জল পড়ে পাতা নড়ে by আল মাহমুদ
আমার জন্ম হয়েছিল এক বর্ষণমুখর রাতে।
সম্ভবত এ জন্যই বৃষ্টির শব্দ আমার অন্তরাত্মায় একটা ঝংকার তোলে। বৃষ্টির
ধ্বনি-প্রতিধ্বনি আমাকে এখনো আকুল করে। আমি যদি কবি না হতাম, তাহলে
সংগীতজ্ঞ হতাম—এটা আমার ধারণা; কল্পনাও বলা যায়।
আমি অতি অল্পে তুষ্ট হই না। সর্বদা আমার মধ্যে খেলা করে ভাষার ব্যঞ্জনা, ব্যাকুলতা। একই সঙ্গে স্বপ্নের ভেতরে চলার উন্মাদনা।
শৈশব-কৈশোর যাপন করেছি আমার নিজের শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তখন এই শহরে সংগীত সংসদ বলে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। সেখানে অন্যান্য তরুণের মতো আমারও গতায়াত ছিল।
মনে পড়ে, বৃষ্টির শব্দ একদা আমার মনের গভীরে জলতরঙ্গের ধ্বনি তুলতে তুলতে মিলিয়ে যেত। আমি বৃষ্টি নিয়ে একাধিক কবিতা লিখেছি। সেসব এখন আর মনে নেই। তবু এখনো আমি বর্ষণের ঋতুকে, বর্ষার দিনগুলোকে আমার মনের ভেতরে ধরে রাখার চেষ্টা করি।
‘জল পড়ে পাতা নড়ে’—এটা কেবল কথার কথা নয়, এ হলো একধরনের সুখানুভূতির কাব্যিক প্রকাশ। আমি বৃষ্টির শব্দে হূদয়ে একটি কাব্যময় অবস্থার কল্পনায় অতি সহজেই নিমজ্জিত হয়ে যাই। বর্ষা আমাকে কাঁপায়, ভাবায় এবং গৃহ ছেড়ে পথে নেমে বৃষ্টিতে ভেজার আমন্ত্রণ জানাতে থাকে। আমি ভিজতে ভালোবাসি। বৃষ্টির ফোঁটায় আমার পরিচ্ছদ যখন সিক্ত হয়ে জবজবে হয়ে যায়, নিজের রক্তে-রন্ধ্রে কান পেতে আমি শুনতে পাই, প্রবল বৃষ্টিতে যেন ভেসে যাচ্ছে সবকিছু। বর্ষায় আমি দেখেছি, স্রোতে ব্যাঙের পেছনে ঢোঁড়া সাপের গতি। সাপের শরীরের আঁকাবাঁকা স্রোত আমার চোখে দারুণ শিহরণ ও ঈষৎ আতঙ্কের সৃষ্টি করে। তবুও বাংলাদেশের এই বর্ষণ ঋতুর মাধুর্য আমি উপলব্ধি করি, শুষে নিতে চাই; এবং এ ঋতুতে প্রায়ই মূর্ছিত একটা অবস্থা আমার মধ্যে বিরাজ করতে থাকে।
বৃষ্টির ফোঁটা গোলাপের বোঁটায় লাগলে গোলাপ তার কাঁটাকে অতিক্রম করে যেমন গোলাপি পাপড়ি মেলে দেয়, আমিও কাব্যরচনায় এই প্রাকৃতিক নিয়মকে অনুসরণ করার প্রয়াসী। আমি ছন্দ শিখেছি প্রকৃতির কাছে। প্রকৃতি যেভাবে লতায়-পাতায় বৃষ্টির ফোঁটা ধারণ করে প্রায় মূর্ছাহত অবস্থায় দোল খেতে থাকে, আমি সেই দোলা আপন অন্তরে ধারণ করে কবিতায় ছন্দ-মিল-অনুপ্রাস সৃষ্টির কবিসুলভ কায়দা আয়ত্ত করেছি।
আমার ধারণা, আমার জন্মই হয়েছে মিল সৃষ্টির অনুপ্রেরণায়। আমি মিল দিতে যেমন জানি, তেমনি, অমিলের গদ্যকাঠামো অতিক্রম করে গল্পের সারাৎসার নিংড়ে নিতেও অভ্যস্ত হয়েছি। যেন আমি জন্ম থেকেই জানতাম আমি কবি। তা ছাড়া সব সময় জোরের সঙ্গে এও বলে এসেছি যে কাব্য রচনা ছাড়া আমার আর কোনো গুণ নেই। কবির কাজ হলো—আমি বহুবার বলেছি, তাঁর জাতিকে স্বপ্ন দেখানো।
বৃষ্টি, বর্ষা কবির ভেতরের সেই স্বপ্নকে, কল্পনাকে সত্যে রূপান্তরিত করে দিতে পারে। কবি, একমাত্র কবিরাই জানেন, শব্দের প্রকৃত অর্থ কী! ‘কবিরা ভাসেন কল্পনায়, তাঁরা তো সত্য বলেন না’—এ কথা অনেকেই বলে। কিন্তু কবিরা যে মিথ্যা বলেন—এই সাক্ষ্য কে দেবে? জগতে এমন একজনও নেই।—বৃষ্টির রিমঝিম শব্দের মতো এই কথাটিই শেষ পর্যন্ত সত্য।
শৈশব-কৈশোর যাপন করেছি আমার নিজের শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তখন এই শহরে সংগীত সংসদ বলে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। সেখানে অন্যান্য তরুণের মতো আমারও গতায়াত ছিল।
মনে পড়ে, বৃষ্টির শব্দ একদা আমার মনের গভীরে জলতরঙ্গের ধ্বনি তুলতে তুলতে মিলিয়ে যেত। আমি বৃষ্টি নিয়ে একাধিক কবিতা লিখেছি। সেসব এখন আর মনে নেই। তবু এখনো আমি বর্ষণের ঋতুকে, বর্ষার দিনগুলোকে আমার মনের ভেতরে ধরে রাখার চেষ্টা করি।
‘জল পড়ে পাতা নড়ে’—এটা কেবল কথার কথা নয়, এ হলো একধরনের সুখানুভূতির কাব্যিক প্রকাশ। আমি বৃষ্টির শব্দে হূদয়ে একটি কাব্যময় অবস্থার কল্পনায় অতি সহজেই নিমজ্জিত হয়ে যাই। বর্ষা আমাকে কাঁপায়, ভাবায় এবং গৃহ ছেড়ে পথে নেমে বৃষ্টিতে ভেজার আমন্ত্রণ জানাতে থাকে। আমি ভিজতে ভালোবাসি। বৃষ্টির ফোঁটায় আমার পরিচ্ছদ যখন সিক্ত হয়ে জবজবে হয়ে যায়, নিজের রক্তে-রন্ধ্রে কান পেতে আমি শুনতে পাই, প্রবল বৃষ্টিতে যেন ভেসে যাচ্ছে সবকিছু। বর্ষায় আমি দেখেছি, স্রোতে ব্যাঙের পেছনে ঢোঁড়া সাপের গতি। সাপের শরীরের আঁকাবাঁকা স্রোত আমার চোখে দারুণ শিহরণ ও ঈষৎ আতঙ্কের সৃষ্টি করে। তবুও বাংলাদেশের এই বর্ষণ ঋতুর মাধুর্য আমি উপলব্ধি করি, শুষে নিতে চাই; এবং এ ঋতুতে প্রায়ই মূর্ছিত একটা অবস্থা আমার মধ্যে বিরাজ করতে থাকে।
বৃষ্টির ফোঁটা গোলাপের বোঁটায় লাগলে গোলাপ তার কাঁটাকে অতিক্রম করে যেমন গোলাপি পাপড়ি মেলে দেয়, আমিও কাব্যরচনায় এই প্রাকৃতিক নিয়মকে অনুসরণ করার প্রয়াসী। আমি ছন্দ শিখেছি প্রকৃতির কাছে। প্রকৃতি যেভাবে লতায়-পাতায় বৃষ্টির ফোঁটা ধারণ করে প্রায় মূর্ছাহত অবস্থায় দোল খেতে থাকে, আমি সেই দোলা আপন অন্তরে ধারণ করে কবিতায় ছন্দ-মিল-অনুপ্রাস সৃষ্টির কবিসুলভ কায়দা আয়ত্ত করেছি।
আমার ধারণা, আমার জন্মই হয়েছে মিল সৃষ্টির অনুপ্রেরণায়। আমি মিল দিতে যেমন জানি, তেমনি, অমিলের গদ্যকাঠামো অতিক্রম করে গল্পের সারাৎসার নিংড়ে নিতেও অভ্যস্ত হয়েছি। যেন আমি জন্ম থেকেই জানতাম আমি কবি। তা ছাড়া সব সময় জোরের সঙ্গে এও বলে এসেছি যে কাব্য রচনা ছাড়া আমার আর কোনো গুণ নেই। কবির কাজ হলো—আমি বহুবার বলেছি, তাঁর জাতিকে স্বপ্ন দেখানো।
বৃষ্টি, বর্ষা কবির ভেতরের সেই স্বপ্নকে, কল্পনাকে সত্যে রূপান্তরিত করে দিতে পারে। কবি, একমাত্র কবিরাই জানেন, শব্দের প্রকৃত অর্থ কী! ‘কবিরা ভাসেন কল্পনায়, তাঁরা তো সত্য বলেন না’—এ কথা অনেকেই বলে। কিন্তু কবিরা যে মিথ্যা বলেন—এই সাক্ষ্য কে দেবে? জগতে এমন একজনও নেই।—বৃষ্টির রিমঝিম শব্দের মতো এই কথাটিই শেষ পর্যন্ত সত্য।
No comments