সাংবাদিক নির্যাতনে এগিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র ও ক্ষমতাসীন দল
বাংলাদেশে
সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রযন্ত্র ও ক্ষমতাসীন দলের দ্বারা সাংবাদিক
নির্যাতনের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে
বাকস্বাধীনতা ও তথ্য অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন আর্টিকেল-১৯।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে ‘ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন ইন বাংলাদেশ’
শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে সাংবাদিক নির্যাতনের
ঘটনা বেড়েছে। এ ছাড়া বিচারহীনতার কারণে রাষ্ট্রযন্ত্র, এমনকি রাজনৈতিক
দলের নেতা-কর্মীরাও সংবাদ কর্মীদের ওপর সহিংসতা ও আক্রমণের ঘটনা সংগঠিত
করে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আর্টিকেল-১৯ এর
উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন
সংগঠনের বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক তাহমিনা রহমান। তিনি বলেন,
বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অযাচিত আক্রমণ, সহিংস ঘটনার বিচারিক তদন্তে
দীর্ঘসূত্রতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য চরম বাস্তবতা
হিসেবে দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে তা
আপাতদৃষ্টিতে হয়রানিমূলক। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি
জানাই সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য একটি কার্যকর সুরক্ষা কৌশল ও নীতিমালা
তৈরির জন্য, যা গণমাধ্যম কর্মীসহ সকলের মুক্তচিন্তা প্রকাশে সহায়ক হবে,
যেখানে একটি স্বাধীন সংস্থা উক্ত নীতিমালার তদারকি করবে। সংবাদপত্রের
প্রতিবেদন ও তা যাছাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত আর্টিকেল-১৯ এর ২০১৪
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময়ে ২১৩ জন সাংবাদিক ও ৮ জন ব্লগার বিভিন্নভাবে
আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৪ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন,
৪০ জন গুরুতর জখম হয়েছেন, ৬২ জনকে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক নির্যাতন করা
হয়েছে, ৮ জন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টসহ ১৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন;
সম্পাদক, প্রকাশক, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দসহ ১৩ জন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আদালত
অবমাননার শিকার হয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, অনলাইন মতামত প্রকাশের বিষয়টিকে
অপরাধ হিসেবে গণ্য করানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ২০০৬ সালের তথ্য
প্রযুক্তি আইনের আওতায় আটজন এখনও জেল হাজতে রয়েছেন। এ ছাড়া নারী সাংবাদিকরা
এখনও কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গগত হয়রানি ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে যখন
তারা বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব প্রদান করছেন। প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্যে
জানা যায়, রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে সাংবাদিক নির্যাতনের মাত্রা
আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ২০১৪ সালের এই আক্রমণের মাত্রা ছিল ৩৩.৬৯ ভাগ। ২০১৩
সালে ছিল ১২.৫ ভাগ। এর মধ্যে ২৩ ভাগ সংগঠিত হয়েছে পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন
ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে। এ ছাড়া ১১ শতাংশ
আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরে সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা।
৬৬.৩১ ভাগ আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে। এর মধ্যে ৩৩.৬৯ ভাগ
ঘটনা ঘটেছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে। যা
সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে চারজন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। তারা হলেন- শাহ আলম মোল্লা, সরকার নিপুল, দেলোয়ার হোসেন, জি এম বাবর আলী। সাংবাদিক শাহ আলম মোল্লার প্রসঙ্গ টেনে তাহমিনা বলেন, রাজধানী ঢাকার উত্তরা ট্রাস্ট কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতি বিষয়ক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করায় উত্তরা মডেল থানা পুলিশ কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে থানার ছাদ থেকে পড়ে যান তিনি। তার স্বজনরা জানিয়েছেন, পুলিশ তাকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৪ সালে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংস একটি ঘটনায়ও বিচারের মাধ্যমে কাউকে দোষী সাব্যস্থ করে শাস্তি দেয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। এসব ঘটনার মাত্র পাঁচটির তদন্ত শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ শতাংশ ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ সংগঠিত ঘটনাই আইনের আওতার বাইরে রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৬.৫৫ ভাগ আক্রমণের ঘটনায় কোন আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অধিকাংশ ঘটনায় আক্রমণের শিকার সাংবাদিকরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) পর্যন্ত করেননি। অন্যান্য ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশ কোন আইনি পদক্ষেপ নেয়নি। এসব ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা দেশের বিদ্যমান আইনি ব্যবস্থার নানা ফাঁকফোকর ও বিভিন্ন পর্যায় থেকে অসহযোগিতার কারণে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেননি। এ কারণগুলোকে হয়রানির মূলমন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তথ্য প্রযুক্তি আইনের আওতায় অপরাধের বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কিছুই বলা হয়নি (যেমন রাষ্ট্র এবং ব্যক্তির ইমেজ ক্ষুণ্ন করা হয়েছে; অথবা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রদান করা হয়েছে ইত্যাদি)। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী এর সুযোগ গ্রহণ করে। এটি একটি বড় সমস্যাসঙ্কুল বিষয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। আর্টিকেল-১৯ এর প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, আক্রমণের প্রেক্ষিতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, তদন্তে ধীরগতি এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি সাংবাদিকদের জন্য চরম বাস্তবতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া আইনের ফাঁকফোকর মতামত প্রকাশের জন্য ভয়-ভীতির সংস্কৃতি তৈরি করেছে। এর ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে (ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট) আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশে প্রচুর সংখ্যক অনলাইন পত্রিকা রয়েছে, তাই বিষয়টি অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। প্রতিবেদনের সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, ২০১২ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সাংবাদিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ‘কর্মপরিকল্পনা’য় বলা হয়েছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, যা ‘ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিও’তে প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা, আর্টিক্যাল-১৯ এর মিডিয়া কনসালট্যান্ট হীরেন পণ্ডিত প্রমুখ।
প্রতিবেদনে চারজন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। তারা হলেন- শাহ আলম মোল্লা, সরকার নিপুল, দেলোয়ার হোসেন, জি এম বাবর আলী। সাংবাদিক শাহ আলম মোল্লার প্রসঙ্গ টেনে তাহমিনা বলেন, রাজধানী ঢাকার উত্তরা ট্রাস্ট কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতি বিষয়ক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করায় উত্তরা মডেল থানা পুলিশ কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে থানার ছাদ থেকে পড়ে যান তিনি। তার স্বজনরা জানিয়েছেন, পুলিশ তাকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৪ সালে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংস একটি ঘটনায়ও বিচারের মাধ্যমে কাউকে দোষী সাব্যস্থ করে শাস্তি দেয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। এসব ঘটনার মাত্র পাঁচটির তদন্ত শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ শতাংশ ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ সংগঠিত ঘটনাই আইনের আওতার বাইরে রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৬.৫৫ ভাগ আক্রমণের ঘটনায় কোন আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অধিকাংশ ঘটনায় আক্রমণের শিকার সাংবাদিকরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) পর্যন্ত করেননি। অন্যান্য ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশ কোন আইনি পদক্ষেপ নেয়নি। এসব ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা দেশের বিদ্যমান আইনি ব্যবস্থার নানা ফাঁকফোকর ও বিভিন্ন পর্যায় থেকে অসহযোগিতার কারণে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেননি। এ কারণগুলোকে হয়রানির মূলমন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তথ্য প্রযুক্তি আইনের আওতায় অপরাধের বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কিছুই বলা হয়নি (যেমন রাষ্ট্র এবং ব্যক্তির ইমেজ ক্ষুণ্ন করা হয়েছে; অথবা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রদান করা হয়েছে ইত্যাদি)। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী এর সুযোগ গ্রহণ করে। এটি একটি বড় সমস্যাসঙ্কুল বিষয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। আর্টিকেল-১৯ এর প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, আক্রমণের প্রেক্ষিতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, তদন্তে ধীরগতি এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি সাংবাদিকদের জন্য চরম বাস্তবতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া আইনের ফাঁকফোকর মতামত প্রকাশের জন্য ভয়-ভীতির সংস্কৃতি তৈরি করেছে। এর ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে (ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট) আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশে প্রচুর সংখ্যক অনলাইন পত্রিকা রয়েছে, তাই বিষয়টি অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। প্রতিবেদনের সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, ২০১২ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সাংবাদিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ‘কর্মপরিকল্পনা’য় বলা হয়েছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, যা ‘ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিও’তে প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা, আর্টিক্যাল-১৯ এর মিডিয়া কনসালট্যান্ট হীরেন পণ্ডিত প্রমুখ।
No comments