খালেদা জিয়া কি জামায়াতকে দূরে রাখার চেষ্টা করছেন? by মনিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
১৯৭১
সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ সংগঠনের দায়ে
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলি আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের
মুক্তির জন্য ২৪ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তিনি জামায়াতের
সেক্রেটারি জেনারেল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকারে তিনি
একজন মন্ত্রী ছিলেন। জামায়াত বেগম জিয়ার দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের
(বিএনপি) মিত্র।
এখন পর্যন্ত মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি বিএনপি। ১০ দিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পর একদল ভারতীয় সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন বেগম জিয়া। সে সময় তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াতপন্থি দল নয়। তারা আমাদের দলের সঙ্গে জোটে রয়েছে। কিন্তু দলটি আমাদের কৌশলগত মিত্র। তাদের চেয়ে আমাদের গঠনতন্ত্র ও মতাদর্শ ভিন্ন।
অনেকে বেগম জিয়ার এ মন্তব্যে অবাক হয়েছেন। কেননা, বিএনপি ২০০১ সালে জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করেছে। এর আগে জামায়াতের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছে। তিনি কি তবে এখন নিজেকে জামায়াত থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছেন? জামায়াত একটি ইসলামী দল। ১৯৭১ সালে দলটি ছিল পাকিস্তানপন্থি। বাংলাদেশে যেসব মৌলবাদী গোষ্ঠী সক্রিয়, তাদের উৎস মনে করা হয় জামায়াতকে। প্রধানমন্ত্রী মোদি তার সর্বশেষ ঢাকা সফরে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন যে, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সমপর্ক রয়েছে এমন কারো সঙ্গে লেনদেন করবে না ভারত। বিএনপিকে জামায়াত থেকে আলাদা করার প্রচেষ্টা কি সে বার্তারই ফলাফল? এর আগে প্রধানমন্ত্রী মোদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভাষণে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পরপর বেগম জিয়া বলেন, বিএনপি ভারত-বিরোধী নয়। শেখ হাসিনার সরকার সফলভাবে আমাদের ভারত-বিরোধী হিসেবে প্রচার করতে পেরেছে। কিন্তু আমরা কেন ভারত-বিরোধী হব? ২০১৩ সালে কেন ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ এড়িয়ে যাওয়ার কারণও তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। তার ব্যাখ্যা, দলের নিজস্ব সূত্র থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী সেদিন তার জীবন হুমকির মুখে ছিল।
তবে ভারত ও জামায়াত সমপর্কে বেগম জিয়ার এসব মন্তব্যের কারণে প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপির জামায়াতপন্থি অবস্থানের কারণে কি দলটির ইমেজে ভারত-বিরোধী তকমা জুটছে না? বেগম জিয়া এর প্রত্যুত্তরে কেবল ‘বিএনপি জামায়াতপন্থি নয়’ বলেই খ্যান্ত থাকেননি। তিনি আরও জানান, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন জামায়াত বলেছিল তারা নারী নেত্রীকে মেনে নেবে না। কিন্তু আমি জামায়াতকে বলি যে, আমিই নেত্রী। তারা হয় এটাই গ্রহণ করবে, নয়তো চলে যাবে। তারা আমাদের শর্ত মেনেই জোটে এসেছিল।
বেগম জিয়ার কার্যালয়ে ভারতীয় সাংবাদিকদের বৈঠকে বাংলাদেশী সাংবাদিক সঞ্জিব চৌধুরী বলেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সমপর্কটা অনেকটা জম্মু ও কাশ্মীরে পিডিপির সঙ্গে বিজেপির জোটের মতো।
কিন্তু জামায়াতকে যে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উৎস হিসেবে দেখা হয়, তার কী হবে? বেগম জিয়া অবশ্য বলেন, আমরা মনে করি না, তারা (জামায়াত) মৌলবাদী। সঞ্জিব চৌধুরী ফাঁকে যোগ করলেন, পশ্চিমবঙ্গে তোমাদের মার্ক্সবাদী ও নকশালরা আছে। কিন্তু নকশালরা যে হত্যাকাণ্ড ঘটায় তার জন্য তোমরা মার্ক্সবাদীদের দায়ী করতে পার না।
বহু সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ দাবি করেন, বর্তমানে নিষিদ্ধ-ঘোষিত জামায়াত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আবদুর রহমানের হাত ধরে। তিনি এক সময় ছিলেন জামায়াতের সদস্য। সঞ্জিব চৌধুরীও বললেন, সত্যি কথা। কিন্তু বিএনপিই ছিল সে দল, যারা ২০০৫ সালের আগস্টে সারা দেশে বোমা বিস্ফোরণের পর জেএমবিকে নির্মূল করেছে। বেগম জিয়াও আরেকটি বিষয় উল্লেখ করলেন- ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগও জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। ওই নির্বাচনে পরে শেখ হাসিনা জিতেছিলেন। খালেদা জিয়ার বলেন, আমরা একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী দল। অন্যান্য বিএনপি নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে মৌলবাদী খেলাফতে মজলিসের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। এ নিয়ে তখন প্রচুর সমালোচনা হয়েছিল।
কিন্তু জামায়াত থেকে নিজেদের দূরে রাখতে বিএনপির প্রচেষ্টার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনীতিতে যে একটি অমোচনীয় ছাপ রেখে গেছে, তা স্পষ্ট।
[লেখিকা: মনিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা ভিত্তিক সাংবাদিক। তিনি ভারতের শীর্ষ গণমাধ্যম এনডিটিভির রেসিডেন্ট এডিটর। উপরের লেখাটি এনডিটিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তার নিবন্ধের অনুবাদ।]
এখন পর্যন্ত মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি বিএনপি। ১০ দিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পর একদল ভারতীয় সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন বেগম জিয়া। সে সময় তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াতপন্থি দল নয়। তারা আমাদের দলের সঙ্গে জোটে রয়েছে। কিন্তু দলটি আমাদের কৌশলগত মিত্র। তাদের চেয়ে আমাদের গঠনতন্ত্র ও মতাদর্শ ভিন্ন।
অনেকে বেগম জিয়ার এ মন্তব্যে অবাক হয়েছেন। কেননা, বিএনপি ২০০১ সালে জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করেছে। এর আগে জামায়াতের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছে। তিনি কি তবে এখন নিজেকে জামায়াত থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছেন? জামায়াত একটি ইসলামী দল। ১৯৭১ সালে দলটি ছিল পাকিস্তানপন্থি। বাংলাদেশে যেসব মৌলবাদী গোষ্ঠী সক্রিয়, তাদের উৎস মনে করা হয় জামায়াতকে। প্রধানমন্ত্রী মোদি তার সর্বশেষ ঢাকা সফরে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন যে, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সমপর্ক রয়েছে এমন কারো সঙ্গে লেনদেন করবে না ভারত। বিএনপিকে জামায়াত থেকে আলাদা করার প্রচেষ্টা কি সে বার্তারই ফলাফল? এর আগে প্রধানমন্ত্রী মোদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভাষণে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পরপর বেগম জিয়া বলেন, বিএনপি ভারত-বিরোধী নয়। শেখ হাসিনার সরকার সফলভাবে আমাদের ভারত-বিরোধী হিসেবে প্রচার করতে পেরেছে। কিন্তু আমরা কেন ভারত-বিরোধী হব? ২০১৩ সালে কেন ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ এড়িয়ে যাওয়ার কারণও তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। তার ব্যাখ্যা, দলের নিজস্ব সূত্র থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী সেদিন তার জীবন হুমকির মুখে ছিল।
তবে ভারত ও জামায়াত সমপর্কে বেগম জিয়ার এসব মন্তব্যের কারণে প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপির জামায়াতপন্থি অবস্থানের কারণে কি দলটির ইমেজে ভারত-বিরোধী তকমা জুটছে না? বেগম জিয়া এর প্রত্যুত্তরে কেবল ‘বিএনপি জামায়াতপন্থি নয়’ বলেই খ্যান্ত থাকেননি। তিনি আরও জানান, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন জামায়াত বলেছিল তারা নারী নেত্রীকে মেনে নেবে না। কিন্তু আমি জামায়াতকে বলি যে, আমিই নেত্রী। তারা হয় এটাই গ্রহণ করবে, নয়তো চলে যাবে। তারা আমাদের শর্ত মেনেই জোটে এসেছিল।
বেগম জিয়ার কার্যালয়ে ভারতীয় সাংবাদিকদের বৈঠকে বাংলাদেশী সাংবাদিক সঞ্জিব চৌধুরী বলেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সমপর্কটা অনেকটা জম্মু ও কাশ্মীরে পিডিপির সঙ্গে বিজেপির জোটের মতো।
কিন্তু জামায়াতকে যে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উৎস হিসেবে দেখা হয়, তার কী হবে? বেগম জিয়া অবশ্য বলেন, আমরা মনে করি না, তারা (জামায়াত) মৌলবাদী। সঞ্জিব চৌধুরী ফাঁকে যোগ করলেন, পশ্চিমবঙ্গে তোমাদের মার্ক্সবাদী ও নকশালরা আছে। কিন্তু নকশালরা যে হত্যাকাণ্ড ঘটায় তার জন্য তোমরা মার্ক্সবাদীদের দায়ী করতে পার না।
বহু সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ দাবি করেন, বর্তমানে নিষিদ্ধ-ঘোষিত জামায়াত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আবদুর রহমানের হাত ধরে। তিনি এক সময় ছিলেন জামায়াতের সদস্য। সঞ্জিব চৌধুরীও বললেন, সত্যি কথা। কিন্তু বিএনপিই ছিল সে দল, যারা ২০০৫ সালের আগস্টে সারা দেশে বোমা বিস্ফোরণের পর জেএমবিকে নির্মূল করেছে। বেগম জিয়াও আরেকটি বিষয় উল্লেখ করলেন- ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগও জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। ওই নির্বাচনে পরে শেখ হাসিনা জিতেছিলেন। খালেদা জিয়ার বলেন, আমরা একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী দল। অন্যান্য বিএনপি নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে মৌলবাদী খেলাফতে মজলিসের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। এ নিয়ে তখন প্রচুর সমালোচনা হয়েছিল।
কিন্তু জামায়াত থেকে নিজেদের দূরে রাখতে বিএনপির প্রচেষ্টার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনীতিতে যে একটি অমোচনীয় ছাপ রেখে গেছে, তা স্পষ্ট।
[লেখিকা: মনিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা ভিত্তিক সাংবাদিক। তিনি ভারতের শীর্ষ গণমাধ্যম এনডিটিভির রেসিডেন্ট এডিটর। উপরের লেখাটি এনডিটিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তার নিবন্ধের অনুবাদ।]
No comments