সাংবাদিক গৌতম হত্যা মামলার রায়-৯ জনের যাবজ্জীবন
সাংবাদিক গৌতম দাস হত্যা মামলার রায়ে ৯
জন আসামিকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মো. শাহেদ নূরউদ্দিন এ রায়
ঘোষণা করেন।
আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০
হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন তিনি।
তবে এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্ত্রী দীপালী দাস এবং স্বজনরা।
তাঁরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
রায়ের আদেশে বিচারক বলেন, 'অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে রুখে দাঁড়ানোর কারণে সাংবাদিক গৌতমকে এ নৃশংস হত্যার শিকার হতে হয়েছে। সন্ত্রাসীদের এই হীন অপরাধ প্রবণতার অবসান করা না গেলে সাংবাদিকতায় নির্ভীকতা থাকবে
না। সমাজ ও রাষ্ট্রে নেমে আসবে স্থবিরতা। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন দেশের নাগরিকরা। এ অবস্থায় কৃত অপরাধের কারণে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যুক্তিসংগত ও আইনানুগ। কোন আসামি তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ আদালতে উপস্থাপিত হয় নাই। সে পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া থেকে ট্রাইব্যুনাল বিরত থাকলেও প্রদেয় শাস্তি প্রদানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে এ আদালত মনে করেন।'
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন আসিফ ইমরান, আসিফ ইমতিয়াজ বুলু, কাজী মুরাদ, কামরুল ইসলাম আপন, সিদ্দিকুর রহমান মিয়া, রাজিব হোসেন মনা, আসাদ বিন কাদির, গোলাম মুর্তজা অ্যাপোলো ও তামজিদ হোসেন বাবু। রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় ৯ আসামির মধ্যে আটজন উপস্থিত ছিলেন। গোলাম মুর্তজা অ্যাপোলো পলাতক রয়েছেন।
রায় ঘোষণার পর মামলার বাদী হাসানউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ন্যায়বিচার পাইনি। এ রায়ে সন্তুষ্ট নই। উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।'
নিহত গৌতমের স্ত্রী দীপালি দাস বলেন, 'এ রায়ে আমি সন্তুষ্ট নই। আশা করেছিলাম ঘাতকদের কঠোর শাস্তি হবে। ফাঁসি হবে। কিন্তু তা হয়নি। বছরের পর বছর অপেক্ষার পরও ন্যায়বিচার পেলাম না। আমি সমকাল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করার দাবি জানাই।'
রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, 'গৌতম দাসকে নির্মমভাবে হত্যা করে আসামিরা। আমরা আশা করেছিলাম, আদালত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেবেন। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।'
গৌতম দাসের কাকাতো বোন অ্যাডভোকেট বনানী দাস বলেন, 'আমরা এমন রায় চাইনি। ভাই হারানোর কষ্ট, বেদনা বুকে নিয়ে এত বছর অপেক্ষা করেছি যে, ন্যায়বিচার পাব। খুনিদের ফাঁসি হবে। কিন্তু আমরা প্রত্যাশিত ন্যায়বিচার পেলাম না।'
গৌতম দাস স্মৃতি সংসদের সম্পাদক সিরাজ-ই কবীর খোকন বলেন, 'গৌতমকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর ঘাতকদের কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আশা করেছিলাম। কিন্তু পেলাম না।'
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, এ রায়ে ফরিদপুরের মানুষ আশাহত হয়েছে। তারা অপেক্ষা করছিল, ঘাতকদের কঠোর শাস্তি হবে। দুঃখের বিষয়, রায়ে তা পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ১৭ নভেম্বর সন্ত্রাসীরা সমকালের ফরিদপুর ব্যুরো অফিসে ঢুকে ব্যুরো প্রধান গৌতম দাসকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ওই দিনই ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। দুই মাস পর ফরিদপুরের আদালতে ১০ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গোলাম নবী।
মামলাটি চাঞ্চল্যকর বিবেচনা করে ২০০৬ সালের ২৮ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর কয়েক দফা আইনি জটিলতায় এর বিচার কার্যক্রম স্থগিত থাকে। গত আট বছরের মধ্যে পুরো চার বছরই বন্ধ ছিল মামলার বিচারিক কার্যক্রম।
হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন সময় পুলিশ অথবা র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয় আসামিরা। অন্যতম আসামি জাহিদ খান পলাতক অবস্থায় ২০০৬ সালের ১২ অক্টোবর ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান।
গত ১৯ জুন মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার পর আট আসামির জামিন বাতিল করে তাদের জেলহাজতে পাঠান আদালত। আসামি গোলাম মুর্তজা অ্যাপোলো আদালতে উপস্থিত না থাকায় তাকে পলাতক ঘোষণা করা হয়।
আসামি অ্যাপোলো, আসাদ ও বাবু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ পিপি আবু আবদুল্লাহ ভঁূইয়া।
রায়ের আদেশে বিচারক বলেন, 'অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে রুখে দাঁড়ানোর কারণে সাংবাদিক গৌতমকে এ নৃশংস হত্যার শিকার হতে হয়েছে। সন্ত্রাসীদের এই হীন অপরাধ প্রবণতার অবসান করা না গেলে সাংবাদিকতায় নির্ভীকতা থাকবে
না। সমাজ ও রাষ্ট্রে নেমে আসবে স্থবিরতা। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন দেশের নাগরিকরা। এ অবস্থায় কৃত অপরাধের কারণে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যুক্তিসংগত ও আইনানুগ। কোন আসামি তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ আদালতে উপস্থাপিত হয় নাই। সে পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া থেকে ট্রাইব্যুনাল বিরত থাকলেও প্রদেয় শাস্তি প্রদানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে এ আদালত মনে করেন।'
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন আসিফ ইমরান, আসিফ ইমতিয়াজ বুলু, কাজী মুরাদ, কামরুল ইসলাম আপন, সিদ্দিকুর রহমান মিয়া, রাজিব হোসেন মনা, আসাদ বিন কাদির, গোলাম মুর্তজা অ্যাপোলো ও তামজিদ হোসেন বাবু। রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় ৯ আসামির মধ্যে আটজন উপস্থিত ছিলেন। গোলাম মুর্তজা অ্যাপোলো পলাতক রয়েছেন।
রায় ঘোষণার পর মামলার বাদী হাসানউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ন্যায়বিচার পাইনি। এ রায়ে সন্তুষ্ট নই। উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।'
নিহত গৌতমের স্ত্রী দীপালি দাস বলেন, 'এ রায়ে আমি সন্তুষ্ট নই। আশা করেছিলাম ঘাতকদের কঠোর শাস্তি হবে। ফাঁসি হবে। কিন্তু তা হয়নি। বছরের পর বছর অপেক্ষার পরও ন্যায়বিচার পেলাম না। আমি সমকাল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করার দাবি জানাই।'
রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, 'গৌতম দাসকে নির্মমভাবে হত্যা করে আসামিরা। আমরা আশা করেছিলাম, আদালত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেবেন। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।'
গৌতম দাসের কাকাতো বোন অ্যাডভোকেট বনানী দাস বলেন, 'আমরা এমন রায় চাইনি। ভাই হারানোর কষ্ট, বেদনা বুকে নিয়ে এত বছর অপেক্ষা করেছি যে, ন্যায়বিচার পাব। খুনিদের ফাঁসি হবে। কিন্তু আমরা প্রত্যাশিত ন্যায়বিচার পেলাম না।'
গৌতম দাস স্মৃতি সংসদের সম্পাদক সিরাজ-ই কবীর খোকন বলেন, 'গৌতমকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর ঘাতকদের কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আশা করেছিলাম। কিন্তু পেলাম না।'
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, এ রায়ে ফরিদপুরের মানুষ আশাহত হয়েছে। তারা অপেক্ষা করছিল, ঘাতকদের কঠোর শাস্তি হবে। দুঃখের বিষয়, রায়ে তা পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ১৭ নভেম্বর সন্ত্রাসীরা সমকালের ফরিদপুর ব্যুরো অফিসে ঢুকে ব্যুরো প্রধান গৌতম দাসকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ওই দিনই ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। দুই মাস পর ফরিদপুরের আদালতে ১০ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গোলাম নবী।
মামলাটি চাঞ্চল্যকর বিবেচনা করে ২০০৬ সালের ২৮ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর কয়েক দফা আইনি জটিলতায় এর বিচার কার্যক্রম স্থগিত থাকে। গত আট বছরের মধ্যে পুরো চার বছরই বন্ধ ছিল মামলার বিচারিক কার্যক্রম।
হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন সময় পুলিশ অথবা র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয় আসামিরা। অন্যতম আসামি জাহিদ খান পলাতক অবস্থায় ২০০৬ সালের ১২ অক্টোবর ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান।
গত ১৯ জুন মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার পর আট আসামির জামিন বাতিল করে তাদের জেলহাজতে পাঠান আদালত। আসামি গোলাম মুর্তজা অ্যাপোলো আদালতে উপস্থিত না থাকায় তাকে পলাতক ঘোষণা করা হয়।
আসামি অ্যাপোলো, আসাদ ও বাবু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ পিপি আবু আবদুল্লাহ ভঁূইয়া।
No comments