এখন সংলাপ কেন, আগাম নির্বাচন তো হবে না -সাক্ষাৎকারে : তোফায়েল আহমেদ by মিজানুর রহমান খান
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদের
জন্ম ১৯৪৩ সালে ভোলায়। ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা
বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে গঠিত গেরিলা
সংগঠন মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে তিনি
বাণিজ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৬-২০০১ সালে তিনি বাণিজ্য ও
শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। তখন ডব্লিউটিও-তে তিনি এলডিসি দেশগুলোর মুখপাত্র
ছিলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান
প্রথম আলো: সংলাপ প্রশ্নে কিছুটা তুলনা করা যাক। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের চোখে ইরান এবং আওয়ামী লীগ ও ভারতের চোখে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কের আলোকে যদি দেখা হয়, তাহলে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত তেহরানের সঙ্গে বারাক ওবামার সাম্প্রতিক শান্তিচুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। ভারতও জানিয়েছে। আমরা পররাষ্ট্রনীতিতে এটা পারলে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পারব না কেন?
তোফায়েল আহমেদ: ইরান কোনো সন্ত্রাসী দেশ নয়।
প্রথম আলো: ২০১২ সালেও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইরান আগের মতোই আল-কায়েদাকে সক্রিয় মদদ দেওয়াসহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক রয়ে গেছে। ২০০৭ সালে মার্কিন সিনেট ইরানি রেভল্যুশন গার্ডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
তোফায়েল আহমেদ: কিন্তু ইরান একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র নয়। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে তার নিজস্ব নীতি রয়েছে। সুতরাং, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক বিষয় নিয়ে জেনেভাতে যে আলোচনা হয়েছে, সেটা আর বিএনপি ও জামায়াতের বিষয় এক নয়। এবং এক হতেও পারে না। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের কোনো দেশ কখনো সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংলাপ করে না। আইএস যখন দুজন জাপানি সাংবাদিককে জিম্মি করে শর্ত দিল, তখন জাপান তা মানেনি। এখানে জামায়াত একটি সন্ত্রাসী সংগঠন এবং তারা জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত।
প্রথম আলো: কিন্তু তাকে আপনার সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে সরকারিভাবে ঘোষণাও করেননি।
তোফায়েল আহমেদ: হ্যাঁ করিনি। বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ তো অতীতে হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের নামে তারা যে নাশকতা করেছে এবং নিরীহ-নিরপরাধ মায়ের কোল খালি করেছে, নিষ্পাপ শিশুকে অগ্নিদগ্ধ করেছে, বাসের চালক ও সাধারণ মানুষকে যেভাবে পুড়িয়ে মেরেছে, সে কারণে তাদের সঙ্গে সংলাপের কোনো প্রশ্নই আসে না।
প্রথম আলো: ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো অন্তত এক ডজন সন্ত্রাসী হামলার দায়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে অভিযুক্ত করেছিল। তারা বলেছে, ইরান তাদের বিমান ছিনতাই, দূতাবাস উড়িয়ে দেওয়া, আরও কত-কী করেছে। ওবামা শান্তিচুক্তি করতে গেলে ৪৭ জন সিনেটর বিরোধিতা করে চিঠি লিখে ইরানকে সতর্ক করেছে। তার পরও ওবামা থামেননি। বাংলাদেশও বলেছে, এটা কূটনীতি ও সংলাপের বিজয়। এখন বিশ্বব্যাংক বলেছে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। আমরা দেখছি দেড় শ লোক পেট্রলবোমায় নিহত হয়েছে। এখন আপনি এর পুরো দায় বিএনপিকে দিলেই আপনি এর দায়মুক্ত হতে পারেন?
তোফায়েল আহমেদ: কেন আমি দায়মুক্ত হব না। পুরো কাজটিই তো বিএনপির সৃষ্টি। দেশবাসী এটা জানে। যে দলটি বিশ্ব ইজতেমার সময় হরতাল-অবরোধ করে, বয়োবৃদ্ধদের কষ্ট দেয়, তাঁদের আসতে বাধা দেয়, যে দলের নেত্রী একুশে ফেব্রুয়ারি ও স্বাধীনতা দিবসে অবরোধ বজায় রেখে শহীদ মিনারবিমুখ থাকেন এবং নিজের ছেলের মৃত্যুর পরও হরতাল দিতে দ্বিধাহীন, সুতরাং তার দায় ক্ষমতাসীন দলের ওপর পড়বে কোন যুক্তিতে? ক্ষমতাসীন দল বরং সক্ষমতার সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে এই নাশকতা ও জঙ্গি তৎপরতাকে বানচাল করে দিয়েছে। যে কারণে এই মুহূর্তে দেশ স্বাভাবিক। বিশ্বব্যাংক যা-ই বলুক, বিএনপির এই তথাকথিত আন্দোলনে আমার অর্থনীতির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে, তারা গ্রামের সঙ্গে শহরকে বিচ্ছিন্ন করে যে ব্যাপক ক্ষতি করতে চেয়েছিল, সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রথম আলো: এত প্রাণহানি, মাত্র তিন মাসে জিডিপির ১ শতাংশ খেয়ে ফেলাকে ব্যাপক ক্ষতি মনে করেন না?
তোফায়েল আহমেদ: বিশ্বব্যাংকের এই তথ্যের সঙ্গে আমি একমত নই। কারণ, একটি শিল্পকারখানাও বন্ধ হয়নি। এমনকি বিএনপির নেতাদের মালিকানাধীন কারখানাগুলোও উৎপাদন দিয়েছে। যদি সরবরাহ চেইন বন্ধই হতো, তাহলে মার্চ মাসে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতো না। আমি রপ্তানিতে ৩৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার টার্গেট করেছি; এর হয়তো সামান্য ক্ষতি হতে পারে। আচ্ছা, এখন আপনি সংলাপের কথা বলছেন। বলুন তো যুক্তরাষ্ট্র কি আইএসের সঙ্গে সংলাপ করছে?
প্রথম আলো: আইএসের সঙ্গে বিএনপি তুলনীয় কি না? এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ফকির সাহাবুদ্দিনের বাসার বৈঠক আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিই। সেখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ১৮০ ও ১২০টি আসন ভাগাভাগি হয়েছিল কি না? শেখ হাসিনা বিএনপিকে ১২০ আসন দেওয়ার চুক্তিতে সই করেন। এটা সত্যি কি না?
তোফায়েল আহমেদ: হ্যাঁ। জেনারেল মাজেদ উল হক, কর্নেল মোস্তাফিজ, ওবায়দুর রহমান, আবদুস সালাম এবং আমি, আবদুস সামাদ আজাদ, আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক আমরা আলাপ করে তিন ফর্দ চুক্তিনামা তৈরি করি। বেগম খালেদা জিয়া সই দেননি।
প্রথম আলো: তাহলে সে রকমের একটি দলকে আপনি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে সরাতে চান, তা কতটা বাস্তবসম্মত?
তোফায়েল আহমেদ: এটা বাস্তবসম্মত নয় এবং আমি তাকে তো বের করতে চাই না। সে নিজেই বের হয়ে যাচ্ছে।
প্রথম আলো:১৯৮৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি যায়নি বলে সে কি রাজনীতি থেকে বের হয়েছিল?
তোফায়েল আহমেদ: ১৯৮৬ আর ২০১৪ মেলে না।
প্রথম আলো: ১৯৮৬ সালে বেগম জিয়া কেন ওই আসন বণ্টন চুক্তিতে সই দেননি, সেই রহস্য ভেদ হয়েছে কি?
তোফায়েল আহমেদ: যত দূর জানি, তৎকালীন বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমানের বাসায় একটি বৈঠক হয়েছিল। এরশাদ অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন। একদিকে এরশাদের আপন লোকদের বেগম জিয়ার শুভানুধ্যায়ী বানানো হলো, তাঁকে নির্বাচনে না যেতে পরামর্শ দেওয়া হলো, যাতে ঐক্য না টেকে, বিভেদ হয় এবং খালেদা জিয়া সেই ফাঁদে পড়েছিলেন। তিনি সাভার বা উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহর বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে হয়তো লুকিয়েছিলেন। পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। বলা হয়েছিল, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে, বাস্তবতা যদিও তা ছিল না। যেকোনো একটি অজ্ঞাত নির্দেশে সমঝোতার ভিত্তিতে তিনি নির্বাচন থেকে দূরে সরে যান। একই ঘটনা তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি করতে চেয়েছিলেন। উনি মনে করেছিলেন, একটি তৃতীয় শক্তি ক্ষমতায় এলে ওনার সুবিধা হয়। তা না হলে পাঁচটি সিটিতে জয়লাভের পরে তাঁর নির্বাচন না করার কারণ ছিল না।
প্রথম আলো: প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে গেলে বিএনপিকে কী কী মন্ত্রিত্ব দেওয়া হতো?
তোফায়েল আহমেদ: স্বরাষ্ট্রসহ পাঁচটি দেওয়া হতো। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সামনেই তা বলেছেন। নেত্রী প্রথম যখন প্রস্তাব দিলেন, খালেদা জিয়া আলটিমেটাম দিলেন। পুনরায় প্রস্তাব দেওয়ার পরে বললেন, দুদিনের মধ্যে তাঁর সঙ্গে সংলাপ করতে হবে। আর সেই দুদিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী কিন্তু খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করেছিলেন। আমি দ্বিধাহীন চিত্তে বলি, শেখ হাসিনা সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে এসব পরিচালনা করেছিলেন। হয়তো-বা সেদিন যদি টেলিফোন সংলাপের পরে বেগম খালেদা জিয়া গণভবনে আসতেন, তাহলে তিনি লাভবান হতেন। প্রধানমন্ত্রীর বড় গুণ, তিনি বঙ্গবন্ধুর মতোই নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া কারও সঙ্গে হয়তো সমঝোতা করেছিলেন যে তৃতীয় একটি শক্তি থাইল্যান্ডের মতো ক্ষমতা নেবে। আমরা নির্বাচন না করতে পারলে ওই তৃতীয় শক্তি ক্ষমতা নেবে। কিন্তু এখানে তিনি হেরে গেছেন।
প্রথম আলো: জিয়াউর রহমানকে বীর উত্তম ও সেনাবাহিনীর উপপ্রধান করা মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের প্রতি বঙ্গবন্ধুর স্বীকৃতি। আজ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জিয়ার সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ভিত্তি কী? যদিও পঁচাত্তরে জিয়ার ভূমিকা নিয়ে আমরাও প্রশ্ন তুলি।
তোফায়েল আহমেদ: খন্দকার মোশতাকও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন, মন্ত্রী ছিলেন, তাঁর নেতৃত্বেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু জিয়াকে বীর উত্তম উপাধি দেন, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর খুনিরাই তো জিয়ার নাম উল্লেখ করেছে। আর পঁচাত্তরের পরে তিনি স্বাধীনতার মূল্যবোধ ধ্বংস করেছেন। সংবিধানে বিসমিল্লাহ বসিয়ে চার মূলনীতি বাতিল করেছেন। একাত্তরের জিয়া ও পঁচাত্তরের পরের জিয়াউর রহমান এক নন।
প্রথম আলো: আওয়ামী লীগের কেউ কেউ বলেছিলেন জামায়াত সঙ্গ ত্যাগ করলে সংলাপ হবে। আপনার কী মত?
তোফায়েল আহমেদ: সেটা যে বা যারা বলুক, আমার কোনো মন্তব্য নেই। কারণ, জামায়াত ত্যাগ করলেই বিএনপি গণতান্ত্রিক সংগঠন হবে, তা আমি মনে করি না।
প্রথম আলো: আপনি বলছেন ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারির ৯০ দিন আগে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হবে। এটা কীভাবে গণতন্ত্রসম্মত?
তোফায়েল আহমেদ: কেন হবে না। আপনি একজন সাংবাদিক। কোনো পক্ষ অবলম্বন করা উচিত নয়। টক শোতে কথা বলেন, সেটা ভিন্ন। আমি এখন সংলাপ করব কী কারণে? আগাম নির্বাচন দেব না। তাহলে কিসের সংলাপ? খালেদা জিয়ার সাত দফার প্রথম দফা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সেটা সম্ভব নয়। এখন সংলাপ মানে চাপের কাছে নতি স্বীকার করা, সেটা হবে না। সংলাপ হবে নির্বাচনের জন্য।
প্রথম আলো: বিএনপি আমলে গ্রেপ্তারের পরে আপনাদের সঙ্গে যেমন আচরণ করেছিল, এখন তাদের সঙ্গে তার চেয়ে ভালো করছেন কি?
তোফায়েল আহমেদ: অবশ্যই। ২০০২ সালে বিমানবন্দরে আমাকে গ্রেপ্তার করে কাশিমপুর জেলে নেওয়া হয়। সেখানে ফাঁসির আসামি এরশাদ শিকদারের খাটবিহীন কনেডম সেলের মেঝেতে রাখা হয়েছিল। হাইকোর্টের আদেশের আগে আমাকে ডিভিশন দেওয়া হয়নি। অথচ এখন ভিন্ন চিত্র। বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদদের আদালত লাগে না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁরা ডিভিশন পাচ্ছেন। আর জিয়ার আমলে ৩৩ মাস জেলে থাকতে আমার উপর দৈহিক নির্যাতন চলেছিল।
প্রথম আলো: আমাদের জানামতে কিছুদিন আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পিজির আউটডোরে ডাক্তার দেখাতে হয়েছে।
তোফায়েল আহমেদ: পিজির আউটডোর ও জেলখানা এক নয়, সেটা আমি জানিও না।
প্রথম আলো: সিটি নির্বাচনে বিএনপি যে ধরপাকড় ও হয়রানির আশঙ্কা করছে, তার কি একটা সুরাহা সম্ভব?
তোফায়েল আহমেদ: নির্বাচন কমিশন তো বলেই দিয়েছে যার নামে মামলা থাকবে, পুলিশ তো তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
প্রথম আলো: সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিনের নিখোঁজ হওয়াকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রাজনীতিকদের জন্য শুভ লক্ষণ নয় বলে মনে করেন। আপনি কীভাবে দেখেন?
তোফায়েল আহমেদ: এটা কারও জন্যই শুভ লক্ষণ নয়। প্রকৃত ঘটনা আমার জানা নেই। দেখলাম, মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, তিনি আছেন। পুলিশ চেষ্টা করছে।
প্রথম আলো: আপনি কি আশাবাদী যে তাঁকে পাওয়া যাবে।
তোফায়েল আহমেদ: এর বেশি আমি বলতে পারব না। তিনি ওয়েস্টিন হোটেলের হেলথ ক্লাবে যেতেন। আমিও মাঝেমধ্যে যেতাম। আমার সঙ্গে তাঁর দেখা হতো। জানাশোনা ছিল। আমরা তো অবশ্যই আশা করব, স্বাভাবিকভাবে তিনি ফিরে আসবেন।
প্রথম আলো: সিটি নির্বাচনে কোনো কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এক মন্ত্রী যেকোনো মূল্যে জিততে চাইছেন।
তোফায়েল আহমেদ: আমরা তো কেউ প্রচারণায় যাইনি, গণসংযোগ করি না। আপনি যাঁর নাম নেননি, সেই মাননীয় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি ‘যেকোনো মূল্যে’ কথাটা কর্মীদের কাছে ব্যাখ্যা দেন। কারচুপি নয়, প্রচারণায় কঠোর পরিশ্রমের অর্থে বলেছেন। একই কথা অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদও বলেছেন। ড. এমাজউদ্দীন যেকোনো মূল্যে বিজয় ছিনিয়ে আনার কথা বলেছেন। মোশাররফ তো আর বিজয় ছিনিয়ে আনতে চাননি। নির্বাচনই হলো না, অথচ এমাজউদ্দীন নির্বাচনে জিতে তার তিন মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের কথাও বলছেন।
প্রথম আলো: গত ৬ বছরের উন্নয়নের এমন কি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে?
তোফায়েল আহমেদ: হরতাল-অবরোধ সত্ত্বেও যুগান্তকারী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এগিয়ে চলছে। গ্রামগুলো দ্রুত রূপান্তরিত হচ্ছে শহরে। ক্রমাগত প্রমাণিত হয়ে চলছে যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যেটা করতে চান, সেটা তিনি করে দেখাতে পারেন। তাঁর মধ্যে সন্দেহাতীত এক অসাধারণ দৃঢ়তা ও সংকল্প রয়েছে। পদ্মা সেতু, গভীর সমুদ্রবন্দর, তেল শোধনাগার, কনটেইনার টার্মিনাল, গ্যাস আমদানির জন্য এলএনজি ভাসমান টার্মিনাল, মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ইত্যাদি সরকারের বৃহৎ অগ্রাধিকার প্রকল্প, আর এসব প্রকল্প যথাসময়ে সম্পন্ন হবেই।
বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবেই। এলডিসি টপকে আমরা পরিণত হব উন্নয়নশীল দেশে। মন্দায় আক্রান্ত বিশ্ব অবাক হয়ে দেখেছে বাংলাদেশের জিডিপি ৬ ভাগের বেশি, এবারেও তা বজায় থাকবে। গোল্ডম্যান স্যাক্স, জেপি মরগ্যান প্রভৃতি নামী সংস্থার পূর্বাভাসে বাংলাদেশ এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার নাম। এমনকি বিশ্বব্যাংকও বলেছে, মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে তারা অংশীদার হতে প্রস্তুত। কিছু গম আমদানি লাগে; অন্যথায় আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, এমনকি আমাদের সুগন্ধি চাল রপ্তানি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তদুপরি এবারে তিন লাখ টন গম বেশি উৎপন্ন হয়েছে। তার মানে গম কেনাটাও বন্ধ হয়ে যাবে। ১৯৭২-৭৩ সালে আমাদের রপ্তানি ছিল ৩৪৮ মিলিয়ন ডলার, সেটা বেড়ে এখন ৩০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। এ বছরে হবে ৩২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে আমরা যখন ৫০ বছর পূর্তি করব, তখন আমাদের রপ্তানি হবে ৭০ বিলিয়নের বেশি, যার মধ্যে পোশাকেই থাকবে ৫০ বিলিয়ন ডলার। এটা লক্ষণীয় যে, পাকিস্তানের রপ্তানি কিন্তু ২৪ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারেরও কম। আমাদের তা থেকে দ্বিগুণেরও বেশি, ২৩ বিলিয়ন। পাকিস্তানের রেমিট্যান্স ১০ বিলিয়ন, আমাদের ১৫ বিলিয়ন। সামাজিক খাতের সব সূচকে পাকিস্তানের এবং কিছু ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে আমরা ওপরে। ২০০৯ সালে আমরা যখন ক্ষমতা নিলাম, তখন আমাদের মোট রপ্তানি ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলার, সেটা এখন দ্বিগুণের বেশি। রেমিট্যান্স ছিল চার-পাঁচ বিলিয়ন ডলার, সেটা এখন বেড়ে তিন গুণ। রিজার্ভ ছিল পাঁচ-ছয় বিলিয়ন ডলার, সেটা এখন ২৩ বিলিয়ন ডলার। এই হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলের একটি চকিত উন্নয়ন চিত্র। তিনি এভাবেই দেশটাকে এগিয়ে নিচ্ছেন। বাংলাদেশের জন্য ২০১৪ সাল ছিল একটি ‘সোনালি বসন্ত’; বেগম খালেদা জিয়া যাকে বাধাগ্রস্ত করতে গিয়েও বিফল হয়েছেন।
আমি সম্প্রতি শেখ হাসিনাকে একটি বার্তা পাঠিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম। নেত্রী, কংগ্রাচুলেসন্স। তিনি দয়া করে তাতে সাড়া দেন। তবে বুঝতে না পেরে জানতে চান, কেন? আমি বললাম, দুটি কারণে। প্রথমত, আপনাকে অভিনন্দন এ কারণে যে অবশেষে আপনি বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছেন। দ্বিতীয়ত, তাঁকে আপনি তাঁর কার্যালয় থেকে বাসভবনে পাঠাতে পেরেছেন। এটা আপনার বিজয়।
প্রথম আলো: আমরা আপাতত একটি দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু তার স্থায়িত্ব কতটুকু?
তোফায়েল আহমেদ: শেখ হাসিনার কারণেই বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার হলো। অন্য কেউ এটা করতে পারত না। বিশ্বের অনেক দেশ নিজেরা ফাঁসি দেয়, আমরা দিলে বিবৃতি দেয়। এই দ্বৈত নীতি শেখ হাসিনার মধ্যে নেই। বঙ্গবন্ধু চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। একবার নিলে ফাঁসির মঞ্চে যেতে হলেও পেছাতেন না, ঠিক সেই একই তেজস্বিতা প্রদর্শন করে চলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনি যে স্থিতিশীলতা চাইছেন, সেটা আমার মনে হয় ২০১৯ পর্যন্তই টিকে যাবে। কারণ বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর লন্ডনপ্রবাসী পুত্র নিশ্চয় উপলব্ধি করেছেন যে এই তথাকথিত আন্দোলন করে শেখ হাসিনার যেমন পতন ঘটানো যাবে না, তেমনি তাঁর কাছ থেকে কিছু আদায়ও করা যাবে না। এই শিক্ষা তাঁরা লাভ করেছেন।
প্রথম আলো: তাহলে গণতন্ত্র বিসর্জন দিয়ে উন্নয়ন করাই আপনাদের নীতি?
তোফায়েল আহমেদ: আমরা বিশ্বায়ন ও উদারীকরণ যুগে বাস করি, অবশ্যই গণতন্ত্রকে সম্মান করি। আবার একই সঙ্গে লক্ষ্যে অটল থেকে বাংলাকে শস্য-শ্যামলা-সুজলা-সুফলা তথা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় রূপান্তর করব। আগে আপনি বিএনপিকে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আচরণ করতে বলুন। তখন এ ধরনের সব প্রশ্ন আসবে। শেষ কথা হলো এই যে,১৯৮১ সালে আমরা আওয়ামী লীগের পতাকা শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। সেই পতাকা হাতে তিনি আওয়ামী লীগকে সাজিয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগেই তিনি ২০২১ রূপকল্প নির্দিষ্ট করেছিলেন, সেই গন্তব্যে তিনি পৌঁছাবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
প্রথম আলো: তার মানে ২০১৯ সালের নির্বাচনেও আপনারা জিতবেন বলে আপনি এখনই আস্থা ব্যক্ত করছেন।
তোফায়েল আহমেদ: হ্যাঁ (হাসি) আপনি তো সাংঘাতিক সাংবাদিক!
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
তোফায়েল আহমেদ: ধন্যবাদ।
প্রথম আলো: সংলাপ প্রশ্নে কিছুটা তুলনা করা যাক। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের চোখে ইরান এবং আওয়ামী লীগ ও ভারতের চোখে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কের আলোকে যদি দেখা হয়, তাহলে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত তেহরানের সঙ্গে বারাক ওবামার সাম্প্রতিক শান্তিচুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। ভারতও জানিয়েছে। আমরা পররাষ্ট্রনীতিতে এটা পারলে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পারব না কেন?
তোফায়েল আহমেদ: ইরান কোনো সন্ত্রাসী দেশ নয়।
প্রথম আলো: ২০১২ সালেও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইরান আগের মতোই আল-কায়েদাকে সক্রিয় মদদ দেওয়াসহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক রয়ে গেছে। ২০০৭ সালে মার্কিন সিনেট ইরানি রেভল্যুশন গার্ডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
তোফায়েল আহমেদ: কিন্তু ইরান একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র নয়। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে তার নিজস্ব নীতি রয়েছে। সুতরাং, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক বিষয় নিয়ে জেনেভাতে যে আলোচনা হয়েছে, সেটা আর বিএনপি ও জামায়াতের বিষয় এক নয়। এবং এক হতেও পারে না। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের কোনো দেশ কখনো সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংলাপ করে না। আইএস যখন দুজন জাপানি সাংবাদিককে জিম্মি করে শর্ত দিল, তখন জাপান তা মানেনি। এখানে জামায়াত একটি সন্ত্রাসী সংগঠন এবং তারা জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত।
প্রথম আলো: কিন্তু তাকে আপনার সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে সরকারিভাবে ঘোষণাও করেননি।
তোফায়েল আহমেদ: হ্যাঁ করিনি। বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ তো অতীতে হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের নামে তারা যে নাশকতা করেছে এবং নিরীহ-নিরপরাধ মায়ের কোল খালি করেছে, নিষ্পাপ শিশুকে অগ্নিদগ্ধ করেছে, বাসের চালক ও সাধারণ মানুষকে যেভাবে পুড়িয়ে মেরেছে, সে কারণে তাদের সঙ্গে সংলাপের কোনো প্রশ্নই আসে না।
প্রথম আলো: ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো অন্তত এক ডজন সন্ত্রাসী হামলার দায়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে অভিযুক্ত করেছিল। তারা বলেছে, ইরান তাদের বিমান ছিনতাই, দূতাবাস উড়িয়ে দেওয়া, আরও কত-কী করেছে। ওবামা শান্তিচুক্তি করতে গেলে ৪৭ জন সিনেটর বিরোধিতা করে চিঠি লিখে ইরানকে সতর্ক করেছে। তার পরও ওবামা থামেননি। বাংলাদেশও বলেছে, এটা কূটনীতি ও সংলাপের বিজয়। এখন বিশ্বব্যাংক বলেছে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। আমরা দেখছি দেড় শ লোক পেট্রলবোমায় নিহত হয়েছে। এখন আপনি এর পুরো দায় বিএনপিকে দিলেই আপনি এর দায়মুক্ত হতে পারেন?
তোফায়েল আহমেদ: কেন আমি দায়মুক্ত হব না। পুরো কাজটিই তো বিএনপির সৃষ্টি। দেশবাসী এটা জানে। যে দলটি বিশ্ব ইজতেমার সময় হরতাল-অবরোধ করে, বয়োবৃদ্ধদের কষ্ট দেয়, তাঁদের আসতে বাধা দেয়, যে দলের নেত্রী একুশে ফেব্রুয়ারি ও স্বাধীনতা দিবসে অবরোধ বজায় রেখে শহীদ মিনারবিমুখ থাকেন এবং নিজের ছেলের মৃত্যুর পরও হরতাল দিতে দ্বিধাহীন, সুতরাং তার দায় ক্ষমতাসীন দলের ওপর পড়বে কোন যুক্তিতে? ক্ষমতাসীন দল বরং সক্ষমতার সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে এই নাশকতা ও জঙ্গি তৎপরতাকে বানচাল করে দিয়েছে। যে কারণে এই মুহূর্তে দেশ স্বাভাবিক। বিশ্বব্যাংক যা-ই বলুক, বিএনপির এই তথাকথিত আন্দোলনে আমার অর্থনীতির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে, তারা গ্রামের সঙ্গে শহরকে বিচ্ছিন্ন করে যে ব্যাপক ক্ষতি করতে চেয়েছিল, সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রথম আলো: এত প্রাণহানি, মাত্র তিন মাসে জিডিপির ১ শতাংশ খেয়ে ফেলাকে ব্যাপক ক্ষতি মনে করেন না?
তোফায়েল আহমেদ: বিশ্বব্যাংকের এই তথ্যের সঙ্গে আমি একমত নই। কারণ, একটি শিল্পকারখানাও বন্ধ হয়নি। এমনকি বিএনপির নেতাদের মালিকানাধীন কারখানাগুলোও উৎপাদন দিয়েছে। যদি সরবরাহ চেইন বন্ধই হতো, তাহলে মার্চ মাসে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতো না। আমি রপ্তানিতে ৩৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার টার্গেট করেছি; এর হয়তো সামান্য ক্ষতি হতে পারে। আচ্ছা, এখন আপনি সংলাপের কথা বলছেন। বলুন তো যুক্তরাষ্ট্র কি আইএসের সঙ্গে সংলাপ করছে?
প্রথম আলো: আইএসের সঙ্গে বিএনপি তুলনীয় কি না? এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ফকির সাহাবুদ্দিনের বাসার বৈঠক আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিই। সেখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ১৮০ ও ১২০টি আসন ভাগাভাগি হয়েছিল কি না? শেখ হাসিনা বিএনপিকে ১২০ আসন দেওয়ার চুক্তিতে সই করেন। এটা সত্যি কি না?
তোফায়েল আহমেদ: হ্যাঁ। জেনারেল মাজেদ উল হক, কর্নেল মোস্তাফিজ, ওবায়দুর রহমান, আবদুস সালাম এবং আমি, আবদুস সামাদ আজাদ, আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক আমরা আলাপ করে তিন ফর্দ চুক্তিনামা তৈরি করি। বেগম খালেদা জিয়া সই দেননি।
প্রথম আলো: তাহলে সে রকমের একটি দলকে আপনি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে সরাতে চান, তা কতটা বাস্তবসম্মত?
তোফায়েল আহমেদ: এটা বাস্তবসম্মত নয় এবং আমি তাকে তো বের করতে চাই না। সে নিজেই বের হয়ে যাচ্ছে।
প্রথম আলো:১৯৮৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি যায়নি বলে সে কি রাজনীতি থেকে বের হয়েছিল?
তোফায়েল আহমেদ: ১৯৮৬ আর ২০১৪ মেলে না।
প্রথম আলো: ১৯৮৬ সালে বেগম জিয়া কেন ওই আসন বণ্টন চুক্তিতে সই দেননি, সেই রহস্য ভেদ হয়েছে কি?
তোফায়েল আহমেদ: যত দূর জানি, তৎকালীন বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমানের বাসায় একটি বৈঠক হয়েছিল। এরশাদ অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন। একদিকে এরশাদের আপন লোকদের বেগম জিয়ার শুভানুধ্যায়ী বানানো হলো, তাঁকে নির্বাচনে না যেতে পরামর্শ দেওয়া হলো, যাতে ঐক্য না টেকে, বিভেদ হয় এবং খালেদা জিয়া সেই ফাঁদে পড়েছিলেন। তিনি সাভার বা উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহর বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে হয়তো লুকিয়েছিলেন। পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। বলা হয়েছিল, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে, বাস্তবতা যদিও তা ছিল না। যেকোনো একটি অজ্ঞাত নির্দেশে সমঝোতার ভিত্তিতে তিনি নির্বাচন থেকে দূরে সরে যান। একই ঘটনা তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি করতে চেয়েছিলেন। উনি মনে করেছিলেন, একটি তৃতীয় শক্তি ক্ষমতায় এলে ওনার সুবিধা হয়। তা না হলে পাঁচটি সিটিতে জয়লাভের পরে তাঁর নির্বাচন না করার কারণ ছিল না।
প্রথম আলো: প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে গেলে বিএনপিকে কী কী মন্ত্রিত্ব দেওয়া হতো?
তোফায়েল আহমেদ: স্বরাষ্ট্রসহ পাঁচটি দেওয়া হতো। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সামনেই তা বলেছেন। নেত্রী প্রথম যখন প্রস্তাব দিলেন, খালেদা জিয়া আলটিমেটাম দিলেন। পুনরায় প্রস্তাব দেওয়ার পরে বললেন, দুদিনের মধ্যে তাঁর সঙ্গে সংলাপ করতে হবে। আর সেই দুদিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী কিন্তু খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করেছিলেন। আমি দ্বিধাহীন চিত্তে বলি, শেখ হাসিনা সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে এসব পরিচালনা করেছিলেন। হয়তো-বা সেদিন যদি টেলিফোন সংলাপের পরে বেগম খালেদা জিয়া গণভবনে আসতেন, তাহলে তিনি লাভবান হতেন। প্রধানমন্ত্রীর বড় গুণ, তিনি বঙ্গবন্ধুর মতোই নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া কারও সঙ্গে হয়তো সমঝোতা করেছিলেন যে তৃতীয় একটি শক্তি থাইল্যান্ডের মতো ক্ষমতা নেবে। আমরা নির্বাচন না করতে পারলে ওই তৃতীয় শক্তি ক্ষমতা নেবে। কিন্তু এখানে তিনি হেরে গেছেন।
প্রথম আলো: জিয়াউর রহমানকে বীর উত্তম ও সেনাবাহিনীর উপপ্রধান করা মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের প্রতি বঙ্গবন্ধুর স্বীকৃতি। আজ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জিয়ার সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ভিত্তি কী? যদিও পঁচাত্তরে জিয়ার ভূমিকা নিয়ে আমরাও প্রশ্ন তুলি।
তোফায়েল আহমেদ: খন্দকার মোশতাকও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন, মন্ত্রী ছিলেন, তাঁর নেতৃত্বেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু জিয়াকে বীর উত্তম উপাধি দেন, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর খুনিরাই তো জিয়ার নাম উল্লেখ করেছে। আর পঁচাত্তরের পরে তিনি স্বাধীনতার মূল্যবোধ ধ্বংস করেছেন। সংবিধানে বিসমিল্লাহ বসিয়ে চার মূলনীতি বাতিল করেছেন। একাত্তরের জিয়া ও পঁচাত্তরের পরের জিয়াউর রহমান এক নন।
প্রথম আলো: আওয়ামী লীগের কেউ কেউ বলেছিলেন জামায়াত সঙ্গ ত্যাগ করলে সংলাপ হবে। আপনার কী মত?
তোফায়েল আহমেদ: সেটা যে বা যারা বলুক, আমার কোনো মন্তব্য নেই। কারণ, জামায়াত ত্যাগ করলেই বিএনপি গণতান্ত্রিক সংগঠন হবে, তা আমি মনে করি না।
প্রথম আলো: আপনি বলছেন ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারির ৯০ দিন আগে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হবে। এটা কীভাবে গণতন্ত্রসম্মত?
তোফায়েল আহমেদ: কেন হবে না। আপনি একজন সাংবাদিক। কোনো পক্ষ অবলম্বন করা উচিত নয়। টক শোতে কথা বলেন, সেটা ভিন্ন। আমি এখন সংলাপ করব কী কারণে? আগাম নির্বাচন দেব না। তাহলে কিসের সংলাপ? খালেদা জিয়ার সাত দফার প্রথম দফা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সেটা সম্ভব নয়। এখন সংলাপ মানে চাপের কাছে নতি স্বীকার করা, সেটা হবে না। সংলাপ হবে নির্বাচনের জন্য।
প্রথম আলো: বিএনপি আমলে গ্রেপ্তারের পরে আপনাদের সঙ্গে যেমন আচরণ করেছিল, এখন তাদের সঙ্গে তার চেয়ে ভালো করছেন কি?
তোফায়েল আহমেদ: অবশ্যই। ২০০২ সালে বিমানবন্দরে আমাকে গ্রেপ্তার করে কাশিমপুর জেলে নেওয়া হয়। সেখানে ফাঁসির আসামি এরশাদ শিকদারের খাটবিহীন কনেডম সেলের মেঝেতে রাখা হয়েছিল। হাইকোর্টের আদেশের আগে আমাকে ডিভিশন দেওয়া হয়নি। অথচ এখন ভিন্ন চিত্র। বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদদের আদালত লাগে না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁরা ডিভিশন পাচ্ছেন। আর জিয়ার আমলে ৩৩ মাস জেলে থাকতে আমার উপর দৈহিক নির্যাতন চলেছিল।
প্রথম আলো: আমাদের জানামতে কিছুদিন আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পিজির আউটডোরে ডাক্তার দেখাতে হয়েছে।
তোফায়েল আহমেদ: পিজির আউটডোর ও জেলখানা এক নয়, সেটা আমি জানিও না।
প্রথম আলো: সিটি নির্বাচনে বিএনপি যে ধরপাকড় ও হয়রানির আশঙ্কা করছে, তার কি একটা সুরাহা সম্ভব?
তোফায়েল আহমেদ: নির্বাচন কমিশন তো বলেই দিয়েছে যার নামে মামলা থাকবে, পুলিশ তো তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
প্রথম আলো: সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিনের নিখোঁজ হওয়াকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রাজনীতিকদের জন্য শুভ লক্ষণ নয় বলে মনে করেন। আপনি কীভাবে দেখেন?
তোফায়েল আহমেদ: এটা কারও জন্যই শুভ লক্ষণ নয়। প্রকৃত ঘটনা আমার জানা নেই। দেখলাম, মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, তিনি আছেন। পুলিশ চেষ্টা করছে।
প্রথম আলো: আপনি কি আশাবাদী যে তাঁকে পাওয়া যাবে।
তোফায়েল আহমেদ: এর বেশি আমি বলতে পারব না। তিনি ওয়েস্টিন হোটেলের হেলথ ক্লাবে যেতেন। আমিও মাঝেমধ্যে যেতাম। আমার সঙ্গে তাঁর দেখা হতো। জানাশোনা ছিল। আমরা তো অবশ্যই আশা করব, স্বাভাবিকভাবে তিনি ফিরে আসবেন।
প্রথম আলো: সিটি নির্বাচনে কোনো কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এক মন্ত্রী যেকোনো মূল্যে জিততে চাইছেন।
তোফায়েল আহমেদ: আমরা তো কেউ প্রচারণায় যাইনি, গণসংযোগ করি না। আপনি যাঁর নাম নেননি, সেই মাননীয় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি ‘যেকোনো মূল্যে’ কথাটা কর্মীদের কাছে ব্যাখ্যা দেন। কারচুপি নয়, প্রচারণায় কঠোর পরিশ্রমের অর্থে বলেছেন। একই কথা অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদও বলেছেন। ড. এমাজউদ্দীন যেকোনো মূল্যে বিজয় ছিনিয়ে আনার কথা বলেছেন। মোশাররফ তো আর বিজয় ছিনিয়ে আনতে চাননি। নির্বাচনই হলো না, অথচ এমাজউদ্দীন নির্বাচনে জিতে তার তিন মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের কথাও বলছেন।
প্রথম আলো: গত ৬ বছরের উন্নয়নের এমন কি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে?
তোফায়েল আহমেদ: হরতাল-অবরোধ সত্ত্বেও যুগান্তকারী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এগিয়ে চলছে। গ্রামগুলো দ্রুত রূপান্তরিত হচ্ছে শহরে। ক্রমাগত প্রমাণিত হয়ে চলছে যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যেটা করতে চান, সেটা তিনি করে দেখাতে পারেন। তাঁর মধ্যে সন্দেহাতীত এক অসাধারণ দৃঢ়তা ও সংকল্প রয়েছে। পদ্মা সেতু, গভীর সমুদ্রবন্দর, তেল শোধনাগার, কনটেইনার টার্মিনাল, গ্যাস আমদানির জন্য এলএনজি ভাসমান টার্মিনাল, মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ইত্যাদি সরকারের বৃহৎ অগ্রাধিকার প্রকল্প, আর এসব প্রকল্প যথাসময়ে সম্পন্ন হবেই।
বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবেই। এলডিসি টপকে আমরা পরিণত হব উন্নয়নশীল দেশে। মন্দায় আক্রান্ত বিশ্ব অবাক হয়ে দেখেছে বাংলাদেশের জিডিপি ৬ ভাগের বেশি, এবারেও তা বজায় থাকবে। গোল্ডম্যান স্যাক্স, জেপি মরগ্যান প্রভৃতি নামী সংস্থার পূর্বাভাসে বাংলাদেশ এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার নাম। এমনকি বিশ্বব্যাংকও বলেছে, মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে তারা অংশীদার হতে প্রস্তুত। কিছু গম আমদানি লাগে; অন্যথায় আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, এমনকি আমাদের সুগন্ধি চাল রপ্তানি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তদুপরি এবারে তিন লাখ টন গম বেশি উৎপন্ন হয়েছে। তার মানে গম কেনাটাও বন্ধ হয়ে যাবে। ১৯৭২-৭৩ সালে আমাদের রপ্তানি ছিল ৩৪৮ মিলিয়ন ডলার, সেটা বেড়ে এখন ৩০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। এ বছরে হবে ৩২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে আমরা যখন ৫০ বছর পূর্তি করব, তখন আমাদের রপ্তানি হবে ৭০ বিলিয়নের বেশি, যার মধ্যে পোশাকেই থাকবে ৫০ বিলিয়ন ডলার। এটা লক্ষণীয় যে, পাকিস্তানের রপ্তানি কিন্তু ২৪ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারেরও কম। আমাদের তা থেকে দ্বিগুণেরও বেশি, ২৩ বিলিয়ন। পাকিস্তানের রেমিট্যান্স ১০ বিলিয়ন, আমাদের ১৫ বিলিয়ন। সামাজিক খাতের সব সূচকে পাকিস্তানের এবং কিছু ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে আমরা ওপরে। ২০০৯ সালে আমরা যখন ক্ষমতা নিলাম, তখন আমাদের মোট রপ্তানি ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলার, সেটা এখন দ্বিগুণের বেশি। রেমিট্যান্স ছিল চার-পাঁচ বিলিয়ন ডলার, সেটা এখন বেড়ে তিন গুণ। রিজার্ভ ছিল পাঁচ-ছয় বিলিয়ন ডলার, সেটা এখন ২৩ বিলিয়ন ডলার। এই হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলের একটি চকিত উন্নয়ন চিত্র। তিনি এভাবেই দেশটাকে এগিয়ে নিচ্ছেন। বাংলাদেশের জন্য ২০১৪ সাল ছিল একটি ‘সোনালি বসন্ত’; বেগম খালেদা জিয়া যাকে বাধাগ্রস্ত করতে গিয়েও বিফল হয়েছেন।
আমি সম্প্রতি শেখ হাসিনাকে একটি বার্তা পাঠিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম। নেত্রী, কংগ্রাচুলেসন্স। তিনি দয়া করে তাতে সাড়া দেন। তবে বুঝতে না পেরে জানতে চান, কেন? আমি বললাম, দুটি কারণে। প্রথমত, আপনাকে অভিনন্দন এ কারণে যে অবশেষে আপনি বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছেন। দ্বিতীয়ত, তাঁকে আপনি তাঁর কার্যালয় থেকে বাসভবনে পাঠাতে পেরেছেন। এটা আপনার বিজয়।
প্রথম আলো: আমরা আপাতত একটি দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু তার স্থায়িত্ব কতটুকু?
তোফায়েল আহমেদ: শেখ হাসিনার কারণেই বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার হলো। অন্য কেউ এটা করতে পারত না। বিশ্বের অনেক দেশ নিজেরা ফাঁসি দেয়, আমরা দিলে বিবৃতি দেয়। এই দ্বৈত নীতি শেখ হাসিনার মধ্যে নেই। বঙ্গবন্ধু চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। একবার নিলে ফাঁসির মঞ্চে যেতে হলেও পেছাতেন না, ঠিক সেই একই তেজস্বিতা প্রদর্শন করে চলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনি যে স্থিতিশীলতা চাইছেন, সেটা আমার মনে হয় ২০১৯ পর্যন্তই টিকে যাবে। কারণ বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর লন্ডনপ্রবাসী পুত্র নিশ্চয় উপলব্ধি করেছেন যে এই তথাকথিত আন্দোলন করে শেখ হাসিনার যেমন পতন ঘটানো যাবে না, তেমনি তাঁর কাছ থেকে কিছু আদায়ও করা যাবে না। এই শিক্ষা তাঁরা লাভ করেছেন।
প্রথম আলো: তাহলে গণতন্ত্র বিসর্জন দিয়ে উন্নয়ন করাই আপনাদের নীতি?
তোফায়েল আহমেদ: আমরা বিশ্বায়ন ও উদারীকরণ যুগে বাস করি, অবশ্যই গণতন্ত্রকে সম্মান করি। আবার একই সঙ্গে লক্ষ্যে অটল থেকে বাংলাকে শস্য-শ্যামলা-সুজলা-সুফলা তথা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় রূপান্তর করব। আগে আপনি বিএনপিকে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আচরণ করতে বলুন। তখন এ ধরনের সব প্রশ্ন আসবে। শেষ কথা হলো এই যে,১৯৮১ সালে আমরা আওয়ামী লীগের পতাকা শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। সেই পতাকা হাতে তিনি আওয়ামী লীগকে সাজিয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগেই তিনি ২০২১ রূপকল্প নির্দিষ্ট করেছিলেন, সেই গন্তব্যে তিনি পৌঁছাবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
প্রথম আলো: তার মানে ২০১৯ সালের নির্বাচনেও আপনারা জিতবেন বলে আপনি এখনই আস্থা ব্যক্ত করছেন।
তোফায়েল আহমেদ: হ্যাঁ (হাসি) আপনি তো সাংঘাতিক সাংবাদিক!
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
তোফায়েল আহমেদ: ধন্যবাদ।
No comments