আ’লীগ এমপি লিটন গুলি করলেন স্কুলছাত্রকে
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সৌরভ |
গতকাল
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন পিস্তল
দিয়ে গুলি করলেন চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্র সৌরভকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত
শিশুটি এখন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে কাতরাচ্ছে। এ
ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এমপি লিটনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির
দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ। তারা
সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
এলাকাবাসী, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল শুক্রবার ভোরে স্থানীয় এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন ল্যান্ড ক্রুজারে করে বাড়ি যাওয়ার পথে সুন্দরগঞ্জ-বামনডাঙ্গা সড়কের গোপালচরণ এলাকায় কালাই ব্রিজের পূর্ব পাশে প্রাতঃভ্রমণকারী ওই এলাকার সাজু মিয়ার ছেলে সৌরভ (৯) ও মকবুল মুন্সির ছেলে তাজরুল ইসলামকে দেখতে পেয়ে তাদের লক্ষ্য করে পিস্তল দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। গুলির শব্দে তাজরুল ইসলাম দৌড়ে পালালেও সৌরভের দুই পায়ে তিন রাউন্ড গুলি লাগলে সে গুরুতর আহত হয়। সাথে সাথে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সে করে রংপুর নিয়ে যাওয়ার পথে এমপি লিটনের লোকজন বামনডাঙ্গায় অ্যাম্বুলেন্স আটক করে ড্রাইভারকে নামিয়ে নেয়। পরে সেখানে এলাকাবাসী প্রতিবাদ গড়ে তুললে নিজস্ব ড্রাইভার দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি পার করে দেয়া হয়। পরে ড্রাইভার এসে অ্যাম্বুলেন্সটি রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে তার পায়ে অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়। সৌরভ স্থানীয় হুড়াভাড়ায়খা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। সে গরিব হাঁড়িপাতিল ব্যবসায়ী সাজু মিয়ার ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী সৌরভের চাচা শাহজাহান বলেন, প্রতিদিনের মতো সকালে ওঠে ভাতিজাসহ আমরা সড়কে হাঁটতে থাকি। এ সময় এমপির গাড়ি এলোমেলোভাবে চলতে থাকে। আমাদের সামনে আসা মাত্রই এমপি লিটন আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। আমি দৌড়ে পালিয়ে যাই। গাড়ি চলে যাওয়ার পর এসে দেখি আমার ভাতিজার পায়ে গুলি লেগেছে। রক্ত ঝরছে। তখন আমরা তাকে উদ্ধার করে সুন্দরগঞ্জ মেডিক্যালে ভর্তি করি।
প্রত্যদর্শীরা আরো জানান, এ ঘটনার কিছুণ পর গুলিবর্ষণ শেষে এমপির নিজ বাড়ি বামনডাঙ্গায় যাওয়ার সময় বৈদ্যনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় রাস্তায় প্রাত:ভ্রমণকারী আনজুমান আরা আছিয়া ও নাজমা নামে দুই মেয়েকে জোরপূর্বক গাড়িতে তোলা ও বিবস্ত্র করার চেষ্টা করলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার সময় এমপি লিটন মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলেও জানান প্রত্যদর্শীরা।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা: মাহফুজুর রহমান জানান, সৌরভের দুই পায়ে তিনটি গুলি লেগেছিল। আমরা অস্ত্রোপচার করে শিশুটির পা থেকে গুলি বের করেছি।
হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ সৌরভের পিতা সাজু মিয়া জানান, আমার নিরপরাধ ছেলেকে এমপি লিটন কেন গুলি করলেন তা আমি বুঝতে পারছি না। আমি আমার ছেলের ওপর যে গুলি চালিয়েছে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তিনি বলেন, গাড়িতে এমপি সাহের তখন মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন।
হাসপাতালে সৌরভের মা সেলিনা কাঁদতে কাঁদতে জানান, আমার বাচ্চা কারো কোনো দিন কোনো ক্ষতি করেনি। স্কুল যায়। পড়াশোনা করে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে সড়কে যায়। কিন্তু কেন এমপি সাহেব আমার ছেলের ওপর গুলি চালালেন। এর আমি জবাব চাই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল হাই মিলটন জানান, শিশুটিকে বহনকারী গাড়ি আটক করার কথা শুনে তিনি ঘটনাস্থলে যান। তবে কিভাবে শিশুর পায়ে গুলি লেগেছে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) জিন্নাত আলী গুলিতে শিশু আহতের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও কিভাবে বা কে গুলি করেছে তা তিনি নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে এসআই কাবেরুল গিয়েছেন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম জানান, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ব্যাপারে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সুন্দরগঞ্জ পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন, বেলকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম। পরে তাদের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে বিােভ ও অবরোধ শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডিসি আবদুস সামাদ, পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম, ইউএনও আব্দুল হাই মিল্টন ওসি তদন্ত জিনাত আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ এবং এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলে বিােভ থেকে সরে আসেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
তবে এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সুন্দরগঞ্জের মানুষ। তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, আওয়ামী লীগের একজন এমপি হয়ে এভাবে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে নিরপরাধ শিশুর ওপর গুলি চালিয়ে তাকে আহত করার ঘটনায় পুরো উপজেলায় সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত করে এমপির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সাজু জানান, এ ঘটনায় বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে আমাদের লজ্জা রাখার জায়গা নেই। অপরাধী যে দলেরই হোক, যত বড় নেতাই হোকÑ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুর রশিদ ডাবলু। তিনি জানান, একজন জনপ্রতিনিধি আইনপ্রণেতা যখন আইন হাতে তুলে নিয়ে নিরপরাধ শিশুকে বুলেট বিদ্ধ করেছেন তাতে রাজনীতিবিদ হিসেবে আর আমাদের জনগণের কাছে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। আমি এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন, সাবেক এমপি আব্দুল আজিজ, উপজেলা জামায়াতের আমির ইউনুস আলী, সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম মনজু, উপজেলা চেয়ারম্যান মাজেদুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু সোলায়মান সাজা। বিবৃতিতে তারা দাবি করেছেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের এই এমপি এরকম ঘটনা বারবার ঘটাচ্ছেন। যাকে ইচ্ছে তাকে গুলি করছেন। যখন ইচ্ছা তখন মহিলাদের শ্লীলতাহানি ঘটাচ্ছেন। কিন্তু কোনো বিচার হচ্ছে না। তারা অবিলম্বে তাকে এমপি পদ থেকে অপসারণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এ ব্যাপারে কথা বলতে সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনের ০১৭১১৫৪৮৫৬১ নম্বর মোবাইল ফোনে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
রংপুর অফিস আরো জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে এমপি লিটন বামনডাঙ্গার লিটনের মোড়, খানের দোকানের সামনে, খানবাড়ি ও গোপাল চরণ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আরো ১৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। গতকাল সন্ধ্যায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু সৌরভকে দেখতে এসে আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌরসভার মেয়র আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সাজু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাসুদসহ আওয়ামী লীগ নেতারা এ অভিযোগ করেন। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভূলুণ্ঠিত করে আওয়ামী লীগের পরিবর্তে এমপি লীগ নামে একটি বাহিনী তৈরি করেছেন লিটন। তার হাতে সুন্দরগঞ্জের মা-বোন ও শিশু কেউই নিরাপদ নয়। রাস্তাঘাটে মা বোনদের দেখামাত্র তিনি তাদের ওপর হামলে পড়েন। তারা অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার অপসারণের দাবি জানাবেন বলে মন্তব্য করেন।
এলাকাবাসী, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল শুক্রবার ভোরে স্থানীয় এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন ল্যান্ড ক্রুজারে করে বাড়ি যাওয়ার পথে সুন্দরগঞ্জ-বামনডাঙ্গা সড়কের গোপালচরণ এলাকায় কালাই ব্রিজের পূর্ব পাশে প্রাতঃভ্রমণকারী ওই এলাকার সাজু মিয়ার ছেলে সৌরভ (৯) ও মকবুল মুন্সির ছেলে তাজরুল ইসলামকে দেখতে পেয়ে তাদের লক্ষ্য করে পিস্তল দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। গুলির শব্দে তাজরুল ইসলাম দৌড়ে পালালেও সৌরভের দুই পায়ে তিন রাউন্ড গুলি লাগলে সে গুরুতর আহত হয়। সাথে সাথে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সে করে রংপুর নিয়ে যাওয়ার পথে এমপি লিটনের লোকজন বামনডাঙ্গায় অ্যাম্বুলেন্স আটক করে ড্রাইভারকে নামিয়ে নেয়। পরে সেখানে এলাকাবাসী প্রতিবাদ গড়ে তুললে নিজস্ব ড্রাইভার দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি পার করে দেয়া হয়। পরে ড্রাইভার এসে অ্যাম্বুলেন্সটি রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে তার পায়ে অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়। সৌরভ স্থানীয় হুড়াভাড়ায়খা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। সে গরিব হাঁড়িপাতিল ব্যবসায়ী সাজু মিয়ার ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী সৌরভের চাচা শাহজাহান বলেন, প্রতিদিনের মতো সকালে ওঠে ভাতিজাসহ আমরা সড়কে হাঁটতে থাকি। এ সময় এমপির গাড়ি এলোমেলোভাবে চলতে থাকে। আমাদের সামনে আসা মাত্রই এমপি লিটন আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। আমি দৌড়ে পালিয়ে যাই। গাড়ি চলে যাওয়ার পর এসে দেখি আমার ভাতিজার পায়ে গুলি লেগেছে। রক্ত ঝরছে। তখন আমরা তাকে উদ্ধার করে সুন্দরগঞ্জ মেডিক্যালে ভর্তি করি।
প্রত্যদর্শীরা আরো জানান, এ ঘটনার কিছুণ পর গুলিবর্ষণ শেষে এমপির নিজ বাড়ি বামনডাঙ্গায় যাওয়ার সময় বৈদ্যনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় রাস্তায় প্রাত:ভ্রমণকারী আনজুমান আরা আছিয়া ও নাজমা নামে দুই মেয়েকে জোরপূর্বক গাড়িতে তোলা ও বিবস্ত্র করার চেষ্টা করলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার সময় এমপি লিটন মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলেও জানান প্রত্যদর্শীরা।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা: মাহফুজুর রহমান জানান, সৌরভের দুই পায়ে তিনটি গুলি লেগেছিল। আমরা অস্ত্রোপচার করে শিশুটির পা থেকে গুলি বের করেছি।
হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ সৌরভের পিতা সাজু মিয়া জানান, আমার নিরপরাধ ছেলেকে এমপি লিটন কেন গুলি করলেন তা আমি বুঝতে পারছি না। আমি আমার ছেলের ওপর যে গুলি চালিয়েছে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তিনি বলেন, গাড়িতে এমপি সাহের তখন মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন।
হাসপাতালে সৌরভের মা সেলিনা কাঁদতে কাঁদতে জানান, আমার বাচ্চা কারো কোনো দিন কোনো ক্ষতি করেনি। স্কুল যায়। পড়াশোনা করে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে সড়কে যায়। কিন্তু কেন এমপি সাহেব আমার ছেলের ওপর গুলি চালালেন। এর আমি জবাব চাই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল হাই মিলটন জানান, শিশুটিকে বহনকারী গাড়ি আটক করার কথা শুনে তিনি ঘটনাস্থলে যান। তবে কিভাবে শিশুর পায়ে গুলি লেগেছে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) জিন্নাত আলী গুলিতে শিশু আহতের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও কিভাবে বা কে গুলি করেছে তা তিনি নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে এসআই কাবেরুল গিয়েছেন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম জানান, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ব্যাপারে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সুন্দরগঞ্জ পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন, বেলকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম। পরে তাদের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে বিােভ ও অবরোধ শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডিসি আবদুস সামাদ, পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম, ইউএনও আব্দুল হাই মিল্টন ওসি তদন্ত জিনাত আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ এবং এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলে বিােভ থেকে সরে আসেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
তবে এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সুন্দরগঞ্জের মানুষ। তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, আওয়ামী লীগের একজন এমপি হয়ে এভাবে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে নিরপরাধ শিশুর ওপর গুলি চালিয়ে তাকে আহত করার ঘটনায় পুরো উপজেলায় সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত করে এমপির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সাজু জানান, এ ঘটনায় বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে আমাদের লজ্জা রাখার জায়গা নেই। অপরাধী যে দলেরই হোক, যত বড় নেতাই হোকÑ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুর রশিদ ডাবলু। তিনি জানান, একজন জনপ্রতিনিধি আইনপ্রণেতা যখন আইন হাতে তুলে নিয়ে নিরপরাধ শিশুকে বুলেট বিদ্ধ করেছেন তাতে রাজনীতিবিদ হিসেবে আর আমাদের জনগণের কাছে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। আমি এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন, সাবেক এমপি আব্দুল আজিজ, উপজেলা জামায়াতের আমির ইউনুস আলী, সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম মনজু, উপজেলা চেয়ারম্যান মাজেদুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু সোলায়মান সাজা। বিবৃতিতে তারা দাবি করেছেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের এই এমপি এরকম ঘটনা বারবার ঘটাচ্ছেন। যাকে ইচ্ছে তাকে গুলি করছেন। যখন ইচ্ছা তখন মহিলাদের শ্লীলতাহানি ঘটাচ্ছেন। কিন্তু কোনো বিচার হচ্ছে না। তারা অবিলম্বে তাকে এমপি পদ থেকে অপসারণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এ ব্যাপারে কথা বলতে সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনের ০১৭১১৫৪৮৫৬১ নম্বর মোবাইল ফোনে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
রংপুর অফিস আরো জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে এমপি লিটন বামনডাঙ্গার লিটনের মোড়, খানের দোকানের সামনে, খানবাড়ি ও গোপাল চরণ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আরো ১৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। গতকাল সন্ধ্যায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু সৌরভকে দেখতে এসে আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌরসভার মেয়র আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সাজু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাসুদসহ আওয়ামী লীগ নেতারা এ অভিযোগ করেন। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভূলুণ্ঠিত করে আওয়ামী লীগের পরিবর্তে এমপি লীগ নামে একটি বাহিনী তৈরি করেছেন লিটন। তার হাতে সুন্দরগঞ্জের মা-বোন ও শিশু কেউই নিরাপদ নয়। রাস্তাঘাটে মা বোনদের দেখামাত্র তিনি তাদের ওপর হামলে পড়েন। তারা অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার অপসারণের দাবি জানাবেন বলে মন্তব্য করেন।
No comments