গল্প- একজন সীমাবদ্ধ ভাগ্যের মানুষ by এ টি এম হায়দার খান
এক
শ উনিশ বছর আগের কথা। ১৮৯৬ সালের বসন্তের প্রায় শেষদিক। ভারতবর্ষের
চারিদিকে দুর্ভিক্ষ জেঁকে বসেছে। চারিদিকে হাহাকার ও রোগশোকের ছড়াছড়ি। সদ্য
মেডিকেল পাশ করে হেমন্ত ব্যানার্জি বিলেত থেকে এই রকম সময়ে নিজ দেশে
প্রত্যাবর্তন করলেন। তখন সমসাময়িক যে কজন বিলেত ফেরত ডাক্তার কলকাতায়
ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম মেধাবী হেমন্ত ব্যানার্জি।
সকলের ধারণা ছিল দেশে ফিরে হেমন্ত বাবু নিজ শহর কলকাতাতেই রোগী দেখবেন। কলকাতা ভারতের পশ্চিম দিকের অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র। চিরাচরিত নিয়মে ডাক্তারি প্রতিভা দেখিয়ে হেমন্ত বাবুর কাড়ি কাড়ি টাকা আয়ের সমূহ সম্ভাবনা দেখতে আরম্ভ করেছিলেন তার আত্মীয় ও স্থানীয় লোকেরা। কিন্তু সবার ভাবনাকে আশ্চর্য ভাবে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সম্পূর্ণ নিজ খরচে ও বিনা বেতনের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি দাতব্য চিকিৎসালয় খুললেন তিনি। তার স্বাধীনচেতা মন কখনো তার কার্যকলাপ সম্পর্কে কাউকে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পর্যন্ত দেয়নি কোনো দিন। তার দেশন্তপ্রায় হৃদয় সব সময় নিজের দেশের মানুষের কল্যাণে সর্বদা ব্যতিব্যস্ত থাকত। আর সাধারণ মানুষও তার এই উদার হৃদয়ের কৃতজ্ঞতা খুব শ্রদ্ধাভরেই স্মরণ করত। বলাবাহুল্য, হেমন্ত একা বসবাস করতেন। রক্তের কোনো টান তার ছিল না। ১৮৮৯ সালে তিনি বিলেত পাড়ি জমানোর দু বছরের মাথায় তার বাবার মৃত্যু হয়। তাই নিজের একাকিত্বকে তিনি গণ্ডির মধ্যে গুমরে ওঠার সুযোগ না দিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নিজেকে ভাগ করে নিতেন। যদিও দিন শেষে আবার তাকে একা থাকতেই হতো। বাবাই ছিল তার একমাত্র সম্বল। ১৮৮০ সালের ওলার ভয়ংকর কবল থেকে তার বাবা নিজেকে কোনোরকমে বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারের আর কাউকে সেই মৃত্যু ক্ষমা করেনি।
যা হোক কিছুদিনের মধ্যে অবিবাহিত হেমন্ত বাবু কন্যাদায়গ্রস্ত বাবাদের কাছে বেশ চাহিদাসম্পন্ন হয়ে উঠলেন। এদের মধ্যে স্থানীয় কালেক্টর বাবু অন্যতম। তার সাত ছেলে ও একমাত্র কন্যা প্রিয়বাসিনীকে নিয়ে সংসার। ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে তার প্রতিপত্তি নেহাত কম ছিল না।
এমন একজন ক্ষমতাধর মানুষের উপযুক্ত জামাই হিসেবে হেমন্ত বাবুর তুলনা তখন ছিল না। সুতরাং হেমন্ত একদিন কালেক্টর বাবুর নিমন্ত্রণও পেয়ে গেলেন।
১৭ বছর বয়স্কা প্রিয়বাসিনীকে আপন করে পাওয়ার জন্য সত্যি কিছুটা ভাগ্যের ও যোগ্যতারও দরকার ছিল। কেননা তার রূপ আর গুণের কাছে তার বাবার সমস্ত ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি সব ফিকে হয়ে যেত। ধূসর আয়ত চোখ আর সপ্তাদশি যৌবন, এক কথায় অতুলনীয়া করে তুলেছিল তাকে। গোলাকার মুখচ্ছবি, সুগঠিত নাক, টানা ভ্রু যুগল, গোলাপি ঠোঁট আর আকর্ষণীয় কটিদেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল সাবলীল হাসি, সমুদ্রের মতো গভীর দৃষ্টি। কিন্তু তার পরেও তার ক্ষুরধার বুদ্ধির ছটা বেশ ভালোভাবে টের পাওয়া যেত। তার হাসিতে ছিল নিখুঁত শান্ত সমুদ্রের মতো মৌনতা। হাসলে সাধারণের মতো তার গাল ফুলে ওঠে না, নিচের ঠোঁট কিছুটা নিচে সরে আসে। কিন্তু তার সেই হাসির আড়ালে বুদ্ধিদীপ্ত সত্বাকে সহজেই খুঁজে পাওয়া যেত। চোখ দুটি শীতল, উষাকালে সূর্য ওঠার আগে এবং চাঁদ অস্তমিত হওয়ার সময় আকাশে যে কমল নীল বর্ণ প্রকাশ পায়, প্রিয়বাসিনীর চোখের বর্ণ ছিল তেমন। কারুকার্য খচিত দেহ এবং সেই দেহে স্থিরতা ছিল না। কানে হিরের অলংকার আর গলায় রাজকীয় হীরক মালা। নতুন পাশ্চাত্য অনুষঙ্গ ব্যবহারে তার কুণ্ঠাবোধ তো ছিলই না বরং স্বর্ণকেশী সেজে থাকতেই সে ভালোবাসত। তার মুখের কমনীয়তা রেশমি চুলের সঙ্গে মিলেমিশে তাকে অপ্সরা করে দিয়েছিল।
গ্রিক দেবী ভেনাসের মতো দেহসৌষ্ঠব আর অত্যাধুনিক সাজ পোশাকের সঙ্গে তার উচ্চমার্গীয় রুচিবোধের সংমিশ্রণ যেকোনো পুরুষের হৃদয় বিদীর্ণ করে দিতে যথেষ্টর থেকে কিছুটা বেশিই ছিল। আর সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টির তীর হেমন্ত বাবুরও হৃদয়ে আলোড়ন তুলল। তিনি প্রিয়বাসিনীর প্রেমে না পড়ে পারলেন না।
কালেক্টর বাবু বুদ্ধিমান লোক। হেমন্ত বাবুর মতো পাত্র লাখে একটা মেলে, এটা তিনি বেশ ভালোই বুঝেছিলেন। তাই হেমন্ত বাবুর প্রস্তাবে দ্বিমত তো করলেনই না বরং তাকে একটি বেশ মোটা রকমের যৌতুকের সঙ্গে কলকাতাতেই একটি যুগোপযোগী হাসপাতালের বন্দোবস্ত করে দেওয়ার প্রস্তাব রাখলেন। কিন্তু আধুনিক মনমানসিকতায় বড় হওয়া হেমন্ত বাবু সে প্রস্তাব বিনম্র ভাবে ফিরিয়ে দিলেন। কালেক্টর বাবু এ নিয়ে আর কথা বাড়ালেন না। পরবর্তীতে একটা সুরাহা করবেন মনে মনে এমন ভাবনা রেখে কথা পাকাপাকি করে ফেললেন। প্রিয়বাসিনী আর হেমন্ত বাবুর গাঁটছড়া তিনি বেশ ঘটা করেই বেধে দিলেন। অনেক মিষ্টি মধুর স্বপ্নে বিভোর হয়ে শুরু হলো নবদম্পতির স্বপ্ন বোনার পথচলা।
কিন্তু ওই যে, মানুষের ভাগ্য, নিয়তি, স্থান, কাল, পাত্র সব যিনি নিয়ন্ত্রণ করেন, তিনি হয়তো অন্যরকম কিছুই ঠিক করে রেখেছিলেন। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নেওয়া প্রিয়বাসিনী নিজেকে হেমন্ত বাবুর সাধারণ জীবনযাপনে মানিয়ে নিতে পারল না। তার ক্রমবর্ধমান বিলাসী চাহিদা অপূর্ণই থেকে যেতে লাগল। উপরন্তু হেমন্ত বাবু যখন শ্বশুরের প্রস্তাব বারবার ফিরিয়ে দিতে লাগলেন তখন তা গোদের ওপরে বিষফোড়া হয়ে দেখা দিল। হেমন্ত বাবুর আত্মবিশ্বাস অটুট থাকল বারবার। নিজের চেষ্টায় ভালোভাবে চলাটা তার লক্ষ্যে পরিণত হয়ে গেছে তত দিনে। এভাবে বছর দু-এক চলার পর প্রিয়বাসিনী গর্ভধারণ করল। এত দিনের ছাইচাপা আগুনে এই খবরটা ঘি হয়ে পড়ে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। দিনে দিনে প্রিয়বাসিনীর বিতৃষ্ণার ভাবটা আরও বেড়ে গেল। তার কোল আলো করে আসা পুত্র সন্তানও তার মনোভাব স্থির করাতে পারল না। ফলে ছয় দিনের শিশু বাচ্চাকে ফেলে রেখেই প্রিয়বাসিনী হেমন্তের ঘর ছাড়ল।
হেমন্ত বাবু জানতেন যে, তাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রিয়বাসিনীর যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তাই তিনি প্রতিবাদ করেননি। তার মনের কোণে তবুও কোথাও যেন কিছু ভালোবাসা অবশিষ্ট থেকে গিয়েছিল, যেটা তাকে প্রিয়বাসিনীর ফিরে আসার ব্যাপারে স্বপ্ন দেখাত। তিনি মানিয়ে নিলেন নিজেকে। আর প্রিয়বাসিনীও তার কাঙ্ক্ষিত জীবনসঙ্গী পেয়ে আবার নতুন করে সংসার পাতল। যদিও তৎকালীন সমাজে পুনর্বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল, তবে তা প্রিয়বাসিনীর মতো ধনী বাবার মেয়েদের জন্য নয়। সে তার অতীত ভুলে নতুন সংসারে মন দিল।
হেমন্ত বাবু কিন্তু আর দ্বিতীয় বিয়ে করলেন না। প্রিয়বাসিনী যাওয়ার আগে তাকে দিয়ে গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি রত্ন। তার ছেলে শিশির। হেমন্ত বুঝেছিলেন, অভাব তার সংসার ভেঙ্গেছে। তাই তিনি শিশিরকে অভাব বোধ করতে দিলেন না কখনোই। শিশির কলকাতার ভালো প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শ্রেণির হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করত।
ইতিমধ্যে কেটে গেছে ১৭টি বসন্ত। শিশির বড় হয়েছে। প্রিয়বাসিনীর নতুন সংসারে আরও একটি ছেলে ও দুটি কন্যা সন্তান হয়েছে। সে শিশিরের খোঁজ নেয়নি কোনো দিন। আর হেমন্ত বাবুও শিশিরকে নিষেধ করেছিলেন তার মা সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করতে।
এক শরতে দুর্গা পূজার ছুটিতে শিশির তার বাবাকে দেখতে এল। প্রিয়বাসিনীও তার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে বাবার বাড়িতে এল পূজা উপলক্ষে। গ্রামে ধনী পরিবার বলতে কালেক্টর বাবুর পরিবারই সব থেকে উঁচুতে। তাই প্রধান দুর্গোৎসবটা সেখানেই হয়। আগে গ্রামের বাইরে থাকায় শিশির কখনোই সেখানে যায়নি। তাই বন্ধুরা যখন জোর করল সেও আর না করল না। তার এক দূরসম্পর্কের দাদা ঠাকুর একদিন কথায় কথায় বলেছিলেন তার মামা বাড়ি ওদিকেই কোথাও। তাই শিশিরের মনে ক্ষীণ আশা জাগল, দশম জন্মতিথিতে বাবার দেওয়া মায়ের একমাত্র ছবির আদলে মাকে যদি খুঁজে পাওয়া যায়। ঠাকুর তাকে নিরাশ করলেন না। কালেক্টর বাবুর মন্দিরে আরতিলগ্নে এক কোণে সে তার মাকে দেখতে পেল। ছবির মতো নয়, কিন্তু ছেলের চোখে মায়ের মুখ অচেনা থাকল না। মনের মধ্যে তীব্র ভাবে জেগে ওঠা মা ডাকার নেশাটাও তার কাছে মিথ্যে মনে হলো না। দু চোখে এক সমুদ্র পিপাসা নিয়ে সে দেখতে লাগল তার মায়ের হাসিমুখ।
প্রিয়বাসিনী চকিতে দেখলেন একটা অল্পবয়সী ছেলে তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তিনি ভয় পেলেন কারণ ইদানীং বাবার মুখে শুনেছেন গ্রামে চোর-ডাকাতের উৎপাত বেড়েছে খুব। সে নিজেকেই ধিক্কার দিতে লাগল সব থেকে দামি গয়নাগুলো পরেছে বলে। ও ব্যাটা নির্ঘাত চোর-ডাকাত, না হলে চোরের সাগরেদ হবে। তার গয়নার লোভে অমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। সন্ধ্যাও হয়ে এসেছে প্রায়। আলো থাকতে থাকতেই সে ঘরমুখো হলো।
পুজোমণ্ডপ পাহারায় থাকা পাইকগুলো আশপাশেই ছিল। ওরা দেখল একটি ছেলে মেম সাহেবের পিছু নিয়েছে।
শিশির নিজের মাকে প্রথমবার দেখছে। তার মনে আজ প্রশান্ত মহাসাগরের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। মাকে আরও কাছ থেকে দেখার লোভ সামলাতে পারল না সে। তাই মার পিছু পিছু চলল সে। ব্যাগ থেকে ছবিটা বের করে দেখাতে হবে মাকে। বলতে হবে সে তার ছেলে। অন্তত একবার ডাকবে মা বলে।
বাড়ির সদর দরজা পর্যন্ত যেতে পারল সে। তারপর পেয়াদাদের ভয়ে এগোতে সাহস পেল না। কিন্তু মনের মধ্যে অশান্ত ভাবটা ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠল তার। তাই সবার অলক্ষ্যে রাতে প্রাচীর টপকিয়ে বাড়ির ভেতর গেল শিশির।
ছেলেটাকে দেখার পর থেকেই কেমন অস্থির লাগছিল প্রিয়বাসিনীর। ঘুমাতে না পেরে ব্যালকনিতেই বসে ছিল। আর সেখান থেকেই দেখল সন্ধ্যায় দেখা ছেলেটাকে দেয়াল টপকাতে। এবার সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে তার কাছে। এতক্ষণ শুধু শুধুই মায়া লাগছিল ওর জন্য। বেটা চোর ছাড়া আর কিছুই নয়। নইলে এত রাতে বাড়িতে দেয়াল টপকে আসে। দোতলা থেকেই চিৎকার দিল সে জোর গলায়। পূজার সময়, তাই বাড়িতে লোকের অভাব নেই। তার এক ডাকেই চারিদিকের ঘর থেকে লোক এসে ঘিরে ধরল শিশিরকে আর বেধড়ক মারতে শুরু করল। বেদম গণপিটুনির চোটে শিশির একটা কথাও বলতে পারল না। প্রিয়বাসিনী ওপর থেকেই সব দেখছিলেন। পরে নিচে নেমে এলেন। ততক্ষণে কোনো একজনের লাথিতে শিশিরের ঘাড় মটকে গেছে। কথা বেরোচ্ছে না প্রায় আর। প্রিয়বাসিনী গেলেন শিশিরের কাছে।
ওদিকে হেমন্ত বাবু শিশিরের বন্ধুদের থেকে খবর পেয়ে প্রায় দৌড়েই আসছিলেন শিশিরকে এই এলাকা থেকে নিয়ে যেতে। পরে খোঁজাখুঁজি করতে করতে শ্বশুরের বাড়ির সামনে এসে হট্টগোল শুনে উঁকি দিয়ে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে তার ছেলে, আর তার প্রাক্তন স্ত্রী এগিয়ে যাচ্ছেন মৃতপ্রায় ছেলের দিকে। প্রিয়বাসিনী শিশিরের কাছে এসে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এতো কম বয়সে তার কীভাবে চুরির অভ্যাস হলো। কিন্তু শিশিরের পক্ষে কথা বলা কঠিন ছিল। এক মুখ রক্ত বমি করে সে বলল, আপনি দেখতে আমার মায়ের মতো। প্রিয়বাসিনী শিশিরের জবাবের ভিত্তি জানতে চাইলেন। আরও একবার রক্ত বমি করে শিশির তার মায়ের ছবিটি বের করে দেখাল। তৎক্ষণাৎ প্রিয়বাসিনী যা বোঝার বুঝে নিয়েছেন। পাথরের মতো স্তব্ধ হয়ে ভাবতে লাগলেন শিশিরের কাছে মা হয়ে ক্ষমা চাইবেন নাকি মায়ের মমতা দিয়ে শিশিরকে বুকে তুলে নিবেন। হেমন্ত দূর থেকে চিত্কার করে ছেলেকে ডাকলেন। কিন্তু বাবার ডাক শিশিরের কানে পৌঁছানোর আগেই এবং প্রিয়বাসিনী কোনো স্থির চিন্তা করার আগেই শিশির ইহকাল ছেড়ে পরকালে গমন করল। হেমন্ত বাবু ছেলের নিথর দেহটি কোলে তুলে নিয়ে আর একটি কথাও না বলে অনেক শান্ত স্বাভাবিক ভাবে নিজের বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করলেন।
পুনশ্চ: হেমন্ত বাবু এর পর আর দু বছর বেঁচে ছিলেন। নিজের ছেলের বিয়োগে প্রিয়বাসিনী কতটুকু দুঃখিত হয়েছিলেন জানি না। কিন্তু হেমন্ত বাবুর মারা যাওয়ার খবর জানিয়ে তাকে টেলিগ্রাম করা হয়েছিল। কিন্তু তার কোনো জবাব আসেনি!
(লেখক যুক্তরাজ্যের লন্ডনপ্রবাসী)
সকলের ধারণা ছিল দেশে ফিরে হেমন্ত বাবু নিজ শহর কলকাতাতেই রোগী দেখবেন। কলকাতা ভারতের পশ্চিম দিকের অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র। চিরাচরিত নিয়মে ডাক্তারি প্রতিভা দেখিয়ে হেমন্ত বাবুর কাড়ি কাড়ি টাকা আয়ের সমূহ সম্ভাবনা দেখতে আরম্ভ করেছিলেন তার আত্মীয় ও স্থানীয় লোকেরা। কিন্তু সবার ভাবনাকে আশ্চর্য ভাবে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সম্পূর্ণ নিজ খরচে ও বিনা বেতনের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি দাতব্য চিকিৎসালয় খুললেন তিনি। তার স্বাধীনচেতা মন কখনো তার কার্যকলাপ সম্পর্কে কাউকে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পর্যন্ত দেয়নি কোনো দিন। তার দেশন্তপ্রায় হৃদয় সব সময় নিজের দেশের মানুষের কল্যাণে সর্বদা ব্যতিব্যস্ত থাকত। আর সাধারণ মানুষও তার এই উদার হৃদয়ের কৃতজ্ঞতা খুব শ্রদ্ধাভরেই স্মরণ করত। বলাবাহুল্য, হেমন্ত একা বসবাস করতেন। রক্তের কোনো টান তার ছিল না। ১৮৮৯ সালে তিনি বিলেত পাড়ি জমানোর দু বছরের মাথায় তার বাবার মৃত্যু হয়। তাই নিজের একাকিত্বকে তিনি গণ্ডির মধ্যে গুমরে ওঠার সুযোগ না দিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নিজেকে ভাগ করে নিতেন। যদিও দিন শেষে আবার তাকে একা থাকতেই হতো। বাবাই ছিল তার একমাত্র সম্বল। ১৮৮০ সালের ওলার ভয়ংকর কবল থেকে তার বাবা নিজেকে কোনোরকমে বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারের আর কাউকে সেই মৃত্যু ক্ষমা করেনি।
যা হোক কিছুদিনের মধ্যে অবিবাহিত হেমন্ত বাবু কন্যাদায়গ্রস্ত বাবাদের কাছে বেশ চাহিদাসম্পন্ন হয়ে উঠলেন। এদের মধ্যে স্থানীয় কালেক্টর বাবু অন্যতম। তার সাত ছেলে ও একমাত্র কন্যা প্রিয়বাসিনীকে নিয়ে সংসার। ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে তার প্রতিপত্তি নেহাত কম ছিল না।
এমন একজন ক্ষমতাধর মানুষের উপযুক্ত জামাই হিসেবে হেমন্ত বাবুর তুলনা তখন ছিল না। সুতরাং হেমন্ত একদিন কালেক্টর বাবুর নিমন্ত্রণও পেয়ে গেলেন।
১৭ বছর বয়স্কা প্রিয়বাসিনীকে আপন করে পাওয়ার জন্য সত্যি কিছুটা ভাগ্যের ও যোগ্যতারও দরকার ছিল। কেননা তার রূপ আর গুণের কাছে তার বাবার সমস্ত ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি সব ফিকে হয়ে যেত। ধূসর আয়ত চোখ আর সপ্তাদশি যৌবন, এক কথায় অতুলনীয়া করে তুলেছিল তাকে। গোলাকার মুখচ্ছবি, সুগঠিত নাক, টানা ভ্রু যুগল, গোলাপি ঠোঁট আর আকর্ষণীয় কটিদেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল সাবলীল হাসি, সমুদ্রের মতো গভীর দৃষ্টি। কিন্তু তার পরেও তার ক্ষুরধার বুদ্ধির ছটা বেশ ভালোভাবে টের পাওয়া যেত। তার হাসিতে ছিল নিখুঁত শান্ত সমুদ্রের মতো মৌনতা। হাসলে সাধারণের মতো তার গাল ফুলে ওঠে না, নিচের ঠোঁট কিছুটা নিচে সরে আসে। কিন্তু তার সেই হাসির আড়ালে বুদ্ধিদীপ্ত সত্বাকে সহজেই খুঁজে পাওয়া যেত। চোখ দুটি শীতল, উষাকালে সূর্য ওঠার আগে এবং চাঁদ অস্তমিত হওয়ার সময় আকাশে যে কমল নীল বর্ণ প্রকাশ পায়, প্রিয়বাসিনীর চোখের বর্ণ ছিল তেমন। কারুকার্য খচিত দেহ এবং সেই দেহে স্থিরতা ছিল না। কানে হিরের অলংকার আর গলায় রাজকীয় হীরক মালা। নতুন পাশ্চাত্য অনুষঙ্গ ব্যবহারে তার কুণ্ঠাবোধ তো ছিলই না বরং স্বর্ণকেশী সেজে থাকতেই সে ভালোবাসত। তার মুখের কমনীয়তা রেশমি চুলের সঙ্গে মিলেমিশে তাকে অপ্সরা করে দিয়েছিল।
গ্রিক দেবী ভেনাসের মতো দেহসৌষ্ঠব আর অত্যাধুনিক সাজ পোশাকের সঙ্গে তার উচ্চমার্গীয় রুচিবোধের সংমিশ্রণ যেকোনো পুরুষের হৃদয় বিদীর্ণ করে দিতে যথেষ্টর থেকে কিছুটা বেশিই ছিল। আর সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টির তীর হেমন্ত বাবুরও হৃদয়ে আলোড়ন তুলল। তিনি প্রিয়বাসিনীর প্রেমে না পড়ে পারলেন না।
কালেক্টর বাবু বুদ্ধিমান লোক। হেমন্ত বাবুর মতো পাত্র লাখে একটা মেলে, এটা তিনি বেশ ভালোই বুঝেছিলেন। তাই হেমন্ত বাবুর প্রস্তাবে দ্বিমত তো করলেনই না বরং তাকে একটি বেশ মোটা রকমের যৌতুকের সঙ্গে কলকাতাতেই একটি যুগোপযোগী হাসপাতালের বন্দোবস্ত করে দেওয়ার প্রস্তাব রাখলেন। কিন্তু আধুনিক মনমানসিকতায় বড় হওয়া হেমন্ত বাবু সে প্রস্তাব বিনম্র ভাবে ফিরিয়ে দিলেন। কালেক্টর বাবু এ নিয়ে আর কথা বাড়ালেন না। পরবর্তীতে একটা সুরাহা করবেন মনে মনে এমন ভাবনা রেখে কথা পাকাপাকি করে ফেললেন। প্রিয়বাসিনী আর হেমন্ত বাবুর গাঁটছড়া তিনি বেশ ঘটা করেই বেধে দিলেন। অনেক মিষ্টি মধুর স্বপ্নে বিভোর হয়ে শুরু হলো নবদম্পতির স্বপ্ন বোনার পথচলা।
কিন্তু ওই যে, মানুষের ভাগ্য, নিয়তি, স্থান, কাল, পাত্র সব যিনি নিয়ন্ত্রণ করেন, তিনি হয়তো অন্যরকম কিছুই ঠিক করে রেখেছিলেন। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নেওয়া প্রিয়বাসিনী নিজেকে হেমন্ত বাবুর সাধারণ জীবনযাপনে মানিয়ে নিতে পারল না। তার ক্রমবর্ধমান বিলাসী চাহিদা অপূর্ণই থেকে যেতে লাগল। উপরন্তু হেমন্ত বাবু যখন শ্বশুরের প্রস্তাব বারবার ফিরিয়ে দিতে লাগলেন তখন তা গোদের ওপরে বিষফোড়া হয়ে দেখা দিল। হেমন্ত বাবুর আত্মবিশ্বাস অটুট থাকল বারবার। নিজের চেষ্টায় ভালোভাবে চলাটা তার লক্ষ্যে পরিণত হয়ে গেছে তত দিনে। এভাবে বছর দু-এক চলার পর প্রিয়বাসিনী গর্ভধারণ করল। এত দিনের ছাইচাপা আগুনে এই খবরটা ঘি হয়ে পড়ে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। দিনে দিনে প্রিয়বাসিনীর বিতৃষ্ণার ভাবটা আরও বেড়ে গেল। তার কোল আলো করে আসা পুত্র সন্তানও তার মনোভাব স্থির করাতে পারল না। ফলে ছয় দিনের শিশু বাচ্চাকে ফেলে রেখেই প্রিয়বাসিনী হেমন্তের ঘর ছাড়ল।
হেমন্ত বাবু জানতেন যে, তাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রিয়বাসিনীর যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তাই তিনি প্রতিবাদ করেননি। তার মনের কোণে তবুও কোথাও যেন কিছু ভালোবাসা অবশিষ্ট থেকে গিয়েছিল, যেটা তাকে প্রিয়বাসিনীর ফিরে আসার ব্যাপারে স্বপ্ন দেখাত। তিনি মানিয়ে নিলেন নিজেকে। আর প্রিয়বাসিনীও তার কাঙ্ক্ষিত জীবনসঙ্গী পেয়ে আবার নতুন করে সংসার পাতল। যদিও তৎকালীন সমাজে পুনর্বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল, তবে তা প্রিয়বাসিনীর মতো ধনী বাবার মেয়েদের জন্য নয়। সে তার অতীত ভুলে নতুন সংসারে মন দিল।
হেমন্ত বাবু কিন্তু আর দ্বিতীয় বিয়ে করলেন না। প্রিয়বাসিনী যাওয়ার আগে তাকে দিয়ে গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি রত্ন। তার ছেলে শিশির। হেমন্ত বুঝেছিলেন, অভাব তার সংসার ভেঙ্গেছে। তাই তিনি শিশিরকে অভাব বোধ করতে দিলেন না কখনোই। শিশির কলকাতার ভালো প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শ্রেণির হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করত।
ইতিমধ্যে কেটে গেছে ১৭টি বসন্ত। শিশির বড় হয়েছে। প্রিয়বাসিনীর নতুন সংসারে আরও একটি ছেলে ও দুটি কন্যা সন্তান হয়েছে। সে শিশিরের খোঁজ নেয়নি কোনো দিন। আর হেমন্ত বাবুও শিশিরকে নিষেধ করেছিলেন তার মা সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করতে।
এক শরতে দুর্গা পূজার ছুটিতে শিশির তার বাবাকে দেখতে এল। প্রিয়বাসিনীও তার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে বাবার বাড়িতে এল পূজা উপলক্ষে। গ্রামে ধনী পরিবার বলতে কালেক্টর বাবুর পরিবারই সব থেকে উঁচুতে। তাই প্রধান দুর্গোৎসবটা সেখানেই হয়। আগে গ্রামের বাইরে থাকায় শিশির কখনোই সেখানে যায়নি। তাই বন্ধুরা যখন জোর করল সেও আর না করল না। তার এক দূরসম্পর্কের দাদা ঠাকুর একদিন কথায় কথায় বলেছিলেন তার মামা বাড়ি ওদিকেই কোথাও। তাই শিশিরের মনে ক্ষীণ আশা জাগল, দশম জন্মতিথিতে বাবার দেওয়া মায়ের একমাত্র ছবির আদলে মাকে যদি খুঁজে পাওয়া যায়। ঠাকুর তাকে নিরাশ করলেন না। কালেক্টর বাবুর মন্দিরে আরতিলগ্নে এক কোণে সে তার মাকে দেখতে পেল। ছবির মতো নয়, কিন্তু ছেলের চোখে মায়ের মুখ অচেনা থাকল না। মনের মধ্যে তীব্র ভাবে জেগে ওঠা মা ডাকার নেশাটাও তার কাছে মিথ্যে মনে হলো না। দু চোখে এক সমুদ্র পিপাসা নিয়ে সে দেখতে লাগল তার মায়ের হাসিমুখ।
প্রিয়বাসিনী চকিতে দেখলেন একটা অল্পবয়সী ছেলে তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তিনি ভয় পেলেন কারণ ইদানীং বাবার মুখে শুনেছেন গ্রামে চোর-ডাকাতের উৎপাত বেড়েছে খুব। সে নিজেকেই ধিক্কার দিতে লাগল সব থেকে দামি গয়নাগুলো পরেছে বলে। ও ব্যাটা নির্ঘাত চোর-ডাকাত, না হলে চোরের সাগরেদ হবে। তার গয়নার লোভে অমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। সন্ধ্যাও হয়ে এসেছে প্রায়। আলো থাকতে থাকতেই সে ঘরমুখো হলো।
পুজোমণ্ডপ পাহারায় থাকা পাইকগুলো আশপাশেই ছিল। ওরা দেখল একটি ছেলে মেম সাহেবের পিছু নিয়েছে।
শিশির নিজের মাকে প্রথমবার দেখছে। তার মনে আজ প্রশান্ত মহাসাগরের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। মাকে আরও কাছ থেকে দেখার লোভ সামলাতে পারল না সে। তাই মার পিছু পিছু চলল সে। ব্যাগ থেকে ছবিটা বের করে দেখাতে হবে মাকে। বলতে হবে সে তার ছেলে। অন্তত একবার ডাকবে মা বলে।
বাড়ির সদর দরজা পর্যন্ত যেতে পারল সে। তারপর পেয়াদাদের ভয়ে এগোতে সাহস পেল না। কিন্তু মনের মধ্যে অশান্ত ভাবটা ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠল তার। তাই সবার অলক্ষ্যে রাতে প্রাচীর টপকিয়ে বাড়ির ভেতর গেল শিশির।
ছেলেটাকে দেখার পর থেকেই কেমন অস্থির লাগছিল প্রিয়বাসিনীর। ঘুমাতে না পেরে ব্যালকনিতেই বসে ছিল। আর সেখান থেকেই দেখল সন্ধ্যায় দেখা ছেলেটাকে দেয়াল টপকাতে। এবার সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে তার কাছে। এতক্ষণ শুধু শুধুই মায়া লাগছিল ওর জন্য। বেটা চোর ছাড়া আর কিছুই নয়। নইলে এত রাতে বাড়িতে দেয়াল টপকে আসে। দোতলা থেকেই চিৎকার দিল সে জোর গলায়। পূজার সময়, তাই বাড়িতে লোকের অভাব নেই। তার এক ডাকেই চারিদিকের ঘর থেকে লোক এসে ঘিরে ধরল শিশিরকে আর বেধড়ক মারতে শুরু করল। বেদম গণপিটুনির চোটে শিশির একটা কথাও বলতে পারল না। প্রিয়বাসিনী ওপর থেকেই সব দেখছিলেন। পরে নিচে নেমে এলেন। ততক্ষণে কোনো একজনের লাথিতে শিশিরের ঘাড় মটকে গেছে। কথা বেরোচ্ছে না প্রায় আর। প্রিয়বাসিনী গেলেন শিশিরের কাছে।
ওদিকে হেমন্ত বাবু শিশিরের বন্ধুদের থেকে খবর পেয়ে প্রায় দৌড়েই আসছিলেন শিশিরকে এই এলাকা থেকে নিয়ে যেতে। পরে খোঁজাখুঁজি করতে করতে শ্বশুরের বাড়ির সামনে এসে হট্টগোল শুনে উঁকি দিয়ে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে তার ছেলে, আর তার প্রাক্তন স্ত্রী এগিয়ে যাচ্ছেন মৃতপ্রায় ছেলের দিকে। প্রিয়বাসিনী শিশিরের কাছে এসে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এতো কম বয়সে তার কীভাবে চুরির অভ্যাস হলো। কিন্তু শিশিরের পক্ষে কথা বলা কঠিন ছিল। এক মুখ রক্ত বমি করে সে বলল, আপনি দেখতে আমার মায়ের মতো। প্রিয়বাসিনী শিশিরের জবাবের ভিত্তি জানতে চাইলেন। আরও একবার রক্ত বমি করে শিশির তার মায়ের ছবিটি বের করে দেখাল। তৎক্ষণাৎ প্রিয়বাসিনী যা বোঝার বুঝে নিয়েছেন। পাথরের মতো স্তব্ধ হয়ে ভাবতে লাগলেন শিশিরের কাছে মা হয়ে ক্ষমা চাইবেন নাকি মায়ের মমতা দিয়ে শিশিরকে বুকে তুলে নিবেন। হেমন্ত দূর থেকে চিত্কার করে ছেলেকে ডাকলেন। কিন্তু বাবার ডাক শিশিরের কানে পৌঁছানোর আগেই এবং প্রিয়বাসিনী কোনো স্থির চিন্তা করার আগেই শিশির ইহকাল ছেড়ে পরকালে গমন করল। হেমন্ত বাবু ছেলের নিথর দেহটি কোলে তুলে নিয়ে আর একটি কথাও না বলে অনেক শান্ত স্বাভাবিক ভাবে নিজের বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করলেন।
পুনশ্চ: হেমন্ত বাবু এর পর আর দু বছর বেঁচে ছিলেন। নিজের ছেলের বিয়োগে প্রিয়বাসিনী কতটুকু দুঃখিত হয়েছিলেন জানি না। কিন্তু হেমন্ত বাবুর মারা যাওয়ার খবর জানিয়ে তাকে টেলিগ্রাম করা হয়েছিল। কিন্তু তার কোনো জবাব আসেনি!
(লেখক যুক্তরাজ্যের লন্ডনপ্রবাসী)
No comments