এসো নীপবনে ‘রুট্স’ by আবুল হায়াত
দুই হাত তুলে মোনাজাত করছিলাম। একসময় অনুভব করলাম, সারা শরীর আমার রোমাঞ্চিত হচ্ছে, দৃষ্টি হয়ে এসেছে ঝাপসা, আমি কাঁদছি।
সম্মুখে আমার পারিবারিক গোরস্থান।
সম্মুখে আমার পারিবারিক গোরস্থান।
ঘাস আর আগাছায় ভরা। এখানে শুয়ে আছেন আমার দাদা, যাঁর মৃত্যু আমার জন্মের
আগেই। আছেন দাদিজান, চাচা এবং পূর্বপুরুষ অন্য আরও কেউ কেউ, যাঁদের
সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই নেই। মনে হচ্ছিল, ওঁরা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে।
গা ছমছম করে ওঠে।
আমি এখানে এসেছি ছাপান্ন বছর পর। জায়গাটার নাম জজান। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমায়। এখানেই এই অধমের জন্মটা হয়েছিল ১৯৪৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। বাবা চাকরি করতেন রেল কোম্পানিতে। সেই বছরই কলকাতা থেকে বদলি হয়ে চলে যান সুদূর চট্টগ্রামে। সাতচল্লিশে দেশভাগের কারণে বাবা সে বছরই ডিসেম্বরে বাক্সপেটরাসহ আমাদের নিয়ে তুলেছিলেন সুন্দরী চট্টলা শহরের টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনিতে। তারপর জীবনের বাইশটি বছর কেটেছে টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনির টি-৩৭ বি নম্বর বাড়িতে। মাঝে বুয়েটে পড়ার সময়টা দেশ বলতে চট্টগ্রামই ছিল। কিন্তু মুর্শিদাবাদের জজান গ্রামটাকে কোনো দিন মনে হয়নি ‘দেশ’ বলে।
মনে যতটুকু স্মৃতি আছে জজানের, তা হচ্ছে ১৯৫৬ সালে একবার, হ্যাঁ, ওই একবারই মায়ের সঙ্গে গিয়ে এক মাস বেড়িয়ে এসেছিলাম। আজ থেকে ৫৭ বছর আগের ভাসা ভাসা ছবি। বেশ বড় উঠানের দুই দিকজুড়ে ইংরেজি এল প্যাটার্নের দোতলা মাটির কোঠা। উঠানের এক কোনায় রান্নাঘর, বেশ বড়সড়ই। খিড়কির দরজা খুললেই পুকুর। সদর দরজার বাইরেই দহলিজ ঘর। দাদাজানের মজলিস হতো সেখানে। তিনি ছিলেন পীর। দহলিজের সামনে বিশাল এক পুকুর।
মনে পড়ে, তখন বাড়ি ছিল রমরমা। চাচা-চাচি দুজনেই ছিলেন, ছিল কয়েকজন চাচাতো ভাইবোন। আর ছিলেন দাদিজান।
কবরস্থানের সামনে দাঁড়িয়ে সেই সব ভাঙা ভাঙা ছবি ভাসছিল চোখে। আর মনটা খারাপ লাগছিল অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা কবরস্থান দেখে।
মোনাজাত শেষ করে চোখ মুছে ভালো করে চারদিকটা দেখলাম আরেকবার। না, সব নারকেলগাছ আগের মতো নেই। কত নারকেলগাছ ছিল বাড়ির চারধারে। আর ছিল প্রচুর হনুমান। এখনো মনে পড়ছে প্রাচীরে হেঁটে বেড়াচ্ছে আর ভেংচি কাটছে। বীর হনুমান দেখলেই ভয়ে দৌড়াতাম আমরা।
নেই, তাদের দেখা পেলাম না। বিশাল উঠানটা আগাছায় ভরা। যত্ন নেওয়ার সময় নেই কারও। কোঠাবাড়িটা নেই—সাতাত্তরের বন্যায় নাকি গলে ধসে গেছে। দহলিজেরও একই পরিণতি। চার চাচাতো ভাই নিজ নিজ সামর্থ্যে চার কোনায় বাড়ি তুলেছে। কেউ পাকা, কেউ আধা পাকা, কেউ মাটির। একজনের অসমাপ্ত—সে মুম্বাইয়ে ফ্ল্যাট কিনে পরিবার নিয়ে সেখানেই বাস করছে। একজন প্রয়াত। তার বিধবা স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কষ্ট করে জীবন চালাচ্ছে। মোট কথা, জমিজমা বাড়িঘর নিয়ে ওরা ভালোই আছে।
ফেরার সময় ভাবছিলাম কত কথা! এই আসাটাই হঠাৎ করে হয়ে গেল। গত নভেম্বরে এসেছিলাম কলকাতায় টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করতে। নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগেই কাজ শেষ। হঠাৎ মাথায় এল—কী করি! মুর্শিদাবাদ যাব নাকি? সবাইকে একটু চমকে দেওয়া যেত।
শিরীন শুনেই খুশি! চলো শ্বশুরের ভিটাটা তো দেখা হবে। ব্যস, আর এদিক-ওদিক নয়—এক এসি গাড়ি ভাড়া নিয়ে চললাম দুই দিনের জন্য। খবর শুনে কতজন এল, কেউই পরিচিত নয়, অথচ কত আপনজন। অদ্ভুত লাগছিল অনুভূতিটা।
নানাবাড়ি ‘করন্দি’ আর দাদাবাড়ি ‘জজান’—দুই জায়গাই ঘুরে দেখা হলো। এবার মাথায় চাপল আরেক চিন্তা—আমাদের বংশগতিটা কি জানা যায়? কোন উপায়ে? আমার নাতি-নাতনিরা দুই দিন পর কিছুই জানতে পারবে না। তারা মুর্শিদাবাদই কোনো দিন চিনবে না। যদি তাদের কাছে একটা বিস্তারিত পরিচয় রেখে যাওয়া যায়, মন্দ কি?
ফেরার আগে চাচাতো ভাইদের কাছে বংশের পূর্বকথা জানতে চেয়েছিলাম, ওরা কিছুই বলতে পারেনি। দাদাজান পীর ছিলেন—ওই পর্যন্তই। সে তো আমি আগেই জানতাম।
গাড়িতে বসে ভাবছিলাম—সেই পীর সাহেবের বংশের অতীত ইতিহাস, আজও ভাবছি সেই পরিবার-বৃক্ষ কীভাবে উদ্ধার করা যায়। নাহ্! পারিনি।
কেবল একটি সূত্র পাওয়া গেছে—দাদাজানের পূর্বপুরুষ কেউ হয়তো পশ্চিম থেকে এসেছিলেন এবং নবাব আলীবর্দীর স্নেহভাজনে পরিণত হয়ে ‘কাজি’র চাকরি পেয়েছিলেন। সেই সূত্রে জমিজমা ইত্যাদি। ব্যস। এই পর্যন্তই।
অ্যালেক্স হ্যালির কথা মনে পড়ল। সত্তরের দশকে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করা টিভি সিরিয়াল তৈরি হয়েছিল তাঁর রুট্স উপন্যাস থেকে। তিনি শুনেছি দীর্ঘ এগারো বছর নানা গবেষণা এবং ছোটাছুটি করে তাঁর পূর্বপুরুষের ইতিবৃত্তান্ত আবিষ্কার করে লিখেছিলেন রুট্স।
রুট্স-এর কাহিনি নিশ্চয় গেঁথে আছে দেশের অনেক দর্শকের মনে।
পশ্চিম আফ্রিকার গামবিয়ার কালো মুসলমান ছেলে ‘কুনটা কিনটে’কে সাদা বন্দুকধারী দস্যুরা জোর করে ধরে নিয়ে বিক্রি করে দাস ব্যবসায়ীদের কাছে। সেখান থেকে জাহাজে আমেরিকার মেরিল্যান্ডে বিক্রয় হয় প্ল্যান্টার্সের কাছে। তামাকখেতে কাজে লাগানো হয় পনেরো বছরের যোদ্ধা কুনটা কিনটেকে। তারপর নানান মালিকের হাত ঘুরতে হয় তাঁকে। বহুবার বিদ্রোহ করেও মুক্তি পাননি তিনি। বিয়ে করেন এক বাবুর্চিকে। সন্তান জন্ম নেয়। কন্যাসন্তান। তারপর নানান ঘটনাক্রমে তাঁর উত্তরপুরুষ গৃহযুদ্ধের পর মুক্ত হয় দাসের পরাধীন জীবন থেকে। তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত কক ফাইটার। হ্যাঁ, মোরগ লড়াইয়ের প্রশিক্ষক হিসেবে ব্রিটেনে কাটিয়ে গেছেন দীর্ঘ সময়। আমরা একসময় জানতে পারি, তাঁরই উত্তরসূরি হচ্ছেন এই উপন্যাসের লেখক স্বয়ং অ্যালেক্স হ্যালি। হ্যালির দাদার পরদাদার দাদা ছিলেন কুনটা কিনটে।
আজও মাঝেমধ্যে হ্যালির রুট্স-এর কথা ভাবি আর হা-হুতাশ করি। কারণ, হ্যালির মতো সামর্থ্য নেই আমার। মনের কষ্ট মনেই রাখি চেপে।
সেদিন একটা বিদেশি ম্যাগাজিনে হঠাৎ একটা সংবাদ পাঠ করে একটু চমকে উঠলাম। দেখলাম একটু আশার আলো।
ছোট্ট সংবাদ। এক আমেরিকান হ্যালির উপন্যাস পড়ে নিজের বংশগতি খুঁজে বের করার ব্যাপারে হন অনুপ্রাণিত। লেগে পড়েন খোঁজে। প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ইউরোপ-আমেরিকা ছোটাছুটি করে ব্যর্থ হন এবং একসময় হতাশায় ভেঙে পড়েন ভদ্রলোক। কিছুই বের করতে পারেননি তিনি। ওই আমার মতোই, একটুকরো সূত্রই সম্বল, এই দুঃখের কথা তাঁর এক রাজনীতিক বন্ধুকে বলতেই তিনি হেসে পরামর্শ দেন: ‘শুধু শুধু পয়সা নষ্ট করলেন আর পরিশ্রম করলেন। রাজনীতিতে নেমে যান—বিরোধী পক্ষ দেখবেন আপনার চৌদ্দ দুগুণে আটাশ গুষ্টির জন্ম-মৃত্যুর বৃত্তান্ত বের করে দেবে।’
নির্বাচন তো সামনেই! তবে কি নেমে পড়ব আমিও?
আবুল হায়াত: নাট্যবক্তিত্ব।
আমি এখানে এসেছি ছাপান্ন বছর পর। জায়গাটার নাম জজান। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমায়। এখানেই এই অধমের জন্মটা হয়েছিল ১৯৪৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। বাবা চাকরি করতেন রেল কোম্পানিতে। সেই বছরই কলকাতা থেকে বদলি হয়ে চলে যান সুদূর চট্টগ্রামে। সাতচল্লিশে দেশভাগের কারণে বাবা সে বছরই ডিসেম্বরে বাক্সপেটরাসহ আমাদের নিয়ে তুলেছিলেন সুন্দরী চট্টলা শহরের টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনিতে। তারপর জীবনের বাইশটি বছর কেটেছে টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনির টি-৩৭ বি নম্বর বাড়িতে। মাঝে বুয়েটে পড়ার সময়টা দেশ বলতে চট্টগ্রামই ছিল। কিন্তু মুর্শিদাবাদের জজান গ্রামটাকে কোনো দিন মনে হয়নি ‘দেশ’ বলে।
মনে যতটুকু স্মৃতি আছে জজানের, তা হচ্ছে ১৯৫৬ সালে একবার, হ্যাঁ, ওই একবারই মায়ের সঙ্গে গিয়ে এক মাস বেড়িয়ে এসেছিলাম। আজ থেকে ৫৭ বছর আগের ভাসা ভাসা ছবি। বেশ বড় উঠানের দুই দিকজুড়ে ইংরেজি এল প্যাটার্নের দোতলা মাটির কোঠা। উঠানের এক কোনায় রান্নাঘর, বেশ বড়সড়ই। খিড়কির দরজা খুললেই পুকুর। সদর দরজার বাইরেই দহলিজ ঘর। দাদাজানের মজলিস হতো সেখানে। তিনি ছিলেন পীর। দহলিজের সামনে বিশাল এক পুকুর।
মনে পড়ে, তখন বাড়ি ছিল রমরমা। চাচা-চাচি দুজনেই ছিলেন, ছিল কয়েকজন চাচাতো ভাইবোন। আর ছিলেন দাদিজান।
কবরস্থানের সামনে দাঁড়িয়ে সেই সব ভাঙা ভাঙা ছবি ভাসছিল চোখে। আর মনটা খারাপ লাগছিল অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা কবরস্থান দেখে।
মোনাজাত শেষ করে চোখ মুছে ভালো করে চারদিকটা দেখলাম আরেকবার। না, সব নারকেলগাছ আগের মতো নেই। কত নারকেলগাছ ছিল বাড়ির চারধারে। আর ছিল প্রচুর হনুমান। এখনো মনে পড়ছে প্রাচীরে হেঁটে বেড়াচ্ছে আর ভেংচি কাটছে। বীর হনুমান দেখলেই ভয়ে দৌড়াতাম আমরা।
নেই, তাদের দেখা পেলাম না। বিশাল উঠানটা আগাছায় ভরা। যত্ন নেওয়ার সময় নেই কারও। কোঠাবাড়িটা নেই—সাতাত্তরের বন্যায় নাকি গলে ধসে গেছে। দহলিজেরও একই পরিণতি। চার চাচাতো ভাই নিজ নিজ সামর্থ্যে চার কোনায় বাড়ি তুলেছে। কেউ পাকা, কেউ আধা পাকা, কেউ মাটির। একজনের অসমাপ্ত—সে মুম্বাইয়ে ফ্ল্যাট কিনে পরিবার নিয়ে সেখানেই বাস করছে। একজন প্রয়াত। তার বিধবা স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কষ্ট করে জীবন চালাচ্ছে। মোট কথা, জমিজমা বাড়িঘর নিয়ে ওরা ভালোই আছে।
ফেরার সময় ভাবছিলাম কত কথা! এই আসাটাই হঠাৎ করে হয়ে গেল। গত নভেম্বরে এসেছিলাম কলকাতায় টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করতে। নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগেই কাজ শেষ। হঠাৎ মাথায় এল—কী করি! মুর্শিদাবাদ যাব নাকি? সবাইকে একটু চমকে দেওয়া যেত।
শিরীন শুনেই খুশি! চলো শ্বশুরের ভিটাটা তো দেখা হবে। ব্যস, আর এদিক-ওদিক নয়—এক এসি গাড়ি ভাড়া নিয়ে চললাম দুই দিনের জন্য। খবর শুনে কতজন এল, কেউই পরিচিত নয়, অথচ কত আপনজন। অদ্ভুত লাগছিল অনুভূতিটা।
নানাবাড়ি ‘করন্দি’ আর দাদাবাড়ি ‘জজান’—দুই জায়গাই ঘুরে দেখা হলো। এবার মাথায় চাপল আরেক চিন্তা—আমাদের বংশগতিটা কি জানা যায়? কোন উপায়ে? আমার নাতি-নাতনিরা দুই দিন পর কিছুই জানতে পারবে না। তারা মুর্শিদাবাদই কোনো দিন চিনবে না। যদি তাদের কাছে একটা বিস্তারিত পরিচয় রেখে যাওয়া যায়, মন্দ কি?
ফেরার আগে চাচাতো ভাইদের কাছে বংশের পূর্বকথা জানতে চেয়েছিলাম, ওরা কিছুই বলতে পারেনি। দাদাজান পীর ছিলেন—ওই পর্যন্তই। সে তো আমি আগেই জানতাম।
গাড়িতে বসে ভাবছিলাম—সেই পীর সাহেবের বংশের অতীত ইতিহাস, আজও ভাবছি সেই পরিবার-বৃক্ষ কীভাবে উদ্ধার করা যায়। নাহ্! পারিনি।
কেবল একটি সূত্র পাওয়া গেছে—দাদাজানের পূর্বপুরুষ কেউ হয়তো পশ্চিম থেকে এসেছিলেন এবং নবাব আলীবর্দীর স্নেহভাজনে পরিণত হয়ে ‘কাজি’র চাকরি পেয়েছিলেন। সেই সূত্রে জমিজমা ইত্যাদি। ব্যস। এই পর্যন্তই।
অ্যালেক্স হ্যালির কথা মনে পড়ল। সত্তরের দশকে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করা টিভি সিরিয়াল তৈরি হয়েছিল তাঁর রুট্স উপন্যাস থেকে। তিনি শুনেছি দীর্ঘ এগারো বছর নানা গবেষণা এবং ছোটাছুটি করে তাঁর পূর্বপুরুষের ইতিবৃত্তান্ত আবিষ্কার করে লিখেছিলেন রুট্স।
রুট্স-এর কাহিনি নিশ্চয় গেঁথে আছে দেশের অনেক দর্শকের মনে।
পশ্চিম আফ্রিকার গামবিয়ার কালো মুসলমান ছেলে ‘কুনটা কিনটে’কে সাদা বন্দুকধারী দস্যুরা জোর করে ধরে নিয়ে বিক্রি করে দাস ব্যবসায়ীদের কাছে। সেখান থেকে জাহাজে আমেরিকার মেরিল্যান্ডে বিক্রয় হয় প্ল্যান্টার্সের কাছে। তামাকখেতে কাজে লাগানো হয় পনেরো বছরের যোদ্ধা কুনটা কিনটেকে। তারপর নানান মালিকের হাত ঘুরতে হয় তাঁকে। বহুবার বিদ্রোহ করেও মুক্তি পাননি তিনি। বিয়ে করেন এক বাবুর্চিকে। সন্তান জন্ম নেয়। কন্যাসন্তান। তারপর নানান ঘটনাক্রমে তাঁর উত্তরপুরুষ গৃহযুদ্ধের পর মুক্ত হয় দাসের পরাধীন জীবন থেকে। তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত কক ফাইটার। হ্যাঁ, মোরগ লড়াইয়ের প্রশিক্ষক হিসেবে ব্রিটেনে কাটিয়ে গেছেন দীর্ঘ সময়। আমরা একসময় জানতে পারি, তাঁরই উত্তরসূরি হচ্ছেন এই উপন্যাসের লেখক স্বয়ং অ্যালেক্স হ্যালি। হ্যালির দাদার পরদাদার দাদা ছিলেন কুনটা কিনটে।
আজও মাঝেমধ্যে হ্যালির রুট্স-এর কথা ভাবি আর হা-হুতাশ করি। কারণ, হ্যালির মতো সামর্থ্য নেই আমার। মনের কষ্ট মনেই রাখি চেপে।
সেদিন একটা বিদেশি ম্যাগাজিনে হঠাৎ একটা সংবাদ পাঠ করে একটু চমকে উঠলাম। দেখলাম একটু আশার আলো।
ছোট্ট সংবাদ। এক আমেরিকান হ্যালির উপন্যাস পড়ে নিজের বংশগতি খুঁজে বের করার ব্যাপারে হন অনুপ্রাণিত। লেগে পড়েন খোঁজে। প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ইউরোপ-আমেরিকা ছোটাছুটি করে ব্যর্থ হন এবং একসময় হতাশায় ভেঙে পড়েন ভদ্রলোক। কিছুই বের করতে পারেননি তিনি। ওই আমার মতোই, একটুকরো সূত্রই সম্বল, এই দুঃখের কথা তাঁর এক রাজনীতিক বন্ধুকে বলতেই তিনি হেসে পরামর্শ দেন: ‘শুধু শুধু পয়সা নষ্ট করলেন আর পরিশ্রম করলেন। রাজনীতিতে নেমে যান—বিরোধী পক্ষ দেখবেন আপনার চৌদ্দ দুগুণে আটাশ গুষ্টির জন্ম-মৃত্যুর বৃত্তান্ত বের করে দেবে।’
নির্বাচন তো সামনেই! তবে কি নেমে পড়ব আমিও?
আবুল হায়াত: নাট্যবক্তিত্ব।
No comments