মালয়েশিয়ায় এবার গণকবর
মালয়েশিয়ার সীমান্তের কাছে থাইল্যান্ডের শংখলা প্রদেশের জঙ্গলে গণকবর থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে দেহাবশেষ। ছবিটি ২ মে তোলা |
আরও
গণকবর। আরও লাশ। দু-একটি নয়, শতাধিক লাশ। পচন ধরে তা পরিণত হয়েছে কংকালে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে বলা হচ্ছে, এ লাশগুলো পাচার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশী ও
মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোন তথ্য মেলে নি।
থাইল্যান্ডের পর এবার এমনই এক গণকবর আবিষ্কার করা হয়েছে মালয়েশিয়ায়।
থাইল্যান্ডের চেয়েও ভয়াবহ এ কাহিনী। মালয় ভাষার পত্রিকা ‘উতুসান মালয়েশিয়া’
রিপোর্ট করেছে, প্রায় ৩০টি গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছে। তাতে রয়েছে কয়েক শ
কংকাল। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাহিদ হামিদি এ খবরে মর্মাহত। তিনি
হতাশা প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, তারা নিশ্চিত নন ওই গণকবরে কি
পরিমাণ মানুষের লাশ আছে। তবে এ সংখ্যা অনেক বেশি। এতে কোন কোন দেশের
নাগরিকের লাশ আছে তিনি তাও জানাতে পারেন নি। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ
করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে পুলিশ। তবে তারা এ নিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে।
এ গণকবরটি আবিষ্কার করা হয়েছে থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে মালয়েশিয়ায় পাদাং
বেসার ও ওয়াং কেলিয়ান শহরসংলগ্ন এলাকায়। এ খবর প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে
সারাবিশ্বে বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ে এ রিপোর্ট। এ মাসের শুরুর দিকে
থাইল্যান্ডের প্রত্যন্ত গহিন জঙ্গলে বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের
আটকে রাখার ও গণকবরের সন্ধান মেলে। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় কমপক্ষে ২৬টি
মৃতদেহ। এর পরই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও
মালয়েশিয়া সতর্ক হয়ে ওঠে। আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে থাকে মানব পাচারের এক
ভয়াবহ, বিভীষিকার চিত্র। জাতিসংঘসহ মানবাধিকারবিষয়ক গ্রুপগুলো বলে,
পাচারবিরোধী অভিযান জোরালো হওয়ায় গভীর সমুদ্রে কয়েক হাজার মানুষকে ফেলে
পালিয়েছে পাচারকারীরা। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা পৌঁছে যায় সেই
সমুদ্রে। তাতে ধরা পড়ে, হাড্ডিসার মানুষের চিত্র। নৌযানের ভেতর খাবার নিয়ে
মারামারি করে শতাধিক নিহতের খবর। গলা কেটে মানুষ মেরে সমুদ্রের পানিতে ফেলে
দেয়ার কাহিনী। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের আহ্বানে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও
মালয়েশিয়া ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসে কুয়ালালামপুরে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়
ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া এসব অভিবাসীকে ঠাঁই দেবে। এর মাত্র তিন দিন পর
গতকাল গা শিউরে ওঠার মতো খবর প্রকাশ হয় মালয়েশিয়া থেকে।
গণকবরে ১০০ লাশ: মালয়েশিয়া পুলিশ দেশটির পার্বত্য অঞ্চলের এক জঙ্গলে একটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মানব পাচারের শিকার হওয়া হতভাগ্য বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অভিবাসীদের লাশ রয়েছে তাতে। পাদাং বেসার অঞ্চলে এ গণকবরের সন্ধান মিলেছে। সেখানে প্রায় ১০০ বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অভিবাসীর লাশ রয়েছে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তবে এ ব্যাপারে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারে নি তারা। যেখানে ওই গণকবর পাওয়া গেছে বেসামরিক নাগরিকদের যাতায়াত নেই সেখানে। পুলিশের ইন্সপেক্টর-জেনারেল খালিদ আবু বকরের এ বিষয়ে আজ একটি সংবাদ সম্মেলন করার কথা। এ মাসের মাঝামাঝি পেরিলস অঞ্চলে পাদাং বেসার ও ওয়্যাং কেলিয়ান জঙ্গলে মোট ৩০টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। মিঙ্গুয়ান মালয়েশিয়া সংবাদপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য মালয় মেইল অনলাইন এ খবর দিয়েছে। এর আগে থাইল্যান্ডের সঙ্খলায় যে গণকবরগুলো পাওয়া যায়, তার সঙ্গে মালয়েশিয়ায় নতুন পাওয়া এ গণকবরগুলোর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। থাই কর্তৃপক্ষ ওই গণকবর থেকে ২৬টি মৃতদেহ উদ্ধার করে। ওই লাশগুলো মানব পাচারের শিকার হওয়া বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বলে মনে করা হয়। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাহিদ হামিদি বলেন, তারা পাদাং বেসার এলাকায় যে গণকবর পেয়েছেন সেটা এমন এক জায়গায় ধারণা করা হয়, তার পাশেই ছিল পাচারকারীদের বন্দিশিবির। সেখানে মানুষদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হতো। মুক্তিপণ না পেলে হত্যা করা হতো। এই পাদাং বেসার হলো থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াকে ভূভাগ যেখানে সংযুক্ত করেছে তার সংলগ্ন স্থানেই। সেখানে অভিবাসীদের আটকে রেখে সময়-সুযোগ বুঝে মালয়েশিয়া পাচার করা হতো। তবে থাইল্যান্ডে আটকে থাকা বন্দি, যারা জীবন নিয়ে কোন রকমে পালিয়ে বেঁচে আছেন, এ ক্ষেত্রে তেমন ঘটনার শিকার কাউকে পাওয়া যায় নি। ফলে কিভাবে এতগুলো মানুষকে হত্যা করে সেখানে গণকবর দেয়া হলো তার জবাব পেতে অনেকটা সময় হয়তো অপেক্ষা করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য, এর আগে থাইল্যান্ডের ভূভাগ ব্যবহার করে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা করেছে অভিবাসীরা। এখনও সাগরে আটকা পড়ে আছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। তাদের বহনকারী কার্গো বা নৌযানে শত শত অভুক্ত মানুষ ভাসছে। তাদের লক্ষ্য মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড অথবা ইন্দোনেশিয়া। বুধবার কুয়ালালামপুরে তিনটি দেশের সমঝোতামূলক বৈঠকের পূর্ব পর্যন্ত তারাই এসব অভিবাসীকে তাদের জলসীমা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। পরে এক সমঝোতায় আসে। শর্তসাপেক্ষে তারা অভিবাসীদের ঠাঁই দিতে সম্মত হয়। সেগুলো হলো- তারা অভিবাসীদের এক বছরের জন্য অস্থায়ী ঠাঁই দেবে। এ সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এ ছাড়া এ সময়ের মধ্যে অভিবাসীদের স্ব-স্ব দেশে ফেরত পাঠাতে হবে অথবা তৃতীয় কোন দেশে পুনর্বাসন করতে হবে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিশ্ব বারবার ওই অঞ্চলের সরকারগুলোর কাছে আহ্বান জানাচ্ছে- অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে এ মানুষগুলোর জীবন বাঁচান। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট তো বলেই দিয়েছেন, তিনি এসব অভিবাসীকে ঠাঁই দেবেন না। তবে এ ক্ষেত্রে কোন পক্ষ না হলেও অভিবাসীদের ঠাঁই দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ফিলিপাইন। তাদের কাজ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন মালয়েশিয়ার হোটেলগুলোর মুসলিম মালিকরা।
অভিবাসীদের উদ্ধারে ইন্দোনেশিয়ার অভিযান শুরু: সমুদ্রে ভাসমান ৭০০০ বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অভিবাসীদের উদ্ধারে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে ইন্দোনেশিয়া। নৌবাহিনীর ৪টি জাহাজ, দুটি বড় বোট ও একটি টহল বিমান উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ফুয়াদ বাসিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় অনুসন্ধান অভিযান শুরু হলেও, কার্যত গতকাল থেকেই পূর্ণ উদ্যমে শুরু হয়েছে উদ্ধার তৎপরতা। মুখপাত্র বলেছেন, আমরা সরকারিভাবে প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর কাছ থেকে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনার নির্দেশ পেয়েছি। ইন্দোনেশিয়ার জলসীমা বা আন্তর্জাতিক সমুদ্রে সমানভাবে চলবে এ অভিযান। তিনি বলেন, আমরা অভিবাসীদের উদ্ধার করে তাদের তীরে নিয়ে যাবো। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিবাসীদের বহনকারী নতুন কোন বোট চোখে পড়েনি বলে জানান ওই সেনা মুখপাত্র। বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাদের তীরে ভিড়তে না দিয়ে ঠেলে গভীর সমুদ্রে পাঠিয়ে দেয়ার নির্মম নীতি থেকে আগেই সরে এসেছে দেশটি। এর আগে গুরুত্বপূর্ণ এক সম্মেলনে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড অভিবাসীদের উদ্ধার ও সাময়িক আশ্রয় দিতে সম্মত হয়। গত বুধবার মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া তাদের অবস্থান থেকে কার্যত সরে আসে। উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের পুনর্বাসন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় তাদের দেশে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, এমন শর্তে দেশ দুটি ৭০০০ অভিবাসীকে সাময়িক আশ্রয় প্রদানের ঘোষণা দেয়। ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে নির্দেশ অমান্য করে জেলেরা শত শত রোহিঙ্গা মুসলমান ও বাংলাদেশীকে উদ্ধার করলেও, জাকার্তা ছিল নীরব।
অভিবাসীদের ঠাঁই দেবে না পেনাং: ওদিকে বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করার পর তাদের পেনাং ঠাঁই দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে পেনাং সরকার। এজন্য তারা দাবি তুলেছে, এসব অভিবাসীকে উদ্ধার করে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় পুনর্বাসন করতে হবে। মালয়েশিয়ার দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকা এ খবর দিয়েছে। বলা হয়েছে, পেনাং রাজ্য এমনিতেই তার জনগণের চাপ সামলাতে পারছে না। পেনাংয়ের এক অংশ দ্বীপ এবং অন্য অংশ মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী লিম গুয়ান এং শনিবার দ্য স্টারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারকে তার বার্তা পৌঁছে দেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, সাগর থেকে উদ্ধার করা অভিবাসীদের মালয়েশিয়া পুনর্বাসন করতে পারে পেনাংয়ে। এ স্থানটিই সবচেয়ে উপযোগী হিসেবে দেখছে সরকার। তার জবাবে রাজ্য সরকার ওই বার্তা দিয়েছে। লিম গুয়ান এং বলেন, গত ৬ বছরে পেনাংয়ে গেছেন কমপক্ষে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। এখন তারা আর কোন রোহিঙ্গাকে স্বাগত জানাতে পারছে না। তবে পেনাংয়ের রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান জেরি চান বলেন, পেনাং হতে পারে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আশ্রয়। তাদের এখানে আশ্রয় দিলে প্রয়োজন হবে মোটামুটি বাসযোগ্য বাড়ি। থাকতে হবে ভাল পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সুযোগ।
গণকবরে ১০০ লাশ: মালয়েশিয়া পুলিশ দেশটির পার্বত্য অঞ্চলের এক জঙ্গলে একটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মানব পাচারের শিকার হওয়া হতভাগ্য বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অভিবাসীদের লাশ রয়েছে তাতে। পাদাং বেসার অঞ্চলে এ গণকবরের সন্ধান মিলেছে। সেখানে প্রায় ১০০ বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অভিবাসীর লাশ রয়েছে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তবে এ ব্যাপারে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারে নি তারা। যেখানে ওই গণকবর পাওয়া গেছে বেসামরিক নাগরিকদের যাতায়াত নেই সেখানে। পুলিশের ইন্সপেক্টর-জেনারেল খালিদ আবু বকরের এ বিষয়ে আজ একটি সংবাদ সম্মেলন করার কথা। এ মাসের মাঝামাঝি পেরিলস অঞ্চলে পাদাং বেসার ও ওয়্যাং কেলিয়ান জঙ্গলে মোট ৩০টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। মিঙ্গুয়ান মালয়েশিয়া সংবাদপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য মালয় মেইল অনলাইন এ খবর দিয়েছে। এর আগে থাইল্যান্ডের সঙ্খলায় যে গণকবরগুলো পাওয়া যায়, তার সঙ্গে মালয়েশিয়ায় নতুন পাওয়া এ গণকবরগুলোর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। থাই কর্তৃপক্ষ ওই গণকবর থেকে ২৬টি মৃতদেহ উদ্ধার করে। ওই লাশগুলো মানব পাচারের শিকার হওয়া বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বলে মনে করা হয়। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাহিদ হামিদি বলেন, তারা পাদাং বেসার এলাকায় যে গণকবর পেয়েছেন সেটা এমন এক জায়গায় ধারণা করা হয়, তার পাশেই ছিল পাচারকারীদের বন্দিশিবির। সেখানে মানুষদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হতো। মুক্তিপণ না পেলে হত্যা করা হতো। এই পাদাং বেসার হলো থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াকে ভূভাগ যেখানে সংযুক্ত করেছে তার সংলগ্ন স্থানেই। সেখানে অভিবাসীদের আটকে রেখে সময়-সুযোগ বুঝে মালয়েশিয়া পাচার করা হতো। তবে থাইল্যান্ডে আটকে থাকা বন্দি, যারা জীবন নিয়ে কোন রকমে পালিয়ে বেঁচে আছেন, এ ক্ষেত্রে তেমন ঘটনার শিকার কাউকে পাওয়া যায় নি। ফলে কিভাবে এতগুলো মানুষকে হত্যা করে সেখানে গণকবর দেয়া হলো তার জবাব পেতে অনেকটা সময় হয়তো অপেক্ষা করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য, এর আগে থাইল্যান্ডের ভূভাগ ব্যবহার করে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা করেছে অভিবাসীরা। এখনও সাগরে আটকা পড়ে আছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। তাদের বহনকারী কার্গো বা নৌযানে শত শত অভুক্ত মানুষ ভাসছে। তাদের লক্ষ্য মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড অথবা ইন্দোনেশিয়া। বুধবার কুয়ালালামপুরে তিনটি দেশের সমঝোতামূলক বৈঠকের পূর্ব পর্যন্ত তারাই এসব অভিবাসীকে তাদের জলসীমা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। পরে এক সমঝোতায় আসে। শর্তসাপেক্ষে তারা অভিবাসীদের ঠাঁই দিতে সম্মত হয়। সেগুলো হলো- তারা অভিবাসীদের এক বছরের জন্য অস্থায়ী ঠাঁই দেবে। এ সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এ ছাড়া এ সময়ের মধ্যে অভিবাসীদের স্ব-স্ব দেশে ফেরত পাঠাতে হবে অথবা তৃতীয় কোন দেশে পুনর্বাসন করতে হবে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিশ্ব বারবার ওই অঞ্চলের সরকারগুলোর কাছে আহ্বান জানাচ্ছে- অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে এ মানুষগুলোর জীবন বাঁচান। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট তো বলেই দিয়েছেন, তিনি এসব অভিবাসীকে ঠাঁই দেবেন না। তবে এ ক্ষেত্রে কোন পক্ষ না হলেও অভিবাসীদের ঠাঁই দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ফিলিপাইন। তাদের কাজ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন মালয়েশিয়ার হোটেলগুলোর মুসলিম মালিকরা।
অভিবাসীদের উদ্ধারে ইন্দোনেশিয়ার অভিযান শুরু: সমুদ্রে ভাসমান ৭০০০ বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অভিবাসীদের উদ্ধারে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে ইন্দোনেশিয়া। নৌবাহিনীর ৪টি জাহাজ, দুটি বড় বোট ও একটি টহল বিমান উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ফুয়াদ বাসিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় অনুসন্ধান অভিযান শুরু হলেও, কার্যত গতকাল থেকেই পূর্ণ উদ্যমে শুরু হয়েছে উদ্ধার তৎপরতা। মুখপাত্র বলেছেন, আমরা সরকারিভাবে প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর কাছ থেকে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনার নির্দেশ পেয়েছি। ইন্দোনেশিয়ার জলসীমা বা আন্তর্জাতিক সমুদ্রে সমানভাবে চলবে এ অভিযান। তিনি বলেন, আমরা অভিবাসীদের উদ্ধার করে তাদের তীরে নিয়ে যাবো। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিবাসীদের বহনকারী নতুন কোন বোট চোখে পড়েনি বলে জানান ওই সেনা মুখপাত্র। বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাদের তীরে ভিড়তে না দিয়ে ঠেলে গভীর সমুদ্রে পাঠিয়ে দেয়ার নির্মম নীতি থেকে আগেই সরে এসেছে দেশটি। এর আগে গুরুত্বপূর্ণ এক সম্মেলনে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড অভিবাসীদের উদ্ধার ও সাময়িক আশ্রয় দিতে সম্মত হয়। গত বুধবার মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া তাদের অবস্থান থেকে কার্যত সরে আসে। উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের পুনর্বাসন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় তাদের দেশে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, এমন শর্তে দেশ দুটি ৭০০০ অভিবাসীকে সাময়িক আশ্রয় প্রদানের ঘোষণা দেয়। ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে নির্দেশ অমান্য করে জেলেরা শত শত রোহিঙ্গা মুসলমান ও বাংলাদেশীকে উদ্ধার করলেও, জাকার্তা ছিল নীরব।
অভিবাসীদের ঠাঁই দেবে না পেনাং: ওদিকে বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করার পর তাদের পেনাং ঠাঁই দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে পেনাং সরকার। এজন্য তারা দাবি তুলেছে, এসব অভিবাসীকে উদ্ধার করে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় পুনর্বাসন করতে হবে। মালয়েশিয়ার দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকা এ খবর দিয়েছে। বলা হয়েছে, পেনাং রাজ্য এমনিতেই তার জনগণের চাপ সামলাতে পারছে না। পেনাংয়ের এক অংশ দ্বীপ এবং অন্য অংশ মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী লিম গুয়ান এং শনিবার দ্য স্টারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারকে তার বার্তা পৌঁছে দেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, সাগর থেকে উদ্ধার করা অভিবাসীদের মালয়েশিয়া পুনর্বাসন করতে পারে পেনাংয়ে। এ স্থানটিই সবচেয়ে উপযোগী হিসেবে দেখছে সরকার। তার জবাবে রাজ্য সরকার ওই বার্তা দিয়েছে। লিম গুয়ান এং বলেন, গত ৬ বছরে পেনাংয়ে গেছেন কমপক্ষে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। এখন তারা আর কোন রোহিঙ্গাকে স্বাগত জানাতে পারছে না। তবে পেনাংয়ের রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান জেরি চান বলেন, পেনাং হতে পারে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আশ্রয়। তাদের এখানে আশ্রয় দিলে প্রয়োজন হবে মোটামুটি বাসযোগ্য বাড়ি। থাকতে হবে ভাল পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সুযোগ।
No comments