‘বাংলাদেশে চলছে মোড়লী শাসন’ -আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ by মনির হায়দার
আলোকিত
মানুষ গড়ার কারিগরখ্যাত বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক
আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ কখনো আধুনিক সুশাসনের দেখা
পায়নি। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে চলছে মোড়লী শাসন। তিনি বলেন, এই
পদ্ধতিতে দেশ চালাতে গিয়ে আমরা ব্রিটিশদের দিয়ে যাওয়া সুশাসনের
ব্যবস্থাগুলোও ধ্বংস করে দিয়েছি। আর তাই বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে খারাপ সময়টা
পার করছে। নীতি-নৈতিকতা বা মূল্যবোধ বলে আর কিছু অবশিষ্ট থাকছে না। জাতীয়
জীবনে আমাদের অবস্থা এখন মাত্সন্নাই এর মত। বড় মাছ ছোট মাছগুলোকে খেয়ে
ফেলছে।
স্থানীয় সময় গত শনিবার রাতে নিউ ইয়র্ক এর জ্যাকসন হাইটস এ বইমেলা ও বাংলা উৎসবের অনুষ্ঠান মঞ্চে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। ভবিষ্যত বাংলাদেশ বিষয়ক এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের কন্যা শারমিন আহমেদ, নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রবাসী সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ। বক্তৃতার সময় বার বার চিরকুট দিয়ে আব্দুল্লাহ আবু সয়ীদকে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করতে তাগিদ দেওয়ায় তিনি প্রচন্ড বিরক্তি প্রকাশ করেন।
অন্য বক্তাদের বক্তব্যের সুত্রে তিনি বাংলাদেশে সুশাসন প্রসঙ্গে বলেন, আমরা আসলে কখনই সুশাসনের সঙ্গে পরিচিত হতে পারিনি। স্বাধীনতার আগে আমদের সমাজব্যবস্থা ছিল মূলত মোড়লী পদ্ধতি নির্ভর। স্বাধীনতার পর আমরা সেই মোড়লী ব্যবস্থাটাকেই জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং আজও সেই ধারায় চলছে। সে কারণে সুশাসন ব্যাপারটা আমরা কখনো বোঝারই সুযোগ পাইনি।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই আমরা রয়েছি স্বৈর শাসনের মধ্যে। কখনো সামরিক স্বৈর শাসন। কখনো বেসামরিক স্বৈর শাসন। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত আমরা ছিলাম আনুষ্ঠানিক স্বৈর শাসনের মধ্যে। সেটার একটা সুবিধা ছিল যে, সমাজের খুব বেশি মানুষ প্রকাশ্যে সেই শাসনকে সমর্থন করত না। সে ধরনের শাসকদের সমর্থন করার ক্ষেত্রে সবার মধ্যে একটা সংকোচ কাজ করত। তাই তারা সব সময় পতনের আতংকে থাকত। কিন্তু নব্বই সালের পর থেকে আমরা যে নির্বাচিত স্বৈর শাসনের মধ্যে প্রবেশ করেছি এটা আরো ভয়াবহ। কারণ, এই স্বৈরশাসকদের সমর্থনে কথা বলার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ দাড়িয়ে গেছে। এ কারণে নির্বাচিত স্বৈর শাসকরা অনেক বেশি বেপরওয়া হয়ে উঠছে। বাকি জনগোষ্ঠী তাদের কাছে হয়ে পড়ছে মারাত্মক অসহায়।
উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনের প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, যে যাই বলুক ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দায়ভার বাঙালিদেরকেই নিতে হবে। কারণ, মীর জাফর, উমিচাঁদ ও রায় দুর্লভরা বাংলারই লোক ছিল এবং তাদের সহযোগিতা নিয়েই ইংরেজরা ভারতবর্ষে চেপে বসার সুযোগ পায়। তবে ইংরেজ শাসনেরও অনেকগুলো ভালো দিক ছিল। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা সুশাসনের বেশ কিছু ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করে যায়। সেই সময় একটা পদ্ধতি তারা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল। হয়তো তারা পুলিশ দিয়ে দেশ শাসন করেছে এবং সেই ক্ষেত্রে দারোগার ঘুষ খাওয়ার ব্যাপারটা অনেকটা প্রচলিত ছিল। কিন্তু মিলিটারী কোথায় থাকতো, তা সাধারণ মানুষ এমনকি জানতও না। দুর্ভাগ্য হলো, ব্রিটিশরা যেটুকু সুশাসনের ব্যবস্থা রেখে গিয়েছিল, স্বাধীন হওয়ার পর আমরা সেইটুকুও ধ্বংস করে দিয়েছি। আমরা আবার পুরোপুরি মোড়লী শাসনে ফিরে গেছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন তার সবচেয়ে খারাপ সময়টা পার করছে । মানুষ বড় অসহায় । সমাজে নীতি-নৈতিকতা ধংসের চরম সীমায় গিয়ে ঠেকেছে । জাতীয় জীবনে আমরা এখন মাত্সন্নাই অবস্থার মধ্যে আছি । বড় মাছ ছোট মাছগুলোকে খেয়া ফেলছে । এতসব সত্বেও বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদী হওয়ার অনেক কিছু আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর মতে নানা অঙ্গনেই বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে, আরও এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এটার কৃতিত্ব পুরোপুরি দেশের সাধারণ মানুষের। এসব সাধারণ মানুষের চেষ্টায়ই বাংলাদেশ একদিন বদলাবে। তিনি বলেন, আমার ছাত্রসহ অনেকেই প্রশ্ন করেন যে, সেই বদলানো কি আমরা দেখে যেতে পারব ? তখন আমি তাদের পাল্টা প্রশ্ন করি এই বলে যে, আমরা দেখে যেতে পারব কি-না, এই চিন্তা করে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে কি চলবে ? তিনি বলেন, দেশে এখন যে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে, আমরা সেটার নির্মূল চাইনা, আমরা বলি এটাকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার কথা। কিন্তু সেরকম কোনো চেষ্টাও নেই।
এর আগে স্থানীয় সময় গত শুক্রবার রাতে নিউ ইয়র্ক এ বইমেলা ও বাংলা উত্সব উদ্বোধনকালে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা মোটেই বইপড়ামুখী নয়, পুরো ব্যবস্থাটাই পরীক্ষামুখী। কেবলমাত্র পরীক্ষায় পাশের জন্য যেটুকু দরকার সেটুকুই পড়তে উত্সাহিত করা হয়। এ কারণে মানুষ শিক্ষিত হলেও পড়ুয়া হয়ে উঠে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একবার আমাকে ডেকে বললেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে বই পড়ার কার্যক্রম হাতে নিতে। আমি তাকে বললাম, যখন কাগজের বই ছিল না, তখনও মানুষ বই পড়েছে। আবার যখন কাগজের বই থাকবে না তখনও মানুষ বই পড়বে। আসল বিষয় হলো মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সেই কাজটি করতে পারছে না। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা না গেলে বিশেষ কোনো পদ্ধতির বই দিয়ে কাজ হবে না।
স্থানীয় সময় গত শনিবার রাতে নিউ ইয়র্ক এর জ্যাকসন হাইটস এ বইমেলা ও বাংলা উৎসবের অনুষ্ঠান মঞ্চে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। ভবিষ্যত বাংলাদেশ বিষয়ক এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের কন্যা শারমিন আহমেদ, নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রবাসী সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ। বক্তৃতার সময় বার বার চিরকুট দিয়ে আব্দুল্লাহ আবু সয়ীদকে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করতে তাগিদ দেওয়ায় তিনি প্রচন্ড বিরক্তি প্রকাশ করেন।
অন্য বক্তাদের বক্তব্যের সুত্রে তিনি বাংলাদেশে সুশাসন প্রসঙ্গে বলেন, আমরা আসলে কখনই সুশাসনের সঙ্গে পরিচিত হতে পারিনি। স্বাধীনতার আগে আমদের সমাজব্যবস্থা ছিল মূলত মোড়লী পদ্ধতি নির্ভর। স্বাধীনতার পর আমরা সেই মোড়লী ব্যবস্থাটাকেই জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং আজও সেই ধারায় চলছে। সে কারণে সুশাসন ব্যাপারটা আমরা কখনো বোঝারই সুযোগ পাইনি।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই আমরা রয়েছি স্বৈর শাসনের মধ্যে। কখনো সামরিক স্বৈর শাসন। কখনো বেসামরিক স্বৈর শাসন। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত আমরা ছিলাম আনুষ্ঠানিক স্বৈর শাসনের মধ্যে। সেটার একটা সুবিধা ছিল যে, সমাজের খুব বেশি মানুষ প্রকাশ্যে সেই শাসনকে সমর্থন করত না। সে ধরনের শাসকদের সমর্থন করার ক্ষেত্রে সবার মধ্যে একটা সংকোচ কাজ করত। তাই তারা সব সময় পতনের আতংকে থাকত। কিন্তু নব্বই সালের পর থেকে আমরা যে নির্বাচিত স্বৈর শাসনের মধ্যে প্রবেশ করেছি এটা আরো ভয়াবহ। কারণ, এই স্বৈরশাসকদের সমর্থনে কথা বলার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ দাড়িয়ে গেছে। এ কারণে নির্বাচিত স্বৈর শাসকরা অনেক বেশি বেপরওয়া হয়ে উঠছে। বাকি জনগোষ্ঠী তাদের কাছে হয়ে পড়ছে মারাত্মক অসহায়।
উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনের প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, যে যাই বলুক ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দায়ভার বাঙালিদেরকেই নিতে হবে। কারণ, মীর জাফর, উমিচাঁদ ও রায় দুর্লভরা বাংলারই লোক ছিল এবং তাদের সহযোগিতা নিয়েই ইংরেজরা ভারতবর্ষে চেপে বসার সুযোগ পায়। তবে ইংরেজ শাসনেরও অনেকগুলো ভালো দিক ছিল। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা সুশাসনের বেশ কিছু ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করে যায়। সেই সময় একটা পদ্ধতি তারা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল। হয়তো তারা পুলিশ দিয়ে দেশ শাসন করেছে এবং সেই ক্ষেত্রে দারোগার ঘুষ খাওয়ার ব্যাপারটা অনেকটা প্রচলিত ছিল। কিন্তু মিলিটারী কোথায় থাকতো, তা সাধারণ মানুষ এমনকি জানতও না। দুর্ভাগ্য হলো, ব্রিটিশরা যেটুকু সুশাসনের ব্যবস্থা রেখে গিয়েছিল, স্বাধীন হওয়ার পর আমরা সেইটুকুও ধ্বংস করে দিয়েছি। আমরা আবার পুরোপুরি মোড়লী শাসনে ফিরে গেছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন তার সবচেয়ে খারাপ সময়টা পার করছে । মানুষ বড় অসহায় । সমাজে নীতি-নৈতিকতা ধংসের চরম সীমায় গিয়ে ঠেকেছে । জাতীয় জীবনে আমরা এখন মাত্সন্নাই অবস্থার মধ্যে আছি । বড় মাছ ছোট মাছগুলোকে খেয়া ফেলছে । এতসব সত্বেও বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদী হওয়ার অনেক কিছু আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর মতে নানা অঙ্গনেই বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে, আরও এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এটার কৃতিত্ব পুরোপুরি দেশের সাধারণ মানুষের। এসব সাধারণ মানুষের চেষ্টায়ই বাংলাদেশ একদিন বদলাবে। তিনি বলেন, আমার ছাত্রসহ অনেকেই প্রশ্ন করেন যে, সেই বদলানো কি আমরা দেখে যেতে পারব ? তখন আমি তাদের পাল্টা প্রশ্ন করি এই বলে যে, আমরা দেখে যেতে পারব কি-না, এই চিন্তা করে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে কি চলবে ? তিনি বলেন, দেশে এখন যে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে, আমরা সেটার নির্মূল চাইনা, আমরা বলি এটাকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার কথা। কিন্তু সেরকম কোনো চেষ্টাও নেই।
এর আগে স্থানীয় সময় গত শুক্রবার রাতে নিউ ইয়র্ক এ বইমেলা ও বাংলা উত্সব উদ্বোধনকালে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা মোটেই বইপড়ামুখী নয়, পুরো ব্যবস্থাটাই পরীক্ষামুখী। কেবলমাত্র পরীক্ষায় পাশের জন্য যেটুকু দরকার সেটুকুই পড়তে উত্সাহিত করা হয়। এ কারণে মানুষ শিক্ষিত হলেও পড়ুয়া হয়ে উঠে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একবার আমাকে ডেকে বললেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে বই পড়ার কার্যক্রম হাতে নিতে। আমি তাকে বললাম, যখন কাগজের বই ছিল না, তখনও মানুষ বই পড়েছে। আবার যখন কাগজের বই থাকবে না তখনও মানুষ বই পড়বে। আসল বিষয় হলো মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সেই কাজটি করতে পারছে না। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা না গেলে বিশেষ কোনো পদ্ধতির বই দিয়ে কাজ হবে না।
No comments