উচ্চশিক্ষার গণতন্ত্রায়ণ by আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ
উচ্চশিক্ষা বিষয়ে ইউনেসকোর ২০০৯ সালের বিশ্বসম্মেলনের জন্য যে প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছিল, তার শিরোনাম ছিল ‘ট্রেন্ডস ইন গ্লোবাল হায়ার এডুকেশন: ট্র্যাকিং অ্যান একাডেমিক রেভল্যুশন’। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির গতি পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে প্রতিবেদনটি বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রে পালাবদলের জোরালো ইঙ্গিত দিয়েছিল। এ অবস্থা পরিবর্তী সময়ে শিল্প-অর্থনীতির গতিধারাকে পাল্টে দিয়ে পরিষেবামূলক শিল্প ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি বিকাশের ক্ষেত্রে বর্তমানে ভূমিকা রাখছে। এটি উচ্চশিক্ষার চাহিদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও অতুলনীয় ভূমিকা রাখছে। এটাকে বলা যায় উচ্চশিক্ষার গণতন্ত্রায়ণ।
উচ্চশিক্ষার মুখ্য উদ্দেশ্য হলো বাজার উপযোগী জনশক্তি নির্মাণ ও তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা। এ জনশক্তি বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার জন্য কল্যাণকর।
শিল্প ও শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের সর্বোচ্চ মান নিয়ন্ত্রণের জন্য আশির দশক থেকে পৃথিবীব্যাপী শুরু হয়েছে নানা শিল্পের বেসরকারীকরণ। শিক্ষাও একটি শিল্প। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও উচ্চশিক্ষার বেসরকারীকরণ হয়েছে এবং হচ্ছে। তাই কর্মক্ষম জনশক্তি তৈরিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকাকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।
প্রতিটি সেক্টরে কম সময়ে উচ্চ মানসম্পন্ন সার্ভিস দেওয়ার ক্ষেত্রে যেভাবে প্রযুক্তি এগিয়ে আসছে, তাতে শুধু ভবন নির্মাণ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আমরা উদাহরণস্বরূপ ডাকব্যবস্থার কথা বলতে পারি। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খবর পাঠানোর জন্য, টাকা পাঠানোর জন্য ব্যবহার হতো ডাকঘর। ডাকঘর ছাড়া আর কোনো মাধ্যম ছিল না। শত শত কোটি টাকা খরচ করে কয়েক হাজার ডাকঘর এ দেশেই তৈরি করা হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে আজ আর ডাকঘর ব্যবহার হচ্ছে না। অল্প দিনের ব্যবধানেই প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে শত সহস্র কোটি টাকা দিয়ে তৈরি ডাকঘরের। ডাকঘরের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেও সার্ভিস বন্ধ হয়নি। বরং ওই সব সার্ভিসের মান বেড়েছে বহুগুণ, সময় ও টাকা উভয়টিই কম লাগছে। একটি ইলেকট্রনিক চিঠি (ই-মেইল) সেকেন্ডের মধ্যে শুধু দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত নয়, বরং পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে চলে যাচ্ছে। ফলে কাগজে চিঠি লিখতে গেলে যে পরিমাণ কাগজ বা কালি ব্যবহার হতো, তা আর লাগছে না। এখন ই-মেইল করতে অবশ্য কম্পিউটার লাগছে না। মুঠোফোন সেট থেকেও করা যাচ্ছে। এ সবই হচ্ছে প্রযুক্তির উৎকর্ষ।
আরেকটি উদাহরণ দিই। আগে মুদ্রিত খবরের কাগজই ছিল পাঠকের একমাত্র ভরসা। এখন অগ্রাধিকার পাচ্ছে অনলাইন পত্রিকা। পৃথিবীব্যাপী শত শত খবরের কাগজ অনলাইন পত্রিকায় রূপ নিয়েছে। এ পত্রিকা পড়ার জন্য কম্পিউটারও লাগছে না। মুঠোফোন সেট থেকেও পড়া যাচ্ছে। এ সবই হচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ একটি যুগান্তকারী ঘোষণা। এই একটি সাহসী ও উচ্চাভিলাষী উচ্চারণ দেশটিকে সমসাময়িক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করছে। সার্ভিস সেক্টরের প্রতিটি অধ্যায়ে আজ ডিজিটালাইজেশন জরুরি। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের ‘বেসরকারীকরণ’ বিপ্লবকে সত্যিকার রূপ দিতে গেলে এটির ‘ডিজিটালকরণ’-এর বিকল্প নেই।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানসম্মত শিক্ষার মাপকাঠির জন্য শুধু স্থায়ী ক্যাম্পাস চিহ্নিত করা হয়েছে। আসলে বিষয়টি কি তা-ই? আমার মনে হয়, যোগ্যতাসম্পন্ন পর্যাপ্ত শিক্ষক, উন্নত ল্যাবরেটরি, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, কর্মমুখী পাঠক্রম ও পাঠদান উপযোগী পরিবেশ—এগুলোই শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ বা মান নির্ণয়ের জন্য জরুরি। পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের প্রতিবেদনে প্রায়ই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম সমস্যা হিসেবে শুধু স্থায়ী ক্যাম্পাসকেই উল্লেখ করা হয়। স্থায়ী ক্যাম্পাসের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে, তাই বলে একমাত্র স্থায়ী ক্যাম্পাসই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নত মান নিশ্চিত করার একমাত্র মাধ্যম হতে পারে না।
গরিব ও মধ্য আয়ের দেশগুলোয় বর্তমানে পরিচালিত উচ্চশিক্ষা বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করার জন্য যেমন সময় বাঁচাতে হবে, তেমনি অনুৎপাদনশীল ক্ষেত্রে অযথা পয়সা খরচ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। পড়াশোনার জন্য ভবন অপরিহার্য বটে, কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তির উৎকর্ষে এ ভবনগুলোও একসময় ডাকঘরের অবস্থায় পরিণত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ বা রিসোর্স ব্যবহার করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। দেখা গেছে, ছাত্র আন্দোলনের কারণে, ধর্মঘটের কারণে, হরতাল ইত্যাদির কারণে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ক্লাস হয় না। নির্ধারিত সময়ে কোর্সও শেষ হয় না, বরং সেশনজট বাড়তে থাকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ক্লাস হয় না, কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নির্ধারিত সময়ে তাঁদের কোর্স সম্পন্ন করার জন্য বাসায় বসে সেলফোন থেকে কোর্স-আউট লাইন ছাত্রদের কাছে অনলাইনে পাঠাচ্ছেন এবং ছাত্ররা বাসায় বসে তা সেলফোন বা কম্পিউটারে ডাউনলোড করে পড়াশোনা করছে, এমনকি অনলাইনে পরীক্ষাও দিচ্ছে। অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষের বাইরেও পড়াশোনা হতে পারে এবং হচ্ছে।
হাজার হাজার বর্গফুট জায়গা দখল করে লাইব্রেরি সেটআপ করার প্রয়োজন হয়তো নেই বা থাকবে না। ছোট একটি কক্ষে বসে লাইব্রেরির সব বই ও জার্নালের ডিজিটাইজেশন করে ওয়েবভিত্তিক করে দিলে ছাত্ররা বাসায় বসেই লাইব্রেরির বই-জার্নাল পড়তে পারছে। এ জন্য ছাত্রদের লাইব্রেরিতে এসে ভিড় করার প্রয়োজন পড়ছে না, বাড়তি জায়গা দখলের প্রয়োজনও পড়ছে না।
প্রযুক্তি ও দ্রুত বিশ্বায়নের যুগে শিক্ষার বৈপ্লবিক পরিবর্তনের বিশ্বাসী বিশেষজ্ঞরা স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য অত্যন্ত উঁচু ব্যয়ে নির্মিত ভবনসুবিধাকে একধরনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ভাবেন। তথ্যপ্রযুক্তি, দূরশিক্ষণ ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের কারণে সনাতনী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেকেলে হতে বাধ্য। ভবনটি ভাড়া নাকি স্থায়ী, সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়, ভবনটিতে শিক্ষার উপযোগী পরিবেশ আছে কি না, সেটিই বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত।
বিশ্বব্যাংক সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ দুর্বল ব্যবস্থাপনা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষায় উন্নয়ন করছে। এখানে উচ্চশিক্ষার বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করার জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন, দক্ষ শিক্ষক, পাঠদান পরিবেশ, সহপাঠ্যানুক্রমিক কর্মকাণ্ড বা ক্লাব, শিক্ষার মান এবং গ্র্যাজুয়েটদের কর্মযোগ্যতাকে অত্যধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ভৌত কাঠামোকে অগ্রাধিকার দেওয়া নয়, শুধু তদারকি নয়, নিছক গ্র্যাজুয়েট তৈরি নয়; বরং জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্যে প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে হবে সবার আগে।
আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ: অধ্যাপক, আইবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
উচ্চশিক্ষার মুখ্য উদ্দেশ্য হলো বাজার উপযোগী জনশক্তি নির্মাণ ও তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা। এ জনশক্তি বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার জন্য কল্যাণকর।
শিল্প ও শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের সর্বোচ্চ মান নিয়ন্ত্রণের জন্য আশির দশক থেকে পৃথিবীব্যাপী শুরু হয়েছে নানা শিল্পের বেসরকারীকরণ। শিক্ষাও একটি শিল্প। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও উচ্চশিক্ষার বেসরকারীকরণ হয়েছে এবং হচ্ছে। তাই কর্মক্ষম জনশক্তি তৈরিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকাকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।
প্রতিটি সেক্টরে কম সময়ে উচ্চ মানসম্পন্ন সার্ভিস দেওয়ার ক্ষেত্রে যেভাবে প্রযুক্তি এগিয়ে আসছে, তাতে শুধু ভবন নির্মাণ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আমরা উদাহরণস্বরূপ ডাকব্যবস্থার কথা বলতে পারি। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খবর পাঠানোর জন্য, টাকা পাঠানোর জন্য ব্যবহার হতো ডাকঘর। ডাকঘর ছাড়া আর কোনো মাধ্যম ছিল না। শত শত কোটি টাকা খরচ করে কয়েক হাজার ডাকঘর এ দেশেই তৈরি করা হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে আজ আর ডাকঘর ব্যবহার হচ্ছে না। অল্প দিনের ব্যবধানেই প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে শত সহস্র কোটি টাকা দিয়ে তৈরি ডাকঘরের। ডাকঘরের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেও সার্ভিস বন্ধ হয়নি। বরং ওই সব সার্ভিসের মান বেড়েছে বহুগুণ, সময় ও টাকা উভয়টিই কম লাগছে। একটি ইলেকট্রনিক চিঠি (ই-মেইল) সেকেন্ডের মধ্যে শুধু দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত নয়, বরং পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে চলে যাচ্ছে। ফলে কাগজে চিঠি লিখতে গেলে যে পরিমাণ কাগজ বা কালি ব্যবহার হতো, তা আর লাগছে না। এখন ই-মেইল করতে অবশ্য কম্পিউটার লাগছে না। মুঠোফোন সেট থেকেও করা যাচ্ছে। এ সবই হচ্ছে প্রযুক্তির উৎকর্ষ।
আরেকটি উদাহরণ দিই। আগে মুদ্রিত খবরের কাগজই ছিল পাঠকের একমাত্র ভরসা। এখন অগ্রাধিকার পাচ্ছে অনলাইন পত্রিকা। পৃথিবীব্যাপী শত শত খবরের কাগজ অনলাইন পত্রিকায় রূপ নিয়েছে। এ পত্রিকা পড়ার জন্য কম্পিউটারও লাগছে না। মুঠোফোন সেট থেকেও পড়া যাচ্ছে। এ সবই হচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ একটি যুগান্তকারী ঘোষণা। এই একটি সাহসী ও উচ্চাভিলাষী উচ্চারণ দেশটিকে সমসাময়িক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করছে। সার্ভিস সেক্টরের প্রতিটি অধ্যায়ে আজ ডিজিটালাইজেশন জরুরি। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের ‘বেসরকারীকরণ’ বিপ্লবকে সত্যিকার রূপ দিতে গেলে এটির ‘ডিজিটালকরণ’-এর বিকল্প নেই।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানসম্মত শিক্ষার মাপকাঠির জন্য শুধু স্থায়ী ক্যাম্পাস চিহ্নিত করা হয়েছে। আসলে বিষয়টি কি তা-ই? আমার মনে হয়, যোগ্যতাসম্পন্ন পর্যাপ্ত শিক্ষক, উন্নত ল্যাবরেটরি, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, কর্মমুখী পাঠক্রম ও পাঠদান উপযোগী পরিবেশ—এগুলোই শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ বা মান নির্ণয়ের জন্য জরুরি। পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের প্রতিবেদনে প্রায়ই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম সমস্যা হিসেবে শুধু স্থায়ী ক্যাম্পাসকেই উল্লেখ করা হয়। স্থায়ী ক্যাম্পাসের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে, তাই বলে একমাত্র স্থায়ী ক্যাম্পাসই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নত মান নিশ্চিত করার একমাত্র মাধ্যম হতে পারে না।
গরিব ও মধ্য আয়ের দেশগুলোয় বর্তমানে পরিচালিত উচ্চশিক্ষা বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করার জন্য যেমন সময় বাঁচাতে হবে, তেমনি অনুৎপাদনশীল ক্ষেত্রে অযথা পয়সা খরচ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। পড়াশোনার জন্য ভবন অপরিহার্য বটে, কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তির উৎকর্ষে এ ভবনগুলোও একসময় ডাকঘরের অবস্থায় পরিণত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ বা রিসোর্স ব্যবহার করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। দেখা গেছে, ছাত্র আন্দোলনের কারণে, ধর্মঘটের কারণে, হরতাল ইত্যাদির কারণে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ক্লাস হয় না। নির্ধারিত সময়ে কোর্সও শেষ হয় না, বরং সেশনজট বাড়তে থাকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ক্লাস হয় না, কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নির্ধারিত সময়ে তাঁদের কোর্স সম্পন্ন করার জন্য বাসায় বসে সেলফোন থেকে কোর্স-আউট লাইন ছাত্রদের কাছে অনলাইনে পাঠাচ্ছেন এবং ছাত্ররা বাসায় বসে তা সেলফোন বা কম্পিউটারে ডাউনলোড করে পড়াশোনা করছে, এমনকি অনলাইনে পরীক্ষাও দিচ্ছে। অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষের বাইরেও পড়াশোনা হতে পারে এবং হচ্ছে।
হাজার হাজার বর্গফুট জায়গা দখল করে লাইব্রেরি সেটআপ করার প্রয়োজন হয়তো নেই বা থাকবে না। ছোট একটি কক্ষে বসে লাইব্রেরির সব বই ও জার্নালের ডিজিটাইজেশন করে ওয়েবভিত্তিক করে দিলে ছাত্ররা বাসায় বসেই লাইব্রেরির বই-জার্নাল পড়তে পারছে। এ জন্য ছাত্রদের লাইব্রেরিতে এসে ভিড় করার প্রয়োজন পড়ছে না, বাড়তি জায়গা দখলের প্রয়োজনও পড়ছে না।
প্রযুক্তি ও দ্রুত বিশ্বায়নের যুগে শিক্ষার বৈপ্লবিক পরিবর্তনের বিশ্বাসী বিশেষজ্ঞরা স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য অত্যন্ত উঁচু ব্যয়ে নির্মিত ভবনসুবিধাকে একধরনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ভাবেন। তথ্যপ্রযুক্তি, দূরশিক্ষণ ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের কারণে সনাতনী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেকেলে হতে বাধ্য। ভবনটি ভাড়া নাকি স্থায়ী, সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়, ভবনটিতে শিক্ষার উপযোগী পরিবেশ আছে কি না, সেটিই বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত।
বিশ্বব্যাংক সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ দুর্বল ব্যবস্থাপনা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষায় উন্নয়ন করছে। এখানে উচ্চশিক্ষার বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করার জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন, দক্ষ শিক্ষক, পাঠদান পরিবেশ, সহপাঠ্যানুক্রমিক কর্মকাণ্ড বা ক্লাব, শিক্ষার মান এবং গ্র্যাজুয়েটদের কর্মযোগ্যতাকে অত্যধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ভৌত কাঠামোকে অগ্রাধিকার দেওয়া নয়, শুধু তদারকি নয়, নিছক গ্র্যাজুয়েট তৈরি নয়; বরং জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্যে প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে হবে সবার আগে।
আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ: অধ্যাপক, আইবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments