প্রবৃদ্ধি: সম্ভাবনা ও প্রতিকূলতা by রডরিগো কুবেরো
বৈশ্বিক
ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বহু সম্ভাবনার পাশাপাশি বাংলাদেশ কিছু
প্রতিকূলতারও সম্মুখীন। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি এখনো কিছুটা মধ্যম
গতির ও অসম, উন্নত দেশগুলোয় অর্থনৈতিক গতিধারা ঘুরে দাঁড়ালেও প্রধান
কয়েকটি উদীয়মান অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে। আন্তর্জাতিক
বাজারে জ্বালানি তেলের দরপতন ও প্রধান মুদ্রাগুলোর বিনিময় হারে
উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী কিছু দেশ লাভবান হলেও কিছু
দেশ লোকসানেরও সম্মুখীন হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে এ বৈপরীত্যের
প্রেক্ষাপটে এশিয়া মহাদেশ প্রবৃদ্ধির নেতৃত্বে রয়েছে। আমাদের সর্বশেষ এশিয়া
ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাস (Regional Economic
Outlook: Asia and Pacific) অনুযায়ী, ২০১৫ সালে এ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির হার
৫.৬ শতাংশে স্থিত থাকার আশা করা হচ্ছে, যা ২০১৬ তে সামান্য হ্রাস পেয়ে ৫.৫
শতাংশে দাঁড়াতে পারে। দৃঢ় শ্রমবাজার, ঐতিহাসিকভাবে বিদ্যমান নিম্ন সুদহার
এবং জ্বালানি তেলের সাম্প্রতিক দরপতন অভ্যন্তরীণ চাহিদায় চাঙাভাব থাকার
পূর্বাভাসের সহায়ক হবে। উন্নত বিশ্বে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও মুদ্রার
দুর্বল বিনিময় হারের কারণে কয়েকটি দেশের রপ্তানিও লাভবান হবে।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বৃহৎ দেশগুলোয় প্রবৃদ্ধির গতিধারা মিশ্র হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চীনের অর্থনীতি টেকসই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্লথ হয়ে যাবে। ২০১৫ সালে চীনের অর্থনীতি ৬.৮ শতাংশে বৃদ্ধি পাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে এবং আবাসন খাতে সংশোধন অব্যাহত থাকায় ২০১৬ সালে তা ৬.৩ শতাংশে দাঁড়াবে। অন্যদিকে, ভোক্তা চাহিদা ও রপ্তানি বৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে জাপানের অর্থনীতি ২০১৫ সালে ১ শতাংশ ও ২০১৬ সালে ১.২ শতাংশ হারে পুনরুদ্ধার হতে পারে। সাম্প্রতিক নীতি সংস্কার ও তেলের নিম্ন মূল্যের প্রভাবে ভারত দ্রুতহারে বিকাশমান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে একটি হবে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে দেশটির অর্থনীতি ৭.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যদ্রব্যের মূল্য কম থাকায় এ অঞ্চলের অধিকাংশ অর্থনীতিতে আয় বাড়বে ও মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে। তবে এর প্রভাবে পণ্যদ্রব্য রপ্তানিকারক দেশ, যেমন অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এসব ঘটনাপ্রবাহের প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়বে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যহ্রাসের ফলে তেল আমদানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সুবিধা ভোগ করছে। উপরন্তু ভারতের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতিতে বাংলাদেশের রপ্তানির সুযোগ সম্প্রসারিত হচ্ছে। অন্যদিকে টাকার প্রকৃত বিনিময় হারে দীর্ঘমেয়াদি উপচিতি, বিশেষত ইউরোর বিপরীতে টাকার মূল্যবৃদ্ধির কারণে, প্রতিযোগিতামূলক রপ্তানির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। চীনের অর্থনীতির শ্লথগতির জন্য দেশটিতে রপ্তানির সম্ভাবনা কমতে পারে, কিন্তু চীনের জনগণের প্রকৃত আয় বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
একইভাবে, অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিভিন্ন অনুকূল ও প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন। জানুয়ারি ২০১৪ নির্বাচনের পর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও, জানুয়ারি ২০১৫ থেকে আরম্ভ হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ইতিমধ্যে এর প্রভাবে কতিপয় অর্থনৈতিক কার্যক্রম নির্দেশক শ্লথ হয়ে পড়েছে। তা সত্ত্বেও সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বিরাজমান। প্রাজ্ঞ মুদ্রানীতির ফলে মূল্যস্ফীতি প্রশমিত হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা পুনরায় বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার ফলে বাহ্যিক অবস্থান সুদৃঢ় থাকবে। রাজস্ব আদায় পরিস্থিতিতে দুর্বলতা থাকলেও, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দরপতনের কারণে তেল খাতে ভর্তুকি হ্রাস বর্তমান আর্থিক বছরে বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে আংশিক সহায়তা করেছে। সরকারি ঋণের পরিমাণও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রকৃত দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের আশপাশে হতে পারে, যা রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকতা ফিরে এলে এবং শান্তভাব বিরাজ করলে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে ৬.৫ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলে আশা করা যায়।
তবে প্রবৃদ্ধির এ হার অর্জনের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে সৃষ্ট কয়েকটি ঝুঁকি বিদ্যমান। রাজনৈতিক অস্থিরতা তীব্র ও স্থায়ী হলে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ভিত্তি দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতিতে আস্থার অভাব দেখা দিতে পারে। ব্যাংকিং খাতে বিরাজমান দুর্বলতার কারণে সরকারি রাজস্ব খাত ও আর্থিক খাতে মধ্য মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করবে।
বিগত কয়েক বছর ধরে, বর্ধিত ঋণসুবিধা ব্যবস্থার আওতায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেশটির সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যার মেয়াদ প্রায় সমাপ্তির পথে। আগামী দিনগুলোতে প্রাজ্ঞ সরকারি রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকলে সুদৃঢ় প্রবৃদ্ধি ও টেকসই দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে রাজস্ব আদায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাত হিসাবে অত্যন্ত কম (২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ছিল জিডিপির মাত্র ৮.৫ শতাংশ) এবং এ অনুপাত বৃদ্ধিতে অগ্রাধিকারমূলকভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। সরকারি রাজস্ব আদায় বাড়লে অত্যাবশ্যক বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ পরিকাঠামো ব্যবস্থা এবং লক্ষ্যমুখী সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
২০১২ সালে সংসদে গৃহীত নতুন মূল্য সংযোজন কর আইন এসব গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সম্পদের জোগান দিতে পারে। এ ছাড়াও নতুন আইনটিতে দরিদ্র পরিবারগুলোর স্বার্থ রক্ষার্থে অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্যগুলোকে মূল্য সংযোজন করের আওতামুক্ত রাখার বিধান রয়েছে। পাশাপাশি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে মূল্য সংযোজন করের নিবন্ধনসীমা উচ্চহারে নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইনের সহজীকরণ, অভিন্ন কর হারে স্বতঃ নিয়ন্ত্রিত নিবন্ধন ও সহজে কর পরিশোধ ব্যবস্থার বিধান করার ফলে করদাতাদের হয়রানি হ্রাস পাবে এবং ব্যবসায়ীদের কর পরিশোধ ব্যয় হ্রাস পাবে।
ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন এবং আর্থিক খাতে তত্ত্বাবধান ও সুশাসন সুদৃঢ় করার প্রয়াস অব্যাহত রাখা টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন নিশ্চিত করার জন্য একান্তভাবে আবশ্যক। বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সরকারের এসব অগ্রাধিকারমূলক নীতি বাস্তবায়নে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রস্তুত রয়েছে।
রডরিগো কুবেরো: বাংলাদেশের মিশন প্রধান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বৃহৎ দেশগুলোয় প্রবৃদ্ধির গতিধারা মিশ্র হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চীনের অর্থনীতি টেকসই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্লথ হয়ে যাবে। ২০১৫ সালে চীনের অর্থনীতি ৬.৮ শতাংশে বৃদ্ধি পাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে এবং আবাসন খাতে সংশোধন অব্যাহত থাকায় ২০১৬ সালে তা ৬.৩ শতাংশে দাঁড়াবে। অন্যদিকে, ভোক্তা চাহিদা ও রপ্তানি বৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে জাপানের অর্থনীতি ২০১৫ সালে ১ শতাংশ ও ২০১৬ সালে ১.২ শতাংশ হারে পুনরুদ্ধার হতে পারে। সাম্প্রতিক নীতি সংস্কার ও তেলের নিম্ন মূল্যের প্রভাবে ভারত দ্রুতহারে বিকাশমান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে একটি হবে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে দেশটির অর্থনীতি ৭.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যদ্রব্যের মূল্য কম থাকায় এ অঞ্চলের অধিকাংশ অর্থনীতিতে আয় বাড়বে ও মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে। তবে এর প্রভাবে পণ্যদ্রব্য রপ্তানিকারক দেশ, যেমন অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এসব ঘটনাপ্রবাহের প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়বে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যহ্রাসের ফলে তেল আমদানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সুবিধা ভোগ করছে। উপরন্তু ভারতের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতিতে বাংলাদেশের রপ্তানির সুযোগ সম্প্রসারিত হচ্ছে। অন্যদিকে টাকার প্রকৃত বিনিময় হারে দীর্ঘমেয়াদি উপচিতি, বিশেষত ইউরোর বিপরীতে টাকার মূল্যবৃদ্ধির কারণে, প্রতিযোগিতামূলক রপ্তানির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। চীনের অর্থনীতির শ্লথগতির জন্য দেশটিতে রপ্তানির সম্ভাবনা কমতে পারে, কিন্তু চীনের জনগণের প্রকৃত আয় বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
একইভাবে, অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিভিন্ন অনুকূল ও প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন। জানুয়ারি ২০১৪ নির্বাচনের পর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও, জানুয়ারি ২০১৫ থেকে আরম্ভ হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ইতিমধ্যে এর প্রভাবে কতিপয় অর্থনৈতিক কার্যক্রম নির্দেশক শ্লথ হয়ে পড়েছে। তা সত্ত্বেও সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বিরাজমান। প্রাজ্ঞ মুদ্রানীতির ফলে মূল্যস্ফীতি প্রশমিত হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা পুনরায় বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার ফলে বাহ্যিক অবস্থান সুদৃঢ় থাকবে। রাজস্ব আদায় পরিস্থিতিতে দুর্বলতা থাকলেও, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দরপতনের কারণে তেল খাতে ভর্তুকি হ্রাস বর্তমান আর্থিক বছরে বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে আংশিক সহায়তা করেছে। সরকারি ঋণের পরিমাণও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রকৃত দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের আশপাশে হতে পারে, যা রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকতা ফিরে এলে এবং শান্তভাব বিরাজ করলে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে ৬.৫ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলে আশা করা যায়।
তবে প্রবৃদ্ধির এ হার অর্জনের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে সৃষ্ট কয়েকটি ঝুঁকি বিদ্যমান। রাজনৈতিক অস্থিরতা তীব্র ও স্থায়ী হলে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ভিত্তি দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতিতে আস্থার অভাব দেখা দিতে পারে। ব্যাংকিং খাতে বিরাজমান দুর্বলতার কারণে সরকারি রাজস্ব খাত ও আর্থিক খাতে মধ্য মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করবে।
বিগত কয়েক বছর ধরে, বর্ধিত ঋণসুবিধা ব্যবস্থার আওতায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেশটির সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যার মেয়াদ প্রায় সমাপ্তির পথে। আগামী দিনগুলোতে প্রাজ্ঞ সরকারি রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকলে সুদৃঢ় প্রবৃদ্ধি ও টেকসই দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে রাজস্ব আদায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাত হিসাবে অত্যন্ত কম (২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ছিল জিডিপির মাত্র ৮.৫ শতাংশ) এবং এ অনুপাত বৃদ্ধিতে অগ্রাধিকারমূলকভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। সরকারি রাজস্ব আদায় বাড়লে অত্যাবশ্যক বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ পরিকাঠামো ব্যবস্থা এবং লক্ষ্যমুখী সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
২০১২ সালে সংসদে গৃহীত নতুন মূল্য সংযোজন কর আইন এসব গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সম্পদের জোগান দিতে পারে। এ ছাড়াও নতুন আইনটিতে দরিদ্র পরিবারগুলোর স্বার্থ রক্ষার্থে অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্যগুলোকে মূল্য সংযোজন করের আওতামুক্ত রাখার বিধান রয়েছে। পাশাপাশি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে মূল্য সংযোজন করের নিবন্ধনসীমা উচ্চহারে নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইনের সহজীকরণ, অভিন্ন কর হারে স্বতঃ নিয়ন্ত্রিত নিবন্ধন ও সহজে কর পরিশোধ ব্যবস্থার বিধান করার ফলে করদাতাদের হয়রানি হ্রাস পাবে এবং ব্যবসায়ীদের কর পরিশোধ ব্যয় হ্রাস পাবে।
ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন এবং আর্থিক খাতে তত্ত্বাবধান ও সুশাসন সুদৃঢ় করার প্রয়াস অব্যাহত রাখা টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন নিশ্চিত করার জন্য একান্তভাবে আবশ্যক। বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সরকারের এসব অগ্রাধিকারমূলক নীতি বাস্তবায়নে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রস্তুত রয়েছে।
রডরিগো কুবেরো: বাংলাদেশের মিশন প্রধান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল।
No comments