হিলারির সফর ও বাংলাদেশের ‘কৌশলগত’ তাৎপর্য by ফরহাদ মজহার
যত দূর জানা যায়, হিলারি কিনটন বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে আসেননি, অর্থাৎ যে সময় শেখ হাসিনা তাকে চেয়েছেন সেই সময় নয়, ডক্টর ইউনূস নিয়ে টানাপড়েন একটা কারণ ছিল। এমনকি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরপরই তাকে বাংলাদেশে আনবার চেষ্টা চলছিল।
এই বছর মে মাসে চীন থেকে কলকাতা হয়ে দিল্লি যাবার পথে মাঝখানে ছুটির দিনে বাংলাদেশ সফরে আসার দিনক্ষণ হিলারি নিজেই নির্ধারণ করেছেন। আসার পর তিনি প্লেন থেকে নেমেছেন দেরি করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি তার জন্য যে নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন, হিলারি তাতে শামিল হননি। অনেকে ধরে নিয়েছেন তিনি সরকারের কাছ থেকে একটা দূরত্ব বজায় রাখতে চেয়েছেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়।
গুম, হত্যা ও মানবাধিকার নিয়ে তিনি উদ্বেগ দেখিয়েছেন, শাসনরীতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সংঘাতও তার ভালো লাগেনি, সেটাও বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। এটা তো বলতেই হবে, কারণ বাজারব্যবস্থা নিরাপদ রাখতে হলে আইনের শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। কিন্তু এহ বাহ্যÑ এগুলো বাইরের দিক। শেখ হাসিনা বিরক্তির কারণ হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও নিরাপত্তাস্বার্থের নির্ভরযোগ্য মিত্র। গুম ও গুম-খুনের আতঙ্ক যখন চারদিকে এবং রাজনীতির তাপ যখন টগবগ করছে, তখন হিলারির এই সফর শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি সমর্থন অবশ্যই। অন্য দিকে বিএনপিও আন্দোলনের মাঠ থেকে পিছু হটেছে। শুধু পিছুই হটেনি, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ায় তারা পালিয়ে থেকেছেন। হিলারি ক্লিনটনকে খুশি করবার জন্য বিএনপি দেখাতে চেয়েছে তাদের ও তাদের অন্তর্ভুক্ত জোটের নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কারণে দায়ের করা অন্যায় মামলা তারা জনগণকে নিয়ে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করবেন না, করবেন আইনিভাবে। আমরা আইন মেনে চলি- হিলারি ক্লিনটনের কাছে এই ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন তারা। আদালত দলীয় স্বার্থ রক্ষা করে, এই অভিযোগ তাদের। অথচ এই দলীয় আদালতের কাছেই জামিনভিক্ষা করছেন এখন। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতির দিক থেকে দেখলে বিরোধী দলের এই রূপ দেখবার সুযোগও করে দিয়েছেন হিলারি। এগুলো ক্ষমতাসীনদের পক্ষে নগদ ফল। মেঘ না চাইতেই জল।
এ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয় শুধু নগদ জিনিস শেখ হাসিনার হাতে ধরিয়ে দিতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। কিম্বা শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি একধরনের শীতলতা দেখেও মনে হওয়ার কারণ নাই যে তিনি বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অবশ্যই দিচ্ছেন। শেখ হাসিনার সরকারের ওপর বা আরো সুনির্দিষ্টভাবে বললে শেখ হাসিনার শাসনে তিনি সন্তুষ্ট না-ও থাকতে পারেন, সেটা হতেই পারে, কিন্তু বাংলাদেশকে তিনি গুরুত্ব দিতে বাধ্য। সেটা অবশ্য বাংলাদেশে হিলারি ক্লিনটনের বক্তব্য থেকেই আমরা বুঝতে পারি। তিনি নিজেই বলেছেন, বাংলাদেশ স্ট্র্যাটেজিক বা ‘কৌশলগত’ দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই কথা তিনি বাংলাদেশের পিঠ চাপড়িয়ে দেবার জন্য বলেন নি। তার এই কথার মর্ম আমাদের ভালোভাবে বোঝা দরকার।
‘কৌশলগত’ কথাটির মানে এই কালে শুধু সামরিক অর্থে ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের প্রাচীন ধারণা দিয়ে বুঝলে হবে না। কিম্বা দুনিয়া যখন সমাজতান্ত্রিক আর পুঁজিতান্ত্রিক শিবির নামে দুই শিবিরে বিভক্ত ছিল, যাদের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বা লেনদেন ছিল না বললেই চলে... তখনকার স্নায়ুযুদ্ধের মোটা দাগের বিবেচনা দিয়েও বোঝা যাবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু নয়, কোনো রাষ্ট্রেরই প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কৌশলের মর্ম আমরা এখন সাদাকালো কায়দায় দাগ টেনে, সরলভাবে ভূখণ্ডগত বিভাজন, কিম্বা রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের পরিচিত শত্রুতা মাথায় রেখে বুঝতে পারব না। স্ফীতি ও পুঞ্জীভবনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পুঁজির বিপুল গোলোকায়ন ঘটেছে। তাতে দুই শিবিরে বিভক্ত দুনিয়ার জায়গায় এক নতুন বিশ্বব্যবস্থার আবির্ভাব ঘটেছে। প্রতিটি দেশই দুনিয়াজোড়া বিস্তৃত একই পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনস্থ। অতএব প্রতিটি দেশকেই নিজ নিজ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এই বিশ্বব্যবস্থার অধীন থেকেই সন্ধান করতে হবে। তার বাইরে গিয়ে নয়।
এই কারণেই হিলারি ক্লিনটনের সফর নিয়ে আমার এর আগের লেখায় আমি বলেছি, “তার বাংলাদেশ সফরকে দিল্লি-ঢাকা-ওয়াশিংটন মিলে চীনের বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তোলার সফর হিশাবে যদি আমরা দেখি তাহলে সেটা খুবই সরলভাবে দেখা হবে। বাংলাদেশ ভারতের সমরনীতি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাব্যবস্থার অধীনস্থ একটি দেশ। সেই ক্ষেত্রে দিল্লির সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কই তো যথেষ্ট। তার বাইরে বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক ‘রাজনৈতিক-সামরিক নিরাপত্তা’ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়োজন ঘটল কেন? কী দরকার প্রতি বছর নিয়মিত সরকার ও রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ে নিরাপত্তাসহ সকল বিষয় নিয়ে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা এবং সেই সংলাপকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবার চেষ্টা? হিলারির সফরের গুরুত্ব এই প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে নিহিত।”
২.
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ছোট ছোট দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা মার্কিন নীতিনির্ধারকরা নতুন ভাবছেন এমন নয়। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও নেপালের সঙ্গে সরাসরি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রচনা মার্কিন স্বার্থের অনুকূল- এই চিন্তা সম্প্রতি দানা বেঁধেছে। তা নিয়ে গত কয়েক বছরে আলাপ-আলোচনাও চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তা বাস্তবায়ন করতে চাইছে। এই দেশগুলোর মধ্যে তিনটি দেশই সামুদ্রিক দেশ বা সমুদ্রসংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র। ভারত মহাসাগর দিয়ে দুনিয়ার সমুদ্রগামী জাহাজের মধ্যে প্রায় ৫০ ভাগ চলাচল করে, পণ্য ও জ্বালানি বোঝাই জাহাজগুলো চলাচল করে ৭০ ভাগ। সেই দিক থেকে সমুদ্রের ওপর আধিপত্য ও দখলদারি বহাল রাখার ওপর শক্তিশালী দেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নির্ভর করে। বিশ্বব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা যত তীব্র হচ্ছে ততোই একটি দেশের পক্ষে একা ও একচ্ছত্র ভাবে দখলদারি ও আধিপত্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে উঠছে। এই বাস্তবতায় সমুদ্রসংশ্লিষ্ট ছোটদেশগুলোর গুরুত্ব বাড়ছে।
সমুদ্রের গুরুত্ব বেড়ে যওয়ার সঙ্গে যুক্ত এই বছরের জুনে বারাক ওবামার ঘোষিত নতুন সমরনীতি। এই সমরনীতি ঘোষণার জন্য ওবামা এই বছরটা বেছে নিয়েছেন কারণ এটা নির্বাচনের বছর। তিনি বিপুলভাবে মার্কিন সামরিক বাজেট কাটছাঁট করেছেন। এই নতুন সমরনীতির প্রথম কথা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনোযোগ দেবে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে।
দুই. মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী মার্কিন উপস্থিতি থাকবে, কিন্তু ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ করবার জন্য বিপুল সংখ্যায় যে সেনাবাহিনী দেখা গিয়েছিল অতো সেনাবাহিনী থাকবে না। মার্কিন সেনাবাহিনী হবে ছোট এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নির্ভর করবে সমুদ্রে ও আকাশে আধিপত্য নিশ্চিত করবার মধ্য দিয়ে। বিশেষত হরমুজ প্রণালি ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীন ও ইরানকে প্রতিহত করবার ক্ষেত্রে প্রস্তুত থেকে। পেন্টাগনে ওবামা যখন তার নতুন সমরনীতি ঘোষণা করেছিলেন তখন বলছিলেন, ‘এক দশকের যুদ্ধের যে ইতিহাস সেই ইতিহাসের পাতা আজ আমি উল্টালাম... এ হচ্ছে পালাবদলের এক মুহূর্ত’। মার্কিন সেনাবাহিনী এখন ছোট হবে-এটাই তার সিদ্ধান্ত। মার্কিন প্রতিরক্ষা বাজেট তিনি কেটেছেন বিপুলভাবে। মার্কিন অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার জঞ্জাল সাফ করা দরকার মনে করেছেন তিনি। যুদ্ধের বিরুদ্ধে মার্কিন জনগণের মনোভাবকে নির্বাচনের আগে নিজের পক্ষে নেবার ক্ষেত্রে এই কাটছাঁট ও নতুন সমরনীতি কতটা কাজ করে সেটা আমরা আগামি মার্কিন নির্বাচনেই দেখব। বাংলাদেশে হিলারি কিনটনের আগমন মার্কিন নির্বাচন ও নতুন মার্কিন সমরনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।
গত বছর অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি দাবি করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময় একটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ (Pacific nation)। এশিয়ার অভিবাসীরাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গড়ে তুলেছে। বলেছেন, ‘এখানে আমি ভবিষ্যৎ দেখি, দুনিয়ার এই অঞ্চলটাই অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে দ্রুত বেগে বেড়ে উঠেছে, দুনিয়ার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অর্ধেকেরও বেশি এখানে ঘটছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলই আমার সংকল্পের সর্বোচ্চ সংকল্প বাস্তবায়নের পথ, আর সেটা হচ্ছে মার্কিন জনগণের জন্য চাকরি ও সুযোগ সৃষ্টি করা। এখানেই দুনিয়ার অধিকাংশ পারমাণবিক শক্তি এবং এখানেই দুনিয়ার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। এশিয়াই ঠিক করবে আগামি শতাব্দি সংঘাতে ক্ষতবিক্ষত হবে, নাকি সহযোগিতার পথ গ্রহণ করবে, নিরর্থক কষ্টভোগের কারণ হবে, নাকি হবে মানবপ্রগতির।’ তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিশাবে তিনি এই সজ্ঞান ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ হিশাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এশিয়াতেই শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী ভূমিকা রাখবে।
ওবামা ঠিক ধরেছেন যে দুনিয়ার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিশাল যজ্ঞ চলছে এশিয়ায়। পুঁজি ধেয়ে আসছে এ দিকে, বিশেষত চীনে। পুঁজির এই ধেয়ে আসা বা স্থানান্তর এমন নয় যে পুঁজি আবার ফিরে যাবে ইউরোপে বা আমেরিকায়।
ইউরোপীয় ও মার্কিন অর্থনীতির যে দুর্দশা তাতে এক দিকে ইউরোপের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে, অন্য দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অর্থনৈতিক আধিপত্য টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে উঠবে। পৃথিবী এককেন্দ্রিক থাকছে না, সেখানে অন্যান্য শক্তিশালী দেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে হবে। এই সকল বাস্তবতার আলোকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নতুনভাবে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার কথা ভাবতে হয়েছে। বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায় ছোট দেশগুলোকে ভারতের সামরিক ও নিরাপত্তা স্বার্থের অধীন রেখে এশিয়ায় মার্কিন স্বার্থ বজায় রাখা সম্ভব কি না- এই দিকটি নতুন করে ভাবতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাধ্য হচ্ছে। বুঝতে হবে, নিজের তাগিদেই হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশে এসেছেন, সাম্রাজ্যবাদী মোড়লির জন্য যতোটা তার চেয়ে অনেক বেশি এশিয়ায় মার্কিন মোড়লির দুর্বলতায় তাপ্পি মারার জন্য। আগে যেসব দেশের কোন কৌশলগত মূল্য তাদের কাছে ছিল না, আজ তারাই হঠাৎ মূল্যবান হয়ে উঠেছে।
৩.
এই দিক থেকে বিচার করলে রাজনৈতিক সামরিক ধারণা হিশাবে বাংলাদেশের ‘কৌশলগত’ অবস্থানের মূল্য ও ব্যাপ্তি এখন অনেক বিস্তৃত। বড় পরিসরেই তাকে বুঝতে হবে। পুঁজিতান্ত্রিক গোলোকায়ন এশিয়ার ‘কৌশলগত’ অবস্থানে রূপান্তর ঘটিয়েছে, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্ব পুঁজিতান্ত্রিক অর্থনীতির মন্দা এবং যেখানে মুনাফা বেশি সেখানে পুঁজির চলে যাবার স্বভাব। পুঁজি এশিয়ার দিকে আসছে, কিন্তু প্রত্যাবর্তনের জন্য নয়, বিনিয়োগের জন্য। তার ওপর রয়েছে ইরাক ও আফগানিস্তানে কার্যত মার্কিন পরাজয় এবং অর্থনৈতিক কারণে মার্কিন সেনাবাহিনীর ছোট হয়ে যাওয়া। বেড়েছে স্থলযুদ্ধের চেয়ে সমুদ্র ও আকাশ যুদ্ধে মনোযোগ এবং তার কারণে সমুদ্র ও আকাশও এখন নিরাপত্তা বিবেচনার দিক থেকে আগের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশের ‘কৌশলগত’ অবস্থানের গুরুত্ব জানেন। এই গুরুত্ব শুধু ‘ভূকৌশলগত’ (geo-strategic) নয়, ওপরের আলোচনা থেকে এটা আশা করি পরিষ্কার। এমনকি নতুন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের ভূগোলও নতুন তাৎপর্য লাভ করছে। যেমন, ভূকৌশলগত দিক থেকে বঙ্গোপসাগর আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এখন। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমুদ্রের ওপর আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর মধ্যে তীব্র হয়েছে। সামুদ্রিক সম্পদ যেমন তেল ও খনিজ পদার্থের ওপর দখলদারি বজায় রাখার দিক তো আছেই। নিরাপত্তার দিক থেকেও সমুদ্র গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গোপসাগর নিয়ে যে কারণে কথা উঠেছে। বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হিলারি কিনটন সরাসরি উত্তর না দিয়ে তার গুরুত্বের কথা এড়িয়ে গিয়েছেন। বরং উত্তরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের জিরো টলারেন্সের তারিফ করেছেন। বাংলাদেশকে কেউ প্রশিক্ষণের জন্য কিংবা এর ভূখণ্ড বাংলাদেশ বা অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতে পারে নি। বাংলাদেশ ঠিক কোন অর্থে কৌশলগত তাৎপর্য লাভ করেছে সেটা তিনি আর ব্যাখ্যা করে বলেননি। বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র ঠিক আগের মতো দেখছে না বরং বিশেষ নজরে দেখতে শুরু করেছে, সেটা তার কথায় তবুও বোঝা গিয়েছে।
বাংলাদেশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুনভাবে বিবেচনা করছে সেটা হিলারি আসার আগে থেকেই স্পষ্ট হতে শুরু করেছিল। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি রবার্ট ব্লেইক ঘুরে গেলেন ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে, রাজনৈতিক বিষয় দেখাশুনা করবার দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি আর শেরম্যান এলেন এপ্রিলের ৫ তারিখে। তারপর রাজনৈতিক-সামরিক বিষয় দেখাশোনা করার দফতরের অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি অ্যান্ড্রু জে. শাপিরো হিলারি ক্লিনটন আসার মাত্র কিছু দিন আগেই ১৯ এপ্রিলে ঘুরে গেলেন। যারা এসেছেন এবং মার্কিন যে দফতরগুলোর পক্ষে এসেছেন তাতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল হিলারি ক্লিনটনের এই সফরের পেছনে কৌশলগত তাৎপর্যের তাগিদ রয়েছে প্রবল। অনুমান করা যায় বাংলাদেশের কৌশলগত তাৎপর্য অর্জনের মানে হচ্ছে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট কিছু প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা ও রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। যে ভূমিকা ভারতের আঞ্চলিক ভূমিকা থেকে আলাদা। এখানে সেই দিকটা নিয়ে কিছু কথা বলে শেষ করব।
৪.
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক, প্রতিরক্ষা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। তবে রাজনৈতিক-সামরিক অর্থে বিস্তৃত পরিসরে ‘নিরাপত্তা’ সম্পর্ক তৈরির প্রচেষ্টা নতুন। অ্যান্ড্রু শাপিরো যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন তখনই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে রাজনৈতিক-সামরিক দিক থেকে নিরাপত্তা বিষয়ে দুই দেশের সহযোগিতা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সংলাপের আরম্ভ। এই আলোচনাকেই ‘পার্টনারশিপ ডায়ালগ’ নামে দিপাক্ষিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে এখন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হোল মাত্র। শাপিরোর সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে প্রথম যে সংলাপ হয়েছিল তাকে ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ নিরাপত্তাবিষয়ক সংলাপ’ হিশাবেই আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের তথ্য বিভাগ বলছে, এই সংলাপ ‘দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্কের ব্যাপ্তি, গভীরতা ও শক্তি এবং একই সাথে এ অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনে আমাদের সম্মিলিত সংকল্পের প্রতিফলন’। এর উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ে কর্মপরিসরের বিস্তৃতি এবং এর সাথে আমাদের প্রতিরক্ষাবিষয়ক সম্পর্কের উন্নয়ন। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ নিরাপত্তা সংলাপ বিস্তৃত পরিসরে রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বিস্তৃত ও শক্তিশালী করার কাজকে এগিয়ে নেবে এবং শান্তি রক্ষায় অংশীদারিত্ব, যৌথ সামরিক অনুশীলন ও বিনিময়, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে’ (দেখুন, মার্কিন দূতাবাস http://photos.state.gov/libraries/bangladesh/861/2012/%20Press% 20Releases/US-BD% 20Security%20Dialogue_%20Apr%2019_%202012.pdf)
বাংলাদেশের কৌশলগত তাৎপর্যের ব্যাপকতা খানিক এখান থেকে বোঝা যায়। তবে মার্কিনি স্বার্থ আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য গত ২৪ এপ্রিল অ্যান্ড্রু শাপিরো ওয়াশিংটনে কার্নেগি এনডোমেন্ট নামের একটি মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে তার ঢাকা-দিল্লি সফর নিয়ে যে আলোচনা করেছেন, সেখান থেকে আরো কিছু জানতে পারি আমরা। আগেই বলেছি তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের রাজনৈতিক-সামরিক স্বার্থ দেখাশোনা করেন। শাপিরো এপ্রিলে ঢাকা ও দিল্লি ঘুরে গিয়েছিলেন। তার সফরের উদ্দেশ্য ছিল দিল্লি ও ঢাকার সঙ্গে রাজনৈতিক-সামরিক আলোচনা শুরু করা, যেন দুই দেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহযোগিতার দ্বিপাক্ষিক জায়গাগুলো চিহ্নিত করা যায় এবং মার্কিন স্বার্থে দরকারি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়। খেয়াল করতে হবে ত্রিপক্ষীয় কোনো সহযোগিতার কৌশল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিচ্ছে না। দুটি দেশের সঙ্গেই আলাদা আলাদাভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়তে চাইছে। শাপিরো যখন ঢাকা সফর করছিলেন তখনই বোঝা যাচ্ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত প্রশ্নে উচ্চপর্যায়ে রাজনৈতিক-সামরিক সংলাপ চালাতে আগ্রহী। এই সংলাপকে ‘পার্টনারশিপ ডায়ালগ’ বলা হচ্ছে এখন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সকল ক্ষেত্র নিয়েই দুই পক্ষের মধ্যে নিয়মিত সংলাপ। মার্কিন সামরিক স্বার্থ ও নিরাপত্তার প্রশ্নই এখানে প্রধান ও নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবে।
শাপিরো তার সফরের উদ্দেশ্য ও অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘এই সফরের মধ্যে এই সত্যও বোঝা যাবে যে আমাদের সঙ্গে অংশীদারদের জড়িত করবার জন্য আমরা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা-সম্পর্ক রচনার হাতিয়ার ব্যবহার করেছি।’ অর্থাৎ বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রচনার ধরণ এক নয়, ভিন্ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক আচার কিভাবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত হয়ে গিয়েছে তার ওপরও তিনি জোর দিয়েছেন। (দেখুন, http://carnegieendowment.org/ 2012/04/24/roundtable-with-assistant-secretary-of-state-andrew-shapiro/aib7)
ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ২০০৫ সালে। এর পর থেকে ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্ক নিবিড় ও গভীর হয়েছে। বছরে দুই দেশের সামরিক মহড়ার সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি ছাড়িয়ে গিয়েছে। সমরাস্ত্র ও সামরিক যন্ত্রপাতির বেচাবিক্রি যেখানে শূন্য ছিল, সেটা এখন ৮ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গিয়েছে। প্রতিরক্ষা বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া সম্ভবপর হচ্ছে।
দুই দেশের মধ্যে সমরাস্ত্র বেচাকেনা বেড়েছে। শাপিরো জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নানান ধরণের ব্যবহারের উপযোগী সামরিক উড়োজাহাজ কিনেছে। তার মধ্যে রয়েছে সমুদ্রে নজরদারি করবার জন্য আটটা পি-৮১ নামের সামরিক উড়োজাহাজ, সামরিক কাজে মাল আনানেওয়ার জন্য সি-১৩০-জে নামের ছয়টি বিমান এবং সামরিক প্রয়োজনে স্থানান্তরের উপযোগী সি-১৭ নামের ১০টি উড়োজাহাজ। সমরাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বেচাবিক্রির এই সম্পর্ক আরো বাড়বে।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সম্পর্কও শাপিরোর ভাষায় গত এক দশকের মধ্যে এক জবরদস্ত (robust) রূপ নিয়েছে। নিরাপত্তার দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে কী চায়? শাপিরোর বক্তব্য থেকে বোঝা যায় চারটি জিনিস চাইছে মার্কিনিরা:
এক. বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রথম যে জিনিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় সেটা হচ্ছে কাউন্টারটেররিজম বা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াকু শ্রেণি, শক্তি বা গোষ্ঠিগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে লড়াই চালিয়ে যাবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আরো কঠোর ও শক্তিশালী হোক। লড়াই সে চালিয়ে যাক। এর সঙ্গে গণমাধ্যম ও সুশীলসমাজকে যুক্ত করুক। এই ক্ষেত্রে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা তৎপরতার দক্ষতা ও ক্ষমতা আরো বাড়ুক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তা-ই চায়।
দুই. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা বা দেশে দেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ রক্ষা করবার জন্য বাংলাদেশের জাতীয় সেনাবাহিনী যেন একটি দক্ষ ভাড়াটিয়া সৈন্য হিশাবে গড়ে ওঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজে স্থলবাহিনীকে তার সমরনীতির নির্ধারক অবস্থানে রাখতে চাইছে না বা আর্থিক সংকটের কারণে রাখতে পারছে না। শান্তিবাহিনী সেই ক্ষেত্রে কিছুটা অভাব পূরণ করবে, বাংলাদেশকে এখন অভাব পূরণে আরো বেশি অবদান রাখতে হবে।
তিন. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় বঙ্গোপসাগরে মার্কিন নিরাপত্তাস্বার্থ নিশ্চিত করবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রধান ভূমিকা পালন করুক; দুই হাজার পাঁচ সালে বাংলাদেশ ‘বিদেশি সেনাবাহিনীকে অর্থায়ন’-এর আওতায় যে সহায়তা নিয়েছে বাংলাদেশ তা জলসীমা পাহারা দেবার জন্য জাহাজ বানাতে ব্যয় করেছে। এতে সমুদ্রের নিরাপত্তা বাড়বে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কাজে আসবে আর যেসব এলাকায় যাওয়া কঠিন সেইসব এলাকা নজরদারির মধ্যে আনা যাবে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শক্তি ও দক্ষতা বাড়াতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
চার. আরেকটি অর্থনৈতিক স্বার্থ আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার পুরানা সমরাস্ত্র খালাস করতে চাইছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেসকল সমরাস্ত্র পুরানো বা বাড়তি সেই সকল অস্ত্রশস্ত্র ‘বাড়তি প্রতিরক্ষা উপকরণ কর্মসূচি’-র নামে বাংলাদেশকে গছিয়ে দিতে চায় তারা। শাপিরো জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ‘আধুনিক’ হতে চায়। তারা অস্ত্রশস্ত্রের সরবরাহকারীদের তত্ত্বতালাশ করছে। এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবসার একটা সুযোগও বটে।
ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা চুক্তি থাকার পরেও দুই দেশের সম্পর্ক নিরাপত্তার প্রশ্নে মসৃণ- এটা দাবি করা যাবে না। জ্বালানি সম্পর্কের কারণে ভারতের ইরাননীতি যুক্তরাষ্ট্রের ইরাননীতি থেকে আলাদা। সিরিয়ার প্রশ্নেও দিল্লি ও ওয়াশিংটন এক সুরে কথা বলে না। চীনের প্রশ্নে অভিন্নতা থাকলেও দিল্লির নিজের কৌশলগত স্বার্থ আছে, যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ থেকে আলাদা করে বিচার করাই সঙ্গত। ঠিক এই সকল কারণেই আমি আগের লেখায় বলেছিলাম, ‘চীনকে সামাল দেওয়ার একটা চিন্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও ভারতের আছে। শুধু এই দিকে নজর নিবদ্ধ রাখলে মার্কিন পররাষ্ট্র সম্পর্কের নীতিগত ও কৌশলগত কোনো পরিবর্তন ঘটছে কি না সেটা আমরা ধরতে পারব না।’
হিলারি ক্লিনটনের সফরের এই তথাকথিত ‘পার্টনারশিপ ডায়ালগ’ যদি কোনো অর্থ বহন করে তা হচ্ছে- বিশ্বব্যবস্থায় নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য হারিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছোট দেশগুলোর ওপর তাদের নিরাপত্তার দায় চাপিয়ে দিতে চাইছে। এই উদ্দেশ্যেই নিরাপত্তার প্রশ্নে বাংলাদেশকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এর ফল কী দাঁড়ায় তা এখনি বলার সময় হয়নি। এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কৌশলগত অবস্থান ও সম্পর্ক বদলাচ্ছে- এটাই এখনকার জন্য সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক।
ফরহাদ মজহার: কবি, কলামিস্ট ও মানবাধিকার কর্মী
ইমেইল: farhadmazhar@hotmail.com
No comments