যৌন হয়রানির প্রতিবাদে নানা কর্মসূচিতে উত্তাল ঢাবি : শনাক্ত হলেও আটক নেই
পয়লা
বৈশাখের উৎসবে নারীদেরকে লাঞ্চিত করা এবং যৌন হয়রানির সাথে জড়িতদের
শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আজ শুক্রবার সারাদিন
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সংগঠন অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক
শাস্তির দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে। এসময় বক্তারা দায়িত্বে অবহেলার
অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের অপসারণ এবং দোষী পুলিশ সদস্যদের শাস্তির
দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া দোষীদের শাস্তির দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়ে বিভিন্ন
কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে একাধিক সংগঠন।
ওদিকে এ ঘটনায় সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গেলেও তাদের নাম পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় আটক করতে পারেনি পুলিশ। তাদেরকে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এসব ভিডিও ফুটেজের বেশ কিছু অংশ আজ বিভিন্ন বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলেও প্রচার করতে দেখা গেছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে নারীদেরকে যৌন হয়রানি এবং লাঞ্চিত করার কিছু চিত্র ফুটে উঠেছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড.
এ এম আমজাদ এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে কিছু ঘটনা
চিহ্নিত করা গেছে। এ বিষয়ে আরো তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে এখনো কেউ আটক
হয়নি। আজকের মধ্যে এ বিষয়ে কিছু ফলাফল পাওয়া যেতে পারে বলে তিনি জানান।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) সাইদুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, কিছু মানুষকে ভিডিওতে শনাক্ত করা গেলেও তাদের নাম পরিচয় এখনো মেলেনি। ভিডিওগুলো দেখে বাকী দোষীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পয়লা বৈশাখের উৎসবে অংশ নিতে এসে ১৫-২০জন নারী বস্ত্রহরণের স্বীকার হন। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বহিরাগত প্রায় ৩০-৩৫ জন যুবক এ ঘটনায় জড়িত ছিল। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও এ ধরণের ঘটনা কীভাবে ঘটল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এজন্য পুলিশ প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভও হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
প্রতিবাদে উত্তাল ঢাবি : নববর্ষের অনুষ্ঠানে নারীর বস্ত্রহরণের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিধ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ সকালে ‘প্রতিবাদ কার্টুন’ প্রদর্শন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। কার্টুনে নারী নির্যাতন বিরোধী বিভিন্ন চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। নারী উত্তক্তকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুনও কর্মসূচিতে বহন করা হয়।
একইস্থানে কিছুক্ষণ পরে মানববন্ধন করে ‘এঙ্গেজ ম্যান অ্যান্ড বয়েজ নেটওয়ার্ক’। তারা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ, ব্যথিত এবং লজ্জিত’ লেখা সম্বলিত ব্যানার নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন। এসময় ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানান।
দোষীদের গ্রেফতার এবং শাস্তির দাবিতে বিকেলে টিএসসির সামনের চত্বরে সমাবেশ করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সংগঠনের সভাপতি গোলাম কুদ্দুসের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ, হাসান আরিফ প্রমুখ। জোটের কেন্দ্রীয় সদস্য মানজার চৌধুরী সুইট সমাবেশ পরিচালনা করেন।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, এমন লজ্জাজনক ঘটনার পর নিজেকে পুরুষ হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে। গৌরবের জায়গাগুলো আজ কালিমা লিপ্ত হচ্ছে। এদেরকে পশু বললে পশুরাও লজ্জা পাবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। দায়িত্বে অবহেলার কারণে কোনো পুলিশের শাস্তি হয়েছে কি না আজ জানতে ইচ্ছা করে। শুধু আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর দায় না চাপিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগুলো রোধে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, এ ধরণের ঘটনায় লজ্জায় মাথা হেট হয়ে আসে। অনেক সঙ্কট পার করতে পারলেও আমাদের রুচি, ভাবনা এবং চেতনায় পরিবর্তন আসেনি। পুলিশ প্রধান সর্বত্র শান্তি স্থাপনের কথা বলছেন। কিন্তু কোথায় শান্তি? এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার সময় এসেছে। আগের ঘটনাগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যর্থতা এগুলো উস্কে দিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আগামী ২১ এপ্রিল নারীদের ওপর যৌন হয়রানি করার স্থানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। এখানে অনেক গৌরবের ইতিহাস রয়েছে। একই স্থানে হুমায়ুন আজাদ, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব বিষয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না তা দেখতে চাই। পাশাপাশি গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়েছে তাদেরকে এবং অন্যান্য জড়িতদের আটক করার আহবান জানান তিনি।
বিকেলে একই সময়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবি সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্র ইউনিয়ন। কর্মসূচি থেকে ঢাবি প্রক্টরের অপসারণ দাবি করেন বক্তারা। এসময় ছয়দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচিও ঘোষণা করে সংগঠনটি। দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে প্রক্টরের অপসারণ, যৌন নিপিড়নকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা, কর্তব্যরত পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার তদন্ত করে বিচার, বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে নীতিমালা এবং সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সর্বক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যৌন নিপিড়ন বিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
এসব দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, শনিবার দুপুর ১২টায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন, রোববার সারাদেশে বিক্ষোভ ও সংহতি সমাবেশ, ২০ এপ্রিল সকাল ১১টায় অপরাজেয় বাংলা থেকে কার্জন হল পর্যন্ত মানববন্ধন, ২১ এপ্রিল সকাল ১১টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি পেশ। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহম্মদ বলেন, এ ধরনের ঘটনা খুঁজলে অসংখ্য ঘটনা পাওয়া যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশকে অপরাধীদের সহযোগী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও প্রক্টর নাকি সিসিটিভির ফুটেজে শ্লীলতাহানীর কোনো কিছুই দেখেনি। তারা সত্য ও যৌন নিপীড়নকে অস্বীকার করেছে। বলতে বাধ্য হচ্ছি, তারা যৌন নিপীড়ক ও অপরাধীদের সহযোগী। যৌন সন্ত্রাসদের দেশের অসুস্থ রাজনীতি, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পৃষ্টপোষকতা করছে। মিথ্যা বলে তাদেরকে রক্ষায় ব্যস্ত হয়েছে।’ পুলিশের উপর ভরসা করে না থেকে উৎসবের দিন সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এ ঘটনায় মুখে ও চোখে কুলুপ এঁটে ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সত্যকে ঢাকার চেষ্টা থাকবেন না। সঠিক দায়িত্ব পালন করতে না পারলে সরে দাঁড়ান নতুবা দুর্বৃত্তের সহযোগী হিসেবে সকলের কাছে আখ্যায়িত হবেন।’
শিক্ষাবার্তার সম্পাদক এ এন রাশেদা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য থাকার সময়ে একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, রাজনীতি, আত্মীয়-স্বজনদের কারণে অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সৃজনশীলতা ও জ্ঞানচর্চার জায়গা। কিন্তু সেই জয়গায় এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন বলেন, যেকোনো উৎসবে নারীরা বলতে পারবে না অবাঞ্চিত হাত তাদের শরীরে আঘাত করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও দায়ভার কেউ নেয় না। পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হলেও তারা দায়িত্ব পালন করেনি। তবে জনগণের টাকা খরচ করে পুলিশ পোষার দরকার কী? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
সাংবাদিক কামাল লোহানী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ঘৃণা উচ্চারণ করছি। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই ৫২, ৬২, ৬৯ ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উচ্চারণ করেছে। কিন্তু স্বাধীন দেশে এ ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো প্রতিবাদ নেই। পুলিশ উপস্থিত থাকলেও ব্যবস্থা নেয়নি, আর প্রক্টর দাবা খেলায় ব্যস্ত ছিলেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে পাড়া-মহল্লায় প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক লাকী আক্তারের পরিচালনায় ঢাবি শাখা সভাপতি লিটন নন্দীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র নেতা এবং বুদ্ধিজীবিরা এতে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া ছাত্র ফেডারেশন দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিকেলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে।
ওদিকে এ ঘটনায় সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গেলেও তাদের নাম পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় আটক করতে পারেনি পুলিশ। তাদেরকে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এসব ভিডিও ফুটেজের বেশ কিছু অংশ আজ বিভিন্ন বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলেও প্রচার করতে দেখা গেছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে নারীদেরকে যৌন হয়রানি এবং লাঞ্চিত করার কিছু চিত্র ফুটে উঠেছে।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পাশে (গোল চিহ্নত) পয়লা বৈশাখে যৌন হয়রানির ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা নিশাত ইমতিয়াজ বিজয়। |
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) সাইদুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, কিছু মানুষকে ভিডিওতে শনাক্ত করা গেলেও তাদের নাম পরিচয় এখনো মেলেনি। ভিডিওগুলো দেখে বাকী দোষীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পয়লা বৈশাখের উৎসবে অংশ নিতে এসে ১৫-২০জন নারী বস্ত্রহরণের স্বীকার হন। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বহিরাগত প্রায় ৩০-৩৫ জন যুবক এ ঘটনায় জড়িত ছিল। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও এ ধরণের ঘটনা কীভাবে ঘটল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এজন্য পুলিশ প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভও হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
প্রতিবাদে উত্তাল ঢাবি : নববর্ষের অনুষ্ঠানে নারীর বস্ত্রহরণের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিধ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ সকালে ‘প্রতিবাদ কার্টুন’ প্রদর্শন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। কার্টুনে নারী নির্যাতন বিরোধী বিভিন্ন চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। নারী উত্তক্তকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুনও কর্মসূচিতে বহন করা হয়।
একইস্থানে কিছুক্ষণ পরে মানববন্ধন করে ‘এঙ্গেজ ম্যান অ্যান্ড বয়েজ নেটওয়ার্ক’। তারা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ, ব্যথিত এবং লজ্জিত’ লেখা সম্বলিত ব্যানার নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন। এসময় ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানান।
দোষীদের গ্রেফতার এবং শাস্তির দাবিতে বিকেলে টিএসসির সামনের চত্বরে সমাবেশ করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সংগঠনের সভাপতি গোলাম কুদ্দুসের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ, হাসান আরিফ প্রমুখ। জোটের কেন্দ্রীয় সদস্য মানজার চৌধুরী সুইট সমাবেশ পরিচালনা করেন।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, এমন লজ্জাজনক ঘটনার পর নিজেকে পুরুষ হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে। গৌরবের জায়গাগুলো আজ কালিমা লিপ্ত হচ্ছে। এদেরকে পশু বললে পশুরাও লজ্জা পাবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। দায়িত্বে অবহেলার কারণে কোনো পুলিশের শাস্তি হয়েছে কি না আজ জানতে ইচ্ছা করে। শুধু আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর দায় না চাপিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগুলো রোধে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, এ ধরণের ঘটনায় লজ্জায় মাথা হেট হয়ে আসে। অনেক সঙ্কট পার করতে পারলেও আমাদের রুচি, ভাবনা এবং চেতনায় পরিবর্তন আসেনি। পুলিশ প্রধান সর্বত্র শান্তি স্থাপনের কথা বলছেন। কিন্তু কোথায় শান্তি? এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার সময় এসেছে। আগের ঘটনাগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যর্থতা এগুলো উস্কে দিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আগামী ২১ এপ্রিল নারীদের ওপর যৌন হয়রানি করার স্থানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। এখানে অনেক গৌরবের ইতিহাস রয়েছে। একই স্থানে হুমায়ুন আজাদ, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব বিষয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না তা দেখতে চাই। পাশাপাশি গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়েছে তাদেরকে এবং অন্যান্য জড়িতদের আটক করার আহবান জানান তিনি।
বিকেলে একই সময়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবি সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্র ইউনিয়ন। কর্মসূচি থেকে ঢাবি প্রক্টরের অপসারণ দাবি করেন বক্তারা। এসময় ছয়দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচিও ঘোষণা করে সংগঠনটি। দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে প্রক্টরের অপসারণ, যৌন নিপিড়নকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা, কর্তব্যরত পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার তদন্ত করে বিচার, বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে নীতিমালা এবং সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সর্বক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যৌন নিপিড়ন বিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
এসব দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, শনিবার দুপুর ১২টায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন, রোববার সারাদেশে বিক্ষোভ ও সংহতি সমাবেশ, ২০ এপ্রিল সকাল ১১টায় অপরাজেয় বাংলা থেকে কার্জন হল পর্যন্ত মানববন্ধন, ২১ এপ্রিল সকাল ১১টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি পেশ। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহম্মদ বলেন, এ ধরনের ঘটনা খুঁজলে অসংখ্য ঘটনা পাওয়া যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশকে অপরাধীদের সহযোগী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও প্রক্টর নাকি সিসিটিভির ফুটেজে শ্লীলতাহানীর কোনো কিছুই দেখেনি। তারা সত্য ও যৌন নিপীড়নকে অস্বীকার করেছে। বলতে বাধ্য হচ্ছি, তারা যৌন নিপীড়ক ও অপরাধীদের সহযোগী। যৌন সন্ত্রাসদের দেশের অসুস্থ রাজনীতি, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পৃষ্টপোষকতা করছে। মিথ্যা বলে তাদেরকে রক্ষায় ব্যস্ত হয়েছে।’ পুলিশের উপর ভরসা করে না থেকে উৎসবের দিন সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এ ঘটনায় মুখে ও চোখে কুলুপ এঁটে ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সত্যকে ঢাকার চেষ্টা থাকবেন না। সঠিক দায়িত্ব পালন করতে না পারলে সরে দাঁড়ান নতুবা দুর্বৃত্তের সহযোগী হিসেবে সকলের কাছে আখ্যায়িত হবেন।’
শিক্ষাবার্তার সম্পাদক এ এন রাশেদা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য থাকার সময়ে একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, রাজনীতি, আত্মীয়-স্বজনদের কারণে অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সৃজনশীলতা ও জ্ঞানচর্চার জায়গা। কিন্তু সেই জয়গায় এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন বলেন, যেকোনো উৎসবে নারীরা বলতে পারবে না অবাঞ্চিত হাত তাদের শরীরে আঘাত করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও দায়ভার কেউ নেয় না। পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হলেও তারা দায়িত্ব পালন করেনি। তবে জনগণের টাকা খরচ করে পুলিশ পোষার দরকার কী? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
সাংবাদিক কামাল লোহানী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ঘৃণা উচ্চারণ করছি। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই ৫২, ৬২, ৬৯ ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উচ্চারণ করেছে। কিন্তু স্বাধীন দেশে এ ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো প্রতিবাদ নেই। পুলিশ উপস্থিত থাকলেও ব্যবস্থা নেয়নি, আর প্রক্টর দাবা খেলায় ব্যস্ত ছিলেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে পাড়া-মহল্লায় প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক লাকী আক্তারের পরিচালনায় ঢাবি শাখা সভাপতি লিটন নন্দীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র নেতা এবং বুদ্ধিজীবিরা এতে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া ছাত্র ফেডারেশন দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিকেলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে।
No comments