জিএসপি দিলে দাও না দিলে না দাও -প্রধানমন্ত্রী
জিএসপি
নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভয়েস
অব আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি নিয়ে
যে ১৬টি শর্ত দিয়েছিল বাংলাদেশ তা পূরণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ জিএসপি
সুবিধা খুব কম পেত। কাজেই এত শর্ত দেয়া অযৌক্তিক। আর জিএসপি ছাড়াও রপ্তানি
বেড়েছে ৩২ বিলিয়ন ডলার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিএসপি নিয়ে আমরা বলছি দিলে
দাও না দিলে না দাও। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ৭০তম অধিবেশনে অংশ নিতে
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে অবস্থিত
জাতিসংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ভয়েস অব আমেরিকাকে এ সাক্ষাৎকার দেন
প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারটি নেন ভয়েস অব আমেরিকার সরকার কবির উদ্দিন।
সাক্ষাৎকারে তিনি জাতিসংঘের দুটো পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন এটা তাদের অবদান। বিরোধী দলের অপরিহার্যতা নিয়ে করা প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে সংসদে যারা বিরোধী দল আছে তারা যথেষ্ট গঠনমূলক কাজ করে যাচ্ছে। তারা সমালোচনা করছে, ওয়াকআউট করছে, প্রতিবাদও করছে। আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে সংসদে অসংলগ্ন কথাবার্তা, খিস্তি খেউরের জন্য কথা কান পাতা যেত না। সাক্ষাৎকারের শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ একটা বিজয়ী জাতি হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে সম্মান পেত। সেই সম্মানটা ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে ধুলায় লুটিয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল বলেই সেই জায়গা থেকে আবার বাংলাদেশের মানুষের সেই ভাবমূর্তিটাকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। অন্য কেউ আনবে না। এট হলো বাস্তব কথা।
এখানে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম। ভয়েস অব আমেরিকার পক্ষ থেকে শুরুতেই দু-দুটো পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি। এবং সেই সঙ্গে এ দুটো পুরস্কার- জলবায়ু পরিবর্তন এবং তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন নিয়ে আমাদের দর্শক শ্রোতাদের কিছু বলবেন?
উত্তর: আমি প্রথমে বাংলাদেশের মানুষকে অভিনন্দন জানাই। কারণ যে পুরস্কার আমি পেয়েছি এটা ঠিক আমার নয় এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য। কারণ বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেভাবে সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন এবং আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আজকে যতটুকু কাজ করতে পারছি তারই অনুপ্রেরণা। ওনার কাছ থেকেই সবকিছু শেখা। কাজেই যেটুকু পুরস্কার যা কিছু স্বীকৃতি এটাতো বাংলাদেশের মানুষের অবদান।
প্রশ্ন: নতুন সহস্রাব্দের প্রথম দশকে আপনার সরকার, আপনার নেতৃত্বাধীন সরকার বেশির ভাগ সময় ক্ষমতায় থেকেছেন। অনেক কিছু পেয়েছেন। অনেক কিছু পাওয়া বাকি রয়েছে। সে সম্পর্কে বলবেন-
উত্তর: ২০০০ সালে আমি তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলাম যখন আমরা সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করি এবং কি কি কর্মসূচি নেয়া যায় সেটা যখন আমরা গ্রহণ করি। আমার সৌভাগ্য যে, তখন হয়তো খুব বেশি সময় আমরা পাই নি কাজ করতে কিন্তু আমাদের যে দলীয় নীতিমালা অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তার সঙ্গে কিন্তু এ সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রাগুলি সামঞ্জস্যপূর্ণ আমরা করি। আমরা যখন একদিকে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করি- সেটা ছিল ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। আর ৫ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করেছিলাম যখন আমি ৯৬ থেকে ২০০১ এর সরকারে ছিলাম। এর মাঝখানে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কখনোই কোন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয় নি। যে কারণে মানুষ তার ফলটা পায়নি। আমরা ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা যখন গ্রহণ করি, তার মাঝে কিন্তু এই এমডিজি গোল অনেকগুলো আমরা এর ভেতরে সম্পৃক্ত করে বাস্তবায়ন করি। এবং যার ফলাফলটা মানুষ পাচ্ছে। সেইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অর্থাৎ ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত একটা পরীক্ষিত পরিকল্পনা আমরা নেই। দীর্ঘমেয়াদি যে কাজগুলো সেগুলো আমরা যেন শুরু করে দিতে পারি। তার ফলে যেটা হবে এটা আমাদের পক্ষে বাস্তবায়ন করাটা খুব সহজ হবে। এবং যার ফলাফলটা আমাদের দেশের মানুষ পাবে। সাধারণ মানুষ পাবে। এর মাঝে যেমন যেটা সবথেকে বড় দরকার- দারিদ্র্যবিমোচোন, শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া, মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং সেই সঙ্গে আরও বেশি উন্নয়নটাকে ত্বরান্বিত করা। এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।
প্রশ্ন: আপনি এই যে ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কথা বললেন, আপনি ২০২০ সালের কথা উল্লেখ করলেন। আমরা জানি আপনি ২০২১ এর মধ্যে আপনি দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। আমরা এখন আপনার কাছ থেকে জানতে চাইছি যে, অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ বলেন, আপনি দেশকে যে প্রবৃদ্ধির হারে নিয়ে গিয়েছেন। ৬+ পার্সেন্টেজ পয়েন্ট। এবং কেউ কেউ বলছেন যে, আরও তিন থেকে চার শতাংশ যদি যোগ হয়- এবং এটা সম্ভব হতে পারে যেমন পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন, ঢাকা-চট্টগ্রাম লেন বৃদ্ধি, গভীর সমুদ্র বন্দর এবং অবকাঠামোগত অন্যান্য উন্নয়ন এবং তাতে করে মধ্যম আয়ের শতাংশ যেটা প্রবৃদ্ধি হার হওয়া দরকার সেখানে পৌঁছানো সম্ভব। তো এ সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করবেন?
উত্তর: আমি তো বিশ্বাস করি যে আমরা করতে পারবো। আমাদের যেটা সমস্যা বাংলাদেশে যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগও দেখা দেয়, আমাদের তো মনুষ্য সৃষ্টি দুর্যোগও মোকাবিলা করতে হয়। এবারে আমাদের যেমন প্রবৃদ্ধি আমরা ৬.৫ ভাগে ইতিমধ্যে নির্দিষ্ট করেছি যে ৬.৫ ভাগ আমরা অর্জন করবো। এমনকি এটা ৬.৭ ভাগেও যেতে পারে। আমাদের কিন্তু লক্ষ্য ছিল ৭ ভাগে ওঠা। একেবারে যারা নিম্নস্তরে পড়ে আছে সেই মানুষগুলোকে আস্তে আস্তে তাদের জীবনটাকে উন্নত করা। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রশ্ন: আপনি এই যে সহিংসতার কথা উল্লেখ করলেন- জঙ্গিবাদ দমন, সন্ত্রাস প্রতিহতকরণ এবং ব্লগার হত্যা হামলা; এগুলো নিবৃত্ত করার জন্য, প্রতিরোধ করার জন্য আপনার সরকার যাই করেছেন, করছেন- তাতে আপনি কতখানি সন্তুষ্ট?
উত্তর: সন্ত্রাসের কথা বললে, আমি নিজেও তো সন্ত্রাসের শিকার বারবার। আমার ওপর গ্রেনেড হামলা থেকে শুরু করে কি না হয়েছে। আমি আমার বাবা মা ভাই সবাইকে হারিয়েছি। ১৫ই আগস্ট যেভাবে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে সপরিবারে সেটা তো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ছিল। সে সন্ত্রাসের শিকার তো আমরা। এমনকি খুনিদের বিচার পর্যন্ত হতে দেয় নি। জেলখানায় কারাগারে বন্দি চার নেতা- তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। এভাবে এ দেশে তো হত্যা কু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি একেবারে মানে -যেন একটা এবং তাদেরকে বিচার না করা। এভাবে করে খুনিদেরকে উৎসাহিত করা। এ ধরনের একটা অবস্থা ছিল। আমি চাচ্ছিলাম বাংলাদেশকে এই জায়গা থেকে সরিয়ে আনতে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে, নিরাপদে চলবে। এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নতি হবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য। এজন্য সন্ত্রাস দমনে আমরা আমাদের সবরকম প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
প্রশ্ন: গণতন্ত্রকামী বিশ্বে আমরা জানি যে একটা শক্তিশালী, সুসংবদ্ধ, গঠনশীল একটি বিরোধীপক্ষ, বিরোধীদল অপরিহার্য একটি অঙ্গ। এ ব্যাপারে আপনি কতখানি সজাগ?
উত্তর: বর্তমানে যারা এখন বিরোধী দলে আছে আমাদের পার্লামেন্টে, কিন্তু আমি এটুকু বলবো- আগে যেমন বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকলে পার্লামেন্টে আসলে কান পাতা যেতো না, কথা শোনা যেতো না। যত নোংরা কথা, বাজে কথা, আজেবাজে খিস্তি খেউর, নানা ধরনের অসংলগ্ন কথা এবং তাদের অঙ্গভঙ্গি, এটা সেটা- মানে এমন ছিল যে পার্লামেন্টের যে স্যাঙ্কটিটি, পার্লামেন্টে যে একটা সুন্দর অবস্থা সেটাই ছিল না। বর্তমানে বাংলাদেশে যারা সত্যিকার অফিসিয়াল বিরোধী দল তারা যথেষ্ট গঠনমূলক কাজ করে যাচ্ছে। তারা সমালোচনা করে, তারা ওয়াকআউট করে তারা প্রতিবাদ করে- সবই তারা করছে।
প্রশ্ন: দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের সঙ্গে তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত এ ভূখণ্ডে যে সম্পর্ক ছিল সে তুলনায় বর্তমান সম্পর্ক কিরকম বলে আপনার মূল্যায়ন-
উত্তর: সেটা আপনারাই মূল্যায়ন করে দেখেন। আমি এই দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের দেশগুলি- প্রতিবেশী দেশ প্রত্যেকের সঙ্গে একটা সুসম্পর্কই শুধু বজায় রাখিনি আমাদের যে সমস্যাগুলো ছিল সমুদ্রসীমা নিয়ে যে সমস্যা মিয়ানমার, ভারতের সঙ্গে সেটা সমাধান করেছি। যার ফলে আজকে দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক আজ বজায় রয়েছে।
প্রশ্ন: আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক- বিশেষ করে গার্মেন্ট ক্ষেত্রে, জিএসপি সুবিধে ইত্যাদি বিষয়ে...
উত্তর: আমাদের সকলের সঙ্গেই বন্ধুত্ব। কারও সঙ্গেই বৈরিতা না। জিএসপি কেন বন্ধ করেছে সেটা আমরা জানি না। তাদের ১৬টা শর্ত দিয়েছিল। সেগুলো আমরা সম্পন্ন করেছি। যদিও জিএসপি সুবিধা বাংলাদেশ খুব কম পেত। কাজেই এটা নিয়ে তাদের এত কন্ডিশন দেয়া- এটা অযৌক্তিক। আমরা ৩২ বিলিয়ন ইউএস ডলার ইতিমধ্যে রপ্তানি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। আমেরিকা আমাদের জিএসপি দেয় না তা সত্ত্বেও কিন্তু বেড়েছে। সেটুকু আমি শুধু বলতে পারি। কিন্তু এটা দিয়ে দিয়ে- এটা মানে একটা ইমেজের মতো যেন ব্যাপার। আমরা বলছি দিলে দাও না দিলে না দাও।
প্রশ্ন: আমরা উপসংহারে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী সম্পর্কে একটু আপনার কাছ থেকে শুনতে চাইবো-
উত্তর: যে বাংলাদেশ ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে একটা বিজয়ী জাতি হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে সম্মান পেতো। সে সম্মানটা ধুলায় লুটিয়ে পড়লো ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে। তখন মনে হতো যে ওটা খুনি জাতি হয়ে গেছে। সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশের মানুষের আবার সেই ভাবমূর্তিটাকে উজ্জ্বল করা, ইমেজটাকে ফিরিয়ে আনা। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল বলেই এটা আনতে পেরেছে। অন্য কেউ আনবে না। এট হলো বাস্তব কথা। আমরা আনবো, আওয়ামী লীগ আনবে। আমরা এনেছি। সে জায়গায় আমরা নিয়ে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ, আরও সামনে নিয়ে যাবো।
ভিওএ: আপনি আমাদের সঙ্গে কথা বললেন, আমাদেরকে সময় দিলেন, ভয়েস অব আমেরিকা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
প্রধানমন্ত্রী: আমি আপনাকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনার মাধ্যমে ভয়েস অব আমেরিকার সকল কলাকৌশল, শ্রোতা, বন্ধু সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সাক্ষাৎকারে তিনি জাতিসংঘের দুটো পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন এটা তাদের অবদান। বিরোধী দলের অপরিহার্যতা নিয়ে করা প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে সংসদে যারা বিরোধী দল আছে তারা যথেষ্ট গঠনমূলক কাজ করে যাচ্ছে। তারা সমালোচনা করছে, ওয়াকআউট করছে, প্রতিবাদও করছে। আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে সংসদে অসংলগ্ন কথাবার্তা, খিস্তি খেউরের জন্য কথা কান পাতা যেত না। সাক্ষাৎকারের শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ একটা বিজয়ী জাতি হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে সম্মান পেত। সেই সম্মানটা ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে ধুলায় লুটিয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল বলেই সেই জায়গা থেকে আবার বাংলাদেশের মানুষের সেই ভাবমূর্তিটাকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। অন্য কেউ আনবে না। এট হলো বাস্তব কথা।
এখানে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম। ভয়েস অব আমেরিকার পক্ষ থেকে শুরুতেই দু-দুটো পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি। এবং সেই সঙ্গে এ দুটো পুরস্কার- জলবায়ু পরিবর্তন এবং তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন নিয়ে আমাদের দর্শক শ্রোতাদের কিছু বলবেন?
উত্তর: আমি প্রথমে বাংলাদেশের মানুষকে অভিনন্দন জানাই। কারণ যে পুরস্কার আমি পেয়েছি এটা ঠিক আমার নয় এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য। কারণ বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেভাবে সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন এবং আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আজকে যতটুকু কাজ করতে পারছি তারই অনুপ্রেরণা। ওনার কাছ থেকেই সবকিছু শেখা। কাজেই যেটুকু পুরস্কার যা কিছু স্বীকৃতি এটাতো বাংলাদেশের মানুষের অবদান।
প্রশ্ন: নতুন সহস্রাব্দের প্রথম দশকে আপনার সরকার, আপনার নেতৃত্বাধীন সরকার বেশির ভাগ সময় ক্ষমতায় থেকেছেন। অনেক কিছু পেয়েছেন। অনেক কিছু পাওয়া বাকি রয়েছে। সে সম্পর্কে বলবেন-
উত্তর: ২০০০ সালে আমি তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলাম যখন আমরা সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করি এবং কি কি কর্মসূচি নেয়া যায় সেটা যখন আমরা গ্রহণ করি। আমার সৌভাগ্য যে, তখন হয়তো খুব বেশি সময় আমরা পাই নি কাজ করতে কিন্তু আমাদের যে দলীয় নীতিমালা অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তার সঙ্গে কিন্তু এ সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রাগুলি সামঞ্জস্যপূর্ণ আমরা করি। আমরা যখন একদিকে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করি- সেটা ছিল ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। আর ৫ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করেছিলাম যখন আমি ৯৬ থেকে ২০০১ এর সরকারে ছিলাম। এর মাঝখানে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কখনোই কোন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয় নি। যে কারণে মানুষ তার ফলটা পায়নি। আমরা ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা যখন গ্রহণ করি, তার মাঝে কিন্তু এই এমডিজি গোল অনেকগুলো আমরা এর ভেতরে সম্পৃক্ত করে বাস্তবায়ন করি। এবং যার ফলাফলটা মানুষ পাচ্ছে। সেইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অর্থাৎ ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত একটা পরীক্ষিত পরিকল্পনা আমরা নেই। দীর্ঘমেয়াদি যে কাজগুলো সেগুলো আমরা যেন শুরু করে দিতে পারি। তার ফলে যেটা হবে এটা আমাদের পক্ষে বাস্তবায়ন করাটা খুব সহজ হবে। এবং যার ফলাফলটা আমাদের দেশের মানুষ পাবে। সাধারণ মানুষ পাবে। এর মাঝে যেমন যেটা সবথেকে বড় দরকার- দারিদ্র্যবিমোচোন, শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া, মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং সেই সঙ্গে আরও বেশি উন্নয়নটাকে ত্বরান্বিত করা। এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।
প্রশ্ন: আপনি এই যে ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কথা বললেন, আপনি ২০২০ সালের কথা উল্লেখ করলেন। আমরা জানি আপনি ২০২১ এর মধ্যে আপনি দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। আমরা এখন আপনার কাছ থেকে জানতে চাইছি যে, অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ বলেন, আপনি দেশকে যে প্রবৃদ্ধির হারে নিয়ে গিয়েছেন। ৬+ পার্সেন্টেজ পয়েন্ট। এবং কেউ কেউ বলছেন যে, আরও তিন থেকে চার শতাংশ যদি যোগ হয়- এবং এটা সম্ভব হতে পারে যেমন পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন, ঢাকা-চট্টগ্রাম লেন বৃদ্ধি, গভীর সমুদ্র বন্দর এবং অবকাঠামোগত অন্যান্য উন্নয়ন এবং তাতে করে মধ্যম আয়ের শতাংশ যেটা প্রবৃদ্ধি হার হওয়া দরকার সেখানে পৌঁছানো সম্ভব। তো এ সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করবেন?
উত্তর: আমি তো বিশ্বাস করি যে আমরা করতে পারবো। আমাদের যেটা সমস্যা বাংলাদেশে যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগও দেখা দেয়, আমাদের তো মনুষ্য সৃষ্টি দুর্যোগও মোকাবিলা করতে হয়। এবারে আমাদের যেমন প্রবৃদ্ধি আমরা ৬.৫ ভাগে ইতিমধ্যে নির্দিষ্ট করেছি যে ৬.৫ ভাগ আমরা অর্জন করবো। এমনকি এটা ৬.৭ ভাগেও যেতে পারে। আমাদের কিন্তু লক্ষ্য ছিল ৭ ভাগে ওঠা। একেবারে যারা নিম্নস্তরে পড়ে আছে সেই মানুষগুলোকে আস্তে আস্তে তাদের জীবনটাকে উন্নত করা। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রশ্ন: আপনি এই যে সহিংসতার কথা উল্লেখ করলেন- জঙ্গিবাদ দমন, সন্ত্রাস প্রতিহতকরণ এবং ব্লগার হত্যা হামলা; এগুলো নিবৃত্ত করার জন্য, প্রতিরোধ করার জন্য আপনার সরকার যাই করেছেন, করছেন- তাতে আপনি কতখানি সন্তুষ্ট?
উত্তর: সন্ত্রাসের কথা বললে, আমি নিজেও তো সন্ত্রাসের শিকার বারবার। আমার ওপর গ্রেনেড হামলা থেকে শুরু করে কি না হয়েছে। আমি আমার বাবা মা ভাই সবাইকে হারিয়েছি। ১৫ই আগস্ট যেভাবে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে সপরিবারে সেটা তো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ছিল। সে সন্ত্রাসের শিকার তো আমরা। এমনকি খুনিদের বিচার পর্যন্ত হতে দেয় নি। জেলখানায় কারাগারে বন্দি চার নেতা- তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। এভাবে এ দেশে তো হত্যা কু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি একেবারে মানে -যেন একটা এবং তাদেরকে বিচার না করা। এভাবে করে খুনিদেরকে উৎসাহিত করা। এ ধরনের একটা অবস্থা ছিল। আমি চাচ্ছিলাম বাংলাদেশকে এই জায়গা থেকে সরিয়ে আনতে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে, নিরাপদে চলবে। এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নতি হবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য। এজন্য সন্ত্রাস দমনে আমরা আমাদের সবরকম প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
প্রশ্ন: গণতন্ত্রকামী বিশ্বে আমরা জানি যে একটা শক্তিশালী, সুসংবদ্ধ, গঠনশীল একটি বিরোধীপক্ষ, বিরোধীদল অপরিহার্য একটি অঙ্গ। এ ব্যাপারে আপনি কতখানি সজাগ?
উত্তর: বর্তমানে যারা এখন বিরোধী দলে আছে আমাদের পার্লামেন্টে, কিন্তু আমি এটুকু বলবো- আগে যেমন বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকলে পার্লামেন্টে আসলে কান পাতা যেতো না, কথা শোনা যেতো না। যত নোংরা কথা, বাজে কথা, আজেবাজে খিস্তি খেউর, নানা ধরনের অসংলগ্ন কথা এবং তাদের অঙ্গভঙ্গি, এটা সেটা- মানে এমন ছিল যে পার্লামেন্টের যে স্যাঙ্কটিটি, পার্লামেন্টে যে একটা সুন্দর অবস্থা সেটাই ছিল না। বর্তমানে বাংলাদেশে যারা সত্যিকার অফিসিয়াল বিরোধী দল তারা যথেষ্ট গঠনমূলক কাজ করে যাচ্ছে। তারা সমালোচনা করে, তারা ওয়াকআউট করে তারা প্রতিবাদ করে- সবই তারা করছে।
প্রশ্ন: দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের সঙ্গে তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত এ ভূখণ্ডে যে সম্পর্ক ছিল সে তুলনায় বর্তমান সম্পর্ক কিরকম বলে আপনার মূল্যায়ন-
উত্তর: সেটা আপনারাই মূল্যায়ন করে দেখেন। আমি এই দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের দেশগুলি- প্রতিবেশী দেশ প্রত্যেকের সঙ্গে একটা সুসম্পর্কই শুধু বজায় রাখিনি আমাদের যে সমস্যাগুলো ছিল সমুদ্রসীমা নিয়ে যে সমস্যা মিয়ানমার, ভারতের সঙ্গে সেটা সমাধান করেছি। যার ফলে আজকে দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক আজ বজায় রয়েছে।
প্রশ্ন: আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক- বিশেষ করে গার্মেন্ট ক্ষেত্রে, জিএসপি সুবিধে ইত্যাদি বিষয়ে...
উত্তর: আমাদের সকলের সঙ্গেই বন্ধুত্ব। কারও সঙ্গেই বৈরিতা না। জিএসপি কেন বন্ধ করেছে সেটা আমরা জানি না। তাদের ১৬টা শর্ত দিয়েছিল। সেগুলো আমরা সম্পন্ন করেছি। যদিও জিএসপি সুবিধা বাংলাদেশ খুব কম পেত। কাজেই এটা নিয়ে তাদের এত কন্ডিশন দেয়া- এটা অযৌক্তিক। আমরা ৩২ বিলিয়ন ইউএস ডলার ইতিমধ্যে রপ্তানি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। আমেরিকা আমাদের জিএসপি দেয় না তা সত্ত্বেও কিন্তু বেড়েছে। সেটুকু আমি শুধু বলতে পারি। কিন্তু এটা দিয়ে দিয়ে- এটা মানে একটা ইমেজের মতো যেন ব্যাপার। আমরা বলছি দিলে দাও না দিলে না দাও।
প্রশ্ন: আমরা উপসংহারে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী সম্পর্কে একটু আপনার কাছ থেকে শুনতে চাইবো-
উত্তর: যে বাংলাদেশ ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে একটা বিজয়ী জাতি হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে সম্মান পেতো। সে সম্মানটা ধুলায় লুটিয়ে পড়লো ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে। তখন মনে হতো যে ওটা খুনি জাতি হয়ে গেছে। সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশের মানুষের আবার সেই ভাবমূর্তিটাকে উজ্জ্বল করা, ইমেজটাকে ফিরিয়ে আনা। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল বলেই এটা আনতে পেরেছে। অন্য কেউ আনবে না। এট হলো বাস্তব কথা। আমরা আনবো, আওয়ামী লীগ আনবে। আমরা এনেছি। সে জায়গায় আমরা নিয়ে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ, আরও সামনে নিয়ে যাবো।
ভিওএ: আপনি আমাদের সঙ্গে কথা বললেন, আমাদেরকে সময় দিলেন, ভয়েস অব আমেরিকা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
প্রধানমন্ত্রী: আমি আপনাকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনার মাধ্যমে ভয়েস অব আমেরিকার সকল কলাকৌশল, শ্রোতা, বন্ধু সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
No comments