ক্ষত শুকায়নি আতঙ্কের কাঠগড়ায় by কমল জোহা খান
ডাকাতদের প্রতিরোধে এগিয়ে যান আয়ুব আলী। কিন্তু গ্রেনেড হামলায় এখন তাঁর দুই পা ক্ষত-বিক্ষত। ছবি: কমল জোহা খান |
সপ্তাহের
সোম ও শুক্রবার কাঠগড়া এলাকায় হাট বসে। এমন দিনে পণ্য-সমাহার আর লোকে
লোকারণ্য হয়ে যেত এলাকাটি। গত ২১ এপ্রিল এখানকার কমার্স ব্যাংকে ডাকাতির
ঘটনায় সেসব যেন হারিয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা দোকানে বসে অলস সময় পার করছেন।
কমে গেছে লেনদেনের গতিও। ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও কাঠগড়া বাজার এখনো
দুর্ধর্ষ ডাকাতির সেই ক্ষত আর আতঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছে।
গত ২১ এপ্রিল কমার্স ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির ঘটনায় নিহত হন আটজন। তাঁদের মধ্যে ডাকাতদের হামলায় ব্যাংকের ভেতরে ব্যবস্থাপকসহ তিনজন এবং ডাকাতদের প্রতিহত করতে গিয়ে গুলি-বোমায় চারজন নিহত হন। জনতার পিটুনিতে মারা যায় এক সন্দেহভাজন ডাকাত। এ ছাড়া ডাকাতির ঘটনায় আহত হন আরও অনেকে।
ডাকাতের হামলার আহত লোকজনের অনেকেই এই বাজারে ব্যবসা করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁদেরই একজন বলেন, ‘স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে আরও মাস কয়েক সময় লাগবে। তবে সবই নির্ভর করছে আসামিদের ধরা পড়ার ওপর।’
সাভার বা আশুলিয়ার মতো বড় পরিসরে না হলেও কাঠগড়া এলাকায় ব্যবসায়িক লেনদেনের কমতি নেই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সরগরম থাকে পুরো এলাকা। মূলত অসংখ্য পোশাক কারখানাকে ঘিরে এই এলাকার ব্যস্ততা। পণ্যবাহী যানবাহন আর পোশাক কর্মীদের আসা-যাওয়া চলে সব সময়।
১৯৮৪ সালের দিকে ছোট পরিসরে কাঠগড়ায় বাজার বসা শুরু হয়। স্থানীয় লোকজন জানান, ২০০০ সালের দিকে একের পর এক পোশাক কারখানা স্থাপনের কারণে নিরিবিলি কাঠগড়ায় ভিড় বাড়তে থাকে। গোটা দুয়েক ব্যাংক শাখা খোলে। এ দুটিরই একটি কমার্স ব্যাংক।
কাঠগড়া হাজি নজমুদ্দীন সুপার মার্কেটের সভাপতি ও কমার্স ব্যাংক ভবনের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এই বাজারে প্রায় ২৫০ দোকান রয়েছে। প্রতিদিন কোটি টাকার লেনদেন চলে। কমার্স ব্যাংক শাখা খোলার আগে এলাকাবাসীকে যেতে হতো ১০ কিলোমিটার দূরের সাভারে অথবা ৮ কিলোমিটার দূরের আশুলিয়া বাজারে। ব্যাংক থাকায় এখন সেই সমস্যা নেই।
কাঠগড়া বাজারের পোশাক ব্যবসায়ী কবির হোসেন খান, যিনি ডাকাতের বোমা হামলায় আহত হয়েছেন। প্রায় দিন দশেক বন্ধ রাখার পর সোমবার দোকান খুলেছেন তিনি। কবির হোসেন বলেন, কমার্স ব্যাংকের ডাকাতির ঘটনায় নিহত ম্যানেজার ওয়ালীউল্লাহর কারণে ব্যবসার জন্য ঋণ পাই। ডাকাতির পর তাঁর ব্যবসা প্রায় নেই বলে তিনি জানান।
শুধু ব্যবসায়িক ঋণ নয়; শিক্ষা, কৃষি খামার, গৃহিণী ও ছাত্রদের জন্যও কমার্স ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া এই ব্যাংকে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার ব্যবস্থা থাকায় কাঠগড়াবাসীকে এখন আর সাভারে যেতে হয় না। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে দুই কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল গ্রহণ করা হয় কমার্স ব্যাংকে।
এদিকে কমার্স ব্যাংকের লেনদেন চললেও গ্রাহক অনেক কম। সোমবার হাটের দিনও ব্যাংকের ভেতর প্রায় শূন্য। গ্রাহকদের যাঁরা ভেতরে ছিলেন, তাঁদের মধ্যেও কাজ করছে আতঙ্ক।
নতুন ব্যবস্থাপকের কক্ষে এক গ্রাহক বলেই ফেললেন, ‘অনেকে ভাবতাছে ডাকাতির পর ট্যাকা আছে তো।’
তবে লেনদেন সম্পর্কে নতুন ব্যবস্থাপক ফিরোজ আহমেদ প্রথম আলোকে, ‘আমাদের লেনদেন চলছে আগের মতোই। বেড়েছে বা কমেছে কিনা সেটি এমাসের শেষে বুঝতে পারব।’
আতঙ্কের পাশাপাশি আক্ষেপও আছে। ‘গেটে তালা মারতে পারলে সব ডাকাতকে ধরন যাইতো’-অনেকটা আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন ওই ডাকাতির ঘটনায় আহত আয়ুব আলী। ২১ এপ্রিল সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এখনো আঁতকে ওঠেন চল্লিশোর্ধ্ব এই মানুষটি।
আয়ুব আলী বলেন, ‘আমি এই এলাকায় ১৩ বছর ধরে ব্যবসা করি। এই বাজার কমিটির সহসভাপতি আমি। কিন্তু ডাকাতদের কাউকে কখনো আগে দেখিনি।’
দুই পায়ের ব্যান্ডেজ আর ক্ষত চিহ্ন দেখিয়ে আয়ুব আলী বলেন, ‘আমার পায়ে দু বার অপারেশন করা হয়। পাঁচটি লোহার টুকরো বের করা হইছে। ভাগ্য ভালো যে পা কাটা লাগবে না।’
আয়ুব আলীর ভাগ্য ভালো হলেও আরেক আয়ুব আলী প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি ছিলেন কমার্স ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন ছেলে রবিউল ইসলাম। রবিউলের জন্য ব্যাংকে চাকরি জন্য এসেছিলেন তাঁর মা মরিয়ম বেগম। মরিয়ম বলেন, ছেলেকে ফিরে পেলেও আতঙ্ক দূর হয়নি তাঁর।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে ২ মে পুলিশ প্রত্যাহার করায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে মরিয়ম বেগমের। তিনি বলেন, ‘রাইতে ঘুম আসে না। দরজা-জানালা বন্ধ রাখি সব সময়। আমরা পোলাও ভয়ে বাইর হয় না।’
এদিকে কমার্স ব্যাংক থেকে পুলিশ সরিয়ে নেওয়া ভীষণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। কমার্স ব্যাংক ভবনের মালিক বরকতউল্লাহ বলেন, ‘আমরা পুলিশ ক্যাম্প চাইছিলাম। জায়গার ব্যবস্থা করছিলাম। কিন্তু পুলিশই সরাইয়া ফেলছে আর আমরা কিছুই জানি না।’
গত ২১ এপ্রিল কমার্স ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির ঘটনায় নিহত হন আটজন। তাঁদের মধ্যে ডাকাতদের হামলায় ব্যাংকের ভেতরে ব্যবস্থাপকসহ তিনজন এবং ডাকাতদের প্রতিহত করতে গিয়ে গুলি-বোমায় চারজন নিহত হন। জনতার পিটুনিতে মারা যায় এক সন্দেহভাজন ডাকাত। এ ছাড়া ডাকাতির ঘটনায় আহত হন আরও অনেকে।
ডাকাতের হামলার আহত লোকজনের অনেকেই এই বাজারে ব্যবসা করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁদেরই একজন বলেন, ‘স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে আরও মাস কয়েক সময় লাগবে। তবে সবই নির্ভর করছে আসামিদের ধরা পড়ার ওপর।’
সাভার বা আশুলিয়ার মতো বড় পরিসরে না হলেও কাঠগড়া এলাকায় ব্যবসায়িক লেনদেনের কমতি নেই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সরগরম থাকে পুরো এলাকা। মূলত অসংখ্য পোশাক কারখানাকে ঘিরে এই এলাকার ব্যস্ততা। পণ্যবাহী যানবাহন আর পোশাক কর্মীদের আসা-যাওয়া চলে সব সময়।
১৯৮৪ সালের দিকে ছোট পরিসরে কাঠগড়ায় বাজার বসা শুরু হয়। স্থানীয় লোকজন জানান, ২০০০ সালের দিকে একের পর এক পোশাক কারখানা স্থাপনের কারণে নিরিবিলি কাঠগড়ায় ভিড় বাড়তে থাকে। গোটা দুয়েক ব্যাংক শাখা খোলে। এ দুটিরই একটি কমার্স ব্যাংক।
কাঠগড়া হাজি নজমুদ্দীন সুপার মার্কেটের সভাপতি ও কমার্স ব্যাংক ভবনের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এই বাজারে প্রায় ২৫০ দোকান রয়েছে। প্রতিদিন কোটি টাকার লেনদেন চলে। কমার্স ব্যাংক শাখা খোলার আগে এলাকাবাসীকে যেতে হতো ১০ কিলোমিটার দূরের সাভারে অথবা ৮ কিলোমিটার দূরের আশুলিয়া বাজারে। ব্যাংক থাকায় এখন সেই সমস্যা নেই।
কাঠগড়া বাজারের পোশাক ব্যবসায়ী কবির হোসেন খান, যিনি ডাকাতের বোমা হামলায় আহত হয়েছেন। প্রায় দিন দশেক বন্ধ রাখার পর সোমবার দোকান খুলেছেন তিনি। কবির হোসেন বলেন, কমার্স ব্যাংকের ডাকাতির ঘটনায় নিহত ম্যানেজার ওয়ালীউল্লাহর কারণে ব্যবসার জন্য ঋণ পাই। ডাকাতির পর তাঁর ব্যবসা প্রায় নেই বলে তিনি জানান।
শুধু ব্যবসায়িক ঋণ নয়; শিক্ষা, কৃষি খামার, গৃহিণী ও ছাত্রদের জন্যও কমার্স ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া এই ব্যাংকে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার ব্যবস্থা থাকায় কাঠগড়াবাসীকে এখন আর সাভারে যেতে হয় না। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে দুই কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল গ্রহণ করা হয় কমার্স ব্যাংকে।
এদিকে কমার্স ব্যাংকের লেনদেন চললেও গ্রাহক অনেক কম। সোমবার হাটের দিনও ব্যাংকের ভেতর প্রায় শূন্য। গ্রাহকদের যাঁরা ভেতরে ছিলেন, তাঁদের মধ্যেও কাজ করছে আতঙ্ক।
নতুন ব্যবস্থাপকের কক্ষে এক গ্রাহক বলেই ফেললেন, ‘অনেকে ভাবতাছে ডাকাতির পর ট্যাকা আছে তো।’
তবে লেনদেন সম্পর্কে নতুন ব্যবস্থাপক ফিরোজ আহমেদ প্রথম আলোকে, ‘আমাদের লেনদেন চলছে আগের মতোই। বেড়েছে বা কমেছে কিনা সেটি এমাসের শেষে বুঝতে পারব।’
আতঙ্কের পাশাপাশি আক্ষেপও আছে। ‘গেটে তালা মারতে পারলে সব ডাকাতকে ধরন যাইতো’-অনেকটা আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন ওই ডাকাতির ঘটনায় আহত আয়ুব আলী। ২১ এপ্রিল সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এখনো আঁতকে ওঠেন চল্লিশোর্ধ্ব এই মানুষটি।
আয়ুব আলী বলেন, ‘আমি এই এলাকায় ১৩ বছর ধরে ব্যবসা করি। এই বাজার কমিটির সহসভাপতি আমি। কিন্তু ডাকাতদের কাউকে কখনো আগে দেখিনি।’
দুই পায়ের ব্যান্ডেজ আর ক্ষত চিহ্ন দেখিয়ে আয়ুব আলী বলেন, ‘আমার পায়ে দু বার অপারেশন করা হয়। পাঁচটি লোহার টুকরো বের করা হইছে। ভাগ্য ভালো যে পা কাটা লাগবে না।’
আয়ুব আলীর ভাগ্য ভালো হলেও আরেক আয়ুব আলী প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি ছিলেন কমার্স ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন ছেলে রবিউল ইসলাম। রবিউলের জন্য ব্যাংকে চাকরি জন্য এসেছিলেন তাঁর মা মরিয়ম বেগম। মরিয়ম বলেন, ছেলেকে ফিরে পেলেও আতঙ্ক দূর হয়নি তাঁর।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে ২ মে পুলিশ প্রত্যাহার করায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে মরিয়ম বেগমের। তিনি বলেন, ‘রাইতে ঘুম আসে না। দরজা-জানালা বন্ধ রাখি সব সময়। আমরা পোলাও ভয়ে বাইর হয় না।’
এদিকে কমার্স ব্যাংক থেকে পুলিশ সরিয়ে নেওয়া ভীষণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। কমার্স ব্যাংক ভবনের মালিক বরকতউল্লাহ বলেন, ‘আমরা পুলিশ ক্যাম্প চাইছিলাম। জায়গার ব্যবস্থা করছিলাম। কিন্তু পুলিশই সরাইয়া ফেলছে আর আমরা কিছুই জানি না।’
No comments