ভর্তি পরীক্ষা ও মেধা যাচাই by মো. শফিকুল ইসলাম
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণের নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হয়েছে। মেডিকেল কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হবে শিগগির। দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ২৯ এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৫৭। তা ছাড়া, রয়েছে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছয়টি মেডিকেল কলেজ। দেশের মেডিকেল শিক্ষায় এই বিশালসংখ্যক মেডিকেল কলেজে ভর্তির বিষয়টি আমাদের এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার দেশটির জন্য কৌতূহল উদ্দীপক। শোনা যায় ভর্তিসংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার বৈঠকে মিলিত হয়েছে। এসব বৈঠকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের প্রসঙ্গ প্রাধান্য পেয়েছে। হয়তো শিগগির এ–সংক্রান্ত ঘোষণা আসবে। এসব দিক বিবেচনায় এ নিবন্ধের অবতারণা।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ মূলত দুটি বিষয়ে তাদের অবস্থান চায়
১. ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম যোগ্যতা নম্বর কমিয়ে আনা, এমসিকিউ পরীক্ষার নেগেটিভ মার্কিং বাতিল ২. ভর্তির ফি স্বনির্ধারণের সুযোগ।
এ বছর সরকার ভর্তি নীতিমালায় স্বচ্ছতা আনয়নের লক্ষ্যে প্রস্তাবে এমসিকিউ পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪০ নম্বর প্রাপ্তিকে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হিসেবে ধরেছে। এই ৪০ নম্বরের ভেতর নেগেটিভ মার্কিং থাকবে অর্থাৎ প্রতি ভুলের জন্য ০.২৫ নম্বর বিয়োগ করা হবে। যাঁরা লিখিত পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪০ নম্বর পাবেন তাঁদের ক্ষেত্রেই কেবল মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার নম্বর যুক্ত হবে। মাধ্যমিকে প্রাপ্ত গ্রেডিংয়ের ৮ গুণ ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রাপ্ত গ্রেডিংয়ের ১২ গুণ এই হিসেবে নম্বর নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। মেডিকেল কলেজ সমিতি নির্বাচনী লিখিত পরীক্ষার ন্যূনতম নম্বর ৪০ থেকে কমিয়ে আনতে চায়। কেবল তা-ই নয়, তারা নেগেটিভ নম্বর উঠিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী।
নেগেটিভ নম্বর যদি উঠিয়ে দেওয়া হয় তাহলে মেধা যাচাইয়ে এ পরীক্ষার কার্যকারিতা থাকে না। কেননা, একজন শিক্ষার্থী উত্তর না জেনেও যদি প্রতিটি এমসিকিউ প্রশ্নের অনুমাননির্ভর একই ধারার উত্তর দেয়, তাহলেই তার ন্যূনতম স্কোর ৪০ হবে। কেননা, প্রশ্নমালার প্রতি প্রশ্নের ৫টি উত্তরের ভেতর সাধারণত ৬০ অথবা ৪০ শতাংশ সঠিক উত্তর থাকে। কাজেই কেউ যদি সব সঠিকের ঘরে দাগ দেয় তাহলে ৬০ বা ৪০ স্কোর তার হয়ে যাবে। নেগেটিভ মার্কিং ছাড়া এমসিকিউ পরীক্ষাপদ্ধতি তাই মেধা মূল্যায়নে দুর্বল মাপকাঠি হিসেবে পরিগণিত।
এ বছর ১১ লাখ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর ভেতর পাসের হার ছিল ৭৮.১০ শতাংশ। এর ভেতর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭০ হাজার ৬০২ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত এই বিশালসংখ্যক ছাত্রের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ গ্রহণ যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো অর্থের বিনিময়ে দেশি-বিদেশি ছাত্র ভর্তি করিয়ে থাকে। এখানে ছাত্রের মেধার বিষয়টি বড় নয়। নেগেটিভহীন পাস মার্ক রাখা হলে প্রশ্নের উত্তর না জেনেও অধিকাংশ পরীক্ষার্থী পাস নম্বর পেয়ে যাবে এবং এটি হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রচুর শিক্ষার্থী পাবে। ফলে ভর্তি–বাণিজ্যের বাজারে মোটা অঙ্কের মুনাফা লাভের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমি শব্দটি ‘মুনাফা’ হিসেবেই উল্লেখ করলাম। কেননা, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিদেশি ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতি ছাত্রের জন্য তাঁর প্রতিষ্ঠানে ‘এজেন্সি ফি’ দিয়ে থাকেন ২০০০ ডলার। তাঁর মতে, গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা যদি ‘বায়ার’ জোগাড় করার জন্য ‘ব্রোকার ফি’ প্রদান করতে পারে তাহলে আমরা তা পারব না কেন? অর্থাৎ অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টিতে মেডিকেল কলেজে ছাত্র ভর্তির বিষয়টি বাণিজ্যিক পর্যায়ে পড়ে। এখানে ছাত্রের যোগ্যতা ও মান আবশ্যকীয় বিষয় নয়।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো ফি নির্ধারণের ভূমিকা অবশ্যই প্রশ্নাতীত নয়। ভর্তি ফি আট লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফির সমন্বয়ে এই অর্থ প্রায় দ্বিগুণের মতো দাঁড়ায়। ডোনেশন হিসেবে অনেক অভিভাবককে তা পূরণ করতে হয়। এমনকি অনেক অভিভাবক ‘ঘুষ’ও দিয়ে থাকেন। যেসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অবকাঠামোগত দিক, শিক্ষকসংখ্যা, শিক্ষার পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনায় উন্নতমানের; সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ফি তুলনামূলকভাবে কম।
স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ যেভাবে যে ধারায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তা কি আমাদের দেশের জন্য অত্যাবশ্যক? বেসরকারি মেডিকেলগুলোতে শিক্ষকস্বল্পতা রয়েছে, শিক্ষা উপকরণের অভাব রয়েছে, সর্বোপরি রয়েছে শেখার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক রোগীর অভাব। এসব ত্রুটি নিয়ে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানে আর যাই হোক মানসম্পন্ন দক্ষ চিকিৎসক তৈরি সম্ভব নয়। অথচ আমাদের দেশে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজগুলোর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০২ সালে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ছিল ১২। তা পরের বছর দাঁড়ায় ১৪ এবং ২০০৫-এ দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায় ২৭-এ। পরবর্তী বছরগুলোতে এ ধারা অব্যাহত থাকে। ১২টি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন বাতিল সত্ত্বেও দেশে বর্তমানে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৫৭। পশ্চিমবঙ্গে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মাত্র একটি।
আমাদের দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা কি অপ্রতুল? ভৌগোলিক আয়তনের নিরিখে অবশ্যই অপ্রতুল নয়। আমাদের প্রতি বর্গমাইলের জন্য একজন করে চিকিৎসক রয়েছেন (২০১২ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সংখ্যা ৫৮,৯৭৭)। ২০১১ সালে প্রতি ২৫৮৬ জনসংখ্যার বিপরীতে একজন করে চিকিৎসক ছিলেন। চিকিৎসকের সংখ্যা ইতিমধ্যে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে!
কিন্তু চিকিৎসাসেবার মান বাড়েনি। প্রতিবছর অজস্র চিকিৎসক পাস করে বেরিয়ে এসে বিভিন্ন উপায়ে চিকিৎসাকর্মে নিয়োজিত হচ্ছেন। বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যুক্ত হচ্ছেন। এসব ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার রোগীদের মানসম্পন্ন সেবা দেওয়ার চেয়ে অর্থোপার্জনের বিষয়টিকে বড় করে দেখে। এমতাবস্থায় আমাদের দেশে চিকিৎসক তৈরির এ ধারা বজায় রাখা কি উচিত, এ প্রশ্নের জবাব অবশ্যই আমাদের খুঁজতে হবে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো সম্পর্কে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে এসব প্রতিষ্ঠানের পেছনের মানুষগুলো অনেক শক্তিশালী। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন বাস্তবমুখী সুস্পষ্ট নীতিমালা ও সুস্থ ধারার সামাজিক আন্দোলন।
মো. শফিকুল ইসলাম: বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ মূলত দুটি বিষয়ে তাদের অবস্থান চায়
১. ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম যোগ্যতা নম্বর কমিয়ে আনা, এমসিকিউ পরীক্ষার নেগেটিভ মার্কিং বাতিল ২. ভর্তির ফি স্বনির্ধারণের সুযোগ।
এ বছর সরকার ভর্তি নীতিমালায় স্বচ্ছতা আনয়নের লক্ষ্যে প্রস্তাবে এমসিকিউ পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪০ নম্বর প্রাপ্তিকে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হিসেবে ধরেছে। এই ৪০ নম্বরের ভেতর নেগেটিভ মার্কিং থাকবে অর্থাৎ প্রতি ভুলের জন্য ০.২৫ নম্বর বিয়োগ করা হবে। যাঁরা লিখিত পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪০ নম্বর পাবেন তাঁদের ক্ষেত্রেই কেবল মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার নম্বর যুক্ত হবে। মাধ্যমিকে প্রাপ্ত গ্রেডিংয়ের ৮ গুণ ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রাপ্ত গ্রেডিংয়ের ১২ গুণ এই হিসেবে নম্বর নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। মেডিকেল কলেজ সমিতি নির্বাচনী লিখিত পরীক্ষার ন্যূনতম নম্বর ৪০ থেকে কমিয়ে আনতে চায়। কেবল তা-ই নয়, তারা নেগেটিভ নম্বর উঠিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী।
নেগেটিভ নম্বর যদি উঠিয়ে দেওয়া হয় তাহলে মেধা যাচাইয়ে এ পরীক্ষার কার্যকারিতা থাকে না। কেননা, একজন শিক্ষার্থী উত্তর না জেনেও যদি প্রতিটি এমসিকিউ প্রশ্নের অনুমাননির্ভর একই ধারার উত্তর দেয়, তাহলেই তার ন্যূনতম স্কোর ৪০ হবে। কেননা, প্রশ্নমালার প্রতি প্রশ্নের ৫টি উত্তরের ভেতর সাধারণত ৬০ অথবা ৪০ শতাংশ সঠিক উত্তর থাকে। কাজেই কেউ যদি সব সঠিকের ঘরে দাগ দেয় তাহলে ৬০ বা ৪০ স্কোর তার হয়ে যাবে। নেগেটিভ মার্কিং ছাড়া এমসিকিউ পরীক্ষাপদ্ধতি তাই মেধা মূল্যায়নে দুর্বল মাপকাঠি হিসেবে পরিগণিত।
এ বছর ১১ লাখ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর ভেতর পাসের হার ছিল ৭৮.১০ শতাংশ। এর ভেতর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭০ হাজার ৬০২ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত এই বিশালসংখ্যক ছাত্রের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ গ্রহণ যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো অর্থের বিনিময়ে দেশি-বিদেশি ছাত্র ভর্তি করিয়ে থাকে। এখানে ছাত্রের মেধার বিষয়টি বড় নয়। নেগেটিভহীন পাস মার্ক রাখা হলে প্রশ্নের উত্তর না জেনেও অধিকাংশ পরীক্ষার্থী পাস নম্বর পেয়ে যাবে এবং এটি হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রচুর শিক্ষার্থী পাবে। ফলে ভর্তি–বাণিজ্যের বাজারে মোটা অঙ্কের মুনাফা লাভের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমি শব্দটি ‘মুনাফা’ হিসেবেই উল্লেখ করলাম। কেননা, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিদেশি ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতি ছাত্রের জন্য তাঁর প্রতিষ্ঠানে ‘এজেন্সি ফি’ দিয়ে থাকেন ২০০০ ডলার। তাঁর মতে, গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা যদি ‘বায়ার’ জোগাড় করার জন্য ‘ব্রোকার ফি’ প্রদান করতে পারে তাহলে আমরা তা পারব না কেন? অর্থাৎ অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টিতে মেডিকেল কলেজে ছাত্র ভর্তির বিষয়টি বাণিজ্যিক পর্যায়ে পড়ে। এখানে ছাত্রের যোগ্যতা ও মান আবশ্যকীয় বিষয় নয়।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো ফি নির্ধারণের ভূমিকা অবশ্যই প্রশ্নাতীত নয়। ভর্তি ফি আট লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফির সমন্বয়ে এই অর্থ প্রায় দ্বিগুণের মতো দাঁড়ায়। ডোনেশন হিসেবে অনেক অভিভাবককে তা পূরণ করতে হয়। এমনকি অনেক অভিভাবক ‘ঘুষ’ও দিয়ে থাকেন। যেসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অবকাঠামোগত দিক, শিক্ষকসংখ্যা, শিক্ষার পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনায় উন্নতমানের; সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ফি তুলনামূলকভাবে কম।
স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ যেভাবে যে ধারায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তা কি আমাদের দেশের জন্য অত্যাবশ্যক? বেসরকারি মেডিকেলগুলোতে শিক্ষকস্বল্পতা রয়েছে, শিক্ষা উপকরণের অভাব রয়েছে, সর্বোপরি রয়েছে শেখার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক রোগীর অভাব। এসব ত্রুটি নিয়ে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানে আর যাই হোক মানসম্পন্ন দক্ষ চিকিৎসক তৈরি সম্ভব নয়। অথচ আমাদের দেশে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজগুলোর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০২ সালে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ছিল ১২। তা পরের বছর দাঁড়ায় ১৪ এবং ২০০৫-এ দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায় ২৭-এ। পরবর্তী বছরগুলোতে এ ধারা অব্যাহত থাকে। ১২টি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন বাতিল সত্ত্বেও দেশে বর্তমানে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৫৭। পশ্চিমবঙ্গে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মাত্র একটি।
আমাদের দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা কি অপ্রতুল? ভৌগোলিক আয়তনের নিরিখে অবশ্যই অপ্রতুল নয়। আমাদের প্রতি বর্গমাইলের জন্য একজন করে চিকিৎসক রয়েছেন (২০১২ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সংখ্যা ৫৮,৯৭৭)। ২০১১ সালে প্রতি ২৫৮৬ জনসংখ্যার বিপরীতে একজন করে চিকিৎসক ছিলেন। চিকিৎসকের সংখ্যা ইতিমধ্যে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে!
কিন্তু চিকিৎসাসেবার মান বাড়েনি। প্রতিবছর অজস্র চিকিৎসক পাস করে বেরিয়ে এসে বিভিন্ন উপায়ে চিকিৎসাকর্মে নিয়োজিত হচ্ছেন। বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যুক্ত হচ্ছেন। এসব ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার রোগীদের মানসম্পন্ন সেবা দেওয়ার চেয়ে অর্থোপার্জনের বিষয়টিকে বড় করে দেখে। এমতাবস্থায় আমাদের দেশে চিকিৎসক তৈরির এ ধারা বজায় রাখা কি উচিত, এ প্রশ্নের জবাব অবশ্যই আমাদের খুঁজতে হবে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো সম্পর্কে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে এসব প্রতিষ্ঠানের পেছনের মানুষগুলো অনেক শক্তিশালী। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন বাস্তবমুখী সুস্পষ্ট নীতিমালা ও সুস্থ ধারার সামাজিক আন্দোলন।
মো. শফিকুল ইসলাম: বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments