ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রের পাহারায় থাকবে ২০ দল
বিরোধী
প্রার্থীদের হয়রানি বন্ধ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের
বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশন আমলে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি সমর্থিত
প্রার্থীদের পরিচালনা কমিটি। তবে যত প্রতিবন্ধকতাই আসুক বিএনপি নির্বাচন
থেকে সরে দাঁড়াবে না বলে জানিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণের নির্বাচন
তদারকির জন্য ৫৭টি ওয়ার্ডে ৮টি কমিটি গঠন করেছে ২০ দলীয় জোট। এ কমিটি
নির্বাচনের দিন ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রের পাহারায় থাকবে। এ
কমিটি প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যবেক্ষণ করবে। ঢাকা উত্তর নির্বাচন পরিচালনা
কমিটিও বিশেষ এ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। গতকাল সকালে বিএনপির নয়াপল্টন
কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও বিকালে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আলাদাভাবে বৈঠক
করে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। পরে কমিটির প্রধান
সমন্বয়কারী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জে. (অব.) আসম হান্নান
শাহ গণমাধ্যমের কাছে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি অভিযোগ ও দলের
অবস্থানের কথা জানান।
নির্বাচন থেকে সরবে না বিএনপি: মওদুদ
এদিকে যত প্রতিবন্ধকতাই আসুক না কেন আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে বিএনপি সরে দাঁড়াবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বলেছেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে আমরা নির্বাচনে আছি, শেষ পর্যন্ত আমরা থাকবো। যত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হোক না কেন। বিকালে গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনার সমন্বয় কমিটির সভার শুরুতে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। বিরোধী প্রার্থীদের হয়রানির অভিযোগ করেন উত্তর সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মওদুদ আহমদ বলেন, আজ একটি পত্রিকায় উঠেছে, আওয়ামী লীগের ১৬ জন প্রার্থীর মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তো দূরের কথা, গতকালও উত্তরের কাউন্সিলর প্রার্থী কাওসার আহমেদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সর্বত্র আমাদের প্রার্থী ও সমর্থকদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হুমকি দিচ্ছে, হয়রানি করছে। তারপরও বলবো, আমরা কোন অবস্থাতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবো না। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, দেশের মানুষের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ, দুঃখ বিরাজ করছে। নীরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে ২৮শে এপ্রিল ভোটাররা এর বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। আমাদের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করবে। সিটি নির্বাচন সম্পর্কে সাবেক এই আইনমন্ত্র্ত্রী বলেন, এই নির্বাচন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন কতটুকু শক্তিশালী। প্রার্থী সমর্থনের বিষয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিছু কিছু জায়গায় বিএনপি ও জোটের নামে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দল ও জোটর পক্ষ থেকে যাদের সমর্থন দেয়া হয়েছে, যাদের নাম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তারাই আমাদের সমর্থিত প্রার্থী। অন্যদেরকে ওইসব প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। প্রচারণায় বাধা দেয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা লিখিত অভিযোগ করছি। তবে নির্বাচন কমিশনের কি চোখ, কান নেই। তারা কি পত্রপত্রিকা পড়ে না। নির্বাচন কমিশন আমাদের সঙ্গে বৈষ্যমমূলক আচরণ করছে। মওদুদ আহমদ অভিযোগ করেন, প্রতিদিন ক্ষমতাসীরা নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছেন। শুনেছি, আজকেও একজন মেয়র প্রার্থী মসজিদে অনুদান দিয়েছেন, এটা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, গত শুক্রবার থেকে আমি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। জনগণ ভোটের অপেক্ষায় আছে, আমাদের জোটকে সমর্থন দেয়ার জন্য। দলের সকলের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, যে কয়টা দিন আছে, আমরা যেন সম্মিলিতভাবে কাজ করি। আমি সকলের সমযোগিতা চাই। এরপর গুলশান চেয়ারপারসন কার্যালয়ে উত্তর সিটির জন্য গঠিত সমন্বয়ক কমিটির প্রথম সভা হয়। এতে উত্তর সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীসহ কাউন্সিলদের প্রচার-প্রচারণার কর্মকৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সমন্বয় কমিটির সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাহান ওমর, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ, সদ্য কারামুক্ত যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও তার মা নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, প্রকৌশলী আনহ আখতার হোসেন, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের জাগপা’র শফিউল আলম প্রধান, এনডিপি’র খন্দকার গোলাম মুর্তজা, খেলাফত মজলিশের সৈয়দ মজিবুর রহমান, মাওলানা শফিকউদ্দিন, ন্যাপ’র জেবেল রহমান গানি, এলডিপি’র সাহাদাত হোসেন সেলিম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কর্নেল (অব.) আবদুল লতিফ, শাহ আবু জাফর, মনিরুল হক চৌধুরী, আবুল হোসেন, হবিবুর রহমান হাবিব, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স,আসাদুল করিম শাহিন, সুলতানা আহমেদ, মো. সাহাবুদ্দিন, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না ইসি: হান্নান শাহ
ওদিকে বিরোধী প্রার্থীদের হয়রানি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের লিখিত অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলেও তারা আমলে নিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রি. জে. (অব.) আসম হান্নান শাহ। বলেছেন, বৃহস্পতিবার আমাদের একজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের প্রার্থীদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনে মানুষ আছেন। তারা সব কিছু চোখে দেখছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি লিখিত অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দেয়া হয়েছে। কোন প্রতিকার নেই। নির্বাচনী আচরণবিধি তদারকিতে ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হলেও তাদের চোখে দেখা যায় না বলে অভিযোগ করেন তিনি। গতকাল নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নির্বাচনী প্রচার পরিচালনায় গঠিত সমন্বয়ক কমিটির সভা শেষে তিনি এ অভিযোগ করেন। দক্ষিণ সিটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক হান্নান শাহ বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আমাদের প্রার্থীরা অনেক শক্তিশালী। কিন্তু তাদের ধমিয়ে রাখা হচ্ছে। সরকার বুঝতে পেরেই নানাভাবে তাদের ধমিয়ে রাখার পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য দক্ষিণের ৫৭টি ওয়ার্ডে ৮টি কমিটি গঠন করা হবে। যারা কমিটি নির্বাচন মনিটরিং করবে। কমিটির সদস্যরা নির্বাচনের ভোট গণনা পর্যন্ত তাদের মনিটরিং চালিয়ে যাবেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে সরকার নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দেয় না। সাত দিন আগে সেনা মোতায়েন করা না হলে ধরে নিতে হবে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না। হান্নান শাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু’জন প্রার্থীর নাম সরাসরি ঘোষণা করেছেন। তাই বেগম খালেদা জিয়া নয় বরং শেখ হাসিনাই আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারণায় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তার নির্বাচনী প্রচারণায় নামার বিষয়টি তার ইচ্ছা প্রকাশের ওপর নির্ভর করছে। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি অভিযোগ করে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার কথা বলেন তিনি। হান্নান শাহ বলেন, সরকার চাইবে জোর করে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা সেটা হতে দেবো না। ২৮শে এপ্রিল ভোটের দিন বৈধভাবে ভোটকেন্দ্রগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখবো এবং বিজয় ছিনিয়ে আনবো। এসময় নববর্ষের দিন টিএসসিতে নারীদের শ্লীলতাহানির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান হান্নান শাহ। সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, আইন বিষয়ক সম্পাদক নিতাই রায় চৌধুরী, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ডেমোক্রেটিক লীগ মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রচারণায় ভয়ঙ্কর বৈষম্য করছে ইসি: এমাজউদ্দীন
এদিকে আদর্শ ঢাকা আন্দোলন-এর আহ্বায়ক প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ অভিযোগ করেন, সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভয়ঙ্কর বৈষম্য করছে। সরকার একদিকে ২২টি হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্তদের মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অন্যদিকে আমাদের মনোনীত ঢাকা সিটি দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। জাতিকে জানাতে চাই, এটা আমরা ভালভাবে প্রহণ করছি না। গতকাল ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’র ৩৭/২ পুরানা পল্টন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, আবদুল হাই শিকদার, এম আবদুল্লাহ, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন থেকে সরবে না বিএনপি: মওদুদ
এদিকে যত প্রতিবন্ধকতাই আসুক না কেন আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে বিএনপি সরে দাঁড়াবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বলেছেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে আমরা নির্বাচনে আছি, শেষ পর্যন্ত আমরা থাকবো। যত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হোক না কেন। বিকালে গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনার সমন্বয় কমিটির সভার শুরুতে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। বিরোধী প্রার্থীদের হয়রানির অভিযোগ করেন উত্তর সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মওদুদ আহমদ বলেন, আজ একটি পত্রিকায় উঠেছে, আওয়ামী লীগের ১৬ জন প্রার্থীর মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তো দূরের কথা, গতকালও উত্তরের কাউন্সিলর প্রার্থী কাওসার আহমেদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সর্বত্র আমাদের প্রার্থী ও সমর্থকদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হুমকি দিচ্ছে, হয়রানি করছে। তারপরও বলবো, আমরা কোন অবস্থাতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবো না। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, দেশের মানুষের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ, দুঃখ বিরাজ করছে। নীরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে ২৮শে এপ্রিল ভোটাররা এর বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। আমাদের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করবে। সিটি নির্বাচন সম্পর্কে সাবেক এই আইনমন্ত্র্ত্রী বলেন, এই নির্বাচন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন কতটুকু শক্তিশালী। প্রার্থী সমর্থনের বিষয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিছু কিছু জায়গায় বিএনপি ও জোটের নামে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দল ও জোটর পক্ষ থেকে যাদের সমর্থন দেয়া হয়েছে, যাদের নাম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তারাই আমাদের সমর্থিত প্রার্থী। অন্যদেরকে ওইসব প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। প্রচারণায় বাধা দেয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা লিখিত অভিযোগ করছি। তবে নির্বাচন কমিশনের কি চোখ, কান নেই। তারা কি পত্রপত্রিকা পড়ে না। নির্বাচন কমিশন আমাদের সঙ্গে বৈষ্যমমূলক আচরণ করছে। মওদুদ আহমদ অভিযোগ করেন, প্রতিদিন ক্ষমতাসীরা নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছেন। শুনেছি, আজকেও একজন মেয়র প্রার্থী মসজিদে অনুদান দিয়েছেন, এটা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, গত শুক্রবার থেকে আমি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। জনগণ ভোটের অপেক্ষায় আছে, আমাদের জোটকে সমর্থন দেয়ার জন্য। দলের সকলের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, যে কয়টা দিন আছে, আমরা যেন সম্মিলিতভাবে কাজ করি। আমি সকলের সমযোগিতা চাই। এরপর গুলশান চেয়ারপারসন কার্যালয়ে উত্তর সিটির জন্য গঠিত সমন্বয়ক কমিটির প্রথম সভা হয়। এতে উত্তর সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীসহ কাউন্সিলদের প্রচার-প্রচারণার কর্মকৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সমন্বয় কমিটির সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাহান ওমর, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ, সদ্য কারামুক্ত যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও তার মা নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, প্রকৌশলী আনহ আখতার হোসেন, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের জাগপা’র শফিউল আলম প্রধান, এনডিপি’র খন্দকার গোলাম মুর্তজা, খেলাফত মজলিশের সৈয়দ মজিবুর রহমান, মাওলানা শফিকউদ্দিন, ন্যাপ’র জেবেল রহমান গানি, এলডিপি’র সাহাদাত হোসেন সেলিম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কর্নেল (অব.) আবদুল লতিফ, শাহ আবু জাফর, মনিরুল হক চৌধুরী, আবুল হোসেন, হবিবুর রহমান হাবিব, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স,আসাদুল করিম শাহিন, সুলতানা আহমেদ, মো. সাহাবুদ্দিন, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না ইসি: হান্নান শাহ
ওদিকে বিরোধী প্রার্থীদের হয়রানি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের লিখিত অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলেও তারা আমলে নিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রি. জে. (অব.) আসম হান্নান শাহ। বলেছেন, বৃহস্পতিবার আমাদের একজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের প্রার্থীদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনে মানুষ আছেন। তারা সব কিছু চোখে দেখছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি লিখিত অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দেয়া হয়েছে। কোন প্রতিকার নেই। নির্বাচনী আচরণবিধি তদারকিতে ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হলেও তাদের চোখে দেখা যায় না বলে অভিযোগ করেন তিনি। গতকাল নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নির্বাচনী প্রচার পরিচালনায় গঠিত সমন্বয়ক কমিটির সভা শেষে তিনি এ অভিযোগ করেন। দক্ষিণ সিটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক হান্নান শাহ বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আমাদের প্রার্থীরা অনেক শক্তিশালী। কিন্তু তাদের ধমিয়ে রাখা হচ্ছে। সরকার বুঝতে পেরেই নানাভাবে তাদের ধমিয়ে রাখার পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য দক্ষিণের ৫৭টি ওয়ার্ডে ৮টি কমিটি গঠন করা হবে। যারা কমিটি নির্বাচন মনিটরিং করবে। কমিটির সদস্যরা নির্বাচনের ভোট গণনা পর্যন্ত তাদের মনিটরিং চালিয়ে যাবেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে সরকার নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দেয় না। সাত দিন আগে সেনা মোতায়েন করা না হলে ধরে নিতে হবে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না। হান্নান শাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু’জন প্রার্থীর নাম সরাসরি ঘোষণা করেছেন। তাই বেগম খালেদা জিয়া নয় বরং শেখ হাসিনাই আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারণায় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তার নির্বাচনী প্রচারণায় নামার বিষয়টি তার ইচ্ছা প্রকাশের ওপর নির্ভর করছে। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি অভিযোগ করে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার কথা বলেন তিনি। হান্নান শাহ বলেন, সরকার চাইবে জোর করে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা সেটা হতে দেবো না। ২৮শে এপ্রিল ভোটের দিন বৈধভাবে ভোটকেন্দ্রগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখবো এবং বিজয় ছিনিয়ে আনবো। এসময় নববর্ষের দিন টিএসসিতে নারীদের শ্লীলতাহানির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান হান্নান শাহ। সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, আইন বিষয়ক সম্পাদক নিতাই রায় চৌধুরী, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ডেমোক্রেটিক লীগ মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রচারণায় ভয়ঙ্কর বৈষম্য করছে ইসি: এমাজউদ্দীন
এদিকে আদর্শ ঢাকা আন্দোলন-এর আহ্বায়ক প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ অভিযোগ করেন, সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভয়ঙ্কর বৈষম্য করছে। সরকার একদিকে ২২টি হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্তদের মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অন্যদিকে আমাদের মনোনীত ঢাকা সিটি দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। জাতিকে জানাতে চাই, এটা আমরা ভালভাবে প্রহণ করছি না। গতকাল ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’র ৩৭/২ পুরানা পল্টন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, আবদুল হাই শিকদার, এম আবদুল্লাহ, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
No comments