রোবেন দ্বীপের সেই ১৮ বছর-কয়েদি নম্বর ৪৬৬৬৪
৫০ বছর আগে কয়েদি হিসেবে প্রথমবারের মতো
রোবেন দ্বীপে পা রাখেন ম্যান্ডেলা। দিন-তারিখের হিসাবে ১৯৬৩ সালের ২৭ মে। এ
বছরের ২৭ মে ছিল তাঁর ৫০ বছর পূর্তি। ম্যান্ডেলার বিস্তর চড়াই-উতরাইয়ের
জীবনে রোবেন দ্বীপের বন্দি দিনগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
২৭ বছরের কারাজীবনের ১৮ বছরই কাটে এ দ্বীপে।
কেপ টাউন থেকে ৬ দশমিক ৯ কিলোমিটার দূরে টেবিল উপসাগরে অবস্থিত দ্বীপটিতে আসলে কৃষ্ণাঙ্গ বন্দিদের নির্বাসনে পাঠানো হতো। আটলান্টিক মহাসাগরের বরফ ঠাণ্ডা পানি চারপাশে। সঙ্গে প্রবল স্রোত ও বিক্ষুব্ধ ঢেউ। ওই 'মরণফাঁদ' পেরিয়ে যে কারো পক্ষে তীরে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। তাই বর্ণবাদী সরকারগুলো কালো মানুষদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নাম লেখানো কালো মানুষদের ওই দ্বীপে নির্বাসিত করত, যাতে কোনোভাবেই কেউ পালিয়ে যেতে না পারে। ঔপনিবেশিক আমলে সতেরো শতক থেকে প্রায় ৪০০ বছর ধরে রোবেন দ্বীপটি একই সঙ্গে ডাচ ও ব্রিটিশদের বন্দিশালা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে। দ্বীপটিতে কুষ্ঠরোগের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতালও স্থাপন করা হয়। এটি ব্যবহৃত হয়েছে সামরিক ঘাঁটি হিসেবেও।
ম্যান্ডেলাকে প্রথম যেদিন রোবেন দ্বীপে নেওয়া হয়, তত দিনে তাঁর কারাজীবনের প্রায় ছয় মাস কেটে গেছে। যথাযথ কাগজপত্র ছাড়া দেশের বাইরে যাওয়া এবং শ্রমিকদের ধর্মঘটে উসকানির দায়ে ১৯৬২ সালের ৭ নভেম্বর তাঁর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। প্রিটোরিয়ার কারাগারে শুরু হয় কারাবাস। কিন্তু কোনো কারণ না দেখিয়ে ১৯৬৩ সালের ২৭ মে ম্যান্ডেলাকে রোবেন দ্বীপে নেওয়া হয়। এর দুই সপ্তাহ পর একইভাবে কোনো কিছু না জানিয়ে ফের তাঁকে প্রিটোরিয়ায় ফেরত নেওয়া হয়। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে তোলা হয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নাশকতা সংঘটনের অভিযোগ। একই অভিযোগের দায়ে ম্যান্ডেলা ছাড়া আরো সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দিনটি ছিল ১৯৬৪ সালের ১২ জুন। এর পরদিন অর্থাৎ ১৩ জুন ম্যান্ডেলাসহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত সাতজনকে রোবেন দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্তদের অষ্টম ব্যক্তি ডেনিস গোল্ডবার্গ শ্বেতাঙ্গ হওয়ায় তাঁর ঠাঁই হয় প্রিটোরিয়ার কারাগারে।
কারাগারে ম্যান্ডেলার কয়েদি নম্বর ছিল ৪৬৬৬৪। ১৯৬৪ সালের ৪৬৬ নম্বর কয়েদি হওয়ায় এ রকম নম্বর। সমাজে গেড়ে বসা বর্ণবৈষম্যের ছাপ ছিল রোবেন দ্বীপের কারাগারেও। সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য বরাদ্দ হতো সবচেয়ে কম সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন কারাকক্ষগুলো। খাবারের পরিমাণ ছিল সীমিত। তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য করত কর্তৃপক্ষ। তাদের চিঠিপত্র পরীক্ষা করা হতো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেতেন ছয় মাসে মাত্র একবার। ম্যান্ডেলাকেও এই একই ভাগ্য বরণ করতে হয়। তবে কর্তৃপক্ষের এই অমানবিক আচরণ তাঁকে লক্ষ্য থেকে পিছু হটাতে পারেনি। জেলে বসেই লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণের মাধ্যমে আইনে স্নাতক পাস করেন ম্যান্ডেলা। ১৯৬৪ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত যত বন্দি রোবেন দ্বীপে যায়, তাদের অনেক তরুণই ছিল ম্যান্ডেলার ভাবশিষ্য। ফলে দ্বীপটির আরেক আদর্শিক নাম হয়ে দাঁড়ায় 'ম্যান্ডেলা বিশ্ববিদ্যালয়'। ১৯৮৩ সালে ম্যান্ডেলাকে পোলস্মোর ম্যাক্সিমাম সিকিউরিটি কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
ম্যান্ডেলা ছাড়াও রোবেন দ্বীপে অন্তরীণ ছিলেন বর্তমান ডেপুটি প্রেসিডেন্ট কগেলমা মোতলানথে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। বন্দিজীবনে তাঁরাও নানা রকম শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার সহ্য করেছেন।
১৯৯৭ সালে ৩ দশমিক ৩ কিলোমিটর দৈর্ঘ্য ও ১ দশমিক ৯ কিলোমিটর প্রস্থের ডিম্বাকৃতি এ দ্বীপের বন্দিশালাটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। সংরক্ষণ করা হয় ম্যান্ডেলাসহ অত্যাচারিত কৃষ্ণাঙ্গ রাজবন্দিদের স্মৃতি। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ রোবেন দ্বীপকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে।
প্রসঙ্গত, পোলস্মোরে স্থানান্তরের পর বর্ণবাদী সরকার ম্যান্ডেলার ওপর চাপ প্রয়োগ করে আন্দোলনের পথ পরিহারে চেষ্টা চালায়। বিনিময়ে মুক্তি দেওয়ারও লোভ দেখানো হয় ম্যান্ডেলাকে। তবে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। পরে ১৯৮৮ সালে ভিক্টর ভারস্টার কারাগারে নেওয়া হয় ম্যান্ডেলাকে। সেখানে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধাসহ একটি ব্যক্তিগত আলাদা কুটির দেওয়া হয়। তত দিনে শ্বেতাঙ্গ সরকারের বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। এরপর একে একে বর্ণবাদ যুগের অবসান ঘটে। ম্যান্ডেলার দল এএনসির (আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস) ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে সসম্মানে মুক্তি পান ম্যান্ডেলা। এর পরের কাহিনী সবারই জানা।
কেপ টাউন থেকে ৬ দশমিক ৯ কিলোমিটার দূরে টেবিল উপসাগরে অবস্থিত দ্বীপটিতে আসলে কৃষ্ণাঙ্গ বন্দিদের নির্বাসনে পাঠানো হতো। আটলান্টিক মহাসাগরের বরফ ঠাণ্ডা পানি চারপাশে। সঙ্গে প্রবল স্রোত ও বিক্ষুব্ধ ঢেউ। ওই 'মরণফাঁদ' পেরিয়ে যে কারো পক্ষে তীরে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। তাই বর্ণবাদী সরকারগুলো কালো মানুষদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নাম লেখানো কালো মানুষদের ওই দ্বীপে নির্বাসিত করত, যাতে কোনোভাবেই কেউ পালিয়ে যেতে না পারে। ঔপনিবেশিক আমলে সতেরো শতক থেকে প্রায় ৪০০ বছর ধরে রোবেন দ্বীপটি একই সঙ্গে ডাচ ও ব্রিটিশদের বন্দিশালা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে। দ্বীপটিতে কুষ্ঠরোগের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতালও স্থাপন করা হয়। এটি ব্যবহৃত হয়েছে সামরিক ঘাঁটি হিসেবেও।
ম্যান্ডেলাকে প্রথম যেদিন রোবেন দ্বীপে নেওয়া হয়, তত দিনে তাঁর কারাজীবনের প্রায় ছয় মাস কেটে গেছে। যথাযথ কাগজপত্র ছাড়া দেশের বাইরে যাওয়া এবং শ্রমিকদের ধর্মঘটে উসকানির দায়ে ১৯৬২ সালের ৭ নভেম্বর তাঁর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। প্রিটোরিয়ার কারাগারে শুরু হয় কারাবাস। কিন্তু কোনো কারণ না দেখিয়ে ১৯৬৩ সালের ২৭ মে ম্যান্ডেলাকে রোবেন দ্বীপে নেওয়া হয়। এর দুই সপ্তাহ পর একইভাবে কোনো কিছু না জানিয়ে ফের তাঁকে প্রিটোরিয়ায় ফেরত নেওয়া হয়। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে তোলা হয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নাশকতা সংঘটনের অভিযোগ। একই অভিযোগের দায়ে ম্যান্ডেলা ছাড়া আরো সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দিনটি ছিল ১৯৬৪ সালের ১২ জুন। এর পরদিন অর্থাৎ ১৩ জুন ম্যান্ডেলাসহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত সাতজনকে রোবেন দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্তদের অষ্টম ব্যক্তি ডেনিস গোল্ডবার্গ শ্বেতাঙ্গ হওয়ায় তাঁর ঠাঁই হয় প্রিটোরিয়ার কারাগারে।
কারাগারে ম্যান্ডেলার কয়েদি নম্বর ছিল ৪৬৬৬৪। ১৯৬৪ সালের ৪৬৬ নম্বর কয়েদি হওয়ায় এ রকম নম্বর। সমাজে গেড়ে বসা বর্ণবৈষম্যের ছাপ ছিল রোবেন দ্বীপের কারাগারেও। সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য বরাদ্দ হতো সবচেয়ে কম সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন কারাকক্ষগুলো। খাবারের পরিমাণ ছিল সীমিত। তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য করত কর্তৃপক্ষ। তাদের চিঠিপত্র পরীক্ষা করা হতো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেতেন ছয় মাসে মাত্র একবার। ম্যান্ডেলাকেও এই একই ভাগ্য বরণ করতে হয়। তবে কর্তৃপক্ষের এই অমানবিক আচরণ তাঁকে লক্ষ্য থেকে পিছু হটাতে পারেনি। জেলে বসেই লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণের মাধ্যমে আইনে স্নাতক পাস করেন ম্যান্ডেলা। ১৯৬৪ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত যত বন্দি রোবেন দ্বীপে যায়, তাদের অনেক তরুণই ছিল ম্যান্ডেলার ভাবশিষ্য। ফলে দ্বীপটির আরেক আদর্শিক নাম হয়ে দাঁড়ায় 'ম্যান্ডেলা বিশ্ববিদ্যালয়'। ১৯৮৩ সালে ম্যান্ডেলাকে পোলস্মোর ম্যাক্সিমাম সিকিউরিটি কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
ম্যান্ডেলা ছাড়াও রোবেন দ্বীপে অন্তরীণ ছিলেন বর্তমান ডেপুটি প্রেসিডেন্ট কগেলমা মোতলানথে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। বন্দিজীবনে তাঁরাও নানা রকম শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার সহ্য করেছেন।
১৯৯৭ সালে ৩ দশমিক ৩ কিলোমিটর দৈর্ঘ্য ও ১ দশমিক ৯ কিলোমিটর প্রস্থের ডিম্বাকৃতি এ দ্বীপের বন্দিশালাটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। সংরক্ষণ করা হয় ম্যান্ডেলাসহ অত্যাচারিত কৃষ্ণাঙ্গ রাজবন্দিদের স্মৃতি। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ রোবেন দ্বীপকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে।
প্রসঙ্গত, পোলস্মোরে স্থানান্তরের পর বর্ণবাদী সরকার ম্যান্ডেলার ওপর চাপ প্রয়োগ করে আন্দোলনের পথ পরিহারে চেষ্টা চালায়। বিনিময়ে মুক্তি দেওয়ারও লোভ দেখানো হয় ম্যান্ডেলাকে। তবে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। পরে ১৯৮৮ সালে ভিক্টর ভারস্টার কারাগারে নেওয়া হয় ম্যান্ডেলাকে। সেখানে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধাসহ একটি ব্যক্তিগত আলাদা কুটির দেওয়া হয়। তত দিনে শ্বেতাঙ্গ সরকারের বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। এরপর একে একে বর্ণবাদ যুগের অবসান ঘটে। ম্যান্ডেলার দল এএনসির (আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস) ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে সসম্মানে মুক্তি পান ম্যান্ডেলা। এর পরের কাহিনী সবারই জানা।
No comments