বিএনপির প্রার্থীরা এখনও মাঠছাড়া by হাবিবুর রহমান খান, মতিন আব্দুল্লাহ ও বকুল আহমেদ
আপডেটঃ শুক্রবার (১০ এপ্রিল)
বিকাল ৩টা। কামরাঙ্গীরচরে ঝাউচর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন ঢাকা
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর
প্রার্থী শহিদুল হক। এলাকার বাসিন্দারাও তার প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। জমে
ওঠেছিল নির্বাচনী আড্ডা। কিন্ত বিধিবাম। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী প্রচার
চালাচ্ছেন এমন খবরে নড়েচড়ে বসে থানা পুলিশ। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে
আসে ২০-২৫ জন পুলিশের একটি দল। অতঃপর একযোগে ধাওয়া। গ্রেফতারের ভয়ে
ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় সবাই। নির্বাচনী মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন প্রার্থী শহিদুল হকও।
একইদিন সন্ধ্যা ৭টায় কামরাঙ্গীরচর করিমাবাদ এলাকায় প্রচারণায় নামেন ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী অ্যাডভোকেট রাশেদ আলম খোকন। খবর পেয়ে গ্রেফতারের জন্য সেখানেও তড়িঘড়ি উপস্থিত হয় কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশের একটি টিম। গ্রেফতার এড়াতে কাউন্সিলর প্রার্থী খোকনসহ অন্যারা নৌকায় বুড়িগঙ্গা নদী পার হয়ে দ্রুত কেরানীগঞ্জে চলে যান।
এভাবে শুধু কাউন্সিলর প্রার্থী শহিদুল হক আর খোকন নয়, তিন সিটিতে বিএনপি সমর্থিত বেশিরভাগ প্রার্থী এখন নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছেন না। প্রতিনিয়ত পুলিশের তাড়া খেয়ে তাদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। উপরন্তু গ্রেফতারের নামে বাসায় গিয়েও প্রতি রাতে পুলিশ হানা দিচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে পরিবারের সদস্যদেরও নানাভাবে শাসানো হচ্ছে। এমনকি ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অনেক প্রার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে যুগান্তর টিমের সরেজমিন অনুসন্ধান এবং বিএনপি ও স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রার্থীদের হয়রানি ও ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘কোনো প্রার্থী যদি আমাদের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করে বলতে পারেন অমুকে আমাকে হয়রানি করেছে বা ভয় দেখিয়েছে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’
সূত্র জানায়, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা থাকার কারণে বিএনপি সমর্থিত বেশিরভাগ কাউন্সিলর প্রার্থী প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাতে পারছেন না। মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে রাত-দিন পার করতে হচ্ছে আত্মগোপনে। গোপনে যাতে কেউ বাসায়ও আসতে না পারেন সেজন্য প্রার্থীর বাড়ির সামনে ও আশপাশে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। নিজে নামতে না পেরে বাধ্য হয়েই আত্মীয়-স্বজন আর নিজ সমর্থকদের দিয়ে প্রচারণার কাজ চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার সরকারদলীয় ক্যাডার ও ভীতি সৃষ্টি করার জন্য পুলিশ সদস্যরা পিছু নেয়ায় পরিবারের সদস্যরা সেভাবে নির্বিঘ্নে জোরেশোরে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে প্রচারে সরকার সমর্থক প্রার্থীদের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে পড়ছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের কয়েকজন যুগান্তরকে বলেন, অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে- ‘প্রার্থীদের হাত-পা বেঁধে পানিতে নামিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে সাঁতার কাটো।’ নির্বাচন কমিশন মুখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বললেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখাতে পারেনি। এতে প্রমাণিত হয়, নির্বাচন কমিশনের কথা হয় পুলিশ শুনছে না, না হয় নির্বাচন কমিশন আইওয়াশ স্টাইলে এভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার করে নিতে চাইছে।
৫৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী শহিদুল হকের ভাগ্নে চকবাজারের ডালপট্টি রোডের কসমেটিকস ব্যবসায়ী মো. সায়েম যুগান্তরকে বলেন, প্রতিদিন বিকাল, রাতে পুলিশ মামাকে বাসায় খুঁজতে আসে। কোথাও প্রচারণায় গেলে সেখানেও মামাকে ধরতে পুলিশ হানা দেয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে স্বতন্ত্র থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মো. নাঈম। যদিও বিএনপির সমর্থনপ্রাপ্ত প্রার্থী এমএ বাতেন ৯ তারিখে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। দলীয় সমর্থন না পেলেও এখন বিএনপির প্রার্থী মো. নাঈমই। অথচ তিনিও এলাকায় কোনো ধরনের প্রকাশ্য নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারছেন না। প্রতিদিনই তার বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালায়। তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগও করতে পারছেন না। ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটি তাকে সবসময় বন্ধ রাখতে হয়। গোপনে ভিন্ন নম্বর ব্যবহার করে কিছুটা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
নাঈমের স্ত্রী (নাম বলতে চাননি) সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রতিদিন দুই-তিন বার করে বাসায় পুলিশ হানা দিচ্ছে। সে বাসায়ই আসতে পারছে না। কতদিন হয়ে গেল তার চেহারা দেখিনি। সবসময়ই বাসার আশপাশে পুলিশের আনাগোনা লেগে থাকে।
এসব ব্যাপারে জানতে কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মহসিন আলম সোমবার যুগান্তরকে বলেন, কামরাঙ্গীরচর ৫৫ ও ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কাউন্সিলর প্রার্থীর নামে একাধিক মামলা রয়েছে। তারা পলাতক আসামি। তাদের ধরতে পুলিশ নিয়মিত বাসায় যাচ্ছে। যেখানে তাদের অবস্থান জানতে পারছে সেখানে যাচ্ছে। কেননা, এটা পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তার বাসায় বা তার কোনো কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন।
বাড্ডা থানার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা উত্তরের ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী এজিএম শামসুল হক। রাজনৈতিক ৮ মামলা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। ৫ মামলায় জামিনে আছেন, তিনটিতে জামিন পাননি। তিনি বলেন, তার বাড়িতে প্রতিদিন কয়েকবার করে পুলিশ হানা দিচ্ছে। মাঝে মাঝে গেটের সামনেই বসে থাকে পুলিশ।
২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্র্থী এজিএম শামসুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে গিয়েও পুলিশ হয়রানি করছে। রোববার বিকালে মোল্লাপাড়ার আমার কর্মী ফারুক, আমান ও আফসারের বাসায় গিয়ে ওদের খোঁজাখুঁজি করেছে পুলিশ। জাতীয়তাবাদী চালক দলের নেতা জুয়েলকে রোববার গাড়িতে করে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এজিএম শামসুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘কর্মী-সমর্থকদের বাড়ির সামনে গিয়ে যদি পুলিশ মহড়া দেয় তাহলে তারা নির্বাচনী প্রচারণা চালাবে কী করে?’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তাদের আতংকগ্রস্ত করতেই পুলিশ এই কৌশল নিয়েছে।’ তবে হয়রানির বিষয়টি অস্বীকার করেন বাড্ডা থানার ওসি এমএ জলিল। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘গত ১৫ দিনে ওনাদের (কাউন্সিলর প্রার্থী) কোনো লোকজনকে হয়রানি কিংবা গ্রেফতার করা হয়নি। যাদের বিরুদ্ধে মামলা ও ওয়ারেন্ট আছে পুলিশ তাদের তো খুঁজবেই। যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয় না। হয়রানিও করা হয় না।’ ঢাকা উত্তরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবুল মেছেরের বাড়ির সামনে ও আশপাশে পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে। বাড়ির ভেতরে গিয়ে অভিযান না চালালেও বাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় পুলিশের গাড়ি। এতে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে সংশ্লিষ্টরা ওই বাড়িতে ব্যানার-ফেস্টুন আনতে গিয়েও আতংকে থাকেন। আবুল মেছের যুগান্তরকে জানান, রাজনৈতিক মামলা জালে আটকে তিনি এখনও প্রকাশ্যে প্রচারণায় নামতে পারেননি। শুধু তার বাড়ির সামনেই নয়, কর্মী-সমর্থকদের অনেকের বাড়ির সামনেও পুলিশ মহড়া বাড়িয়ে আতংক সৃষ্টি করছে। ঢাকা উত্তরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ফয়েজ আহমেদ রাজনৈতিক মামলায় আত্মগোপনে থাকায় স্ত্রী আলপনা আহমেদ নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। তবে তার বাড়ির সামনেও পুলিশের মহড়া। এজন্য কর্মীরা তার বাড়ি যেতে ভয় পাচ্ছেন।
ঢাকা দক্ষিণের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী গোলাম হোসেন যুগান্তরকে বলেন, তার বিরুদ্ধে ১২টি রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১১টিতে তিনি জামিনে আছেন। একটিতে জামিন না পাওয়ায় তিনি গ্রেফতারের ভয়ে নির্বাচনী এলাকায় ঢুকতে পারছেন না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি এলাকায় নেই। কর্র্মীরা প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে বাড়িতে গিয়ে পুলিশ তাকে খুঁজছে। গ্রেফতার আতংকে তিনিসহ তার কর্মী-সমর্থকরা প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাতে ভয় পাচ্ছেন।’
দক্ষিণের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শামসুল হুদা কাজলের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা বর্তমানে বিচারাধীন আছে। তার বিরুদ্ধে মোট মামলার সংখ্যা ১৬। এতগুলো মামলা মাথায় নিয়ে তিনি আত্মগোপনে আছেন। তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগের চেষ্টা করলে মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। এজন্য তার মন্তব্য জানা যায়নি। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল ইসলামের মামলা আছে ২১টি। দক্ষিণের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী খাজা হাবিবুল্লাহ হাবিবের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাসহ তিনটি মামলা আছে। এভাবে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৯৩টি ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থী মো. মীর হোসেন মীরু। তার বিরুদ্ধে ৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি মামলা বিচারাধীন, ৩টি তদন্তাধীন। তবে গাড়ি ও মানুষ পোড়ানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি আরও অন্তত ৬টি মামলা দেয়া হয়। এসব মামলায় যে কোনো সময় তিনি গ্রেফতার হতে পারেন। এ আশংকায় এলাকায় আসতে পারছেন না মীরু। প্রচার-প্রচারণাও অংশ নিতে পারছেন না। এ বিষয়ে মীর হোসেন মীরু সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, ‘পুলিশি হয়রানির কারণে এলাকায় যেতে পারছি না। মীরুকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সালাম যুগান্তরকে সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘মীর হোসেন মীরুকে আমরা খুঁজছি। এলাকায় না থাকায় গ্রেফতার করতে পারছি না। তাকে পাওয়ামাত্র গ্রেফতার করা হবে। তবে যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই- তাদের কোনো ভয় নেই।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে জাতীয় পার্টি সমর্থিত হাজী মো. মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিপক্ষ প্রার্থী আমার লোকজনকে প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আমার পোস্টার কে বা কারা সরিয়ে ফেলছে। অথচ ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীরা আচরণবিধি লংঘন করে দেয়ালে পোস্টার লাগাচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তা কোনো ব্যবস্থা নেননি। উল্টো নির্বাচনের প্রথমদিকে আমার বিরুদ্ধে দেয়ালে পোস্টার লাগানোর অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি বাধা মুক্ত ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণা চালাতে চাই।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শিরিন জাহান বলেন, ‘নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে কে বা কারা প্রতিনিয়ত ফোনে হুমকি দিচ্ছে। হুমকিদাতারা আমাকে বলেছে নির্বাচন থেকে সরে যান, নইলে খবর আছে। প্রায় হুমকি দেয়ায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দিয়েছি।’ এ বিষয়ে থানায় কোনো ডায়েরি করেছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভয়ে জিডি করিনি। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে আছি।’
৩১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি থেকে সমর্থন নিয়ে মাঠে প্রচারণায় নেমেছেন হাজী মো. আবদুর রাজ্জাক। এই প্রার্থী অভিযোগ করেন, ওয়ার্ডের যেসব ভোটার আমার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাদের বাসায় গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। বলছেন, বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ নিও না। ফলে ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’ তিনি বলেন, পুলিশ বিএনপি কর্মীদের ধরে বিভিন্ন মামলার অজ্ঞাতনামা আসামি দেখিয়ে চালান দিয়ে দিচ্ছে। এই কারণে সাধারণ মানুষ সমর্থন জানালেও প্রচারণায় নামতে ভয় পাচ্ছেন।
এমএ সাহেদ মন্টু দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। তিনি এই ওয়ার্ডের বিগত দুই টার্মে ১৭ বছর কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেছেন। গত জানুয়ারির ১৪ তারিখে নাশকতার মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে আছেন। তার পক্ষে মাঠে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন তার স্ত্রী নাসিম বানু। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের পরিচালক সালেহ জামান সেলিম তাদের নেতাকর্মীদের প্রচারণায় বাধা সৃষ্টি করছেন। তিনি বলেন, ‘সেলিম বলছেন প্রশাসন আমরা টাকা দিয়ে কিনে ফেলেছি। বিজয় আমাদেরই হবে। আমার সঙ্গে ওয়ার্ডের যারা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদেরও তার লোকজন নানাভাবে হয়রানি করছেন। হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।’
এদিকে এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সালেহ জামান সেলিম বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। বরং বিএনপি প্রার্থীসহ তাদের কর্মীরা আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে।’
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছে চট্রগ্রামেও গ্রেফতার আতংক মাঠে নেই ১৫ কাউন্সিলর প্রার্থী :
কেস স্টাডি ১ : ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থন নিয়ে পুনরায় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি ও বর্তমান কাউন্সিলর দিদারুর রহমান লাবু (রেডিও)। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলা রয়েছে। দীর্ঘ ২ মাস ধরে তিনি আÍগোপনে রয়েছেন। রোববার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘দিনে তো নয়, পুলিশের ভয়ে রাতে প্রচারে নেমেও রেহাই পাচ্ছি না। এ অবস্থায় কিভাবে যে ভোটারের কাছে যাব তা বুঝতে পারছি না।’
কেস স্টাডি ২ : ৩৭ নম্বর হালিশহর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড বিএনপি নেতা হাসান মুরাদ। তিনি এবারও ওই ওয়ার্ড থেকে টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তার বিরুদ্ধে বন্দর ও ইপিজেড থানায় রয়েছে তিনটি মামলা। হাসান মুরাদ যুগান্তরকে বলেন, ‘বন্দর থানায় যেন আমি ছাড়া আর কোনো মামলার আসামি নেই। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর থেকে পুলিশ আমার বাসা-বাড়িতে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েছে। ফলে ঠিকভাবে ভোটারদের কাছে গিয়ে প্রচারণা চালাতে পারছি না।’
দিদারুর রহমান লাবু কিংবা হাসান মুরাদই শুধু নন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত অন্তত ১৫ কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে ৭৮টি মামলা। এসব মামলায় গ্রেফতার আতংকে ভুগছেন তারা। দিনের বেলায় প্রচারণা চালাতে না পেরে রাতের বেলায় নামছেন। প্রচারণা চালিয়ে নিজের বাসায় না ফিরে তাদের থাকতে হচ্ছে আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের বাসায়। শুধু এসব প্রার্থীরাই নন, তাদের কর্মী-সমর্থকদেরও হয়রানি করা হচ্ছে। নানা অজুহাতে তাদের আটক করছে পুলিশ। এমন অভিযোগ করে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা বলেন, তাদের সমর্থকদেরও সরকারি দলের নেতাকর্র্মী এবং পুলিশ প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। দিনে প্রচারণা চালালে রাতে ওইসব কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ গ্রেফতারে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।
বিএনপির ৮ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৪২ মামলা : ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহ আলমের (ঘুড়ি) বিরুদ্ধে চকবাজার, খুলশী ও কোতোয়ালি থানায় বিস্ফোরক এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ বিভিন্ন ধারায় ১৮টি মামলা রয়েছে। ১১ জানুয়ারি তিনি গ্রেফতার হন। তিনি কারাগারে থাকায় তার পক্ষে এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন তার স্ত্রী, ছেলে এবং আত্মীয়-স্বজন। ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুস সাত্তার সেলিমের (রেডিও) বিরুদ্ধে কোতোয়ালি এবং আকবর শাহ থানাসহ বিভিন্ন থানায় রয়েছে ৮টি মামলা। দীর্ঘদিন ধরে গ্রেফতারের ভয়ে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। রোববার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘পুলিশ আমাকে তো প্রচারণা চালাতে দিচ্ছেই না, আমার নেতাকর্মী যারা প্রচারণা চালাচ্ছে তাদেরও প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। পুলিশ আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিজয়ী করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এ ওয়ার্ডে বিএনপির অপর প্রার্থী জমির আহমদের (ঠেলাগাড়ি) বিরুদ্ধে আকবর শাহ থানায় দায়ের করা বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৫টি মামলা সিএমএম আদালত এবং মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল বালি (লাটিম)। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশের দায়ের করা তিনটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে তিনি ভোটারদের কাছে গিয়ে প্রচারণা চালাতে পারছেন না। রোববার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘মামলার কারণে আমি প্রচারণা চালাতে পারছি না। আমার পক্ষে যারা এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছে তাদের পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করার হুমকি দেয়া হচ্ছে। ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের হাসান লিটনের (রেডিও) বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশের করা একটি মামলা রয়েছে। তিনিও আত্মগোপনে আছেন।
জামায়াতের ৭ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৩৬ মামলা : চসিক নির্বাচনে ৮টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জামায়াতের ৮ প্রার্থী। ৮ প্রার্থীর মধ্যে ৭ জনই মামলার আসামি। জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের অধিকাংশই মামলায় জামিনে থাকলেও পুলিশ তাদের নতুন মামলা দিয়ে গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে প্রচারণা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান যুগান্তরকে বলেন, পুলিশ সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে এলাকায় প্রচারণায় পুলিশ এবং সরকারি দল মিলেমিশে বাধা দিচ্ছে।
নগর পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো মামলার আসামি হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালাবে, এটাই স্বাভাবিক। তিনি কোন দলের নেতা, কি পদে নির্বাচন করছেন এসব বিষয় পুলিশের দেখার সুযোগ নেই। তবে অহেতুক বিএনপি-জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীকে হয়রানি, বাসায় অভিযান বা নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ সঠিক নয়।
একইদিন সন্ধ্যা ৭টায় কামরাঙ্গীরচর করিমাবাদ এলাকায় প্রচারণায় নামেন ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী অ্যাডভোকেট রাশেদ আলম খোকন। খবর পেয়ে গ্রেফতারের জন্য সেখানেও তড়িঘড়ি উপস্থিত হয় কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশের একটি টিম। গ্রেফতার এড়াতে কাউন্সিলর প্রার্থী খোকনসহ অন্যারা নৌকায় বুড়িগঙ্গা নদী পার হয়ে দ্রুত কেরানীগঞ্জে চলে যান।
এভাবে শুধু কাউন্সিলর প্রার্থী শহিদুল হক আর খোকন নয়, তিন সিটিতে বিএনপি সমর্থিত বেশিরভাগ প্রার্থী এখন নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছেন না। প্রতিনিয়ত পুলিশের তাড়া খেয়ে তাদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। উপরন্তু গ্রেফতারের নামে বাসায় গিয়েও প্রতি রাতে পুলিশ হানা দিচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে পরিবারের সদস্যদেরও নানাভাবে শাসানো হচ্ছে। এমনকি ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অনেক প্রার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে যুগান্তর টিমের সরেজমিন অনুসন্ধান এবং বিএনপি ও স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রার্থীদের হয়রানি ও ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘কোনো প্রার্থী যদি আমাদের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করে বলতে পারেন অমুকে আমাকে হয়রানি করেছে বা ভয় দেখিয়েছে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’
সূত্র জানায়, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা থাকার কারণে বিএনপি সমর্থিত বেশিরভাগ কাউন্সিলর প্রার্থী প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাতে পারছেন না। মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে রাত-দিন পার করতে হচ্ছে আত্মগোপনে। গোপনে যাতে কেউ বাসায়ও আসতে না পারেন সেজন্য প্রার্থীর বাড়ির সামনে ও আশপাশে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। নিজে নামতে না পেরে বাধ্য হয়েই আত্মীয়-স্বজন আর নিজ সমর্থকদের দিয়ে প্রচারণার কাজ চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার সরকারদলীয় ক্যাডার ও ভীতি সৃষ্টি করার জন্য পুলিশ সদস্যরা পিছু নেয়ায় পরিবারের সদস্যরা সেভাবে নির্বিঘ্নে জোরেশোরে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে প্রচারে সরকার সমর্থক প্রার্থীদের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে পড়ছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের কয়েকজন যুগান্তরকে বলেন, অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে- ‘প্রার্থীদের হাত-পা বেঁধে পানিতে নামিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে সাঁতার কাটো।’ নির্বাচন কমিশন মুখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বললেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখাতে পারেনি। এতে প্রমাণিত হয়, নির্বাচন কমিশনের কথা হয় পুলিশ শুনছে না, না হয় নির্বাচন কমিশন আইওয়াশ স্টাইলে এভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার করে নিতে চাইছে।
৫৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী শহিদুল হকের ভাগ্নে চকবাজারের ডালপট্টি রোডের কসমেটিকস ব্যবসায়ী মো. সায়েম যুগান্তরকে বলেন, প্রতিদিন বিকাল, রাতে পুলিশ মামাকে বাসায় খুঁজতে আসে। কোথাও প্রচারণায় গেলে সেখানেও মামাকে ধরতে পুলিশ হানা দেয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে স্বতন্ত্র থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মো. নাঈম। যদিও বিএনপির সমর্থনপ্রাপ্ত প্রার্থী এমএ বাতেন ৯ তারিখে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। দলীয় সমর্থন না পেলেও এখন বিএনপির প্রার্থী মো. নাঈমই। অথচ তিনিও এলাকায় কোনো ধরনের প্রকাশ্য নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারছেন না। প্রতিদিনই তার বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালায়। তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগও করতে পারছেন না। ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটি তাকে সবসময় বন্ধ রাখতে হয়। গোপনে ভিন্ন নম্বর ব্যবহার করে কিছুটা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
নাঈমের স্ত্রী (নাম বলতে চাননি) সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রতিদিন দুই-তিন বার করে বাসায় পুলিশ হানা দিচ্ছে। সে বাসায়ই আসতে পারছে না। কতদিন হয়ে গেল তার চেহারা দেখিনি। সবসময়ই বাসার আশপাশে পুলিশের আনাগোনা লেগে থাকে।
এসব ব্যাপারে জানতে কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মহসিন আলম সোমবার যুগান্তরকে বলেন, কামরাঙ্গীরচর ৫৫ ও ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কাউন্সিলর প্রার্থীর নামে একাধিক মামলা রয়েছে। তারা পলাতক আসামি। তাদের ধরতে পুলিশ নিয়মিত বাসায় যাচ্ছে। যেখানে তাদের অবস্থান জানতে পারছে সেখানে যাচ্ছে। কেননা, এটা পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তার বাসায় বা তার কোনো কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন।
বাড্ডা থানার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা উত্তরের ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী এজিএম শামসুল হক। রাজনৈতিক ৮ মামলা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। ৫ মামলায় জামিনে আছেন, তিনটিতে জামিন পাননি। তিনি বলেন, তার বাড়িতে প্রতিদিন কয়েকবার করে পুলিশ হানা দিচ্ছে। মাঝে মাঝে গেটের সামনেই বসে থাকে পুলিশ।
২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্র্থী এজিএম শামসুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে গিয়েও পুলিশ হয়রানি করছে। রোববার বিকালে মোল্লাপাড়ার আমার কর্মী ফারুক, আমান ও আফসারের বাসায় গিয়ে ওদের খোঁজাখুঁজি করেছে পুলিশ। জাতীয়তাবাদী চালক দলের নেতা জুয়েলকে রোববার গাড়িতে করে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এজিএম শামসুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘কর্মী-সমর্থকদের বাড়ির সামনে গিয়ে যদি পুলিশ মহড়া দেয় তাহলে তারা নির্বাচনী প্রচারণা চালাবে কী করে?’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তাদের আতংকগ্রস্ত করতেই পুলিশ এই কৌশল নিয়েছে।’ তবে হয়রানির বিষয়টি অস্বীকার করেন বাড্ডা থানার ওসি এমএ জলিল। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘গত ১৫ দিনে ওনাদের (কাউন্সিলর প্রার্থী) কোনো লোকজনকে হয়রানি কিংবা গ্রেফতার করা হয়নি। যাদের বিরুদ্ধে মামলা ও ওয়ারেন্ট আছে পুলিশ তাদের তো খুঁজবেই। যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয় না। হয়রানিও করা হয় না।’ ঢাকা উত্তরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবুল মেছেরের বাড়ির সামনে ও আশপাশে পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে। বাড়ির ভেতরে গিয়ে অভিযান না চালালেও বাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় পুলিশের গাড়ি। এতে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে সংশ্লিষ্টরা ওই বাড়িতে ব্যানার-ফেস্টুন আনতে গিয়েও আতংকে থাকেন। আবুল মেছের যুগান্তরকে জানান, রাজনৈতিক মামলা জালে আটকে তিনি এখনও প্রকাশ্যে প্রচারণায় নামতে পারেননি। শুধু তার বাড়ির সামনেই নয়, কর্মী-সমর্থকদের অনেকের বাড়ির সামনেও পুলিশ মহড়া বাড়িয়ে আতংক সৃষ্টি করছে। ঢাকা উত্তরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ফয়েজ আহমেদ রাজনৈতিক মামলায় আত্মগোপনে থাকায় স্ত্রী আলপনা আহমেদ নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। তবে তার বাড়ির সামনেও পুলিশের মহড়া। এজন্য কর্মীরা তার বাড়ি যেতে ভয় পাচ্ছেন।
ঢাকা দক্ষিণের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী গোলাম হোসেন যুগান্তরকে বলেন, তার বিরুদ্ধে ১২টি রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১১টিতে তিনি জামিনে আছেন। একটিতে জামিন না পাওয়ায় তিনি গ্রেফতারের ভয়ে নির্বাচনী এলাকায় ঢুকতে পারছেন না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি এলাকায় নেই। কর্র্মীরা প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে বাড়িতে গিয়ে পুলিশ তাকে খুঁজছে। গ্রেফতার আতংকে তিনিসহ তার কর্মী-সমর্থকরা প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাতে ভয় পাচ্ছেন।’
দক্ষিণের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শামসুল হুদা কাজলের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা বর্তমানে বিচারাধীন আছে। তার বিরুদ্ধে মোট মামলার সংখ্যা ১৬। এতগুলো মামলা মাথায় নিয়ে তিনি আত্মগোপনে আছেন। তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগের চেষ্টা করলে মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। এজন্য তার মন্তব্য জানা যায়নি। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল ইসলামের মামলা আছে ২১টি। দক্ষিণের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী খাজা হাবিবুল্লাহ হাবিবের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাসহ তিনটি মামলা আছে। এভাবে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৯৩টি ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থী মো. মীর হোসেন মীরু। তার বিরুদ্ধে ৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি মামলা বিচারাধীন, ৩টি তদন্তাধীন। তবে গাড়ি ও মানুষ পোড়ানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি আরও অন্তত ৬টি মামলা দেয়া হয়। এসব মামলায় যে কোনো সময় তিনি গ্রেফতার হতে পারেন। এ আশংকায় এলাকায় আসতে পারছেন না মীরু। প্রচার-প্রচারণাও অংশ নিতে পারছেন না। এ বিষয়ে মীর হোসেন মীরু সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, ‘পুলিশি হয়রানির কারণে এলাকায় যেতে পারছি না। মীরুকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সালাম যুগান্তরকে সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘মীর হোসেন মীরুকে আমরা খুঁজছি। এলাকায় না থাকায় গ্রেফতার করতে পারছি না। তাকে পাওয়ামাত্র গ্রেফতার করা হবে। তবে যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই- তাদের কোনো ভয় নেই।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে জাতীয় পার্টি সমর্থিত হাজী মো. মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিপক্ষ প্রার্থী আমার লোকজনকে প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আমার পোস্টার কে বা কারা সরিয়ে ফেলছে। অথচ ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীরা আচরণবিধি লংঘন করে দেয়ালে পোস্টার লাগাচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তা কোনো ব্যবস্থা নেননি। উল্টো নির্বাচনের প্রথমদিকে আমার বিরুদ্ধে দেয়ালে পোস্টার লাগানোর অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি বাধা মুক্ত ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণা চালাতে চাই।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শিরিন জাহান বলেন, ‘নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে কে বা কারা প্রতিনিয়ত ফোনে হুমকি দিচ্ছে। হুমকিদাতারা আমাকে বলেছে নির্বাচন থেকে সরে যান, নইলে খবর আছে। প্রায় হুমকি দেয়ায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দিয়েছি।’ এ বিষয়ে থানায় কোনো ডায়েরি করেছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভয়ে জিডি করিনি। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে আছি।’
৩১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি থেকে সমর্থন নিয়ে মাঠে প্রচারণায় নেমেছেন হাজী মো. আবদুর রাজ্জাক। এই প্রার্থী অভিযোগ করেন, ওয়ার্ডের যেসব ভোটার আমার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাদের বাসায় গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। বলছেন, বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ নিও না। ফলে ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’ তিনি বলেন, পুলিশ বিএনপি কর্মীদের ধরে বিভিন্ন মামলার অজ্ঞাতনামা আসামি দেখিয়ে চালান দিয়ে দিচ্ছে। এই কারণে সাধারণ মানুষ সমর্থন জানালেও প্রচারণায় নামতে ভয় পাচ্ছেন।
এমএ সাহেদ মন্টু দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। তিনি এই ওয়ার্ডের বিগত দুই টার্মে ১৭ বছর কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেছেন। গত জানুয়ারির ১৪ তারিখে নাশকতার মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে আছেন। তার পক্ষে মাঠে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন তার স্ত্রী নাসিম বানু। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের পরিচালক সালেহ জামান সেলিম তাদের নেতাকর্মীদের প্রচারণায় বাধা সৃষ্টি করছেন। তিনি বলেন, ‘সেলিম বলছেন প্রশাসন আমরা টাকা দিয়ে কিনে ফেলেছি। বিজয় আমাদেরই হবে। আমার সঙ্গে ওয়ার্ডের যারা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদেরও তার লোকজন নানাভাবে হয়রানি করছেন। হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।’
এদিকে এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সালেহ জামান সেলিম বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। বরং বিএনপি প্রার্থীসহ তাদের কর্মীরা আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে।’
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছে চট্রগ্রামেও গ্রেফতার আতংক মাঠে নেই ১৫ কাউন্সিলর প্রার্থী :
কেস স্টাডি ১ : ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থন নিয়ে পুনরায় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি ও বর্তমান কাউন্সিলর দিদারুর রহমান লাবু (রেডিও)। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলা রয়েছে। দীর্ঘ ২ মাস ধরে তিনি আÍগোপনে রয়েছেন। রোববার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘দিনে তো নয়, পুলিশের ভয়ে রাতে প্রচারে নেমেও রেহাই পাচ্ছি না। এ অবস্থায় কিভাবে যে ভোটারের কাছে যাব তা বুঝতে পারছি না।’
কেস স্টাডি ২ : ৩৭ নম্বর হালিশহর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড বিএনপি নেতা হাসান মুরাদ। তিনি এবারও ওই ওয়ার্ড থেকে টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তার বিরুদ্ধে বন্দর ও ইপিজেড থানায় রয়েছে তিনটি মামলা। হাসান মুরাদ যুগান্তরকে বলেন, ‘বন্দর থানায় যেন আমি ছাড়া আর কোনো মামলার আসামি নেই। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর থেকে পুলিশ আমার বাসা-বাড়িতে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েছে। ফলে ঠিকভাবে ভোটারদের কাছে গিয়ে প্রচারণা চালাতে পারছি না।’
দিদারুর রহমান লাবু কিংবা হাসান মুরাদই শুধু নন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত অন্তত ১৫ কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে ৭৮টি মামলা। এসব মামলায় গ্রেফতার আতংকে ভুগছেন তারা। দিনের বেলায় প্রচারণা চালাতে না পেরে রাতের বেলায় নামছেন। প্রচারণা চালিয়ে নিজের বাসায় না ফিরে তাদের থাকতে হচ্ছে আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের বাসায়। শুধু এসব প্রার্থীরাই নন, তাদের কর্মী-সমর্থকদেরও হয়রানি করা হচ্ছে। নানা অজুহাতে তাদের আটক করছে পুলিশ। এমন অভিযোগ করে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা বলেন, তাদের সমর্থকদেরও সরকারি দলের নেতাকর্র্মী এবং পুলিশ প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। দিনে প্রচারণা চালালে রাতে ওইসব কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ গ্রেফতারে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।
বিএনপির ৮ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৪২ মামলা : ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহ আলমের (ঘুড়ি) বিরুদ্ধে চকবাজার, খুলশী ও কোতোয়ালি থানায় বিস্ফোরক এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ বিভিন্ন ধারায় ১৮টি মামলা রয়েছে। ১১ জানুয়ারি তিনি গ্রেফতার হন। তিনি কারাগারে থাকায় তার পক্ষে এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন তার স্ত্রী, ছেলে এবং আত্মীয়-স্বজন। ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুস সাত্তার সেলিমের (রেডিও) বিরুদ্ধে কোতোয়ালি এবং আকবর শাহ থানাসহ বিভিন্ন থানায় রয়েছে ৮টি মামলা। দীর্ঘদিন ধরে গ্রেফতারের ভয়ে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। রোববার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘পুলিশ আমাকে তো প্রচারণা চালাতে দিচ্ছেই না, আমার নেতাকর্মী যারা প্রচারণা চালাচ্ছে তাদেরও প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। পুলিশ আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিজয়ী করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এ ওয়ার্ডে বিএনপির অপর প্রার্থী জমির আহমদের (ঠেলাগাড়ি) বিরুদ্ধে আকবর শাহ থানায় দায়ের করা বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৫টি মামলা সিএমএম আদালত এবং মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল বালি (লাটিম)। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশের দায়ের করা তিনটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে তিনি ভোটারদের কাছে গিয়ে প্রচারণা চালাতে পারছেন না। রোববার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘মামলার কারণে আমি প্রচারণা চালাতে পারছি না। আমার পক্ষে যারা এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছে তাদের পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করার হুমকি দেয়া হচ্ছে। ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের হাসান লিটনের (রেডিও) বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশের করা একটি মামলা রয়েছে। তিনিও আত্মগোপনে আছেন।
জামায়াতের ৭ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৩৬ মামলা : চসিক নির্বাচনে ৮টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জামায়াতের ৮ প্রার্থী। ৮ প্রার্থীর মধ্যে ৭ জনই মামলার আসামি। জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের অধিকাংশই মামলায় জামিনে থাকলেও পুলিশ তাদের নতুন মামলা দিয়ে গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে প্রচারণা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান যুগান্তরকে বলেন, পুলিশ সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে এলাকায় প্রচারণায় পুলিশ এবং সরকারি দল মিলেমিশে বাধা দিচ্ছে।
নগর পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো মামলার আসামি হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালাবে, এটাই স্বাভাবিক। তিনি কোন দলের নেতা, কি পদে নির্বাচন করছেন এসব বিষয় পুলিশের দেখার সুযোগ নেই। তবে অহেতুক বিএনপি-জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীকে হয়রানি, বাসায় অভিযান বা নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ সঠিক নয়।
No comments