খালেদা জিয়ার ভারত সফর- ভারতবিরোধিতা ভুল ছিল, বুঝেছে বিএনপি

বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ভারত সফর এবং ভারতকে দেওয়া তাঁর প্রতিশ্রুতিকে স্বাভাবিক-ভাবেই দেখছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী এই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টাকে


বিএনপির অতীতের ভুল রাজনীতি থেকে ফিরে আসা বলে মনে করে দলটি। বিএনপির ভারতবিরোধী রাজনীতি যে ভুল ছিল, তা দলটি উপলব্ধি করতে পেরেছে বলেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের ধারণা।
তবে আওয়ামী লীগের কেউ কেউ খালেদা জিয়ার এ সফরকে ক্ষমতায় যাওয়ার বিদেশি আনুকূল্য পাওয়ার চেষ্টা বলেও মনে করেন। ভারতবিরোধী রাজনীতি, জঙ্গিবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে দলটি কখনো সরে আসতে পারবে না বলে তাঁদের মত। ভারতে খালেদা জিয়াকে এত গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি আওয়ামী লীগ ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়কে ক্ষুব্ধ করেছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাত দিনের ভারত সফর শেষে গতকাল শনিবার দেশে ফিরেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের ভূমি ভারতবিরোধী কার্যক্রমে ব্যবহার করতে না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। জিয়া ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গেও বৈঠক করেন।
খালেদা জিয়ার ভারত সফরকে সরকারি দল আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। বিশেষ করে এই দলটিকে অতীতে বক্তৃতা-বিবৃতিতে ভারতবিরোধী বলে মনে করা হলেও সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টাকে রাজনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা বলে মনে করা হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার ভারত সফর সম্পর্কে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি অতীতের ভুল রাজনীতি থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে। এটাকে আমি খারাপ দৃষ্টিতে দেখি না। অতীতে তাদের ভারতবিরোধী রাজনীতি যে ভুল ছিল, তা তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে। সব রাজনৈতিক দলেরই দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী এই দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা উচিত।’
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ভারত সফরকে দলটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বেগম জিয়ার ভারত সফর এবং সে দেশে দেওয়া তাঁর প্রতিশ্রুতি নিয়ে দলীয়ভাবে আলোচনা করেছেন। বিরোধীদলীয় নেতা দেশে এসে কী বক্তব্য দেন, তার ওপর লক্ষ রেখে দলীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হবে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়া ভারতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা ও দলীয় রাজনীতি সমুন্নত রাখতে গিয়ে সংকটে পড়বেন। বিচ্ছিন্নতাবাদ ও মৌলবাদী দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করা বিএনপির জন্য কঠিন হবে। তাঁদের মতে, বিএনপি দেশের ভারতবিরোধী ও প্রতিক্রিয়াশীলদের একটি মঞ্চ। দলের কোনো কোনো অংশ ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ককে ভালোভাবে নেবে না। আবার বিএনপির নেত্রী ভারতে যে প্রতিশ্রতি দিয়েছেন, তা পূরণে দলটির চেষ্টা আছে কি না, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তা পর্যবেক্ষণে রাখবে। এ অবস্থায় দুই কুল রক্ষা করা বিএনপির জন্য কঠিন হবে বলে তাদের ধারণা।
আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির কিছু নেতা খালেদা জিয়ার ভারত ও চীন সফরের সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় খালেদা জিয়া ও বিএনপির কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। তাঁরা মনে করেন, বিএনপি জনসমর্থন হারিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিদেশি আনুকূল্য পাওয়ার চেষ্টা করছে। এই দলটি কখনো জঙ্গিবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং মৌলবাদী গোষ্ঠী থেকে মুক্ত হতে পারবে না। তাঁদের মতে, বেগম জিয়া ভারতে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাঁর একটা কৌশল। মুখে ভারতবিরোধী কার্যক্রমে সহায়তা না দেওয়ার কথা বলা হলেও মূলত ভারতবিরোধিতা থেকে দলটি সরে আসতে পারবে না।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, বেগম জিয়া ভারতবিরোধী কার্যক্রমে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়ার যে কথা বলেছেন, তা থেকে প্রমাণিত হয়, ইতিপূর্বে ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি তা করতে দিয়েছেন। তাঁর এ বক্তব্য জনগণ মেনে নেবে না। তিনি বলেন, বেগম জিয়া জনসমর্থন হারিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

No comments

Powered by Blogger.