ভারতেই থাকতে চান লতিফ সিদ্দিকী
ভারতেই থাকতে চান আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। সম্প্রতি পবিত্র হজ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত করে সরকার। বহিষ্কার করা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর পদ থেকে। গতকাল বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি দেশে ফিরতে চান। তবে এ ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। বর্তমানে তিনি অবস্থান করছেন কলকাতায়। সেখান থেকে ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার বক্তব্য নিয়ে দল ও দলের নেত্রী যেভাবে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন তা নিয়ে তিনি অনুতপ্ত। এ সময় তার হয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ায় কড়া সমালোচনা করেন তার ভাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর। এখানে সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: সরকার ও দল থেকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্তকে কিভাবে নিচ্ছেন?
উত্তর: আমার প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক। কারণ আমি একটা দল করি। দলের একটা নিয়ম-শৃঙ্খলা আছে। সে নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছি বলে দল এবং দলনেতা মনে করেছেন। সে জন্য দলনেতা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন, দলের সর্বোচ্চ ফোরামে বসে। এটা নিয়ে আমার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ার তো কথা না। এ দলই আমাকে মন্ত্রী বানিয়েছে। এ নেতাই আমাকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এখন তিনি বা তার সহকর্মী মিলে যদি আমাকে মনে করেন যে, আমি সহকর্মী হওয়ার যোগ্যতা রাখি না, সেটা সংখ্যাগরিষ্ঠ গণতন্ত্রে তো এটা কোন অপরাধ নয়।
প্রশ্ন: তারা মনে করেছেন, কিন্তু আপনি কি সেই তাদের যে মনে করা, তার সঙ্গে একমত?
উত্তর: আমি একমত। কারণ, আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।
প্রশ্ন: আপনার কাছে কি একবারও মনে হচ্ছে না যে আপনার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে?
উত্তর: না, না। বরঞ্চ আমি অনুতপ্ত যে, আমি আমার দল এবং দলনেতাকে একটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছি।
প্রশ্ন: এই ছাড়া অন্য কোন অনুশোচনা হচ্ছে? পুরো অবস্থার জন্য কি অনুশোচনা হচ্ছে?
উত্তর: না। আমার কোন অনুশোচনা বা অনুতাপ নেই। আমার নেতাকে আমি বিব্রত করেছি। তিনি আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। আমি তাকে খুব কষ্ট দিয়েছি।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনি যেটা বলেছিলেন, সেটা নিয়ে কি আপনার এখন কোনভাবে কোন ধরনের অনুশোচনা হচ্ছে?
উত্তর: আবার বলি, আপনারা আমাকে শোনাতে চেয়েছিলেন। আমি কিন্তু বলিনি। আমার এ জায়গাটায় একটা আক্ষেপ আছে। সারা পৃথিবীতে কি একজন সাংবাদিক বা একজন মানুষও নেই- যে জিজ্ঞেস করলো না উনি একটা আড্ডাতে কথা বলেছেন, কোন সভায় নয়, সমিতিতে নয়, মাইকে নয়। সে আড্ডায় তিনি পুরোটা কি কথা বললেন সেটা না জেনে একটা খণ্ডিত অংশ বিকৃতও হতে পারে, অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে। পুরাটা কেউ চাইলেন না আজ পর্যন্ত। এইটা আমার আক্ষেপ আছে। আমি পুরো কথাটার দায়িত্ব নিচ্ছি। দেড় ঘণ্টা আমি কথা বলেছি। সেই দেড় ঘণ্টার টেপটা আপনারা বের করান। সেটার পুরো দায়িত্ব আমার। এর জন্য যদি ফাঁসি দেয়া হয় তা-ও আমি মেনে নেবো।
প্রশ্ন: যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এখন আপনার পদক্ষেপ কি হবে? আপনি কি দেশে ফিরছেন?
উত্তর: আমি দেশে ফিরতে আগ্রহী। কারণ আমি এ দেশটার স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছি। আমি এ দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। কিন্তু প্রেক্ষাপটটা এমন হয়েছে যে, আমি কি করব, আমি বুঝতে পারছি না। কারণ আমি দেশে গেলে, আমার নেতা যদি আরও বিব্রত হয়, সেজন্য আমি খুবই মানসিক সঙ্কটে আছি। আমি প্রথম সুযোগেই দেশে ঢুকে পড়বো। আমি যে কোন কিছুর মোকাবিলা করবো।
প্রশ্ন: মানে আপনি এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না?
উত্তর: বিষয়টা কিন্তু তা না। নেতা বা দলের ক্ষতি হবে কিনা সেইটা নিয়ে আমি চিন্তিত। আমাকে নিয়ে আমি কোন চিন্তিত নই।
প্রশ্ন: না ঢোকা পর্যন্ত তো সেটা বুঝতে পারছেন না আপনি?
উত্তর: না না। বুঝতে পারার কথা না। আমাকে তো কিছুটা জানাবে, জানতে আমি তো পারবো। যে আমার এখন...
প্রশ্ন: অর্থাৎ কি আপনি দলের কাছ থেকে কিছু শোনার অপেক্ষায় আছেন যে, দল আপনাকে বলবে যে, না তুমি এসো না বা তুমি থাকো?
উত্তর: অবশ্যই, অবশ্যই।
প্রশ্ন: তো দলের নেতার সঙ্গে কি আপনি নিজে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন?
উত্তর: দলের নেতা মানে শেখ হাসিনার সাথে.. না আমি চেষ্টা করিনি। আমি খুব লজ্জা পাচ্ছি।
প্রশ্ন: দলের কোন পর্যায়ের সাথে চেষ্টা করছেন আপনার কি করা উচিত এখন? আপনি আসবেন কিনা?
উত্তর: না না।
প্রশ্ন: আপনি চাইছেন যে তারাই আপনাকে বলুন আপনি সেটাই চাইছেন।
উত্তর: আমি চাইছি না। তারা কি করবেন তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
প্রশ্ন: মি. সিদ্দিকী। এর আগে আমরা যেটা দেখেছি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যে ধরুন দু’জন লেখক একজন মহিলা একজন পুরুষ তসলিমা নাসরিন, দাউদ হায়দার তারা তাদের সম্পর্কে ঠিক একই ধরনের অভিযোগ ওঠার পর তারা আর দেশেই ফিরতে পারছেন না বছরের পর বছর, দশকের পর দশক। আপনার কি সেই ভয়টা হচ্ছে আপনার পরিস্থিতিও তেমন হতে পারে?
উত্তর: না না। তারা লেখনীর মাধ্যমে বলেছে। তারা এক কথা বলেছে আর আমি তো এখনও বলছি যে, আমার অবস্থান আমার কথাগুলোকে বিকৃত এবং খণ্ডিত করা হয়েছে। একত্রিত যোগ করলে দেখা যাবে যে, আমি একটা অ্যাকাডেমিক ডিসকাশন করেছি।
প্রশ্ন: কিন্তু যেটা পারসেপশন মানুষের। মানুষ যেটা বুঝতে পারছে, আপনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন। আপনার ভেতরে কি এখন ভয় জাগছে যে আপনিও দেশে ফিরতে পারবেন কিনা আর?
উত্তর: সেটা দেখা যাবে, সময়ই বলে দেবে। আমার জীবনে এরকম ঝড় বহুবার এসেছে। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিবাদ করেছিলাম। তারপরে বিতাড়িত হয়েছিলাম। কয়দিন যুদ্ধও করেছি। তারপর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে আমার দ্বিমত হয়েছে বলে আমি সরে এসেছিলাম। এখন কাদের সিদ্দিকী ক্ষমা চাচ্ছে। এই ব্যাটাকে কে ক্ষমা চাওয়ার আমার পক্ষ থেকে দিলো। আমি তো তাকে এ দায়িত্ব দিইনি যে, আমার পক্ষে ক্ষমা চাও। সে এক দল করে, আমি আরেক দল করি। সে আমার বিরুদ্ধে ২০০১-এ নির্বাচনে দাঁড়িয়ে আমাকে পরাজিত করেছিল।
প্রশ্ন: আপনার কাছে শেষ প্রশ্ন মি. সিদ্দিকী। যদি অদূর ভবিষ্যতে আপনি দেশে ফিরতে না পারেন, দল যদি আপনাকে সে ধরনের কোন ইঙ্গিত না দেয় যে- আপনি ফিরুন, আপনি এখনও এমপি আছেন; আপনি কোথায় থাকবেন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এখন আপাতত?
উত্তর: না না।
প্রশ্ন: আপনি কি ভারতেই থাকবেন?
উত্তর: আমি ইউরোপ-আমেরিকায় থাকতে পারবো না বলেই আমি কলকাতায় এসেছি। আমি একেবারে মাটির সাথে থাকতে চাই। মাটির সোঁদা গন্ধে আমার... আমি খুব একটা সাধারণ মানুষ।
প্রশ্ন: ভারতে থাকতে কি আপনি পারবেন? কোন ইঙ্গিত ভারত সরকারের কাছ থেকে...
উত্তর: ভারত থেকে না দিলে এখনই সেটা নিয়ে আমি আলোচনা করবো না। সামনের সময়ে সামনেই বলে দেবে। সময়ই সময়ের সিদ্ধান্ত নেবে। এখন কিছু বলবো না।
এদিকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দেশে ৩০টির মতো মামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দেশে ফিরলে তাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। দেশে ফিরতে চাইলে তাকে নিজ উদ্যোগে ও দায়িত্বে ফিরতে হবে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে মি. সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তি জেলায় জেলায় মামলা করেছে। সে দেশে ফিরলে সরকার বা আওয়ামী লীগ সে মামলাগুলোর ব্যাপারে কোন হস্তক্ষেপ করবে না এবং তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে এখন মি. সিদ্দিকীর কোন সম্পর্ক নেই। তার বিরুদ্ধে কোন মামলায় আমরা পক্ষ নিতে যাবো না। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তাকে গ্রেপ্তার করলেও আমাদের কিছু বলার নেই। তাকে রক্ষা করার কোন চেষ্টা সরকার বা দল করবে না। কাজেই দেশে ফিরতে চাইলে তাকে নিজ দায়িত্বেই তা করতে হবে।
সবুজ সঙ্কেত পেলেই দেশে ফিরবেন
কলকাতা প্রতিনিধি জানান, অত্যন্ত গোপনীয়তায় বাংলাদেশের অপসারিত ডাক ও যোগাযোগ মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী কলকাতায় এসেছেন। গত রোববারই তিনি কলকাতায় আসার পর কোথায় রয়েছেন তা নিয়ে প্রবল ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখনও তিনি কলকাতায় অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে বলা হলেও তার সন্ধানে মিডিয়া হন্যে হয়ে ঘুরে হতাশ হয়েছেন। অনেকের মতে, তিনি রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছেন। আবার একটি অংশের মতে, কলকাতা থেকেই তার ঢাকায় যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি এখন কলকাতায় বা তার আশপাশে কোন নিরাপদ আস্তানায় বসে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত রয়েছেন। ঢাকায় তার ঘনিষ্ঠদের তিনি ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে সর্বশেষ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন। একটি সূত্রের খবর অনুযায়ী, তিনি ৩৬ ঘণ্টার দীর্ঘ জার্নি শেষে গত রোববার দুপুরে নিউ ইয়র্ক থেকে নয়া দিল্লি এসে পৌঁছান। পরে কলকাতার বিমান ধরে বিকাল শোয়া চারটা নাগাদ দমদম বিমানবন্দরে নামেন। তার পরই তিনি কিছুক্ষণ লাউঞ্জে ঘোরাঘুরির পর দক্ষিণ কলকাতার একটি হোটেলে গিয়ে ওঠেন। তবে তার জন্য বিশেষ কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা সরকারিভাবে না থাকলেও পুলিশ ও গোয়েন্দারা তার নিরাপত্তার দিকে নজর রেখেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে পুলিশ বা হোটেল কর্র্তৃপক্ষ তার সম্পর্কে কোন কিছু জানাতে অস্বীকার করা হয়েছে। এমনকি তিনি তাজ বেঙ্গল হোটেলে অবস্থান করছেন কিনা সে সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ কোন কিছু জানে না বলে জানিয়েছেন। এক গোয়েন্দা কর্তা বলেন, সিদ্দিকী সাহেব ইসলাম সম্পর্কে যে ধরনের মন্তব্য করেছেন তার প্রতিক্রিয়ায় এখানেও তার ওপর আক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। তাই তার ওপর গোয়েন্দা নজরদারি অবশ্যই থাকবে। তবে আরেকটি সূত্রে জানানো হয়েছে, তিনি তার নিজস্ব কোন আশ্রয়ে চলে গেছেন। সিদ্দিকীর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের অনেকের ঘনিষ্ঠ পরিচয় রয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি অনেক দিন কলকাতার আশ্রয়ে ছিলেন। আবার পঁচাত্তর সালেও একবার তিনি পশ্চিমবঙ্গে চলে এসেছিলেন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য। সেবার তিনি বর্ধমানে তার ঘনিষ্ঠদের আশ্রয়ে ছিলেন। তবে এই মুহূর্তে লতিফ সিদ্দিকী পশ্চিমবঙ্গে থাকলেও দেশে ফেরার ব্যাপারে মনস্থির করে উঠতে পারেননি। তবে তার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে আভাস দেয়া হযেছে, তিনি দেশে না ফিরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কারও মাধ্যমে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে নানা জায়গায় তার বিরুদ্ধে যেভাবে একের পর এক মামলা করা হচ্ছে তাতে ঢাকায় পা দেয়া মাত্র তার গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা। আর গ্রেপ্তার করে তাকে জেলে রাখলেও তিনি যে নিরাপদ নন তার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সব জেলেই ইসলামী জঙ্গিদের আক্রোশের শিকার হওয়ার আশঙ্কাও প্রবল। তাই ঢাকা থেকে সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরই তিনি কি করবেন তা ঠিক করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে অভিজ্ঞ এক প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক জানিয়েছেন, লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে যেভাবে ব্যবস্থা সরকারি ও দলীয় স্তরে নেয়া হয়েছে সেখানে আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা যেসব দেশে রয়েছে সেখানেও তিনি চলে যেতে পারেন।
প্রশ্ন: সরকার ও দল থেকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্তকে কিভাবে নিচ্ছেন?
উত্তর: আমার প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক। কারণ আমি একটা দল করি। দলের একটা নিয়ম-শৃঙ্খলা আছে। সে নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছি বলে দল এবং দলনেতা মনে করেছেন। সে জন্য দলনেতা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন, দলের সর্বোচ্চ ফোরামে বসে। এটা নিয়ে আমার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ার তো কথা না। এ দলই আমাকে মন্ত্রী বানিয়েছে। এ নেতাই আমাকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এখন তিনি বা তার সহকর্মী মিলে যদি আমাকে মনে করেন যে, আমি সহকর্মী হওয়ার যোগ্যতা রাখি না, সেটা সংখ্যাগরিষ্ঠ গণতন্ত্রে তো এটা কোন অপরাধ নয়।
প্রশ্ন: তারা মনে করেছেন, কিন্তু আপনি কি সেই তাদের যে মনে করা, তার সঙ্গে একমত?
উত্তর: আমি একমত। কারণ, আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।
প্রশ্ন: আপনার কাছে কি একবারও মনে হচ্ছে না যে আপনার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে?
উত্তর: না, না। বরঞ্চ আমি অনুতপ্ত যে, আমি আমার দল এবং দলনেতাকে একটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছি।
প্রশ্ন: এই ছাড়া অন্য কোন অনুশোচনা হচ্ছে? পুরো অবস্থার জন্য কি অনুশোচনা হচ্ছে?
উত্তর: না। আমার কোন অনুশোচনা বা অনুতাপ নেই। আমার নেতাকে আমি বিব্রত করেছি। তিনি আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। আমি তাকে খুব কষ্ট দিয়েছি।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনি যেটা বলেছিলেন, সেটা নিয়ে কি আপনার এখন কোনভাবে কোন ধরনের অনুশোচনা হচ্ছে?
উত্তর: আবার বলি, আপনারা আমাকে শোনাতে চেয়েছিলেন। আমি কিন্তু বলিনি। আমার এ জায়গাটায় একটা আক্ষেপ আছে। সারা পৃথিবীতে কি একজন সাংবাদিক বা একজন মানুষও নেই- যে জিজ্ঞেস করলো না উনি একটা আড্ডাতে কথা বলেছেন, কোন সভায় নয়, সমিতিতে নয়, মাইকে নয়। সে আড্ডায় তিনি পুরোটা কি কথা বললেন সেটা না জেনে একটা খণ্ডিত অংশ বিকৃতও হতে পারে, অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে। পুরাটা কেউ চাইলেন না আজ পর্যন্ত। এইটা আমার আক্ষেপ আছে। আমি পুরো কথাটার দায়িত্ব নিচ্ছি। দেড় ঘণ্টা আমি কথা বলেছি। সেই দেড় ঘণ্টার টেপটা আপনারা বের করান। সেটার পুরো দায়িত্ব আমার। এর জন্য যদি ফাঁসি দেয়া হয় তা-ও আমি মেনে নেবো।
প্রশ্ন: যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এখন আপনার পদক্ষেপ কি হবে? আপনি কি দেশে ফিরছেন?
উত্তর: আমি দেশে ফিরতে আগ্রহী। কারণ আমি এ দেশটার স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছি। আমি এ দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। কিন্তু প্রেক্ষাপটটা এমন হয়েছে যে, আমি কি করব, আমি বুঝতে পারছি না। কারণ আমি দেশে গেলে, আমার নেতা যদি আরও বিব্রত হয়, সেজন্য আমি খুবই মানসিক সঙ্কটে আছি। আমি প্রথম সুযোগেই দেশে ঢুকে পড়বো। আমি যে কোন কিছুর মোকাবিলা করবো।
প্রশ্ন: মানে আপনি এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না?
উত্তর: বিষয়টা কিন্তু তা না। নেতা বা দলের ক্ষতি হবে কিনা সেইটা নিয়ে আমি চিন্তিত। আমাকে নিয়ে আমি কোন চিন্তিত নই।
প্রশ্ন: না ঢোকা পর্যন্ত তো সেটা বুঝতে পারছেন না আপনি?
উত্তর: না না। বুঝতে পারার কথা না। আমাকে তো কিছুটা জানাবে, জানতে আমি তো পারবো। যে আমার এখন...
প্রশ্ন: অর্থাৎ কি আপনি দলের কাছ থেকে কিছু শোনার অপেক্ষায় আছেন যে, দল আপনাকে বলবে যে, না তুমি এসো না বা তুমি থাকো?
উত্তর: অবশ্যই, অবশ্যই।
প্রশ্ন: তো দলের নেতার সঙ্গে কি আপনি নিজে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন?
উত্তর: দলের নেতা মানে শেখ হাসিনার সাথে.. না আমি চেষ্টা করিনি। আমি খুব লজ্জা পাচ্ছি।
প্রশ্ন: দলের কোন পর্যায়ের সাথে চেষ্টা করছেন আপনার কি করা উচিত এখন? আপনি আসবেন কিনা?
উত্তর: না না।
প্রশ্ন: আপনি চাইছেন যে তারাই আপনাকে বলুন আপনি সেটাই চাইছেন।
উত্তর: আমি চাইছি না। তারা কি করবেন তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
প্রশ্ন: মি. সিদ্দিকী। এর আগে আমরা যেটা দেখেছি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যে ধরুন দু’জন লেখক একজন মহিলা একজন পুরুষ তসলিমা নাসরিন, দাউদ হায়দার তারা তাদের সম্পর্কে ঠিক একই ধরনের অভিযোগ ওঠার পর তারা আর দেশেই ফিরতে পারছেন না বছরের পর বছর, দশকের পর দশক। আপনার কি সেই ভয়টা হচ্ছে আপনার পরিস্থিতিও তেমন হতে পারে?
উত্তর: না না। তারা লেখনীর মাধ্যমে বলেছে। তারা এক কথা বলেছে আর আমি তো এখনও বলছি যে, আমার অবস্থান আমার কথাগুলোকে বিকৃত এবং খণ্ডিত করা হয়েছে। একত্রিত যোগ করলে দেখা যাবে যে, আমি একটা অ্যাকাডেমিক ডিসকাশন করেছি।
প্রশ্ন: কিন্তু যেটা পারসেপশন মানুষের। মানুষ যেটা বুঝতে পারছে, আপনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন। আপনার ভেতরে কি এখন ভয় জাগছে যে আপনিও দেশে ফিরতে পারবেন কিনা আর?
উত্তর: সেটা দেখা যাবে, সময়ই বলে দেবে। আমার জীবনে এরকম ঝড় বহুবার এসেছে। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিবাদ করেছিলাম। তারপরে বিতাড়িত হয়েছিলাম। কয়দিন যুদ্ধও করেছি। তারপর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে আমার দ্বিমত হয়েছে বলে আমি সরে এসেছিলাম। এখন কাদের সিদ্দিকী ক্ষমা চাচ্ছে। এই ব্যাটাকে কে ক্ষমা চাওয়ার আমার পক্ষ থেকে দিলো। আমি তো তাকে এ দায়িত্ব দিইনি যে, আমার পক্ষে ক্ষমা চাও। সে এক দল করে, আমি আরেক দল করি। সে আমার বিরুদ্ধে ২০০১-এ নির্বাচনে দাঁড়িয়ে আমাকে পরাজিত করেছিল।
প্রশ্ন: আপনার কাছে শেষ প্রশ্ন মি. সিদ্দিকী। যদি অদূর ভবিষ্যতে আপনি দেশে ফিরতে না পারেন, দল যদি আপনাকে সে ধরনের কোন ইঙ্গিত না দেয় যে- আপনি ফিরুন, আপনি এখনও এমপি আছেন; আপনি কোথায় থাকবেন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এখন আপাতত?
উত্তর: না না।
প্রশ্ন: আপনি কি ভারতেই থাকবেন?
উত্তর: আমি ইউরোপ-আমেরিকায় থাকতে পারবো না বলেই আমি কলকাতায় এসেছি। আমি একেবারে মাটির সাথে থাকতে চাই। মাটির সোঁদা গন্ধে আমার... আমি খুব একটা সাধারণ মানুষ।
প্রশ্ন: ভারতে থাকতে কি আপনি পারবেন? কোন ইঙ্গিত ভারত সরকারের কাছ থেকে...
উত্তর: ভারত থেকে না দিলে এখনই সেটা নিয়ে আমি আলোচনা করবো না। সামনের সময়ে সামনেই বলে দেবে। সময়ই সময়ের সিদ্ধান্ত নেবে। এখন কিছু বলবো না।
এদিকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দেশে ৩০টির মতো মামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দেশে ফিরলে তাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। দেশে ফিরতে চাইলে তাকে নিজ উদ্যোগে ও দায়িত্বে ফিরতে হবে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে মি. সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তি জেলায় জেলায় মামলা করেছে। সে দেশে ফিরলে সরকার বা আওয়ামী লীগ সে মামলাগুলোর ব্যাপারে কোন হস্তক্ষেপ করবে না এবং তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে এখন মি. সিদ্দিকীর কোন সম্পর্ক নেই। তার বিরুদ্ধে কোন মামলায় আমরা পক্ষ নিতে যাবো না। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তাকে গ্রেপ্তার করলেও আমাদের কিছু বলার নেই। তাকে রক্ষা করার কোন চেষ্টা সরকার বা দল করবে না। কাজেই দেশে ফিরতে চাইলে তাকে নিজ দায়িত্বেই তা করতে হবে।
সবুজ সঙ্কেত পেলেই দেশে ফিরবেন
কলকাতা প্রতিনিধি জানান, অত্যন্ত গোপনীয়তায় বাংলাদেশের অপসারিত ডাক ও যোগাযোগ মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী কলকাতায় এসেছেন। গত রোববারই তিনি কলকাতায় আসার পর কোথায় রয়েছেন তা নিয়ে প্রবল ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখনও তিনি কলকাতায় অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে বলা হলেও তার সন্ধানে মিডিয়া হন্যে হয়ে ঘুরে হতাশ হয়েছেন। অনেকের মতে, তিনি রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছেন। আবার একটি অংশের মতে, কলকাতা থেকেই তার ঢাকায় যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি এখন কলকাতায় বা তার আশপাশে কোন নিরাপদ আস্তানায় বসে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত রয়েছেন। ঢাকায় তার ঘনিষ্ঠদের তিনি ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে সর্বশেষ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন। একটি সূত্রের খবর অনুযায়ী, তিনি ৩৬ ঘণ্টার দীর্ঘ জার্নি শেষে গত রোববার দুপুরে নিউ ইয়র্ক থেকে নয়া দিল্লি এসে পৌঁছান। পরে কলকাতার বিমান ধরে বিকাল শোয়া চারটা নাগাদ দমদম বিমানবন্দরে নামেন। তার পরই তিনি কিছুক্ষণ লাউঞ্জে ঘোরাঘুরির পর দক্ষিণ কলকাতার একটি হোটেলে গিয়ে ওঠেন। তবে তার জন্য বিশেষ কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা সরকারিভাবে না থাকলেও পুলিশ ও গোয়েন্দারা তার নিরাপত্তার দিকে নজর রেখেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে পুলিশ বা হোটেল কর্র্তৃপক্ষ তার সম্পর্কে কোন কিছু জানাতে অস্বীকার করা হয়েছে। এমনকি তিনি তাজ বেঙ্গল হোটেলে অবস্থান করছেন কিনা সে সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ কোন কিছু জানে না বলে জানিয়েছেন। এক গোয়েন্দা কর্তা বলেন, সিদ্দিকী সাহেব ইসলাম সম্পর্কে যে ধরনের মন্তব্য করেছেন তার প্রতিক্রিয়ায় এখানেও তার ওপর আক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। তাই তার ওপর গোয়েন্দা নজরদারি অবশ্যই থাকবে। তবে আরেকটি সূত্রে জানানো হয়েছে, তিনি তার নিজস্ব কোন আশ্রয়ে চলে গেছেন। সিদ্দিকীর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের অনেকের ঘনিষ্ঠ পরিচয় রয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি অনেক দিন কলকাতার আশ্রয়ে ছিলেন। আবার পঁচাত্তর সালেও একবার তিনি পশ্চিমবঙ্গে চলে এসেছিলেন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য। সেবার তিনি বর্ধমানে তার ঘনিষ্ঠদের আশ্রয়ে ছিলেন। তবে এই মুহূর্তে লতিফ সিদ্দিকী পশ্চিমবঙ্গে থাকলেও দেশে ফেরার ব্যাপারে মনস্থির করে উঠতে পারেননি। তবে তার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে আভাস দেয়া হযেছে, তিনি দেশে না ফিরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কারও মাধ্যমে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে নানা জায়গায় তার বিরুদ্ধে যেভাবে একের পর এক মামলা করা হচ্ছে তাতে ঢাকায় পা দেয়া মাত্র তার গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা। আর গ্রেপ্তার করে তাকে জেলে রাখলেও তিনি যে নিরাপদ নন তার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সব জেলেই ইসলামী জঙ্গিদের আক্রোশের শিকার হওয়ার আশঙ্কাও প্রবল। তাই ঢাকা থেকে সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরই তিনি কি করবেন তা ঠিক করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে অভিজ্ঞ এক প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক জানিয়েছেন, লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে যেভাবে ব্যবস্থা সরকারি ও দলীয় স্তরে নেয়া হয়েছে সেখানে আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা যেসব দেশে রয়েছে সেখানেও তিনি চলে যেতে পারেন।
No comments