব্রাদারহুড সদস্যদেরকে পয়ঃপ্রণালীর পাইপ বন্ধ করে দেয়ার জন্য দায়ী করা হয়। বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার ধ্বংসের অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়। অথচ রাষ্ট্রের ব্যর্থতার জন্য অন্য বলির পাঁঠা রয়েছে। সম্প্রতি সরকারি কৌঁসুলি মিসরের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং তার ছেলে সালাহ এবং তওফিক দায়াবকে তিন রাত আটক রাখার পর ছয় হাজার ৩৮৫ ডলারের বিনিময়ে জামিনে মুক্তি দিয়েছে। এর আগে একটি ফৌজদারি আদালত দিয়্যাব, মোহাম্মদ আল গামাল এবং অন্য ১৬ জনের আর্থিক সম্পদ আটক করার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়। কেবল নিউ লিজা হাউজিং কম্পাউন্ড প্রজেক্টের সম্পদ এখনো আটক করে রাখা হয়েছে। জনাব দিয়্যাবকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ অবৈধভাবে দখলের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। অথচ তারা হচ্ছেন মিসরের অত্যন্ত ধনী লোক এবং তারা ২০১৩ সালের অভ্যুত্থানের সমর্থক। দিয়্যাব মিসরের বৃহত্তম বেসরকারি মালিকানাধীন দৈনিক সংবাদপত্র আল মাশরি আল ইউমেব সহপ্রতিষ্ঠাতা। তার সহযোগী হিসাম কাশেম বলেন, আমি মনে করি পত্রিকার কাভারেজের জন্যই দিয়্যাবকে গ্রেফাতর করা হয়েছে। মোবারক আমলের ১৬ জন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করাটা সরকারের পক্ষ থেকে একটি বার্তা। সিসিপন্থী ড্রিম টিভির সাংবাদিক ওয়াহেল আল ইবরাশিকে টিভি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
বাদশাহ ফারুকের সময় থেকে মিসরের পাউন্ডের মান দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পরিবর্তন করে সুদের হার বাড়িয়ে এবং ব্যাংকের ডলারকে অনুপ্রাণিত করে পাউন্ডের প্রতি সমর্থন দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এসব ব্যবস্থা নেয়ার পরও অবমূল্যায়ন বা মুদ্রাস্ফীতি থামানো যাচ্ছে না। বিশ্লেষকেরা আরো মুদ্রাস্ফীতি অবশ্যম্ভাবী বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে মাত্র ১০ মাসে মিসরীয় পাউন্ড ১৪ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে। মোহাম্মদ আয়েশ আল কুদস আল আরবিতে লিখেছেন, মুদ্রার পতন ও মূল্য হ্রাসের তিনটি কারণ রয়েছে। রাস্তায় সেনাবাহিনীকে মোতায়েন রাখার ব্যয়, পর্যটনের পতন যেটি মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ১১ শতাংশ জোগান দেয় এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের পঞ্চম উৎস, সর্বশেষ হচ্ছে দুর্নীতি। মিসরকে অর্থ দিয়ে (যেখানে অর্থনীতির ৪০ শতাংশেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করে সেনাবাহিনী) আক্ষরিক অর্থে ওই অর্থ একটি কালো গর্তে ফেলানো হয়। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদেশী মুদ্রা বর্তমানে প্রতি মাসে ১০০ কোটি ডলার করে কমে যাচ্ছে। মিসরের মুদ্রা সঙ্কটকে অবশ্য আর্থিক ব্যবস্থাপনার ব্যতিক্রমধর্মী অনিয়মের জন্য চিহ্নিত করতে হবে। মাত্র দুই বছর আগে আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি ক্ষমতা দখল করার সময়ও উপসাগরীয় এলাকার সবচেয়ে ধনী দু’টি দেশের সমর্থন পেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং তেল ও গ্যাসের অধিকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সমর্থন তিনি পেয়েছিলেন। একপর্যায়ে সিসি তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের সাথে যে কথাবার্তা বলেছেন তার নির্ভরযোগ্য টেপ ফাঁস হয়ে যায়। তাতে জানা যায়, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েত মিসরকে নগদ তিন হাজার ৯৫০ কোটি ডলার দিয়েছে। (৯.৫ বিলিয়ন ডলার) ২০১৩ সালের অভ্যুত্থানের সময় তারা এই অর্থ প্রদান করে।
২০১৪ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতেও তারা অর্থ প্রদান করে। তখন থেকে কেউ কেউ হিসাব করেছেন এই অর্থের পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার কোটি ডলারে গিয়ে পৌঁছবে। এত অর্থ কোথায় গেল? এখন একটা বিষয় নিশ্চিত মিসরে উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে আর কোনো অর্থ সহায়তা যাবে না। বর্তমানে আপনি মিসরের যে দিকেই তাকান সে দিকেই নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা দেখতে পাবেন। এর জন্য এক ব্যক্তি সিসি এবং একটি প্রতিষ্ঠান মিসরের সেনাবাহিনীর প্রতিই সবাই অঙ্গুলি নির্দেশ করছে। সিসি এবং সেনাবাহিনীÑ কোনো বিদেশী হাত দেশটির অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী নয়।
স্বৈরশাসকেরা রক্তপাত ঘটাতে পারে। তারা কোনো যুবককে গুলি করে হত্যা করতে কোনো দ্বিধা করে না। পিতা-মাতার দুঃখ কান্না তাদের দ্বিধাগ্রস্ত করতে পারে না। রাবা এবং তিয়ানানমেন স্কোয়ার বা আন্দিজানের মতো গণহত্যার মধ্যে তাদের কাছে কোনো পার্থক্য নেই। আটক বা জেলহাজতে মৃত্যু কারাগারে নির্যাতন, ক্যাঙারু আদালতের বিচার, গণহারে মৃত্যুদণ্ড প্রদান মানবাধিকার লঙ্ঘনের রিপোর্টের ব্যাপারে কোনো ছোট লাইব্রেরি এবং তাদের বিবৃতি বা বক্তব্যের প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণের মতো অপরাধের প্রমাণ যে রয়েছে তার তালিকা প্রস্তুত করলে দেখা যাবে এগুলো সবই সিসি অতিক্রম করেছেন।
সিসি ক্ষমতা দখলের পর থেকে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে দোর্দণ্ড শাসক হয়েও এখন দুর্বল অবস্থায় পড়েছেন। তিনি সত্যিকার অর্থে এখন অর্থনীতি, রাজনীতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন। রাষ্ট্র নিজেই এখন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। এ ধরনের অবস্থায় উদগ্রীব হয়ে তিনি লন্ডন সফর করেন। তিনি অনেক আশা নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন যাতে সেটি তার প্রেসিডেন্সিতে টার্নিং পয়েন্ট প্রমাণিত হতে পারে। তিনিই চুক্তির প্রধান বাস্তবায়নকারী হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারিপার্শি¦ক অবস্থার কারণে সেটি তিনি বাতিল করে দেন। সিসি সিনাই ও ইসলামিক স্টেট (আইএস) সন্ত্রাসী গ্রুপ তার নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়ে সপ্তাহব্যাপী লন্ডনে অবস্থান করেন। কম্পার্টমেন্টে বোমা স্থাপন করে রুশ বিমানকে ভূপাতিত করার বিষয়টি তিনি নিছক প্রচারণা বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিজেকে দৃঢ় অবস্থানে প্রমাণ করে বাণিজ্য বৃদ্ধির সুবিধা আদায় করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শারম আল শেখে বিমান যোগাযোগ বাতিল করে দিয়ে ক্যামেরুন তার আশাবাদকে নিরাশায় পরিণত করে। পরে ডাচ, জার্মানি, আইরিশ ও রাশিয়া তাদের বিমান যোগাযোগ বাতিল করে দেয়। সিসি দেখতে পেলেন তার গোয়েন্দাদের বুদ্ধির রশি ছিঁড়ে গেছে। এটি কেবল সিনাইর ক্ষেত্রে নয় লিবিয়া ও সিরিয়ার ক্ষেত্রেও। আমেরিকান, ব্রিটিশ ও রুশরা একে অপরের সাথে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করছেÑ সিসির সাথে নয়। ব্রিটিশ-মিসর নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি করার জন্য একটি সফরের আয়োজন করা হয়েছিল। মিসরের বৃহত্তম বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য এবং বাণিজ্যচুক্তি করার লক্ষ্যে এই সফরের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু মিসরের পর্যটন শিল্পে গোয়েন্দা বিপর্যয়ের পর সিসির পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
টিকে থাকার যুদ্ধের অনেকগুলো ফ্রন্টে সিসি হেরে যাচ্ছেন। সর্বপ্রথম তিনি সিনাইয়ে হেরে গেছেন। ওয়ালিয়াত সিনাই নামে পরিচিত সিনাই প্রদেশে আইএস বিদ্রোহীরা ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠেছে। ২০১২ এবং ২০১৫ এর মধ্যে তারা এবং তাদের পূর্বসূরিরা ৪০০-এর বেশি হামলা চালিয়ে মিসরের সাত শতাধিক সামরিক অফিসার ও সৈন্যকে হত্যা করেছে। এটা ১৯৯২ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত গোটা দেশে বিদ্রোহের যত নিহত হয়েছিল তার চেয়েও বেশি। চলতি বছরের জুলাই মাসে সিনাই প্রদেশে সবচেয়ে দুর্ধর্ষ হামলা চালানো হয়। ওই সময় ১৫টি সামরিক ও নিরাপত্তা চৌকিকে টার্গেট করে দু’টিকে ধ্বংস করা হয়।
তিন শতাধিক লোক এই অভিযানে অংশ নেয়। তারা মিসরের সেনাবাহিনীতে আমেরিকার সরবরাহকৃত এপাসিকে ভূপাতিত করার জন্য বিমানবিধ্বংসী ইগলা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। এই অপারেশন ২০ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। সিনাইয়ের বিদ্রোহ সামরিক অভ্যুত্থানের নজির সৃষ্টি করে। কিন্তু অভ্যুত্থান তার চরিত্র ও গুণাগুণ পরিবর্তন করেছে। তাহরির ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্ট পলিসি যে সংখ্যার কথা বলেছে তাতে দেখা যায়, ২০১৩ সালের জুন মাসের আগে ২৩ মাসে ৭৮ বার হামলা চালানো হয়। গড়ে প্রতি মাসে ৩ দশমিক চারবার হামলা। অভ্যুত্থানের পর একই সময়ে ১২২৩ বার হামলা বা প্রতি মাসে ৫৩ দশমিক ২ বার হামলা করা হয়। অর্থাৎ হামলা ১৪৬৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সিসি সব কিছুর জন্য উত্তর সিনাইয়ের জনসংখ্যার ওপর দোষ দিচ্ছেন। তিনি ১৩৪৭ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যা, ১১ হাজার ৯০৬ জনকে ডিটেনশন এবং ২২ হাজার ৯৯২ জনকে নির্বাসনে পাঠিয়েছেন। কমপক্ষে ৩,২৫৫টি ভবনকে ধ্বংস করেছেন। তার ইসরাইলি সমর্থকেরা এখন স্বীকার করছেন, সিসি বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে পদে পদে ভুল করেছেন। তিনি সিনাইকে দক্ষিণ সুদানে পরিণত করেছেন। অথচ তিনি মুরসির অধীনে কাজ করার সময় নিজেই সেনাকর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন।
শারীরিকভাবে যুদ্ধ করার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে যুদ্ধ করা। সিসি যেমন তার সমর্থকদের ব্যাপারে যতœবান নন তেমনি সাধারণভাবে মিসরের ব্যাপারেও সতর্ক নন। সিসি পোলিং বুথগুলোকে খালি করে দিয়েছেন। কথিত এই নির্বাচনে নাটকীয়ভাবে ভোটার উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। এই পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম দিন ভোটার উপস্থিতি ছিল ৩ শতাংশ। এ ব্যাপারে ইজিপশিয়ান ক্লাব ফর জাজেস-এর প্রধান আবদুল্লাহ ফাতি বলেন, ‘কোনো ভুল হয়নি, কোনো অনিয়ম হয়নি, কোনো হইচই বা চিৎকারের ঘটনা ঘটেনি এবং এমনকি কোনো ভোটারও ছিল না।’ এ কথা বলার পর তিনি হাসেন।
লায়লা সুয়েক এবং তার ছেলে ব্লগার ও সেকুলার বামদের হিরো আলা আবদ আল ফাত্তাহ উভয়ে সেনাবাহিনীকে রাবা এবং আন নাহদায় অবস্থান কর্মসূচি ভেঙে দিতে উৎসাহিত করেছিলেন। লায়লা বলেন, ‘বিশেষভাবে আন নাহদার প্রতিবাদ পুলিশ দিয়ে অবিলম্বে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া উচিত।’ অন্য দিকে আলা বলেন, ‘এটি হচ্ছে সশস্ত্র প্রতিবাদ। এটির কোনো রাজনৈতিক সমাধান নেই। এটির নিরাপত্তা সমাধান প্রয়োজন। ‘বর্তমানে আলা জেলে আছেন। এখন ৪১ হাজার রাজবন্দী কারাগারে আটক আছেন। লায়লা কারাগারে অনশন ধর্মঘট পালন করছেন। লায়লা বলেন, ‘আমার বয়স এখন প্রায় ৬০ বছর। মিসরে আমার জীবনে সিসির মতো অত্যাচারী ও অপরাধী শাসক আর দেখিনি।’ তার কথাই সঠিক। মিসরের আধুনিক ইতিহাসে সিসিই হচ্ছে সবচেয়ে অত্যাচারী শাসক। তাকে যেতে হবে। যদি তিনি ক্ষমতা ছেড়ে না দেন তাহলে মিসর বিপর্যয়ের পথে ধাবিত হবে। এই বিপর্যয়ে পড়ে রাষ্ট্রটি খণ্ড বিখণ্ড হয়ে যেতে পারে এবং ইউরোপের পথে গণ-অভিবাসন শুরু হবে। ওই ধরনের ঘটনা ঘটার আগে কাউকে না কাউকে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। হয়তো অন্য কোনো সেনাকর্মকর্তা এই পদক্ষেপ নিতে পারেন। লেখক : ডেভিড হার্স্ট মিডল ইস্ট আইয়ের প্রধান সম্পাদক ও গার্ডিয়ানের ফরেইন লিডার রাইটার। লেখাটির ভাষান্তর করেছেন মুহাম্মদ খায়রুল বাশার
No comments