ইকোনমিস্টের দৃষ্টিতে মোদির শাসন
এক
বছর আগে ভারতকে ‘ভাল দিনের’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদি। ‘ভাল দিন’ মানে তিনি বুঝিয়েছেন চাকরি, সমৃদ্ধ ও আন্তর্জাতিক
খ্যাতিকে। কিন্তু তার উন্নতি হতাশাজনকভাবে ধীরগতির। সুযোগের অভাব ছিল যে
তা নয়। ভোটাররা তার দল ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) পরিবর্তন আনার জন্য
৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ম্যান্ডেটই দিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক যে কোন
প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে নিজের হাতে বেশি ক্ষমতা রাখার দিকে নরেন্দ্র মোদি
মনোযোগ দিয়েছেন বেশি। সমস্যাটি হলো, ভারতের একটি রূপান্তর প্রয়োজন। কিন্তু এ
প্রক্রিয়াটি সামাল দেয়াটা একজন লোকের (ওয়ান ম্যান ব্যান্ড) জন্য একটু
বেশিই হয়ে যায়।
মোদির বিশ্বাস নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ভারত শিগগিরই মহাশক্তি অর্জন করতে যাচ্ছে। তিনি হয়তো এ ব্যাপারে ঠিকই বলেছেন। আর এক প্রজন্ম পরই ভারত পরিণত হবে এ গ্রহের সবচেয়ে বৃহৎ জনবহুল দেশে। এটি হবে বিশ্বের শীর্ষ ৩ বৃহৎ অর্থনীতির একটি। এ ছাড়া দেশটি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এর ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মনেপ্রাণে বিশ্বাস, ভারতকে সে পথে নিয়ে যেতে কেবল একজন লোকই আদিষ্ট হয়েছেন। সে লোকটি হলেন তিনিই, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদারদাস মোদি। এমন মন্তব্য করা হয়েছে মোদির ক্ষমতারোহণের এক বছর ফুর্তিতে লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দি ইকোনমিস্টের একটি বিশেষ প্রতিবেদনে।
সেখানে আরও বলা হয়েছে, অনেক কিছুই ভালয় ভালয় পার হয়েছে। অবশ্য এর জন্য সৌভাগ্যের অবদানও কম নয়। তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় একটি ভাল অর্থনীতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মোদি। মুদ্রাস্ফীতি কম, সুদের হার পড়তির দিকে। রুপির অবস্থা স্থিতিশীল। রাজস্ব ও চলতি হিসাবে বরাদ্দ ঘাটতি সংকুচিত হয়ে এসেছে। সরকারি পরিসংখ্যানবিদরা দাবি করছেন, চীনের প্রবৃদ্ধিকে পেছনে ফেলছে ভারতের প্রবৃদ্ধি (৭.৫ শতাংশ)। এর অর্থ, দেশটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বড় অর্থনীতির দেশ। সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বৈদেশিক সফরও। গত বছরের জাতীয় নির্বাচনে মোদিকে সমর্থন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দি ইকোনমিস্ট। ধর্মীয় বিগ্রহ মোকাবিলায় তার অতীত রেকর্ডই এর কারণ। তাকে সমর্থন দেয়া হিন্দু চরমপন্থিদের তিনি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন। তবুও আমরা খুশি। কারণ, সাম্প্রদায়িক রক্তারক্তি দাঙ্গার যে আশঙ্কা আমরা করেছিলাম, তা এখনও দেখা যায়নি।
ইকোনমিস্ট লিখেছে, কিন্তু সংস্কারের প্রশ্নে মোদির রেকর্ড আশাজাগানিয়া নয়। আমাদের এ বিশেষ প্রতিবেদন সেটিই ব্যাখ্যা করছে। গত বছর কয়লার মজুতের নিলাম হয়েছিল। গত কয়েক দিনে বেসরকারীকরণের দিকে খুবই ছোট্ট একটি পদক্ষেপের বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সেটি হচ্ছে, ৮টি রাষ্ট্রচালিত হোটেল হয়তো বিক্রি করে দেয়া হবে। মোদি বুঝতে পেরেছেন, বিদেশীরা এখন হয়তো রেলওয়ে, বীমা ও প্রতিরক্ষা খাতে আরও বিনিয়োগ করবেন। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাধাগুলো তিনি কেটে ফেলছেন। দরিদ্র ভারতীয়রা নগদ সাহায্য পাবেন বেশি; সস্তা রেশন নয়। যেমন, এপ্রিল থেকে সস্তা রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার দেয়া বন্ধ হয়েছে। তার বদলে দরিদ্ররা নগদ সহায়তা পাবেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থ-স্থানান্তরকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে। ডিজেলের ওপর বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেয়া বন্ধ হয়েছে। প্যারাফিনের ওপর ভর্তুকিও বন্ধ করা উচিত। এ ছাড়া প্রায় ১৫ কোটি নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে উৎসাহিত করা হয়েছে মানুষকে। ৮৫ কোটি মানুষের তথ্য রাখা হয়েছে বায়োমেট্রিক ডাটাবেইজে। এসবের মাধ্যমে সরকার আরও বেশি দরিদ্রতা দূরীকরণের একটি কাঠামো গড়ে তুলছে।
এটা যতই স্বাগত উদ্যোগ হোক না কেন, এতে ভারতকে খাটো করে দেখানো হচ্ছে। মোদি দুটি ভুল করছেন। প্রথম ভুল হলোÑ সময় তার পক্ষে আছে এমনটা ভাবা। আর অজনপ্রিয় বড় সিদ্ধান্তগুলো পরে নিলেও হবে। সম্ভবত যতক্ষণ না পর্যন্ত সংসদের উভয় কক্ষের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ আছে। এর ভিত্তি হলো ভারতীয় নেতাদের মধ্যে থাকা একটা ভ্রান্ত ধারণা যে তাদের আগে ক্ষমতা দৃঢ় করতে হবে, সংস্কার পরে। প্রকৃতপক্ষে সংসদীয় মেয়াদের শুরুর দিকে কিছু সময় থাকে যখন পরিবর্তনগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। মোদি ইতিমধ্যে জনপ্রিয় অসন্তোষের তীব্রতার মুখোমুখি হয়েছেন। খিটখিটে স্বভাবের ভোটাররা দিল্লির রাজ্য নির্বাচনে তার দলকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। বহির্বিশ্বে কূটনীতির প্রতি তার মনোযোগ অনেকে অপছন্দ করেন। গেল সপ্তাহে তিনি চীন, মঙ্গোলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর সম্পন্ন করেছেন। এতে করে তিনি এক বছরে ১৮টি দেশে ৫২দিন অবস্থান করেছেন। অন্যরা তার আত্মনিবিষ্টতা নিয়ে অসন্তুষ্ট। তারা লজ্জিত যে মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন যে কালো স্যুট পরে তাতে তার নামের ২২টি অক্ষর স্বর্ণালি সুতোয় সেলাই করা ছিল। গ্রিনপিসের মতো গ্রুপগুলোর ওপর যখন তিনি অভিযান চালান, তখন অনেকে তার কর্তৃত্বপরায়ণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে অভিযোগ তোলেন। মোদির দ্বিতীয় ভুল এটা ভাবা যে, তিনি একাই পরিবর্তন আনতে পারেন। বরং তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় হলো অন্যদের যুক্ত করে সাহায্য নেয়া। আর এটা তিনটি প্রধান উৎপত্তিস্থল থেকে আসতে পারেÑ ভারতের রাজ্যগুলো, অন্যান্য জাতীয় রাজনীতিবিদরা এবং বাজারের ক্ষমতা।
রাজ্যগুলোতে কিছু ক্ষমতা উন্নয়ন করে তিনি শুরু করেছেন। ধারণাটা হলো একটি উৎপাদনের সমৃদ্ধ সৃষ্টি করা। (যদিও তাতে কমপক্ষে জমি বিক্রি, শ্রম নিয়োগ এবং রাস্তা নির্মাণ প্রক্রিয়াগুলো ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন হবে)। রাজ্যগুলো যখন নীতিমালা আর ব্যয়ের জন্য অগ্রাধিকার নিরূপণ করবে, তখন উন্নয়ন প্রয়াসী উচ্চাভিলাষী রাজ্যগুলো বাকিদের জন্য আদর্শ হয়ে দাঁড়াবে। জাতীয় পণ্য এবং সেবা করের বদৌলতে ভাল নীতিগুলো পুরস্কৃত হবে। ওই কর অভিন্ন বাজার সৃষ্টি করেছে। ফলে ভারতজুড়ে এসেছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। মোদি বলছেন, তিনি প্রতিশ্রুতি মোতাবেক আগামী এপ্রিলের মধ্যে কর চান। যদিও সংসদ তা পিছিয়ে দিয়েছে। এটা যত আগে হবে ততই মঙ্গল। দুর্ভাগ্যজনক হলো, জাতীয় রাজনীতি রাজ্যগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। নরেন্দ্র মোদি প্রফুল্লচিত্তে ধরে নিতে পারেন না, তার ক্ষমতা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর অফিস সবকিছুর সম্প্রসারণ করতে পারে না। মেধাবীদের বাইরে বের করে এনে সরকারকে নতুন করে সাজানোর সময় এসেছে। আগের সরকারের মতো, তার উচিত হবে বেসরকারি খাত থেকে মেধাবী লোকদের বের করে এনে অর্থ মন্ত্রণালয় ও করপোরেট অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়কে শক্তিশালী করা, বিশেষ করে তা করতে হবে কারণ বিজেপিতে সক্ষম নেতার ঘাটতি রয়েছে। পার্লামেন্টে মাঝেমধ্যে বিরোধী দল কংগ্রেসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদিকে বিক্রয় কর অথবা জমি কেনাবেচার বিষয় নিয়ে সমঝোতায় যেতে হতে পারে।
সর্বশেষ, পরিবর্তনের জন্য তিনি মার্কেটকে ব্যবহার করতে পারেন। বিশ্বে শ্রম আইনের যে ভয়াবহ অবস্থা তা সহজতর করতে নরেন্দ্র মোদির উচিত হলো জাতীয় পর্যায়ে প্রচারণা চালানো। অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে যুক্তির বিপরীতে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের চলতে দেয়া উচিত। অধিক কার্যকর করে রেললাইনের কাজ করতে পারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। অবকাঠামো নির্মিত হতে হবে খুব দ্রুতগতিতে। এ ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণে প্রয়োজন অপেক্ষাকৃত ভাল আইন। রাষ্ট্র পরিচালিত ব্যাংকগুলোর আর উচিত হবে না রাজনৈতিক কাদা মাখামাখিতে জড়ানো। তাদের আদর্শ স্বতন্ত্র বেসরকারি হাতে দিতে হবে। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নত করতে পারেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। শিক্ষাব্যবস্থার নাজুক অবস্থায় শিক্ষা ও এর মান উন্নত করা প্রয়োজন।
এ ক্ষেত্রে বেসরকারি মালিকদের সহজ করে দিতে হবে পথ। নরেন্দ্র মোদি এমনভাবে কাজ করছেন যেন, ছোট ছোট উন্নয়ন দিয়ে বড় অর্জন সম্ভব হবে। আসলে তা হয় না। তিনি এখনও জাতীয় নেতার মতো নন, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর মতো চিন্তাভাবনা করছেন। জাতীয় নেতারা ভারতকে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করার মিশনে থাকেন। যদি তিনি তার দেশকে পরিবর্তন করতে চান তাহলে ভারতের এক ব্যক্তির ব্যান্ডে নতুন সুর তুলতে হবে।
মোদির বিশ্বাস নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ভারত শিগগিরই মহাশক্তি অর্জন করতে যাচ্ছে। তিনি হয়তো এ ব্যাপারে ঠিকই বলেছেন। আর এক প্রজন্ম পরই ভারত পরিণত হবে এ গ্রহের সবচেয়ে বৃহৎ জনবহুল দেশে। এটি হবে বিশ্বের শীর্ষ ৩ বৃহৎ অর্থনীতির একটি। এ ছাড়া দেশটি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এর ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মনেপ্রাণে বিশ্বাস, ভারতকে সে পথে নিয়ে যেতে কেবল একজন লোকই আদিষ্ট হয়েছেন। সে লোকটি হলেন তিনিই, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদারদাস মোদি। এমন মন্তব্য করা হয়েছে মোদির ক্ষমতারোহণের এক বছর ফুর্তিতে লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দি ইকোনমিস্টের একটি বিশেষ প্রতিবেদনে।
সেখানে আরও বলা হয়েছে, অনেক কিছুই ভালয় ভালয় পার হয়েছে। অবশ্য এর জন্য সৌভাগ্যের অবদানও কম নয়। তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় একটি ভাল অর্থনীতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মোদি। মুদ্রাস্ফীতি কম, সুদের হার পড়তির দিকে। রুপির অবস্থা স্থিতিশীল। রাজস্ব ও চলতি হিসাবে বরাদ্দ ঘাটতি সংকুচিত হয়ে এসেছে। সরকারি পরিসংখ্যানবিদরা দাবি করছেন, চীনের প্রবৃদ্ধিকে পেছনে ফেলছে ভারতের প্রবৃদ্ধি (৭.৫ শতাংশ)। এর অর্থ, দেশটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বড় অর্থনীতির দেশ। সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বৈদেশিক সফরও। গত বছরের জাতীয় নির্বাচনে মোদিকে সমর্থন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দি ইকোনমিস্ট। ধর্মীয় বিগ্রহ মোকাবিলায় তার অতীত রেকর্ডই এর কারণ। তাকে সমর্থন দেয়া হিন্দু চরমপন্থিদের তিনি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন। তবুও আমরা খুশি। কারণ, সাম্প্রদায়িক রক্তারক্তি দাঙ্গার যে আশঙ্কা আমরা করেছিলাম, তা এখনও দেখা যায়নি।
ইকোনমিস্ট লিখেছে, কিন্তু সংস্কারের প্রশ্নে মোদির রেকর্ড আশাজাগানিয়া নয়। আমাদের এ বিশেষ প্রতিবেদন সেটিই ব্যাখ্যা করছে। গত বছর কয়লার মজুতের নিলাম হয়েছিল। গত কয়েক দিনে বেসরকারীকরণের দিকে খুবই ছোট্ট একটি পদক্ষেপের বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সেটি হচ্ছে, ৮টি রাষ্ট্রচালিত হোটেল হয়তো বিক্রি করে দেয়া হবে। মোদি বুঝতে পেরেছেন, বিদেশীরা এখন হয়তো রেলওয়ে, বীমা ও প্রতিরক্ষা খাতে আরও বিনিয়োগ করবেন। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাধাগুলো তিনি কেটে ফেলছেন। দরিদ্র ভারতীয়রা নগদ সাহায্য পাবেন বেশি; সস্তা রেশন নয়। যেমন, এপ্রিল থেকে সস্তা রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার দেয়া বন্ধ হয়েছে। তার বদলে দরিদ্ররা নগদ সহায়তা পাবেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থ-স্থানান্তরকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে। ডিজেলের ওপর বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেয়া বন্ধ হয়েছে। প্যারাফিনের ওপর ভর্তুকিও বন্ধ করা উচিত। এ ছাড়া প্রায় ১৫ কোটি নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে উৎসাহিত করা হয়েছে মানুষকে। ৮৫ কোটি মানুষের তথ্য রাখা হয়েছে বায়োমেট্রিক ডাটাবেইজে। এসবের মাধ্যমে সরকার আরও বেশি দরিদ্রতা দূরীকরণের একটি কাঠামো গড়ে তুলছে।
এটা যতই স্বাগত উদ্যোগ হোক না কেন, এতে ভারতকে খাটো করে দেখানো হচ্ছে। মোদি দুটি ভুল করছেন। প্রথম ভুল হলোÑ সময় তার পক্ষে আছে এমনটা ভাবা। আর অজনপ্রিয় বড় সিদ্ধান্তগুলো পরে নিলেও হবে। সম্ভবত যতক্ষণ না পর্যন্ত সংসদের উভয় কক্ষের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ আছে। এর ভিত্তি হলো ভারতীয় নেতাদের মধ্যে থাকা একটা ভ্রান্ত ধারণা যে তাদের আগে ক্ষমতা দৃঢ় করতে হবে, সংস্কার পরে। প্রকৃতপক্ষে সংসদীয় মেয়াদের শুরুর দিকে কিছু সময় থাকে যখন পরিবর্তনগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। মোদি ইতিমধ্যে জনপ্রিয় অসন্তোষের তীব্রতার মুখোমুখি হয়েছেন। খিটখিটে স্বভাবের ভোটাররা দিল্লির রাজ্য নির্বাচনে তার দলকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। বহির্বিশ্বে কূটনীতির প্রতি তার মনোযোগ অনেকে অপছন্দ করেন। গেল সপ্তাহে তিনি চীন, মঙ্গোলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর সম্পন্ন করেছেন। এতে করে তিনি এক বছরে ১৮টি দেশে ৫২দিন অবস্থান করেছেন। অন্যরা তার আত্মনিবিষ্টতা নিয়ে অসন্তুষ্ট। তারা লজ্জিত যে মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন যে কালো স্যুট পরে তাতে তার নামের ২২টি অক্ষর স্বর্ণালি সুতোয় সেলাই করা ছিল। গ্রিনপিসের মতো গ্রুপগুলোর ওপর যখন তিনি অভিযান চালান, তখন অনেকে তার কর্তৃত্বপরায়ণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে অভিযোগ তোলেন। মোদির দ্বিতীয় ভুল এটা ভাবা যে, তিনি একাই পরিবর্তন আনতে পারেন। বরং তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় হলো অন্যদের যুক্ত করে সাহায্য নেয়া। আর এটা তিনটি প্রধান উৎপত্তিস্থল থেকে আসতে পারেÑ ভারতের রাজ্যগুলো, অন্যান্য জাতীয় রাজনীতিবিদরা এবং বাজারের ক্ষমতা।
রাজ্যগুলোতে কিছু ক্ষমতা উন্নয়ন করে তিনি শুরু করেছেন। ধারণাটা হলো একটি উৎপাদনের সমৃদ্ধ সৃষ্টি করা। (যদিও তাতে কমপক্ষে জমি বিক্রি, শ্রম নিয়োগ এবং রাস্তা নির্মাণ প্রক্রিয়াগুলো ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন হবে)। রাজ্যগুলো যখন নীতিমালা আর ব্যয়ের জন্য অগ্রাধিকার নিরূপণ করবে, তখন উন্নয়ন প্রয়াসী উচ্চাভিলাষী রাজ্যগুলো বাকিদের জন্য আদর্শ হয়ে দাঁড়াবে। জাতীয় পণ্য এবং সেবা করের বদৌলতে ভাল নীতিগুলো পুরস্কৃত হবে। ওই কর অভিন্ন বাজার সৃষ্টি করেছে। ফলে ভারতজুড়ে এসেছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। মোদি বলছেন, তিনি প্রতিশ্রুতি মোতাবেক আগামী এপ্রিলের মধ্যে কর চান। যদিও সংসদ তা পিছিয়ে দিয়েছে। এটা যত আগে হবে ততই মঙ্গল। দুর্ভাগ্যজনক হলো, জাতীয় রাজনীতি রাজ্যগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। নরেন্দ্র মোদি প্রফুল্লচিত্তে ধরে নিতে পারেন না, তার ক্ষমতা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর অফিস সবকিছুর সম্প্রসারণ করতে পারে না। মেধাবীদের বাইরে বের করে এনে সরকারকে নতুন করে সাজানোর সময় এসেছে। আগের সরকারের মতো, তার উচিত হবে বেসরকারি খাত থেকে মেধাবী লোকদের বের করে এনে অর্থ মন্ত্রণালয় ও করপোরেট অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়কে শক্তিশালী করা, বিশেষ করে তা করতে হবে কারণ বিজেপিতে সক্ষম নেতার ঘাটতি রয়েছে। পার্লামেন্টে মাঝেমধ্যে বিরোধী দল কংগ্রেসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদিকে বিক্রয় কর অথবা জমি কেনাবেচার বিষয় নিয়ে সমঝোতায় যেতে হতে পারে।
সর্বশেষ, পরিবর্তনের জন্য তিনি মার্কেটকে ব্যবহার করতে পারেন। বিশ্বে শ্রম আইনের যে ভয়াবহ অবস্থা তা সহজতর করতে নরেন্দ্র মোদির উচিত হলো জাতীয় পর্যায়ে প্রচারণা চালানো। অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে যুক্তির বিপরীতে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের চলতে দেয়া উচিত। অধিক কার্যকর করে রেললাইনের কাজ করতে পারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। অবকাঠামো নির্মিত হতে হবে খুব দ্রুতগতিতে। এ ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণে প্রয়োজন অপেক্ষাকৃত ভাল আইন। রাষ্ট্র পরিচালিত ব্যাংকগুলোর আর উচিত হবে না রাজনৈতিক কাদা মাখামাখিতে জড়ানো। তাদের আদর্শ স্বতন্ত্র বেসরকারি হাতে দিতে হবে। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নত করতে পারেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। শিক্ষাব্যবস্থার নাজুক অবস্থায় শিক্ষা ও এর মান উন্নত করা প্রয়োজন।
এ ক্ষেত্রে বেসরকারি মালিকদের সহজ করে দিতে হবে পথ। নরেন্দ্র মোদি এমনভাবে কাজ করছেন যেন, ছোট ছোট উন্নয়ন দিয়ে বড় অর্জন সম্ভব হবে। আসলে তা হয় না। তিনি এখনও জাতীয় নেতার মতো নন, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর মতো চিন্তাভাবনা করছেন। জাতীয় নেতারা ভারতকে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করার মিশনে থাকেন। যদি তিনি তার দেশকে পরিবর্তন করতে চান তাহলে ভারতের এক ব্যক্তির ব্যান্ডে নতুন সুর তুলতে হবে।
No comments