চারুশিল্প মানুষের জন্য শিল্প by বসন্ত চৌধুরী
সমাজ নির্মাণ ও সামাজিক দায়বদ্ধতায়
শিল্পীরা যুক্ত হন সব সময়। সাভারে রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক প্রাণহানি ও
আহত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য হাত বাড়িয়েছেন শিল্পীরা। তাঁদের
অনিন্দ্য-সুন্দর শিল্পকর্ম নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে গ্যালারি চিত্রক।
প্রদর্শনী সাজানো হয়েছে ৩০ জন অগ্রজ ও অনুজ শিল্পীর কাজ দিয়ে। মোট শিল্পকমের সংখ্যা ৫০-এর অধিক।
শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের সাদাকালো রঙের কাঠখোদাই মাধ্যমের ছাপচিত্রের প্রদর্শনে দর্শকদের কাছে এ প্রদর্শনীর গুরুত্ব বেড়েছে। দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, দুঃসময়ে আর্তমানবতার দিকে এ দেশের শিল্পীরা সব সময়ই এগিয়ে এসেছেন। শিল্পীরা মানুষের প্রয়োজনে নিজেদের যুক্ত করেছেন তাঁদের শিল্পকর্ম থেকে প্রাপ্ত অর্থ সাহায্য দিয়ে। গ্যালারি চিত্রকের এ আয়োজনের শিরোনাম ‘হিউম্যান বিং ফর হিউম্যানিটি’। মানুষের জন্য শিল্প।
শিল্পীদের শিল্পকর্মের বিষয়ে মানুষই সব সময় প্রাধান্য পেয়ে থাকে। দুনিয়ার দেশে দেশে শিল্পকলার সঙ্গে সম্পৃক্ত শিল্পী, সমঝদার সংগ্রাহক সব সময় মানুষের দুর্যোগে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এ প্রদর্শনী থেকে প্রাপ্ত অর্থ মানুষের দুর্দশা লাঘবে সহায়তা করবে।
প্রদর্শনীর উল্লেখযোগ্য দিক হলো এতে শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের কালো কালিতে কাঠখোদাই প্রিন্টের প্রদর্শন। বিষয় ও আলোছায়ার বিপরীত উপস্থাপনে ছবিটি দর্শকদের ছাপচিত্র মাধ্যমের শুরুর দিকের সৃজনশৈলী মনে করিয়ে দেয়। শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদের কাজটি ১৯৫০ সালে করা। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী একেবারে সাম্প্রতিক কাজের মাধ্যমে পাখি, প্রজাপতি ও ছাইরঙা জ্যামিতিক আকৃতির বিন্যাস দেখিয়েছেন। ক্যানভাসের উপরিভাগের লাল রঙের উল্লম্ব আকৃতি পুরো ছবিতে দ্যুতি ছড়ায়। রফিকুন নবী এই নগরের কাকের কথোপকথনকে ছবির বিষয় করেছেন। দুটি কাকের মুখোমুখি চাহনির সঙ্গে দূরে দেখা যায় বিন্দু ও জ্যামিতির আড়াআড়ি চলন। জামাল আহমেদ নদীর বুক থেকে ফেরা একদল জেলের সারি দেখিয়েছেন ভাটায় পড়া সমুদ্রকূল এঁকে।
জামাল আহমেদের ছবির ভাষা বাস্তব। অঙ্কনরীতিতে ভাঙন আনেন দ্রুতলয়ের ওয়াশ দিয়ে। মোহাম্মদ ইউনুস জ্যামিতিতে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। এ প্রদর্শনীর কাজটি মেটে হলুদ, নীল আর কালো সূক্ষ্ম রেখার সাহায্যে করা, যা বেশ কয়েক বছর ধরে ইউনুস উপস্থাপন করে চলেছেন। শিল্পী মুর্তজা বশীর হ্যান্ড মেইড পেপারে নারীমুখ এঁকেছেন রেখাচিত্রে। রেখাচিত্রের দক্ষ রেখার বিরামহীন চলনে ছবিতে স্নিগ্ধ রূপ স্পষ্ট হয়েছে। শিল্পী হাশেম খান বান্ট সিয়েনা রঙে একতারা হাতে বাউল এঁকেছেন। চিত্রতলে রেখার দ্রুতগতি এসে বিষয়কে এক কেন্দ্রে এনেছে। শহীদ কবির স্নানরতা রমণীর দেহাবয়বে যে ছন্দ উপস্থিত হয়, তা এঁকেছেন টেম্পারা মাধ্যমে। জলরং, তেলরং মাধ্যমের প্রথাগত কাজের বাইরে চিত্রকলার আদি মাধ্যমে এগ টেম্পোরায় গত এক দশক তিনি কাজ করছেন।
সৈয়দ জাহাঙ্গীর নদীর ঘাটে নৌকার অপেক্ষা এঁকেছেন কালি ও ব্রাশের টানে। রেখার গতিতে নিসর্গের ছন্দ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শিশির ভট্টাচার্য্য একরঙা কাগজে রেখার বিরামহীন চলনে সমাজে চলতে থাকা মানুষের নিত্য দেখা মুখের সঙ্গে গাছ ও পাখির সম্পর্ক তৈরি করে শিল্পকলার সরল ভাষা বলতে থাকেন। কর্তিত হাতের ওপর মাছ, তার ভেতরে কাগজের নৌকা আমাদের জানান দেয় অনিশ্চিত যাত্রার কথা। আহমেদ শামছুদ্দোহা মেঘলা আকাশের সঙ্গে জলাভূমির বুকে উঁকি দেওয়া ছোট্ট ঘর ও নৌকার অবস্থান এঁকেছেন বাস্তব রীতিতে। নিসার হোসেন গাঢ় নীল, হালকা নীলের জমিন তৈরি করে তার ভেতরে হাঁ করা প্রাণীর অবয়ব রেখাচিত্রে এঁকেছেন। স্থূল ও সূক্ষ্ম রেখার ব্যবহারে বিষয়কে তিনি তুলে আনেন। আবদুস শাকুর শাহ লোকজ ঢঙের অঙ্কনরীতির মাধ্যমে শ্লোক লিখে তিনজন পুরুষ ও দুজন নারীমুখের অভিব্যক্তি তাঁর ক্যানভাসে হাজির করেছেন। এ মুখগুলো বেদে সম্প্রদায়ের মানুষের। ছবিতে লেখা শ্লোক মুখাবয়বের সঙ্গে বন্ধনে যুক্ত হয়েছে। মানসলোকের প্রতিফলন হচ্ছে শিল্পীর শিল্পকর্ম।
বাস্তব, আধা বিমূর্ত, বিমূর্ত নানা রীতির কাজের প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিল্পীরা আবারও জানিয়ে দিলেন শিল্পের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্য শিল্প। শিল্পীরা সব সময়ই মানুষের পাশে দাঁড়ান, সঙ্গে থাকে তাঁদের শিল্পকর্ম। প্রদর্শনীটি ৮ জুন শুরু হয়ে শেষ হয় ১৬ জুন।
প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত শিল্পকর্মের শিল্পীরা হলেন সফিউদ্দীন আহমেদ, কাইয়ুম চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, তাহেরা খানম, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, হাশেম খান, রফিকুন নবী, মনিরুল ইসরাম, আবদুল মান্নান, আবুল বারক আলভী, হামিদুজ্জামান খান, আবদুস শাকুর শাহ, বীরেন সোম, শহীদ কবির, নাসিম আহমেদ নাদভী, নাইমা হক, জামাল আহমেদ, নাসরীন বেগম, মোস্তাফিজুল হক, মোহাম্মদ ইউনুস, শামছুদ্দোহা, নিসার হোসেন, ওয়াকিলুর রহমান, শেখ আফজাল, মুনিরুজ্জামান, খালিদ মাহমুদ মিঠু, কনক চাঁপা চাকমা, আহমেদ নাজির, মোহাম্মদ ইকবাল, জহির উদ্দিন, রশিদ আমিন, কাজী সালাউদ্দিন আহমেদ, আনিসুজ্জামান, শাহজাহান আহমেদ, দুলাল চন্দ্র গাইন, শাফিন ওমর, এ এইচ ঢালী তমাল, চঞ্চল কর্মকার, আব্দুস সাত্তার তৌফিক, সহিদ কাজী।
শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের সাদাকালো রঙের কাঠখোদাই মাধ্যমের ছাপচিত্রের প্রদর্শনে দর্শকদের কাছে এ প্রদর্শনীর গুরুত্ব বেড়েছে। দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, দুঃসময়ে আর্তমানবতার দিকে এ দেশের শিল্পীরা সব সময়ই এগিয়ে এসেছেন। শিল্পীরা মানুষের প্রয়োজনে নিজেদের যুক্ত করেছেন তাঁদের শিল্পকর্ম থেকে প্রাপ্ত অর্থ সাহায্য দিয়ে। গ্যালারি চিত্রকের এ আয়োজনের শিরোনাম ‘হিউম্যান বিং ফর হিউম্যানিটি’। মানুষের জন্য শিল্প।
শিল্পীদের শিল্পকর্মের বিষয়ে মানুষই সব সময় প্রাধান্য পেয়ে থাকে। দুনিয়ার দেশে দেশে শিল্পকলার সঙ্গে সম্পৃক্ত শিল্পী, সমঝদার সংগ্রাহক সব সময় মানুষের দুর্যোগে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এ প্রদর্শনী থেকে প্রাপ্ত অর্থ মানুষের দুর্দশা লাঘবে সহায়তা করবে।
প্রদর্শনীর উল্লেখযোগ্য দিক হলো এতে শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের কালো কালিতে কাঠখোদাই প্রিন্টের প্রদর্শন। বিষয় ও আলোছায়ার বিপরীত উপস্থাপনে ছবিটি দর্শকদের ছাপচিত্র মাধ্যমের শুরুর দিকের সৃজনশৈলী মনে করিয়ে দেয়। শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদের কাজটি ১৯৫০ সালে করা। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী একেবারে সাম্প্রতিক কাজের মাধ্যমে পাখি, প্রজাপতি ও ছাইরঙা জ্যামিতিক আকৃতির বিন্যাস দেখিয়েছেন। ক্যানভাসের উপরিভাগের লাল রঙের উল্লম্ব আকৃতি পুরো ছবিতে দ্যুতি ছড়ায়। রফিকুন নবী এই নগরের কাকের কথোপকথনকে ছবির বিষয় করেছেন। দুটি কাকের মুখোমুখি চাহনির সঙ্গে দূরে দেখা যায় বিন্দু ও জ্যামিতির আড়াআড়ি চলন। জামাল আহমেদ নদীর বুক থেকে ফেরা একদল জেলের সারি দেখিয়েছেন ভাটায় পড়া সমুদ্রকূল এঁকে।
জামাল আহমেদের ছবির ভাষা বাস্তব। অঙ্কনরীতিতে ভাঙন আনেন দ্রুতলয়ের ওয়াশ দিয়ে। মোহাম্মদ ইউনুস জ্যামিতিতে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। এ প্রদর্শনীর কাজটি মেটে হলুদ, নীল আর কালো সূক্ষ্ম রেখার সাহায্যে করা, যা বেশ কয়েক বছর ধরে ইউনুস উপস্থাপন করে চলেছেন। শিল্পী মুর্তজা বশীর হ্যান্ড মেইড পেপারে নারীমুখ এঁকেছেন রেখাচিত্রে। রেখাচিত্রের দক্ষ রেখার বিরামহীন চলনে ছবিতে স্নিগ্ধ রূপ স্পষ্ট হয়েছে। শিল্পী হাশেম খান বান্ট সিয়েনা রঙে একতারা হাতে বাউল এঁকেছেন। চিত্রতলে রেখার দ্রুতগতি এসে বিষয়কে এক কেন্দ্রে এনেছে। শহীদ কবির স্নানরতা রমণীর দেহাবয়বে যে ছন্দ উপস্থিত হয়, তা এঁকেছেন টেম্পারা মাধ্যমে। জলরং, তেলরং মাধ্যমের প্রথাগত কাজের বাইরে চিত্রকলার আদি মাধ্যমে এগ টেম্পোরায় গত এক দশক তিনি কাজ করছেন।
সৈয়দ জাহাঙ্গীর নদীর ঘাটে নৌকার অপেক্ষা এঁকেছেন কালি ও ব্রাশের টানে। রেখার গতিতে নিসর্গের ছন্দ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শিশির ভট্টাচার্য্য একরঙা কাগজে রেখার বিরামহীন চলনে সমাজে চলতে থাকা মানুষের নিত্য দেখা মুখের সঙ্গে গাছ ও পাখির সম্পর্ক তৈরি করে শিল্পকলার সরল ভাষা বলতে থাকেন। কর্তিত হাতের ওপর মাছ, তার ভেতরে কাগজের নৌকা আমাদের জানান দেয় অনিশ্চিত যাত্রার কথা। আহমেদ শামছুদ্দোহা মেঘলা আকাশের সঙ্গে জলাভূমির বুকে উঁকি দেওয়া ছোট্ট ঘর ও নৌকার অবস্থান এঁকেছেন বাস্তব রীতিতে। নিসার হোসেন গাঢ় নীল, হালকা নীলের জমিন তৈরি করে তার ভেতরে হাঁ করা প্রাণীর অবয়ব রেখাচিত্রে এঁকেছেন। স্থূল ও সূক্ষ্ম রেখার ব্যবহারে বিষয়কে তিনি তুলে আনেন। আবদুস শাকুর শাহ লোকজ ঢঙের অঙ্কনরীতির মাধ্যমে শ্লোক লিখে তিনজন পুরুষ ও দুজন নারীমুখের অভিব্যক্তি তাঁর ক্যানভাসে হাজির করেছেন। এ মুখগুলো বেদে সম্প্রদায়ের মানুষের। ছবিতে লেখা শ্লোক মুখাবয়বের সঙ্গে বন্ধনে যুক্ত হয়েছে। মানসলোকের প্রতিফলন হচ্ছে শিল্পীর শিল্পকর্ম।
বাস্তব, আধা বিমূর্ত, বিমূর্ত নানা রীতির কাজের প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিল্পীরা আবারও জানিয়ে দিলেন শিল্পের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্য শিল্প। শিল্পীরা সব সময়ই মানুষের পাশে দাঁড়ান, সঙ্গে থাকে তাঁদের শিল্পকর্ম। প্রদর্শনীটি ৮ জুন শুরু হয়ে শেষ হয় ১৬ জুন।
প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত শিল্পকর্মের শিল্পীরা হলেন সফিউদ্দীন আহমেদ, কাইয়ুম চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, তাহেরা খানম, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, হাশেম খান, রফিকুন নবী, মনিরুল ইসরাম, আবদুল মান্নান, আবুল বারক আলভী, হামিদুজ্জামান খান, আবদুস শাকুর শাহ, বীরেন সোম, শহীদ কবির, নাসিম আহমেদ নাদভী, নাইমা হক, জামাল আহমেদ, নাসরীন বেগম, মোস্তাফিজুল হক, মোহাম্মদ ইউনুস, শামছুদ্দোহা, নিসার হোসেন, ওয়াকিলুর রহমান, শেখ আফজাল, মুনিরুজ্জামান, খালিদ মাহমুদ মিঠু, কনক চাঁপা চাকমা, আহমেদ নাজির, মোহাম্মদ ইকবাল, জহির উদ্দিন, রশিদ আমিন, কাজী সালাউদ্দিন আহমেদ, আনিসুজ্জামান, শাহজাহান আহমেদ, দুলাল চন্দ্র গাইন, শাফিন ওমর, এ এইচ ঢালী তমাল, চঞ্চল কর্মকার, আব্দুস সাত্তার তৌফিক, সহিদ কাজী।
No comments