জুটেছে 'সন্ত্রাসী' তকমাও
একান্ন বছর আগে কোনো এক বৃহস্পতিবার।
সম্রাট হাইলে সেলাসির ইথিওপিয়ায় এসে পৌঁছলেন টগবগে তরুণ নেলসন ম্যান্ডেলা।
উদ্দেশ্য গেরিলা প্রশিক্ষণ নেবেন। শুধু একতরফা অহিংস আন্দোলন দিয়ে বর্ণবাদী
শ্বেতাঙ্গ সরকারের মন বদলানো যাবে না।
তাদের অত্যাচার-নিপীড়নকে রুখতে আন্দোলনেও কিছুটা কঠোরতা যোগ করতে হবে।
আট সপ্তাহের প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফেরার অল্প কয়েক দিন পরই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ম্যান্ডেলা। যে ম্যান্ডেলা কখনো যুদ্ধ করেননি, শত্রুর বিরুদ্ধে কোনোদিন একটি গুলিও ছোড়েননি, তাঁরই চরিত্রের ওপর বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ও তার পশ্চিমা মিত্ররা লাগিয়ে দিল 'সন্ত্রাসীর' তকমা। ম্যান্ডেলার ভাষায়, সে সময় অস্ত্র ধরার বিষয়টি দলের জন্য যেমন অনিবার্য ছিল, তেমনি নিয়তি নির্ধারিত ছিল তাঁর 'সন্ত্রাসী' তকমার বিষয়টি।
দক্ষিণ অফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মুখে শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৬০ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) দলকে নিষিদ্ধ করে। এমন পরিস্থিতিতে দলের সামরিক শাখা খোলার দায়িত্ব দেওয়া হয় ম্যান্ডেলাকে। দায়িত্ব পাওয়ার পর ম্যান্ডেলা প্রাথমিকভাবে বিপ্লবের তাত্তি্বক দিক নিয়ে পড়াশোনার ওপর গুরুত্ব দেন। পড়তে শুরু করেন বিপ্লবী চে গুয়েভারা, ফিদেল কাস্ত্রো, মাও জে দং ও মেনাখেম বেগিনের মতো লোকদের রচনা। কিছুদিন ডুবে থাকেন বোয়ের যুদ্ধের ইতিহাসে। কিন্তু তিনি অচিরেই বুঝতে পারেন শুধু তত্ত্বের চর্চায় সাফল্য আসবে না। এর বাস্তব প্রয়োগের গুরুত্ব অনেক বেশি।
ওই সময়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে পরে ম্যান্ডেলা বলেন, 'সে সময় ওই সিদ্ধান্তটি (সামরিক শাখা খোলা) নেওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কোনো ধরনের প্রশ্ন বা বিতর্ক ছাড়াই এএনসি ৫০ বছর ধরে অহিংস আন্দোলন চালিয়েছিল। যে আমি কোনোদিন সৈন্য ছিলাম না, কখনো কোনো যুদ্ধ করিনি, শত্রুর বিরুদ্ধে কোনোদিন একটি গুলিও ছুড়িনি, সেই আমাকেই দেওয়া হলো পার্টির জন্য সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার দায়িত্ব।' তাঁর হাত ধরেই এএনসির সামরিক শাখা 'উমখোন্তো উই সিজউয়ি' বা 'স্পিয়ার অব দ্য ন্যাশন' প্রতিষ্ঠিত হয়।
ডেভিড মোৎসামায়ির সহযোগিতায় ১৯৬২ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ম্যান্ডেলা আফ্রিকার স্বাধীন দেশগুলো সফর করেন এবং আন্দোলনের তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা চালান। ওই সময়ে তিনি বতসোয়ানা (তৎকালীন বেচুয়ানাল্যান্ড), তানজানিয়া (তৎকালীন তানজানিকা), সুদান, ইথিওপিয়া, মিসর, তিউনিসিয়া, মরক্কো, মালি, গিনি, সিয়েরালিয়ন, ঘানা এবং সেনেগালে যান। কয়েক দিন লন্ডনে থাকার পর তিনি ইথিওপিয়ায় চলে আসেন আট সপ্তাহের সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য। সেখানে তিনি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল চালানো শেখেন। শেখেন পিস্তল চালানো, মর্টার ব্যবহার, বোমা ও মাইন তৈরি এবং একই সঙ্গে এসব অস্ত্র থেকে বাঁচার কৌশল।
ম্যান্ডেলা বলেন, 'সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত টানা প্রশিক্ষণ নিতাম। তারপর গোসল ও খাওয়া সেরে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আবারও প্রশিক্ষণ। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আমাকে শুনতে হতো সামরিক বিজ্ঞানের লেকচার। ওই সময়ে আমি পুরোদস্তুর একজন সেনা হয়ে উঠেছিলাম। রাজনীতিকের মতো নয়, চিন্তাও করতে শুরু করেছিলাম একজন সেনার মতোই।'
কিন্তু এএনসির সশস্ত্র শাখা প্রতিষ্ঠার সেই অনিবার্যতার মতোই নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনেও দুর্ভাগ্য আসে। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফেরার পর ১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। বেআইনিভাবে দেশ ছাড়াসহ আরো বেশ কিছু অভিযোগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। পরে কারাগারে থাকাকালে নাশকতা ও সরকার উচ্ছেদের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করা হয়। কারাগারে কাটাতে হয় ২৭টি বছর। দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী সরকার ও তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো ম্যান্ডেলার ভাবমূর্তির ওপর 'সন্ত্রাসীর' কলঙ্কটি লাগিয়ে দেয়। সূত্র : এএফপি।
আট সপ্তাহের প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফেরার অল্প কয়েক দিন পরই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ম্যান্ডেলা। যে ম্যান্ডেলা কখনো যুদ্ধ করেননি, শত্রুর বিরুদ্ধে কোনোদিন একটি গুলিও ছোড়েননি, তাঁরই চরিত্রের ওপর বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ও তার পশ্চিমা মিত্ররা লাগিয়ে দিল 'সন্ত্রাসীর' তকমা। ম্যান্ডেলার ভাষায়, সে সময় অস্ত্র ধরার বিষয়টি দলের জন্য যেমন অনিবার্য ছিল, তেমনি নিয়তি নির্ধারিত ছিল তাঁর 'সন্ত্রাসী' তকমার বিষয়টি।
দক্ষিণ অফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মুখে শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৬০ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) দলকে নিষিদ্ধ করে। এমন পরিস্থিতিতে দলের সামরিক শাখা খোলার দায়িত্ব দেওয়া হয় ম্যান্ডেলাকে। দায়িত্ব পাওয়ার পর ম্যান্ডেলা প্রাথমিকভাবে বিপ্লবের তাত্তি্বক দিক নিয়ে পড়াশোনার ওপর গুরুত্ব দেন। পড়তে শুরু করেন বিপ্লবী চে গুয়েভারা, ফিদেল কাস্ত্রো, মাও জে দং ও মেনাখেম বেগিনের মতো লোকদের রচনা। কিছুদিন ডুবে থাকেন বোয়ের যুদ্ধের ইতিহাসে। কিন্তু তিনি অচিরেই বুঝতে পারেন শুধু তত্ত্বের চর্চায় সাফল্য আসবে না। এর বাস্তব প্রয়োগের গুরুত্ব অনেক বেশি।
ওই সময়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে পরে ম্যান্ডেলা বলেন, 'সে সময় ওই সিদ্ধান্তটি (সামরিক শাখা খোলা) নেওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কোনো ধরনের প্রশ্ন বা বিতর্ক ছাড়াই এএনসি ৫০ বছর ধরে অহিংস আন্দোলন চালিয়েছিল। যে আমি কোনোদিন সৈন্য ছিলাম না, কখনো কোনো যুদ্ধ করিনি, শত্রুর বিরুদ্ধে কোনোদিন একটি গুলিও ছুড়িনি, সেই আমাকেই দেওয়া হলো পার্টির জন্য সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার দায়িত্ব।' তাঁর হাত ধরেই এএনসির সামরিক শাখা 'উমখোন্তো উই সিজউয়ি' বা 'স্পিয়ার অব দ্য ন্যাশন' প্রতিষ্ঠিত হয়।
ডেভিড মোৎসামায়ির সহযোগিতায় ১৯৬২ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ম্যান্ডেলা আফ্রিকার স্বাধীন দেশগুলো সফর করেন এবং আন্দোলনের তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা চালান। ওই সময়ে তিনি বতসোয়ানা (তৎকালীন বেচুয়ানাল্যান্ড), তানজানিয়া (তৎকালীন তানজানিকা), সুদান, ইথিওপিয়া, মিসর, তিউনিসিয়া, মরক্কো, মালি, গিনি, সিয়েরালিয়ন, ঘানা এবং সেনেগালে যান। কয়েক দিন লন্ডনে থাকার পর তিনি ইথিওপিয়ায় চলে আসেন আট সপ্তাহের সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য। সেখানে তিনি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল চালানো শেখেন। শেখেন পিস্তল চালানো, মর্টার ব্যবহার, বোমা ও মাইন তৈরি এবং একই সঙ্গে এসব অস্ত্র থেকে বাঁচার কৌশল।
ম্যান্ডেলা বলেন, 'সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত টানা প্রশিক্ষণ নিতাম। তারপর গোসল ও খাওয়া সেরে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আবারও প্রশিক্ষণ। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আমাকে শুনতে হতো সামরিক বিজ্ঞানের লেকচার। ওই সময়ে আমি পুরোদস্তুর একজন সেনা হয়ে উঠেছিলাম। রাজনীতিকের মতো নয়, চিন্তাও করতে শুরু করেছিলাম একজন সেনার মতোই।'
কিন্তু এএনসির সশস্ত্র শাখা প্রতিষ্ঠার সেই অনিবার্যতার মতোই নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনেও দুর্ভাগ্য আসে। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফেরার পর ১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। বেআইনিভাবে দেশ ছাড়াসহ আরো বেশ কিছু অভিযোগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। পরে কারাগারে থাকাকালে নাশকতা ও সরকার উচ্ছেদের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করা হয়। কারাগারে কাটাতে হয় ২৭টি বছর। দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী সরকার ও তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো ম্যান্ডেলার ভাবমূর্তির ওপর 'সন্ত্রাসীর' কলঙ্কটি লাগিয়ে দেয়। সূত্র : এএফপি।
No comments