জীবন দিলেও ভল্টের চাবি দেননি ওয়ালিউল্লাহ by আলাউদ্দিন আরিফ
জীবন
দিয়েছেন কিন্তু ভল্টের চাবি দেননি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক আশুলিয়ার কাঠগড়া
শাখার ম্যানেজার ওয়ালিউল্লাহ। তিনি জীবন দিয়ে ব্যাংকের সম্পদ রক্ষা করে
গেছেন। কিন্তু বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে দেখা যায়
তার দেড় বছরের ছেলে শ্রাবণকে কোলে নিয়ে অঝোরে কাঁদছেন স্ত্রী মোখলেসা
খাতুন। ফুটফুটে ছোট্ট শিশুটি মায়ের কোলে দুষ্টমি করছে। তার বাবা বেঁচে নেই
এটুকু বোঝার বয়স তার হয়নি। ওয়ালিউল্লাহর (৪৫) তিন মেয়ে এক ছেলের মধ্যে
শ্রাবণ সবার ছোট।
বুধবার তিনিসহ ৮ জনের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এদের মধ্যে ৭ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা হলেন- ম্যানেজার ওয়ালিউল্লাহ, ব্যাংকের গ্রাহক শাহাবুদ্দীন, নূর মোহাম্মদ, পাশের টেইলার্সের দোকানি জমির উদ্দিন, ক্রোকারিজের দোকানি মনির হোসেন, নিরাপত্তাকর্মী ইব্রাহিম মণ্ডল ও গানম্যান কাজী বদরুল আলম। গণপিটুনিতে নিহত সন্দেহভাজন অজ্ঞাত এক ডাকাতের লাশ মর্গে পড়ে আছে। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তার লাশ নিতে কিংবা শনাক্ত করতে কেউ হাসপাতালের মর্গে যায়নি। নিহত ৮ জনের মধ্যে নূর মোহাম্মদ নামে কাঠগোলা বাজারের চাল ব্যবসায়ীর শরীরে শটগানের গুলি ছিল। অপর লাশগুলোর সবই ছুরিকাঘাতজনিত মৃত্যু। তাদের প্রত্যেকের বুকে, পেটে, হাতেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারাল অস্ত্রের আঘাত ছিল বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এ কে এম শফিউজ্জামান জানান।
লাশ নেয়ার সময় ওয়ালিউল্লাহর স্ত্রী মোখলেসা আহাজারি করতে করতে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি এখন এই ৪ ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব? সন্তানদের লেখাপড়া ও থাকা-খাওয়ার খরচ কে জোগাবে। সংসারের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন ওয়ালিউল্লাহ। মোখলেসা চোখের পানি ছেড়ে বলেন, তাদের বড় মেয়ে অভি সাভারের নামাপাড়ার একটি স্কুলে ১০ শ্রেণীর ছাত্রী। মেঝ মেয়ে পপি পড়ছে তৃতীয় শ্রেণীতে। আর ছোট মেয়ে ঐশির বয়স মাত্র তিন বছর। স্বামী হারানোর শোকের পাশাপাশি সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন মোখলেসা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে ওয়ালিউল্লার লাশ গ্রহণ করেন তার বড়ভাই নূরুল আলম। তিনি জানান, ডাকাতের হামলা পুরো পরিবারটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কালিয়াকৈর শাখার ম্যানেজার আছাদুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, ওয়ালিউল্লাহ ছিলেন ব্যাংকের একজন স্মার্ট কর্মকর্তা। তিনি খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে ব্যাংকের কাজ করতেন। এ শাখায় শুরু থেকেই ম্যানেজার ছিলেন তিনি। এ শাখা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে মিরপুর ও সাভার শাখায় কাজ করেন তিনি। সাভার শাখার নির্বাহী অফিসার প্রশান্ত রায় বলেন, ওয়ালিউল্লাহ সহকর্মী হিসেবে ছিলেন আদর্শ ও দায়িত্ববান অফিসার। এ কারণেই তিনি জীবন দিয়েছেন তবুও ভল্টের চাবি দেননি। তিনি জীবন দিয়ে ব্যাংকের সম্পদ রক্ষা করেছেন।
শাহাবুদ্দীন : কাঠগড়া বাজারের প্রিন্টিং প্রেস ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দীন মোল্লা পলাশের লাশ গ্রহণ করেন তার ভাগ্নে রোকুজ্জামান। তিনি জানান, কাঠগড়া বাজারে গ্লোরী স্পেশাল প্রিন্টিং প্রেস নামে পলাশের একটি ছাপাখানা আছে। ঢাকার গোপীবাগ এলাকায় তার বাসা। গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার লক্ষণদিয়া গ্রামে। পলাশের বাবার নাম শামসুদ্দীন মোল্লা। নিহতের স্ত্রী নাজনীন জানান, তাদের কোনো সন্তান নেই। ঘটনার সময় তিনি ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যান।
নূর মোহাম্মদ : নিহত নূর মোহাম্মদের বাবার নাম কাশেম আলী বেপারি। কাঠগড়া বাজারে মেঘনা রাইস এজেন্সি নামে তার একটি চালের আড়ৎ আছে। টাকা জমা দিতে গিয়েছিলেন তিনি। কাশেম আলী বেপারির লাশ গ্রহণ করেন ভাই আবদুর রহমান। তিনি জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানার চরভাঙা গ্রামে।
জমির উদ্দিন : অপর নিহত জমির উদ্দিন সর্দার ব্যাংক ভবনের নিচতলায় একটি টেইলার্সের কর্মী। তার বাড়ি আশুলিয়ার জহর চান্দ্রা এলাকায়। বাবার নাম মখদুম সর্দার। ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ার সময় জমির এগিয়ে এলে জমিরের পেটে ছুরিকাঘাত করে। এতে জমিরের নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায় এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
মনির হোসেন : নিহত মনির হোসেন ছিলেন কাঠগড়া বাজারের নিউ স্টার ক্রোকারিজ নামে অ্যালুনিয়ামের ব্যবসায়ী। ডাকাতির খবর পেয়ে তিনি তাদের ধরার জন্য এগিয়ে যান। এ সময় ডাকাতরা তার পেটে, বুকের পাশে ছুরিকাঘাত করে। তার লাশ গ্রহণ করেন ছেলে আজিজুল ইসলাম। তাদের বাসা কাঠগড়া সরকার বাড়িতে। গ্রামের বাড়ি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার সিংহরা গ্রামে।
ইব্রাহিম মণ্ডল : নিহত ইব্রাহিম মণ্ডল ছিলেন কমার্স ব্যাংক কাঠগড়া শাখার নিরাপত্তাকর্র্মী। তিনি গুলশানের যমুনা সিকিউরিটিজ কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার আবাদপুর পশ্চিমপাড়ায়।
কাজী বদরুল আলম : সেনাবাহিনীর সাবেক ওয়ারেন্ট অফিসার কাজী বদরুল আলম ছিলেন ব্যাংকের প্রধান নিরাপত্তাকর্মী ও গানম্যান। তার বাবার নাম মৃত আবদুল কুদ্দুস। গ্রামের বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার আমদা গ্রামে। যুমনা সিকিউরিটিজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসএম তাজুল ইসলাম জানান, কাজী বদরুল ও ইব্রাহিম মণ্ডল এক বছর ধরে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন।
বুধবার তিনিসহ ৮ জনের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এদের মধ্যে ৭ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা হলেন- ম্যানেজার ওয়ালিউল্লাহ, ব্যাংকের গ্রাহক শাহাবুদ্দীন, নূর মোহাম্মদ, পাশের টেইলার্সের দোকানি জমির উদ্দিন, ক্রোকারিজের দোকানি মনির হোসেন, নিরাপত্তাকর্মী ইব্রাহিম মণ্ডল ও গানম্যান কাজী বদরুল আলম। গণপিটুনিতে নিহত সন্দেহভাজন অজ্ঞাত এক ডাকাতের লাশ মর্গে পড়ে আছে। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তার লাশ নিতে কিংবা শনাক্ত করতে কেউ হাসপাতালের মর্গে যায়নি। নিহত ৮ জনের মধ্যে নূর মোহাম্মদ নামে কাঠগোলা বাজারের চাল ব্যবসায়ীর শরীরে শটগানের গুলি ছিল। অপর লাশগুলোর সবই ছুরিকাঘাতজনিত মৃত্যু। তাদের প্রত্যেকের বুকে, পেটে, হাতেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারাল অস্ত্রের আঘাত ছিল বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এ কে এম শফিউজ্জামান জানান।
লাশ নেয়ার সময় ওয়ালিউল্লাহর স্ত্রী মোখলেসা আহাজারি করতে করতে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি এখন এই ৪ ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব? সন্তানদের লেখাপড়া ও থাকা-খাওয়ার খরচ কে জোগাবে। সংসারের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন ওয়ালিউল্লাহ। মোখলেসা চোখের পানি ছেড়ে বলেন, তাদের বড় মেয়ে অভি সাভারের নামাপাড়ার একটি স্কুলে ১০ শ্রেণীর ছাত্রী। মেঝ মেয়ে পপি পড়ছে তৃতীয় শ্রেণীতে। আর ছোট মেয়ে ঐশির বয়স মাত্র তিন বছর। স্বামী হারানোর শোকের পাশাপাশি সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন মোখলেসা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে ওয়ালিউল্লার লাশ গ্রহণ করেন তার বড়ভাই নূরুল আলম। তিনি জানান, ডাকাতের হামলা পুরো পরিবারটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কালিয়াকৈর শাখার ম্যানেজার আছাদুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, ওয়ালিউল্লাহ ছিলেন ব্যাংকের একজন স্মার্ট কর্মকর্তা। তিনি খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে ব্যাংকের কাজ করতেন। এ শাখায় শুরু থেকেই ম্যানেজার ছিলেন তিনি। এ শাখা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে মিরপুর ও সাভার শাখায় কাজ করেন তিনি। সাভার শাখার নির্বাহী অফিসার প্রশান্ত রায় বলেন, ওয়ালিউল্লাহ সহকর্মী হিসেবে ছিলেন আদর্শ ও দায়িত্ববান অফিসার। এ কারণেই তিনি জীবন দিয়েছেন তবুও ভল্টের চাবি দেননি। তিনি জীবন দিয়ে ব্যাংকের সম্পদ রক্ষা করেছেন।
শাহাবুদ্দীন : কাঠগড়া বাজারের প্রিন্টিং প্রেস ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দীন মোল্লা পলাশের লাশ গ্রহণ করেন তার ভাগ্নে রোকুজ্জামান। তিনি জানান, কাঠগড়া বাজারে গ্লোরী স্পেশাল প্রিন্টিং প্রেস নামে পলাশের একটি ছাপাখানা আছে। ঢাকার গোপীবাগ এলাকায় তার বাসা। গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার লক্ষণদিয়া গ্রামে। পলাশের বাবার নাম শামসুদ্দীন মোল্লা। নিহতের স্ত্রী নাজনীন জানান, তাদের কোনো সন্তান নেই। ঘটনার সময় তিনি ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যান।
নূর মোহাম্মদ : নিহত নূর মোহাম্মদের বাবার নাম কাশেম আলী বেপারি। কাঠগড়া বাজারে মেঘনা রাইস এজেন্সি নামে তার একটি চালের আড়ৎ আছে। টাকা জমা দিতে গিয়েছিলেন তিনি। কাশেম আলী বেপারির লাশ গ্রহণ করেন ভাই আবদুর রহমান। তিনি জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানার চরভাঙা গ্রামে।
জমির উদ্দিন : অপর নিহত জমির উদ্দিন সর্দার ব্যাংক ভবনের নিচতলায় একটি টেইলার্সের কর্মী। তার বাড়ি আশুলিয়ার জহর চান্দ্রা এলাকায়। বাবার নাম মখদুম সর্দার। ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ার সময় জমির এগিয়ে এলে জমিরের পেটে ছুরিকাঘাত করে। এতে জমিরের নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায় এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
মনির হোসেন : নিহত মনির হোসেন ছিলেন কাঠগড়া বাজারের নিউ স্টার ক্রোকারিজ নামে অ্যালুনিয়ামের ব্যবসায়ী। ডাকাতির খবর পেয়ে তিনি তাদের ধরার জন্য এগিয়ে যান। এ সময় ডাকাতরা তার পেটে, বুকের পাশে ছুরিকাঘাত করে। তার লাশ গ্রহণ করেন ছেলে আজিজুল ইসলাম। তাদের বাসা কাঠগড়া সরকার বাড়িতে। গ্রামের বাড়ি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার সিংহরা গ্রামে।
ইব্রাহিম মণ্ডল : নিহত ইব্রাহিম মণ্ডল ছিলেন কমার্স ব্যাংক কাঠগড়া শাখার নিরাপত্তাকর্র্মী। তিনি গুলশানের যমুনা সিকিউরিটিজ কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার আবাদপুর পশ্চিমপাড়ায়।
কাজী বদরুল আলম : সেনাবাহিনীর সাবেক ওয়ারেন্ট অফিসার কাজী বদরুল আলম ছিলেন ব্যাংকের প্রধান নিরাপত্তাকর্মী ও গানম্যান। তার বাবার নাম মৃত আবদুল কুদ্দুস। গ্রামের বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার আমদা গ্রামে। যুমনা সিকিউরিটিজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসএম তাজুল ইসলাম জানান, কাজী বদরুল ও ইব্রাহিম মণ্ডল এক বছর ধরে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন।
No comments