অবাক জলপান, ঘড়ার ফাঁসে চিতাবাঘ
একদা
এক বাঘের গলায় হাড় ফুটিয়াছিল। এক বক তখন সাহস করে এগিয়ে এসেছিল তাকে
সাহায্য করতে। বুধবার গলায় জলের ঘড়া আটকে নাজেহাল চিতাবাঘ চার ঘণ্টা ধরে
ঘুরে বেড়ালো। এই বিপদ থেকে তাকে উদ্ধার করার ক্ষমতা বকেরও ছিল না।
রাজস্থানের কুম্ভলগড় অভয়ারণ্য থেকে জলের খোঁজে কাছেই সরতুল খেডা গ্রামে ঢুকে পড়েছিল চিতাবাঘ। ওই অঞ্চলে জল ভরে রাখার জন্য অ্যালুমিনিয়ামের ঘড়ার চল খুব বেশি। প্রায় প্রতি ঘরেই ওই রকম ঘড়া থাকে। ওজনে হালকা, কিন্তু অনেক জল ধরে। রোদে ভাজা ভাজা হয়ে জলের তেষ্টায় চিতাবাঘ ওই রকমই একটা ঘড়া দেখতে পেয়ে যায়। মুখ ঢুকিয়ে জল খেতেও দেরি করেনি। কিন্তু বিপত্তিটা হল তার পরে। জল খাওয়ার তাড়নায় কষ্টেসৃষ্টে মাথা ঢুকেছিল বটে, কিন্তু আর তো সে বেরোয় না। চিতাবাঘ এ দিক-ও দিক মুণ্ডু নাড়ায়। কিন্তু ঘড়া তার ঘাড় থেকে নামে না। কী বিপদ! চিতাবাঘ বলে কথা! ক্ষিপ্র তার গতি! গাছে উঠতে পারে, জলে সাঁতরাতে পারে! জঙ্গলের রাজত্বে তাকে অনেকেই সমীহ করে চলে! কিন্তু দু’পেয়েদের এলাকায় এসে একটা ঘড়া কি না তার সমস্ত বীরত্ব ঘুচিয়ে দিল!
চিতাবাঘ কখনও বসছে, কখনও দাঁড়াচ্ছে! বারবার মাথা নাড়িয়ে চলেছে! কিছুতেই কিছু হয় না! কার মুখ দেখে চোখ খুলেছিল আজ, ভাবতে বসে সে। ‘কথামালা’য় আছে, হাড়-ফোটা বাঘের গলায় বক তার ঠোঁট ঢুকিয়ে দিয়েছিল। এ দিন গ্রামের লোকে ক্রমশ ভিড় জমাতে থাকে চিতাবাঘকে ঘিরে। কামড়াতে তো পারবে না, ফলে ভয়ও নেই। কিন্তু সাহস করে ঘড়া-মুক্ত করবে কে? মুখ না থাক, থাবা তো আছে! আর, মুক্ত হওয়ার পরে চিতাবাঘ যে কৃত়জ্ঞতা দেখাবেই, তারই বা ঠিক কী? বকের অভি়জ্ঞতা তো ভাল ছিল না! ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাবার হতে থাকে! গ্রামবাসীদের সঙ্গে তখন ঝেঁটিয়ে জড়ো হয়ে গিয়েছে সংবাদমাধ্যমও! ঘড়া-মুখো চিতাবাঘ কখনও রাস্তার উপরে, কখনও মাঠের মাঝে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে। তার হাবভাব তখন বাঘের চেয়ে বাঘের মাসির মতোই দেখাচ্ছিল বেশি।
মাঠের ধারে ঘাস খাচ্ছিল একপাল মোষ। তারাও মজা দেখতে ভিড় করে। চিতাবাঘ এবং জলের ঘড়া, দু’টোই আলাদা করে দেখা ছিল তাদের। কিন্তু এমন ঘড়া অবতারে চিতাবাঘ, তাদের চোখেও নতুন ঠেকল। চিতাবাঘের আর সহ্য হল না! শেষে মোষেও করবে মস্করা! নিষ্ফল আক্রোশে একটা হুঙ্কার ছাড়ল সে। ঘড়ার মধ্য দিয়ে সে হাঁক প্রায় নিনাদ হয়ে বেরোল। মোষেরা ল্যাজ তুলে চম্পট দিল। কিন্তু এ ভাবে আর কত ক্ষণ? শক্তি ফুরিয়ে আসছিল চিতাবাঘের। গ্রামবাসীরা অবশ্য তার কোনও ক্ষতি করেননি। খবর গিয়েছিল বন দফতরে। শেষে বনকর্মীরা এসে ঘুমপাড়ানি ইঞ্জেকশন দিলেন। ঘড়া-মুখেই ঘুমিয়ে পড়ল চিতাবাঘ।
যখন চোখ খুলল, তখন সে বন বিভাগের খাঁচায়। কিন্তু মুখ থেকে খুলে গিয়েছে ঘড়া! অনেক ক্ষণ পরে নিজের স্বাভাবিক ছন্দে একটা বড় করে হাই তোলে সে। খাঁচায় জেগে উঠেও যে এত আনন্দ পাওয়া যেতে পারে, এ কথা আগে কোনও দিন ভাবতে পারেনি সে। শেষমেশ যখন তাকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, চিতাবাঘের মনে হল, এ এক নতুন জীবন! আর হ্যাঁ, দু’পেয়েরা সব সময় খুব খারাপও নয়!
সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা
রাজস্থানের কুম্ভলগড় অভয়ারণ্য থেকে জলের খোঁজে কাছেই সরতুল খেডা গ্রামে ঢুকে পড়েছিল চিতাবাঘ। ওই অঞ্চলে জল ভরে রাখার জন্য অ্যালুমিনিয়ামের ঘড়ার চল খুব বেশি। প্রায় প্রতি ঘরেই ওই রকম ঘড়া থাকে। ওজনে হালকা, কিন্তু অনেক জল ধরে। রোদে ভাজা ভাজা হয়ে জলের তেষ্টায় চিতাবাঘ ওই রকমই একটা ঘড়া দেখতে পেয়ে যায়। মুখ ঢুকিয়ে জল খেতেও দেরি করেনি। কিন্তু বিপত্তিটা হল তার পরে। জল খাওয়ার তাড়নায় কষ্টেসৃষ্টে মাথা ঢুকেছিল বটে, কিন্তু আর তো সে বেরোয় না। চিতাবাঘ এ দিক-ও দিক মুণ্ডু নাড়ায়। কিন্তু ঘড়া তার ঘাড় থেকে নামে না। কী বিপদ! চিতাবাঘ বলে কথা! ক্ষিপ্র তার গতি! গাছে উঠতে পারে, জলে সাঁতরাতে পারে! জঙ্গলের রাজত্বে তাকে অনেকেই সমীহ করে চলে! কিন্তু দু’পেয়েদের এলাকায় এসে একটা ঘড়া কি না তার সমস্ত বীরত্ব ঘুচিয়ে দিল!
চিতাবাঘ কখনও বসছে, কখনও দাঁড়াচ্ছে! বারবার মাথা নাড়িয়ে চলেছে! কিছুতেই কিছু হয় না! কার মুখ দেখে চোখ খুলেছিল আজ, ভাবতে বসে সে। ‘কথামালা’য় আছে, হাড়-ফোটা বাঘের গলায় বক তার ঠোঁট ঢুকিয়ে দিয়েছিল। এ দিন গ্রামের লোকে ক্রমশ ভিড় জমাতে থাকে চিতাবাঘকে ঘিরে। কামড়াতে তো পারবে না, ফলে ভয়ও নেই। কিন্তু সাহস করে ঘড়া-মুক্ত করবে কে? মুখ না থাক, থাবা তো আছে! আর, মুক্ত হওয়ার পরে চিতাবাঘ যে কৃত়জ্ঞতা দেখাবেই, তারই বা ঠিক কী? বকের অভি়জ্ঞতা তো ভাল ছিল না! ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাবার হতে থাকে! গ্রামবাসীদের সঙ্গে তখন ঝেঁটিয়ে জড়ো হয়ে গিয়েছে সংবাদমাধ্যমও! ঘড়া-মুখো চিতাবাঘ কখনও রাস্তার উপরে, কখনও মাঠের মাঝে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে। তার হাবভাব তখন বাঘের চেয়ে বাঘের মাসির মতোই দেখাচ্ছিল বেশি।
মাঠের ধারে ঘাস খাচ্ছিল একপাল মোষ। তারাও মজা দেখতে ভিড় করে। চিতাবাঘ এবং জলের ঘড়া, দু’টোই আলাদা করে দেখা ছিল তাদের। কিন্তু এমন ঘড়া অবতারে চিতাবাঘ, তাদের চোখেও নতুন ঠেকল। চিতাবাঘের আর সহ্য হল না! শেষে মোষেও করবে মস্করা! নিষ্ফল আক্রোশে একটা হুঙ্কার ছাড়ল সে। ঘড়ার মধ্য দিয়ে সে হাঁক প্রায় নিনাদ হয়ে বেরোল। মোষেরা ল্যাজ তুলে চম্পট দিল। কিন্তু এ ভাবে আর কত ক্ষণ? শক্তি ফুরিয়ে আসছিল চিতাবাঘের। গ্রামবাসীরা অবশ্য তার কোনও ক্ষতি করেননি। খবর গিয়েছিল বন দফতরে। শেষে বনকর্মীরা এসে ঘুমপাড়ানি ইঞ্জেকশন দিলেন। ঘড়া-মুখেই ঘুমিয়ে পড়ল চিতাবাঘ।
যখন চোখ খুলল, তখন সে বন বিভাগের খাঁচায়। কিন্তু মুখ থেকে খুলে গিয়েছে ঘড়া! অনেক ক্ষণ পরে নিজের স্বাভাবিক ছন্দে একটা বড় করে হাই তোলে সে। খাঁচায় জেগে উঠেও যে এত আনন্দ পাওয়া যেতে পারে, এ কথা আগে কোনও দিন ভাবতে পারেনি সে। শেষমেশ যখন তাকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, চিতাবাঘের মনে হল, এ এক নতুন জীবন! আর হ্যাঁ, দু’পেয়েরা সব সময় খুব খারাপও নয়!
সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা
No comments