‘শত্রু’কে বন্ধুর মতো বরণ নয়াদিল্লির by হিরন্ময় কার্লেকার
সাম্প্রতিক ভারত সফরে বেগম খালেদা জিয়াকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই ভারত বিরোধী ছিলেন। এটা এখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তিনি বদলে গেছেন।
এই কলাম যখন প্রকাশিত হবে তখন বাংলাদেশের এই বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ততক্ষণে তার সপ্তাহব্যাপী সফর শেষ করবেন। এর ফলাফলে তার খুশি হওয়ারই কথা। সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে আধাঘণ্টা ধরে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে যা আলোচনা হয়েছে তাকে কূটনীতিতে (diplomatese) ‘পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট’ বিষয় বলা যেতে পারে। মিস্টার সিং বৈঠকে তাকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন, ভারত অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে পথ ধরেছে তাতে বাংলাদেশকে সঙ্গে রাখবে এবং কখনই ঢাকার স্বার্থহানি করবে না।
মনে হচ্ছে সবকিছু সন্তোষজনকভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া যখন দুই দেশের অভিন্ন নদীতে বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে ভারতের পক্ষ থেকে আরো বেশি স্বচ্ছতা কামনা করছেন তখন মনমোহন সিং তাকে আশ্বস্ত করেন যে, তার সরকার তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি যা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠেকিয়ে রেখেছেন এবং সীমান্তে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক মতৈক্যে পৌঁছার চেষ্টা করছে।
জানা যাচ্ছে, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য অবাধ করা, তৈরি পোশাক আমদানি বাড়ানো, বিদ্যুৎ এবং অর্থনৈতিক অবকাঠামো শক্তিশালী করার ব্যাপারে ভারতের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর প্রশংসাই করেছেন। সন্ত্রাসবাদ এবং সীমান্তে জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা এসব বিষয়ে তাকে বেশ ইতিবাচক এবং আগ্রহী বলে মনে হয়েছে যা নয়াদিল্লির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন হলো: এ সফর থেকে ভারত কী চায়? মূল উদ্দেশ্যটা মনে হয়, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে এখন তাদের যে ভাল সম্পর্ক রয়েছে তা ২০১৪ সালের প্রথম দিকে দেশটিতে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে যে-ই ক্ষমতায় আসুক তার সঙ্গে এ সম্পর্ক বজায় রাখা। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ এবং তার সাম্প্রতিক সফর একই উদ্দেশ্যের অংশ।
এ সফর কাগজে-কলমে অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং এক সময় থিতিয়ে আসবে। প্রয়াত স্বামী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মতোই বেগম জিয়া অত্যন্ত ভারত বিরোধী এবং সহজাতভাবে পাকিস্তানপন্থি। প্রেসিডেন্ট রহমান ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত ডিরেক্টোরেট অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সকে (ডিএফআই) পরিবর্তন করে ১৯৭৭ সালের নভেম্বরে ডিরেক্টোরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) করেন। এটি পাকিস্তানের ইন্টারসার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টোরেটের (আইএসআই) ক্লোন (হুবহু) এবং প্রতিষ্ঠানটির নাড়ি একই। আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল গোলাম জিলানি খান ঢাকা সফরের পরপরই এ ডিজিএফআই প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এর অনেক কর্মকর্তা ইসলামাবাদে আইএসআই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর একজন সাবেক যুগ্মপরিচালক মলয় কৃষ্ণ ধর তার ‘ফালক্রাম অব ইভিল: আইএসআই-সিআইএ-আল কায়েদা নেক্সাস’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জঙ্গি গ্রুপগুলোকে প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র সরবরাহের কাজে ডিএফআই এবং আইএসআই ১৯৭৬ সাল থেকে সহযোগিতা করা শুরু করে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসার পরই এ প্রক্রিয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ২০০১ সালে বেগম জিয়া দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর তা তাৎক্ষণিকভাবে বহাল হয়। মলয় কৃষ্ণ ধরের বইটি প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে। তিনি লেখেন- ভারতের উত্তর-পূবাঞ্চলীয় বিদ্রোহীদের বাংলাদেশি ক্যাম্প মাত্র গত কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় ৪০টি বৃদ্ধি পেয়ে ১৮০ থেকে ২০০ তে পৌঁছেছে।
বেগম জিয়ার নিজস্ব ভারত বিরোধী অবস্থান তার জোট শরিক জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের দ্বারা আরো গভীর হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা নীতির ক্ষেত্রে তারা (জামায়াত) ভারতকে বাংলাদেশের একমাত্র শত্রু বিবেচনা করে এবং ভারতীয় সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে জিহাদের চেতনা ঢুকানোর আহ্বান জানায়। পাকিস্তান এবং হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশ, জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ ও হিজবুত তাওহিদের মতো মৌলবাদী ইসলামি সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময় বাংলাদেশ আইএসআইয়ের ভারত বিরোধী সন্ত্রাসী তৎপরতার কেন্দ্রস্থল হয়ে থাকলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
জামায়াত বেগম জিয়ার সরকারকে প্রভাবিত করেছে এবং সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংস নিপীড়ন চালিয়েছে। আহমদিয়া সম্প্রদায় বারবার তাদের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। এমনকি ২০০১ সালের ১ অক্টোবর সাধারণ নির্বাচনে বেগম জিয়া দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগে পযর্ন্ত হিন্দুরা তাদের আক্রমণের শিকার হয়েছে।
হত্যা, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, সম্পদ লুট, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং নির্বিচারের মারধর ও অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ১৫ হাজারেরও বেশি হিন্দু পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় পালিয়ে আশ্রয় নেয়। আরো প্রায় এক লাখ হিন্দু আইনের আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনীর লোকদের বাধার মুখে পড়েছেন।
বাংলাদেশ সরকার অবশ্যই এ ধরনের অনাচার প্রশমনের চেষ্টা করেছে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাতীয় সংসদে এক বিবৃতিতে ২৫ দিন সময়ের মধ্যে সংঘটিত খুন ও ধর্ষণের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। খুন ২৬৬ এবং ধর্ষণের ঘটনা ২১৩টি ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ সংখ্যা অনেক বেশি মনে হলেও সে সময় এ ধরনের অপরাধের প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে। দেশটির বহুল পঠিত বাংলা দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- হিন্দুরের ওপর পরিচালিত নৃশংসতার সংখ্যা কোথাও কোথাও এতো বেশি ছিল যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যতো হিন্দু নিপীড়িত হয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি।
ওই একই দৈনিকে ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ কবি শামসুর রাহমান লেখেন, “খুবই পরিতাপের বিষয় যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের ওপর সন্ত্রাসীদের অত্যাচার নিপীড়ন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে, গত কয়েক দিনের মধ্যে মফস্বল এলাকায় বারবার হামলা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের বসতভিটা জনশূন্য হয়ে পড়েছে। নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। জীবন রক্ষায় এবং ইজ্জত বাঁচাতে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে এবং ভারাক্রান্ত হৃদয় ও অসীম দুঃখ নিয়ে অশ্রুভেজা চোখে ভারতে আশ্রয়ের খোঁজে গেছে।”
অপরদিকে, বেগম জিয়ার পুষে রাখা অবজ্ঞা (ঘৃণা) এবং শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব যা তিনি ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে দেখিয়েছেন তা সবার জানা। তিনি যদি আবার প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে এর কোনো ব্যত্যয় ঘটবে বলে কোনো লক্ষণ নেই। এ মুহূর্তে বেগম জিয়ার এ সফর তার ক্ষমতায় আসার শক্ত পূর্বাভাস এবং ভারত এ অবশ্যম্ভাবী ঘটনাকেই স্বীকৃতি দিচ্ছে এমন ধারণা করার ব্যাপারে কোনো বিতর্ক থাকল না। সম্প্রতি তার চীন সফরকে তিনি যেভাবে রূপদান করেছেন সেটি স্মরণ করা যেতে পারে। বেইজিং যেভাবে কতক বিষয়ে এমনভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যেন মনে হয় তারা একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সমঝোতা করছে।
এ বিষয়টি সেই ভোটারদের তার (খালেদা) পক্ষে সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবিত করবে যারা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। মুখে হাসি না ফুটলে (নির্বাচনে) শেখ হাসিনাকে দোষ দেওয়া যাবে না। আর ভারত দোষী হবে যদি সে তার একজন খাঁটি বন্ধুকে হারায়। আর যদি তিনি ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকেন তাহলে কী হবে? কোনো কিছুই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
জানা যাচ্ছে, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য অবাধ করা, তৈরি পোশাক আমদানি বাড়ানো, বিদ্যুৎ এবং অর্থনৈতিক অবকাঠামো শক্তিশালী করার ব্যাপারে ভারতের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর প্রশংসাই করেছেন। সন্ত্রাসবাদ এবং সীমান্তে জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা এসব বিষয়ে তাকে বেশ ইতিবাচক এবং আগ্রহী বলে মনে হয়েছে যা নয়াদিল্লির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন হলো: এ সফর থেকে ভারত কী চায়? মূল উদ্দেশ্যটা মনে হয়, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে এখন তাদের যে ভাল সম্পর্ক রয়েছে তা ২০১৪ সালের প্রথম দিকে দেশটিতে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে যে-ই ক্ষমতায় আসুক তার সঙ্গে এ সম্পর্ক বজায় রাখা। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ এবং তার সাম্প্রতিক সফর একই উদ্দেশ্যের অংশ।
এ সফর কাগজে-কলমে অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং এক সময় থিতিয়ে আসবে। প্রয়াত স্বামী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মতোই বেগম জিয়া অত্যন্ত ভারত বিরোধী এবং সহজাতভাবে পাকিস্তানপন্থি। প্রেসিডেন্ট রহমান ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত ডিরেক্টোরেট অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সকে (ডিএফআই) পরিবর্তন করে ১৯৭৭ সালের নভেম্বরে ডিরেক্টোরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) করেন। এটি পাকিস্তানের ইন্টারসার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টোরেটের (আইএসআই) ক্লোন (হুবহু) এবং প্রতিষ্ঠানটির নাড়ি একই। আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল গোলাম জিলানি খান ঢাকা সফরের পরপরই এ ডিজিএফআই প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এর অনেক কর্মকর্তা ইসলামাবাদে আইএসআই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর একজন সাবেক যুগ্মপরিচালক মলয় কৃষ্ণ ধর তার ‘ফালক্রাম অব ইভিল: আইএসআই-সিআইএ-আল কায়েদা নেক্সাস’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জঙ্গি গ্রুপগুলোকে প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র সরবরাহের কাজে ডিএফআই এবং আইএসআই ১৯৭৬ সাল থেকে সহযোগিতা করা শুরু করে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসার পরই এ প্রক্রিয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ২০০১ সালে বেগম জিয়া দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর তা তাৎক্ষণিকভাবে বহাল হয়। মলয় কৃষ্ণ ধরের বইটি প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে। তিনি লেখেন- ভারতের উত্তর-পূবাঞ্চলীয় বিদ্রোহীদের বাংলাদেশি ক্যাম্প মাত্র গত কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় ৪০টি বৃদ্ধি পেয়ে ১৮০ থেকে ২০০ তে পৌঁছেছে।
বেগম জিয়ার নিজস্ব ভারত বিরোধী অবস্থান তার জোট শরিক জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের দ্বারা আরো গভীর হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা নীতির ক্ষেত্রে তারা (জামায়াত) ভারতকে বাংলাদেশের একমাত্র শত্রু বিবেচনা করে এবং ভারতীয় সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে জিহাদের চেতনা ঢুকানোর আহ্বান জানায়। পাকিস্তান এবং হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশ, জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ ও হিজবুত তাওহিদের মতো মৌলবাদী ইসলামি সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময় বাংলাদেশ আইএসআইয়ের ভারত বিরোধী সন্ত্রাসী তৎপরতার কেন্দ্রস্থল হয়ে থাকলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
জামায়াত বেগম জিয়ার সরকারকে প্রভাবিত করেছে এবং সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংস নিপীড়ন চালিয়েছে। আহমদিয়া সম্প্রদায় বারবার তাদের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। এমনকি ২০০১ সালের ১ অক্টোবর সাধারণ নির্বাচনে বেগম জিয়া দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগে পযর্ন্ত হিন্দুরা তাদের আক্রমণের শিকার হয়েছে।
হত্যা, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, সম্পদ লুট, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং নির্বিচারের মারধর ও অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ১৫ হাজারেরও বেশি হিন্দু পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় পালিয়ে আশ্রয় নেয়। আরো প্রায় এক লাখ হিন্দু আইনের আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনীর লোকদের বাধার মুখে পড়েছেন।
বাংলাদেশ সরকার অবশ্যই এ ধরনের অনাচার প্রশমনের চেষ্টা করেছে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাতীয় সংসদে এক বিবৃতিতে ২৫ দিন সময়ের মধ্যে সংঘটিত খুন ও ধর্ষণের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। খুন ২৬৬ এবং ধর্ষণের ঘটনা ২১৩টি ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ সংখ্যা অনেক বেশি মনে হলেও সে সময় এ ধরনের অপরাধের প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে। দেশটির বহুল পঠিত বাংলা দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- হিন্দুরের ওপর পরিচালিত নৃশংসতার সংখ্যা কোথাও কোথাও এতো বেশি ছিল যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যতো হিন্দু নিপীড়িত হয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি।
ওই একই দৈনিকে ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ কবি শামসুর রাহমান লেখেন, “খুবই পরিতাপের বিষয় যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের ওপর সন্ত্রাসীদের অত্যাচার নিপীড়ন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে, গত কয়েক দিনের মধ্যে মফস্বল এলাকায় বারবার হামলা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের বসতভিটা জনশূন্য হয়ে পড়েছে। নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। জীবন রক্ষায় এবং ইজ্জত বাঁচাতে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে এবং ভারাক্রান্ত হৃদয় ও অসীম দুঃখ নিয়ে অশ্রুভেজা চোখে ভারতে আশ্রয়ের খোঁজে গেছে।”
অপরদিকে, বেগম জিয়ার পুষে রাখা অবজ্ঞা (ঘৃণা) এবং শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব যা তিনি ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে দেখিয়েছেন তা সবার জানা। তিনি যদি আবার প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে এর কোনো ব্যত্যয় ঘটবে বলে কোনো লক্ষণ নেই। এ মুহূর্তে বেগম জিয়ার এ সফর তার ক্ষমতায় আসার শক্ত পূর্বাভাস এবং ভারত এ অবশ্যম্ভাবী ঘটনাকেই স্বীকৃতি দিচ্ছে এমন ধারণা করার ব্যাপারে কোনো বিতর্ক থাকল না। সম্প্রতি তার চীন সফরকে তিনি যেভাবে রূপদান করেছেন সেটি স্মরণ করা যেতে পারে। বেইজিং যেভাবে কতক বিষয়ে এমনভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যেন মনে হয় তারা একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সমঝোতা করছে।
এ বিষয়টি সেই ভোটারদের তার (খালেদা) পক্ষে সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবিত করবে যারা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। মুখে হাসি না ফুটলে (নির্বাচনে) শেখ হাসিনাকে দোষ দেওয়া যাবে না। আর ভারত দোষী হবে যদি সে তার একজন খাঁটি বন্ধুকে হারায়। আর যদি তিনি ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকেন তাহলে কী হবে? কোনো কিছুই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
No comments