সত্য সেলুকাস! এটাও ক্রিকেট! by পার্থ প্রতিম চন্দ্র
আইপিএলে খেলা একেবারে জমে উঠেছে। ক্রিকেটকে সামনে রেখে চলছে নানা খেলা। কখনও বেটিং, কখনও ফ্র্যানচাইজি দলের কালো টাকা, কখনও বা মাঠে ঢুকে মালিকের দাদাগিরি, কখনও আবার ক্রিকেটার শ্লীলতহানি করে বসছেন। সব মিলিয়ে আইপিএল আছে আইপিএলেই।
ভুল করেও যেন ভাববেন না আইপিএলের পুরো নামটা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ! আসলে আইপিএলের পুরো নাম যে ইন্ডিয়ান প্যায়সা লিগ- সেটা জন্মলগ্ন থেকই পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন ললিত মোদি। মোদি আজ দুর্নীতির দায়ে দেশ ছাড়া, তাতে কি! তার যোগ্য উত্তরসূরীরা দিব্যি বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আইপিএলকে। গতরাতের পর নিন্দুকদের মুখে আইপিএলের নয়া নাম, ইন্ডিয়ান পায়জামা লিগ। যার ‘সাইড এফেক্ট’ কখনও ম্যাচ গড়াপেটা, কখনও মালিকের দাদাগিরি, কখনও আবার ক্রিকেটারের অসভ্যতা। মস্তিকের কম্পিউটারে পুরনো হয়ে যাওয়া ফাইলটা একটু খুলুন, দেখবেন এই যে আইপিএল নিয়ে এত বিতর্ক, এত নোংরামোর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে সে সবই কিন্তু কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আইপিএলের জন্ম দিয়ে মোদির রাতারাতি হেলিকপ্টারপতি বনে যাওয়া (কোটিপতি কথাটা বহুল ব্যবহারে পুরনো হয়ে গেছে), আয়কর হানা, ইন্ডিয়া টিভির ক্যামেরায় ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কথা স্বীকার করে পাঁচ ক্রিকেটারের সাসপেন্ড হওয়া, শাহরুখ খানের ওয়াংখেড়েতে সাসপেন্ড হওয়া, কিংবা অশ্লীলতার দায়ে ক্রিকেটারের সসাপেন্ড হওয়া এইসবই এক সুতোর তারে গাঁথা। যা দেখে বলতেই ইচ্ছে হয় সত্যি এটাও ক্রিকেট!
শুনেছিলাম এক বিপণন বিশেষজ্ঞ আইপিএলকে ক্রিকেটের আইটেম ড্যান্সার হিসাবে অ্যাখা দিয়েছিলেন। তার বক্তব্য ছিল ক্রিকেটকে যদি একটা তিন ঘণ্টার সিনেমা হিসাবে দেখা হবে তাহলে নায়ক হবে টেস্ট, নায়িকা ওয়ানডে, ভিলেন টি টোয়েন্টি, আর কিছুটা ‘রিলিফ’র জন্য আইটেম ড্যান্সার আইপিএল। কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে সেই আইটেম ড্যান্সারের দোষে পুরো সিনেমাটাই লাটে উঠতে বসেছে। কেউ কেউ হয়ত রে রে করে
উঠে বলবেন, কোথায় লাটে উঠছে! এই তো কত টাকা আসছে এই আইপিএলের জন্য। তাদের বলি, একবার খেয়াল করেছেন কি আইপিএলের জন্য বিশ্ব ক্রিকেটটা কেমন থমকে গিয়েছে!
এই এপ্রিল-মে মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের হয়ে কোনও খেলোয়াড়ই আর খেলতে চাইছে না। মালিঙ্গা তো আইপিএলে খেলবেন বলে দেশের হয়ে টেস্ট খেলাই ছেড়ে দিলেন। পিটারসেনও অনেক রাগ অভিমানের পর অনিচ্ছা পর দেশের হয়ে খেলতে গেলেন। ক্রিকেটাররা আইপিএলের অর্থের মোহজালে এতটাই আবদ্ধ যে দেশের বোর্ডদের জানিয়ে দিয়েছেন, আইপিএলের সময় নো ক্রিকেট প্লিজ। সঙ্গে রয়েছে ক্রিকেট বিশ্বের জঙ্গলে ‘সিংহ’ বিসিসিআইয়ের চাপ। সব মিলিয়ে পাঁচ বছরের আইপিএল শিশু প্রায় গলা টিপতে চলেছে ক্রিকেটকে।
তবে পুরো ঘটনায় সবচেয়ে হাস্যকর রাজনীতিবিদদের ভূমিকা। আইপিএলের বিভিন্ন কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর লোকসভায় দাবি উঠেছে আইপিএল বন্ধ করে দেয়ার। আইপিএল নিয়ে একটা সময় এরাই মাতামাতি করেছেন। কমপ্লিমেন্টরি টিকিটের আবদার এরাই চেয়ে থাকেন। আইপিএলে যখন বিশাল মাপের আর্থিক কেলেঙ্কারি হলো, আয়কর হানা হলো বিভিন্ন ক্রিকেট সংস্থা আর ফ্র্যানচাইজিদের অফিসে তখনও লোকসভা জুড়ে হইহই পড়েছিল। বাজার ঠান্ডা হতেই লোকসভাও ঠান্ডা। সবচেয়ে বড় কথা আইপিএলে কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় দুই রাজনৈতিক দলেরই প্রতিনিধিরা আছেন। আইপিএলের কমিশনার রাজীব শুক্ল কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, গর্ভনিং কাউন্সিলে আছেন বিজেপি নেতা অরুন জেটলি। আইপিএলকে নিষিদ্ধ করার ডাক সবার আগে দেন যিনি সেই লালুপ্রসাদ যাদব আবার নিজেই ভারতীয় রাজনীতিতে ‘দুর্নীতির বটগাছ’ হিসাবে পরিচিত। লালু অবশ্য বরাবরই ক্রিকেটের বিরোধী শিবিরের লোক। কার্গিল যুদ্ধ চলাকালীন ‘৯৯ বিশ্বকাপ টিভিতে না দেখানোর দাবি তুলেছিলেন বিহারের এক সময়ের রাজা। তবে কিনা এই লালুই আবার বিহার ক্রিকেট সংস্থার হর্তাকর্তা হতে চেয়েছিলেন, নিজের ছেলেকেও ক্রিকেটার বানিয়েছেন।
আসলে রাজনীতিবিদরা জানেন, আইপিএলকে এখন দু’চারটে গালাগাল করলে দেশের আমজনতার প্রিয় হওয়া যাবে। আসলে মোদ্দা কথা হল বলিউড, টালিউড, ব্যবসাদাররা নিজেদের টিআরপি বাড়াতে আর ট্যাঁক গোছাতে গিয়ে ক্রিকেটকে প্রায় পিষে মেরে ফেলেছেন। আর আমরা সাধারণ মানুষরা বোকা বনে টিভিতে ওদের দেখে হাততালি দিয়ে বলি, দেখেছিস! ‘আইপিএল কি যেমন তেমন! কে না আসে এই খেলা দেখতে’।
আইপিএলের কেস ডায়েরি
ঘটনাক্রম এক (খালি চোখে যা দেখলাম): ইন্ডিয়া টিভির গোপন ক্যামেরায় ক্রিকেটাররা স্বীকার করলেন আইপিএলে কালো টাকার চালাচালি হয়। গড়াপেটাও হয় বহু ক্ষেত্রে। টেলিভিশন ফুটেজে পরিষ্কার দেখানো হয় আইপিএলে গড়াপেটা, ক্রিকেটারদের অতিরিক্ত 'কালো' টাকার আদান প্রদান হয়। আইপিএলে বহু দেশ-বিদেশি ক্রিকেটার গড়াপেটা চক্র চালাচ্ছেন। গড়াপেটা চলছে প্রথম শ্রেণীর ম্যাচেও। বহু ক্ষেত্রে সুন্দরীদের, চিয়ার লিডারদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের ক্রিকেটার-বোলার শলভকে ধরেছিল ওই চ্যানেলের স্টিং-টিম। গোপন ক্যামেরার সামনে তারা বলেন, অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে বড় চুক্তির জন্য দরকষাকষি চলছে। ডিল পাকা হলেই গোপনে টাকার লেনদেন হয়ে যাবে।
(যা মনে পড়ল): প্রচণ্ড রোদে টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে লোকটা। সারা গায়ে ঘামে ভেজা, চটিটাও ছিঁড়ে গেছে। হঠাৎ ঘোড়সওয়ারি পুলিশ এসে লাইনে কিছুটা বিশৃঙ্খলতা দেখে দিল লাঠি চালিয়ে। প্রচণ্ড ক্লান্ত শরীর নিয়ে লোকটা বেশি দূর যেতে পারল না। পুলিশের লাঠির ঘা খেয়ে লুটিয়ে পড়ল লোকটা। এগিয়ে গিয়ে তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম খুব লেগেছে? উত্তর এলো, না। অবাক হলাম। এবার বললেন, বর্ধমান থেকে রাতে এসেছি। ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িযে মাঠে বসে আইপিএল দেখব ঠিক করেছি। তাতে লাঠির বাড়িও হজম করে ফেলব। যেদিন রাতে ফিরে টিভিতে দেখলাম কে শলভ শ্রীবাস্তব না কে যেন বললেন, আরে বাবা টাকার জন্য আইপএলে অনেকেই গড়াপেটা করে। সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো সেই লোকটার কথা। এদের এই সব কাণ্ডকারখানা জন্যই কি লাইনে দাঁড়িয়ে পুলিশের মার খেয়েছিল সেই লোকটা।
ঘটনাক্রম দুই (যা শুনলাম): মুম্বাইকে হারানোর পর ওয়াংখেড়ের মাঠে ঢুকে ছেলে মেয়ের সঙ্গে টেনিস খেলতে চেয়েছিলেন শাহরুখ। কিন্তু ওয়াংখেড়ের নিয়ম হলো তুমি যত বড়ই হোতা হও মাঠে ঢুকে খেলার অনুমতি পাবে না। শাহরুখ মানতে চাননি। অগত্যা...। বাকি ঘটনাটা সবার জানা। কিন্তু প্রশ্ন হলো শাহরুখ এই রকম অন্যায় আবদার করার সাহস পান কোথা থেকে। মানছি উনি বলিউডের বাদশা। দেশজুড়ে ওনার ভক্তের সংখ্যা প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও বেশি। তাই বলে নিয়ম শৃঙ্খলা থাকবে না।
(যা মনে হল): বাংলার প্রবীণ এক ক্রিকেটার। নামটা ঠিক মনে আসছে না। তবে ডন ব্র্যাডম্যানের পেন ফ্রেন্ড ছিলেন। টালিগঞ্জের বাড়িতে বসে তিনি বলেছিলেন, ওয়াংখেড়ে কি যেমন তেমন মাঠ! ওখানে তুমি প্রথম একাদশে না খেললে মাঠের মধ্যে ঢোকারই অনুমতি পাবে না।
ঘটনাক্রম তিন (যা শুনলাম): দিল্লি ডেয়ারডেভিলস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ম্যাচের পর বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির এক পাঁচতারা হোটেলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ফ্রানচাইজির তরফে পার্টি দেয়া হয়েছিল। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের লুক পমার্সব্যাক এক মার্কিন মহিলাকে কটুক্তি করেন। লুক
পমার্সব্যাকের নামের ক্রিকেটার সেই মার্কিন মহিলাকে নাকি শারীরিক মিলনের প্রস্তাব দেন। লুকের সমর্থনে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছেন দলের মালিক সিদ্ধার্থ মাল্য। তবে কিনা একই অভিযোগ সিদ্ধার্থের বিরুদ্ধেও উঠেছে।
(যা মনে পড়ল): দক্ষিণ আফ্রিকার এক চিয়ার লিডার্স বলেছিলেন, আইপিএলে পারফর্ম করাকালীন দেখতাম ক্রিকেটাররা কেমন হ্যাংলার মত চেয়ে আছে। গোগ্রাসে গিলছে আমাকে। নিজেকে কেমন মাংসের টুকরো বলে মনে হত। অপমানে সেই চিয়ারলিডার্স আইপিএল ছেড়ে বেরিয়েও গিয়েছিলেন।
পার্থ প্রতিম চন্দ্র: কলকাতার সাংবাদিক
শুনেছিলাম এক বিপণন বিশেষজ্ঞ আইপিএলকে ক্রিকেটের আইটেম ড্যান্সার হিসাবে অ্যাখা দিয়েছিলেন। তার বক্তব্য ছিল ক্রিকেটকে যদি একটা তিন ঘণ্টার সিনেমা হিসাবে দেখা হবে তাহলে নায়ক হবে টেস্ট, নায়িকা ওয়ানডে, ভিলেন টি টোয়েন্টি, আর কিছুটা ‘রিলিফ’র জন্য আইটেম ড্যান্সার আইপিএল। কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে সেই আইটেম ড্যান্সারের দোষে পুরো সিনেমাটাই লাটে উঠতে বসেছে। কেউ কেউ হয়ত রে রে করে
উঠে বলবেন, কোথায় লাটে উঠছে! এই তো কত টাকা আসছে এই আইপিএলের জন্য। তাদের বলি, একবার খেয়াল করেছেন কি আইপিএলের জন্য বিশ্ব ক্রিকেটটা কেমন থমকে গিয়েছে!
এই এপ্রিল-মে মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের হয়ে কোনও খেলোয়াড়ই আর খেলতে চাইছে না। মালিঙ্গা তো আইপিএলে খেলবেন বলে দেশের হয়ে টেস্ট খেলাই ছেড়ে দিলেন। পিটারসেনও অনেক রাগ অভিমানের পর অনিচ্ছা পর দেশের হয়ে খেলতে গেলেন। ক্রিকেটাররা আইপিএলের অর্থের মোহজালে এতটাই আবদ্ধ যে দেশের বোর্ডদের জানিয়ে দিয়েছেন, আইপিএলের সময় নো ক্রিকেট প্লিজ। সঙ্গে রয়েছে ক্রিকেট বিশ্বের জঙ্গলে ‘সিংহ’ বিসিসিআইয়ের চাপ। সব মিলিয়ে পাঁচ বছরের আইপিএল শিশু প্রায় গলা টিপতে চলেছে ক্রিকেটকে।
তবে পুরো ঘটনায় সবচেয়ে হাস্যকর রাজনীতিবিদদের ভূমিকা। আইপিএলের বিভিন্ন কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর লোকসভায় দাবি উঠেছে আইপিএল বন্ধ করে দেয়ার। আইপিএল নিয়ে একটা সময় এরাই মাতামাতি করেছেন। কমপ্লিমেন্টরি টিকিটের আবদার এরাই চেয়ে থাকেন। আইপিএলে যখন বিশাল মাপের আর্থিক কেলেঙ্কারি হলো, আয়কর হানা হলো বিভিন্ন ক্রিকেট সংস্থা আর ফ্র্যানচাইজিদের অফিসে তখনও লোকসভা জুড়ে হইহই পড়েছিল। বাজার ঠান্ডা হতেই লোকসভাও ঠান্ডা। সবচেয়ে বড় কথা আইপিএলে কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় দুই রাজনৈতিক দলেরই প্রতিনিধিরা আছেন। আইপিএলের কমিশনার রাজীব শুক্ল কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, গর্ভনিং কাউন্সিলে আছেন বিজেপি নেতা অরুন জেটলি। আইপিএলকে নিষিদ্ধ করার ডাক সবার আগে দেন যিনি সেই লালুপ্রসাদ যাদব আবার নিজেই ভারতীয় রাজনীতিতে ‘দুর্নীতির বটগাছ’ হিসাবে পরিচিত। লালু অবশ্য বরাবরই ক্রিকেটের বিরোধী শিবিরের লোক। কার্গিল যুদ্ধ চলাকালীন ‘৯৯ বিশ্বকাপ টিভিতে না দেখানোর দাবি তুলেছিলেন বিহারের এক সময়ের রাজা। তবে কিনা এই লালুই আবার বিহার ক্রিকেট সংস্থার হর্তাকর্তা হতে চেয়েছিলেন, নিজের ছেলেকেও ক্রিকেটার বানিয়েছেন।
আসলে রাজনীতিবিদরা জানেন, আইপিএলকে এখন দু’চারটে গালাগাল করলে দেশের আমজনতার প্রিয় হওয়া যাবে। আসলে মোদ্দা কথা হল বলিউড, টালিউড, ব্যবসাদাররা নিজেদের টিআরপি বাড়াতে আর ট্যাঁক গোছাতে গিয়ে ক্রিকেটকে প্রায় পিষে মেরে ফেলেছেন। আর আমরা সাধারণ মানুষরা বোকা বনে টিভিতে ওদের দেখে হাততালি দিয়ে বলি, দেখেছিস! ‘আইপিএল কি যেমন তেমন! কে না আসে এই খেলা দেখতে’।
আইপিএলের কেস ডায়েরি
ঘটনাক্রম এক (খালি চোখে যা দেখলাম): ইন্ডিয়া টিভির গোপন ক্যামেরায় ক্রিকেটাররা স্বীকার করলেন আইপিএলে কালো টাকার চালাচালি হয়। গড়াপেটাও হয় বহু ক্ষেত্রে। টেলিভিশন ফুটেজে পরিষ্কার দেখানো হয় আইপিএলে গড়াপেটা, ক্রিকেটারদের অতিরিক্ত 'কালো' টাকার আদান প্রদান হয়। আইপিএলে বহু দেশ-বিদেশি ক্রিকেটার গড়াপেটা চক্র চালাচ্ছেন। গড়াপেটা চলছে প্রথম শ্রেণীর ম্যাচেও। বহু ক্ষেত্রে সুন্দরীদের, চিয়ার লিডারদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের ক্রিকেটার-বোলার শলভকে ধরেছিল ওই চ্যানেলের স্টিং-টিম। গোপন ক্যামেরার সামনে তারা বলেন, অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে বড় চুক্তির জন্য দরকষাকষি চলছে। ডিল পাকা হলেই গোপনে টাকার লেনদেন হয়ে যাবে।
(যা মনে পড়ল): প্রচণ্ড রোদে টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে লোকটা। সারা গায়ে ঘামে ভেজা, চটিটাও ছিঁড়ে গেছে। হঠাৎ ঘোড়সওয়ারি পুলিশ এসে লাইনে কিছুটা বিশৃঙ্খলতা দেখে দিল লাঠি চালিয়ে। প্রচণ্ড ক্লান্ত শরীর নিয়ে লোকটা বেশি দূর যেতে পারল না। পুলিশের লাঠির ঘা খেয়ে লুটিয়ে পড়ল লোকটা। এগিয়ে গিয়ে তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম খুব লেগেছে? উত্তর এলো, না। অবাক হলাম। এবার বললেন, বর্ধমান থেকে রাতে এসেছি। ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িযে মাঠে বসে আইপিএল দেখব ঠিক করেছি। তাতে লাঠির বাড়িও হজম করে ফেলব। যেদিন রাতে ফিরে টিভিতে দেখলাম কে শলভ শ্রীবাস্তব না কে যেন বললেন, আরে বাবা টাকার জন্য আইপএলে অনেকেই গড়াপেটা করে। সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো সেই লোকটার কথা। এদের এই সব কাণ্ডকারখানা জন্যই কি লাইনে দাঁড়িয়ে পুলিশের মার খেয়েছিল সেই লোকটা।
ঘটনাক্রম দুই (যা শুনলাম): মুম্বাইকে হারানোর পর ওয়াংখেড়ের মাঠে ঢুকে ছেলে মেয়ের সঙ্গে টেনিস খেলতে চেয়েছিলেন শাহরুখ। কিন্তু ওয়াংখেড়ের নিয়ম হলো তুমি যত বড়ই হোতা হও মাঠে ঢুকে খেলার অনুমতি পাবে না। শাহরুখ মানতে চাননি। অগত্যা...। বাকি ঘটনাটা সবার জানা। কিন্তু প্রশ্ন হলো শাহরুখ এই রকম অন্যায় আবদার করার সাহস পান কোথা থেকে। মানছি উনি বলিউডের বাদশা। দেশজুড়ে ওনার ভক্তের সংখ্যা প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও বেশি। তাই বলে নিয়ম শৃঙ্খলা থাকবে না।
(যা মনে হল): বাংলার প্রবীণ এক ক্রিকেটার। নামটা ঠিক মনে আসছে না। তবে ডন ব্র্যাডম্যানের পেন ফ্রেন্ড ছিলেন। টালিগঞ্জের বাড়িতে বসে তিনি বলেছিলেন, ওয়াংখেড়ে কি যেমন তেমন মাঠ! ওখানে তুমি প্রথম একাদশে না খেললে মাঠের মধ্যে ঢোকারই অনুমতি পাবে না।
ঘটনাক্রম তিন (যা শুনলাম): দিল্লি ডেয়ারডেভিলস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ম্যাচের পর বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির এক পাঁচতারা হোটেলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ফ্রানচাইজির তরফে পার্টি দেয়া হয়েছিল। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের লুক পমার্সব্যাক এক মার্কিন মহিলাকে কটুক্তি করেন। লুক
পমার্সব্যাকের নামের ক্রিকেটার সেই মার্কিন মহিলাকে নাকি শারীরিক মিলনের প্রস্তাব দেন। লুকের সমর্থনে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছেন দলের মালিক সিদ্ধার্থ মাল্য। তবে কিনা একই অভিযোগ সিদ্ধার্থের বিরুদ্ধেও উঠেছে।
(যা মনে পড়ল): দক্ষিণ আফ্রিকার এক চিয়ার লিডার্স বলেছিলেন, আইপিএলে পারফর্ম করাকালীন দেখতাম ক্রিকেটাররা কেমন হ্যাংলার মত চেয়ে আছে। গোগ্রাসে গিলছে আমাকে। নিজেকে কেমন মাংসের টুকরো বলে মনে হত। অপমানে সেই চিয়ারলিডার্স আইপিএল ছেড়ে বেরিয়েও গিয়েছিলেন।
পার্থ প্রতিম চন্দ্র: কলকাতার সাংবাদিক
No comments