শ্রদ্ধা, হাবিব ভাইয়ের প্রতি by মনজুরুল আহসান বুলবুল
আমার মধ্যবিত্ত এই জীবনের নানা পর্যায়ে নানা নায়কের স্পর্শে আমি ধন্য। হাবিবুর রহমান শেখ, ময়মনসিংহের প্রধান দৈনিক জাহানের সম্পাদক। হাবিব ভাইয়ের অবস্থান কোথায় আমার জীবনের সেই নায়কদের আসনে?
২৬শে মার্চ, স্বাধীনতা দিবসের ভোরে ময়মনসিংহ থেকে আতাউলের ফোনে হাবিব ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে এই প্রশ্নের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছি কেবল। মাত্র একদিন আগে ভাবীর সঙ্গে কথায় উদ্বেগটা বুঝতে পারছিলাম, কিন্তু পরিস্থিতি যে এতটা খারাপ তা ধারণা করতে পারিনি। আমার টেবিলে অগ্রাধিকার ডায়রির মধ্যে এখনো হাবিব ভাইয়ের শেষ চিঠি, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে দৈনিক জাহানে আমাকে সংবর্ধনা দেয়ার আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র, আরেক চিঠিতে ২৬ মার্চের সরকারি ক্রোড়পত্র যাতে দৈনিক জাহান ও বাংলার দর্পণ পায় তার তদবির করতে দুটি চিঠির অনুলিপি।
চিঠিগুলোতে হাত বুলাচ্ছি আর বুঝতে পাচ্ছি আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। কতদিনের সম্পর্ক হাবিব ভাইয়ের সঙ্গে আমার? হাবিব ভাইকে নিয়ে কিছু লিখতে গেলে সেতো হবে আমার নিজের জীবনেরই একটি অংশের চিত্র। আমার সাংবাদিক হয়ে ওঠা, বাংলার দর্পণ-চন্দ্রাকাশ- দৈনিক জাহানের পথ ধরে আমার পেশাগত ও ব্যক্তি জীবনের পথচলা, আমার সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা হয়ে ওঠা, ময়মনসিংহে সাংবাদিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার কথা- এসব কিছুতেই জড়িয়ে আছেন হাবিবুর রহমান শেখ, আমাদের হাবিব ভাই।
আমি কি আসলে পেশাদার সাংবাদিক হতে চেয়েছিলাম? জীবনের শুরুতে আমার চিকিৎসক বাবাই ছিলেন আমার রুল মডেল, হতে চেয়েছিলাম তার মতোই নিবেদিতপ্রাণ এক চিকিৎসক। এক পর্যায়ে মনে হলো চিকিৎসক হয়ে কয়েকজন রোগীর চিকিৎসা করার চাইতে রোগগ্রস্ত গোটা সমাজের চিকিৎসার জন্য রাজনীতি করাই বুঝি উত্তম। নিতে গেলাম রাজনীতির প্রথম পাঠ, আটকে গেলাম পাঠচক্রে। প্রথামাফিক রাজনীতির বদলে বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত রচনার দিকে মনযোগী হলাম, লেখালেখি তো ছিলই। কিন্তু পেশাদার সাংবাদিক হওয়া বা সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেয়ার পরিকল্পনা তখনো মাথায় নেই।
সম্ভবত ১৯৭৭ সনের কথা, পড়ি আনন্দমোহন কলেজে। সে সময় ময়মনসিংহের প্রধান পত্রিকা সাপ্তাহিক বাংলার দর্পণ। এক অর্থে আমাদের পাড়া থেকেই বেরোয় সেটি। আমি থাকি ৪৯ নম্বর বাউন্ডারি রোডে, বাংলার দর্পণ বেরোয় ৪৭ নম্বর থেকে। একুশে উদযাপন করেছি, সেই খবরটি পাড়ার পত্রিকায় ছাপা হবে না কেমন কথা? নিজের মতো করে সেই উদযাপনের খবর লিখে নিয়ে গেলাম বাংলার দর্পণ অফিসে, চিনি না কাউকেই। অফিসে ঢুকে সরাসরি কাগজটি যার হাতে দিলাম তিনিই হাবিবুর রহমান শেখ। ছোট দুই স্লিপের সংবাদটিতে চোখ বুলালেন, বললেন; পত্রিকায় যেভাবে খবর প্রকাশিত হয সেভাবে লিখে দাও ছাপা হবে, ফেরত দিলেন কাগজটি। বড় ধাক্কা খেলাম, অনুষ্ঠান যা হয়েছে তাইতো লেখা হয়েছে। কিন্তু সম্পাদক বলছেন ছাপা যাবে না। মানেটি হচ্ছে, পত্রিকার জন্য লিখতে হয় ভিন্নতরভাবে, কী সেই কৌশল-তখন আমার জানা নেই।
পরের তিন দশক ধরে ভালো কপি লেখা, ভালোভাবে সম্পাদনার যে অসংখ্য পাঠ নিয়েছি তার নেপথ্যে ছিল হাবিব ভাইয়ের সেই কপি ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা।
তারপর কিভাবে যেন জড়িযে গেলাম বাংলার দর্পণের সঙ্গে। পুরোদমে ছাত্র, তবুও আনুষ্ঠানিক কোনো নিয়োগপত্র ছাড়াই দায়িত্ব পেলাম বাংলার দর্পণের ছোটদের পাতাটি সম্পাদনার। একে ট্যাবলয়েড সাইজের পত্রিকা তায় আবার সাপ্তাহিক কাগজ, মাসে বেরোয় চারটি সংখ্যা। সেই চার সংখ্যার ছোটদের পাতা দেখার দায়িত্ব পেলাম আমরা চারজন, প্রতি সপ্তাহে একজনের দায়িত্ব। আমরা তখন ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কোথায় নেই? ছড়া লিখি, লিটলম্যাগ করি, রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত মাথায় টগবগ করে ফোটে, গানের-নাচের-আলোচনার অনুষ্ঠান কোনোটাই আমাদের বাদ দিযে নয়। পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতি তো আছেই। এর মধ্যে বাংলার দর্পণের দায়িত্বটি পেয়ে বর্তে গেলাম আমরা চারজন: রইস মনরম (ছড়াকার, এখন মোহনগঞ্জবাসী শিক্ষক), আতাউল করিম সফিক ছড়াকার- এখন আমেরিকা প্রবাসী), আজহারুল ইসলাম হিরু ( গল্পকার, ইতালি প্রবাসী) আর আমি।
ছাত্ররাজনীতির বাইরে আমার তখনকার পরিচয় ছড়াকার আর সাংস্কৃতিক সংগঠক। তুমুল উত্তেজনা আমাদের। হাবিব ভাইয়ের নির্দেশনায় প্রতি সপ্তাহে একজনের দায়িত্ব পালন করার কথা, কিন্তু আমরা চারজন কাজ করি একাট্টা হয়ে। একমাস শেষে ঈদের আগে প্রথম মাসের সন্মানি পেলাম চারজনে, সাকুল্যে ২০০ টাকা। প্রতিজনের ভাগে ৫০ টাকা করে। হাবিব ভাই ততদিনে আমার মাথায় নেশাটা ঢুকিয়ে দিয়েছেন। আমার অন্য তিন সহযোগী হিসাব করে সময় দেন, আমি প্রায় পুরো সময় ঢুকে গেছি বাংলার দর্পণে। সম্ভবত বুধবারে পত্রিকা ছাপা হয়, ৪৭ বাউন্ডারি রোডের বাড়িতে বিকেল থেকেই আমরা অপেক্ষমাণ, কখন ছাপানো পত্রিকা আসবে আর আমরা বসবো ভাঁজ করতে। সে এক এলাহী কারবার, লুঙ্গি পরেই বসে গেছেন হাবিব ভাই, আর আমরা তো আছিই। আমার উত্তেজনা আরো বেশি, কারণ ছোটদের পাতায় ছাপা হয়েছে ছড়া, গল্প, কবিতা আমাদেরই সম্পাদনায়। নিজেদের লেখাই কোথাও ছাপা হয় না আর হয়ে গেছি সম্পাদক, অন্যদের লেখা সম্পাদনা করি ! পুরো পত্রিকার সম্পাদক হাবিব ভাই, আর আমরা তার অধীনে ছোট সম্পাদক। এভাবেই হয়ে ওঠলাম বাংলার দর্পণের অংশ।
হঠাৎ করেই দেখলাম ৪৭ বাউন্ডারি রোডে দর্পণ অফিসের সামনে কাঠের বিশাল বক্সসমেত এক পিকআপ, জানলাম হাবিব ভাই প্রেস (ছাপাখানা) কিনেছেন, তার কিছুদিন পরে জানলাম হাবিব ভাই বের করছেন এ অঞ্চলের প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র- দৈনিক জাহান। আমি তখন সাপ্তাহিকের সাংবাদিকতার নেশায় আপাদমস্তক ডুবে গেছি। শুরু থেকেই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেলাম দৈনিক জাহানের সঙ্গে। এর ফাঁকে মাসিক চন্দ্রাকাশ, পুরো এই সাহিত্য পত্রিকার দায়িত্ব নিয়ে বুদ হয়ে রইলাম। চন্দ্রাকাশ প্রথম ঢাকার বাইরের নিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা যা প্রকাশ করেছিল পূর্ণাঙ্গ ঈদসংখ্যা। শোয়েব সিদ্দিকীর পুরো উপন্যাস, আতা সরকারসহ অনেকের অনেকগুলো গল্প, খ্যতিমানদের কবিতা, যতীন সরকারের আত্মজীবনী, প্রণব চৌধুরীর সাময়িক কথকতা- এসব দিয়েই সাজানো চন্দ্রাকাশ। আজ ময়মনসিংহের বিখ্যাত লেখকদের প্রায় সবাই ছিলেন বাংলার দর্পণ, দৈনিক জাহানের বা চন্দ্রাকাশের নিয়মিত লেখক। অনেকের হাতেখড়ি হয়েছে এসব কাগজেই। বাউন্ডারি রোড আর নতুন বাজার হয়ে মাসকান্দায় স্থায়ী ভিত গাড়লো দৈনিক জাহান।
আজ দৈনিক জাহানের প্রথম সংখ্যাটি হাতে নিয়ে অনেকেই অবজ্ঞায় ঠোঁট ওল্টাবেন, কিন্তু ওই ছোট সংখ্যাটির সঙ্গে আমাদের প্রথম তারুণ্যেও আবেগ কতটা জড়িত তা কাউকে বুঝানো যাবে না। আজকের জনারণ্য মাসকান্দা শিল্পনগরী তখন জনমানবশূন্য, সেখান থেকে মধ্যরাত অবধি কাজ শেষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের লাশকাটা ঘরের সামনে দিয়ে দম বন্ধ করে কতদিন বাসায় আসতে ভোর হয়ে গেছে তার হিসাব মনেও রাখিনি। দৈনিক জাহানের প্রথম দিকে হেডিং করার বড় ফন্টের টাইপ আমাদের ছিল না। হাবিব ভাই এক নিরীহ নিপাট ভদ্রলোক আইয়ুব ভাইকে ধরে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তিনি সিটি প্রেসের কর্ণধার। নিউজ লেখার আগেই আমরা ঠিক করতাম হেডিং, আইয়ুব ভাই সেই হেডিং নিয়ে যেতেন সিটি প্রেসে, পকেটে করে আনতেন প্রয়োজনীয শীশার টাইপ, সাজানো হতো দৈনিক জাহানের মূল হেডিং। পরদিন কাকডাকা ভোরে সিটি প্রেসে দিন শুরু হওয়ার আগেই আগের রাতের পৃষ্ঠা ভেঙে হাবিব ভাই সেই টাইপগুলো তুলে দিতেন আইয়ুব ভাইয়ের হাতে। এভাবেই চলেছে দৈনিক জাহানের প্রথম দিককার দীর্ঘদিন।
তখন বুঝিনি কিন্তু আজ ভেবে আশ্চর্য হই, ভালো একজন সাংবাদিক হওয়ার ভিত গড়তে আমাকে কিভাবে একের পর এক সুযোগ দিয়েছেন হাবিব ভাই। তার এই উদারতা আমাকে দিয়েছে সাংবাদিকতার বিশাল আকাশে ডানা মেলে ওড়ার অপার শক্তি।
পত্রিকার বাইরে যদি বলি, ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার কথা। হাবিবুর রহমান শেখকে বাদ দিয়ে এ ইতিহাসও সম্পূর্ণ হবে না। তখন ঐক্যবদ্ধ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ইউনিট হিসেবে ময়মনসিংহে সাংবাদিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা, নেতৃত্বে ইমাম ভাই (এ জেড এম ইমাম উদ্দিন মুক্তা ) আর আমি। সঙ্গে আছেন কাজী ইয়াসিন, সুলতান উদ্দিন খান, এম এস দোহা প্রমুখ। কেন্দ্রের সঙ্গে আমারই মূল যোগাযোগ, বিএফইউজে’র কেন্দ্রের নেতা তখন হাবিবুর রহমান মিলন (সভাপতি) আর সৈয়দ জাফর (মহাসচিব)। কঠিন সব পদ্ধতি মানতে হতো বিএফইজে’র অনুমোদন পেতে। সব আইন-কানুন মেনে নিয়োগপত্র লাগবে সব সাংবাদিকের, বেতন ভাতা নিয়মিত দেয়া হয় তার সনদ লাগবে। শ্রম অধিদপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে সাংবাদিক ইউনিয়ন গড়ে তোলা যাবে ঠিকই, কিন্তু বিএফইউজে’র অনুমোদন তখন খুবই কঠিন। রেজিস্ট্রেশন মিললেও বিএফইউজে’র অনুমোদন মিলবে তাদের সরেজমিন তদন্ত শেষে। ময়মনসিংহে সাংবাদিক ইউনিয়ন গড়তে সব কিছুর জন্যই আমাদের ভরসা হাবিব ভাই। চাহিদা অনুযায়ী সব কাগজ তৈরি করে দিলেন তিনি। কেন্দ্র থেকে বিএফইউজে থেকে পাঠানো হলো ডাকসাইটে দুই সাংবাদিকের প্রতিনিধি দল: আজিজ মিসির এবং সন্তোষ গুপ্ত-কে। তারা দেখবেন সবকিছু ঠিক আছে কি না। আমরা সবকিছু নিয়ে তৈরি আর হাবিব ভাই নেপথ্যে অপেক্ষমাণ কখন কি লাগে তাই নিয়ে। চিন্তা করা যায়, একজন মালিক একটি ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তুলতে এভাবে সহায়তা দিচ্ছেন?
এই ইউনিয়ন নিয়ে অনেক ঝামেলা তাকে পোহাতে হয়েছে। কিন্তু কখনো তাকে অনুতাপ করতে দেখিনি এই বলে যে, তার সহায়তা না হলে ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়ন হয়তো সে সময় জন্ম নিতো না । অনেক পরে আমি যখন বিএফইউজে’র মহাসচিব বা সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি তখন স্মিত হেসে হাবিব ভাই বলতেন: “তুমি তো বড় নেতা, এইডাই আমরার গর্ব।” অকপটে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই সাংবাদিকতার পাশাপাশি আমার ইউনিয়ন জীবনের ভিতটাও গড়ে দিয়েছেন হাবিব ভাই।
হাবিব ভাই কি শুধুই অর্থবিত্তকে সামনে রেখেই সাংবাদিকতা করতেন? তার কি কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ছিল? তার আরো ঘনিষ্ঠজনেরা হয়তো এ সম্পর্কে বিশদ বলতে পারবেন। কিন্তু ময়মনসিংহের সংবাদপত্র জগতের এক সময়ের অপ্রতিদ্বন্দ্বী এই সম্পাদক-মালিক যে পরিমাণ বিজ্ঞাপন মূল্য পেয়েছেন তা দিয়ে শুধু ময়মনসিংহে নয়, রাজধানীতেও তার বিত্তবৈভব গড়ে তুলতে পারতেন। ঢাকার বাইরের অনেক সংবাদপত্র মালিক-সম্পাদকের যে বিত্ত রাজধানীতেই দেখি তার ধারে কাছেও নেই হাবিব ভাই। আর এক সময়ের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (বাকসু) ভিপি হাবিব ভাই রাজনীতির মাঠের ধারে কাছেও যে ভিড়তে পারেননি সেতো খুবই প্রত্যক্ষ। কিন্তু তার মাথায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছিল সব সময়ই। ঢাকা-ভালুকা-ময়মনসিংহ সড়ক চালু, ব্রহ্মপুত্র নদ খনন, ময়মনসিংহে গ্যাস সরবরাহ, আনন্দমোহন কলেজকে বিশ্ববিদ্যলয়ে উন্নীতকরণ, সবশেষে ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণার বিষয় নিয়ে দৈনিক জাহান যে ধারাবাহিক সাংবাদিকতা করেছে তার নেপেথ্যে ছিল হাবিব ভাইয়ের ময়মনসিংহ প্রেম। এর সঙ্গে নেত্রকোনাকেন্দ্রিক নানা চিন্তা তো ছিলই।
হাবিব ভাইয়ের সঙ্গে কখনো ঝগড়া হয়েছে আমার? কল্পনা করতে পারি না। ইউনিয়ন করতে গিয়ে ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করার আন্দোলনে কখনো কখনো মতান্তর হয়েছে, কিন্তু মনান্তর কখনো নয়।
আমার ময়মনসিংহ জীবন শেষ হলেও বিন্দুমাত্র ছিন্ন হয়নি হাবিব ভাই বা তার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক। ফিলিপাইনে আঞ্চলিক পত্রিকার সম্পাদকদের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি পাঠানোর ক্ষেত্রে আমার সামান্য ভূমিকা ছিল, প্রেস কাউন্সিলে সদস্য মনোনয়নে ছিল দায়িত্ব -প্রথম সুযোগেই প্রস্তাব করেছি হাবিব ভাইয়ের নাম। তার উচ্ছ্বসিত হওয়ার একমাত্র দৃশ্যমান বিষয়টি হচ্ছে তার আকর্ণ বিস্তৃত হাসি। তার এই হাসিটি প্রত্যক্ষ করেছি দুই ক্ষেত্রেই।
জীবনের সব পর্যায়ে হাসিমাখা এই হাবিব ভাইকেই ধরে রাখতে চাই। কারণ এতক্ষণ হাবিব ভাইয়ের কথা বলতে গিয়ে নিজের কথাই বললাম, নাকি আমার জীবনের কথা বলতে গিয়ে হাবিব ভাইয়ের কথা বললাম? আমার পেশাগত জীবনের ভিত গড়ে দিয়ে আমার জীবনে কোথায় তার অবস্থান তা বোধ করি কিছুটা তুলে ধরতে পারলাম। শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কি এই ঋণ শোধ করা যায়? হাবিব ভাইয়ের প্রতি বিনীত শ্রদ্ধা।
মনজুরুল আহসান বুলবুল: প্রধান সম্পাদক, বৈশাখী টেলিভিশন।
ইমেইল: bulbulahsan@gmail.com
চিঠিগুলোতে হাত বুলাচ্ছি আর বুঝতে পাচ্ছি আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। কতদিনের সম্পর্ক হাবিব ভাইয়ের সঙ্গে আমার? হাবিব ভাইকে নিয়ে কিছু লিখতে গেলে সেতো হবে আমার নিজের জীবনেরই একটি অংশের চিত্র। আমার সাংবাদিক হয়ে ওঠা, বাংলার দর্পণ-চন্দ্রাকাশ- দৈনিক জাহানের পথ ধরে আমার পেশাগত ও ব্যক্তি জীবনের পথচলা, আমার সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা হয়ে ওঠা, ময়মনসিংহে সাংবাদিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার কথা- এসব কিছুতেই জড়িয়ে আছেন হাবিবুর রহমান শেখ, আমাদের হাবিব ভাই।
আমি কি আসলে পেশাদার সাংবাদিক হতে চেয়েছিলাম? জীবনের শুরুতে আমার চিকিৎসক বাবাই ছিলেন আমার রুল মডেল, হতে চেয়েছিলাম তার মতোই নিবেদিতপ্রাণ এক চিকিৎসক। এক পর্যায়ে মনে হলো চিকিৎসক হয়ে কয়েকজন রোগীর চিকিৎসা করার চাইতে রোগগ্রস্ত গোটা সমাজের চিকিৎসার জন্য রাজনীতি করাই বুঝি উত্তম। নিতে গেলাম রাজনীতির প্রথম পাঠ, আটকে গেলাম পাঠচক্রে। প্রথামাফিক রাজনীতির বদলে বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত রচনার দিকে মনযোগী হলাম, লেখালেখি তো ছিলই। কিন্তু পেশাদার সাংবাদিক হওয়া বা সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেয়ার পরিকল্পনা তখনো মাথায় নেই।
সম্ভবত ১৯৭৭ সনের কথা, পড়ি আনন্দমোহন কলেজে। সে সময় ময়মনসিংহের প্রধান পত্রিকা সাপ্তাহিক বাংলার দর্পণ। এক অর্থে আমাদের পাড়া থেকেই বেরোয় সেটি। আমি থাকি ৪৯ নম্বর বাউন্ডারি রোডে, বাংলার দর্পণ বেরোয় ৪৭ নম্বর থেকে। একুশে উদযাপন করেছি, সেই খবরটি পাড়ার পত্রিকায় ছাপা হবে না কেমন কথা? নিজের মতো করে সেই উদযাপনের খবর লিখে নিয়ে গেলাম বাংলার দর্পণ অফিসে, চিনি না কাউকেই। অফিসে ঢুকে সরাসরি কাগজটি যার হাতে দিলাম তিনিই হাবিবুর রহমান শেখ। ছোট দুই স্লিপের সংবাদটিতে চোখ বুলালেন, বললেন; পত্রিকায় যেভাবে খবর প্রকাশিত হয সেভাবে লিখে দাও ছাপা হবে, ফেরত দিলেন কাগজটি। বড় ধাক্কা খেলাম, অনুষ্ঠান যা হয়েছে তাইতো লেখা হয়েছে। কিন্তু সম্পাদক বলছেন ছাপা যাবে না। মানেটি হচ্ছে, পত্রিকার জন্য লিখতে হয় ভিন্নতরভাবে, কী সেই কৌশল-তখন আমার জানা নেই।
পরের তিন দশক ধরে ভালো কপি লেখা, ভালোভাবে সম্পাদনার যে অসংখ্য পাঠ নিয়েছি তার নেপথ্যে ছিল হাবিব ভাইয়ের সেই কপি ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা।
তারপর কিভাবে যেন জড়িযে গেলাম বাংলার দর্পণের সঙ্গে। পুরোদমে ছাত্র, তবুও আনুষ্ঠানিক কোনো নিয়োগপত্র ছাড়াই দায়িত্ব পেলাম বাংলার দর্পণের ছোটদের পাতাটি সম্পাদনার। একে ট্যাবলয়েড সাইজের পত্রিকা তায় আবার সাপ্তাহিক কাগজ, মাসে বেরোয় চারটি সংখ্যা। সেই চার সংখ্যার ছোটদের পাতা দেখার দায়িত্ব পেলাম আমরা চারজন, প্রতি সপ্তাহে একজনের দায়িত্ব। আমরা তখন ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কোথায় নেই? ছড়া লিখি, লিটলম্যাগ করি, রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত মাথায় টগবগ করে ফোটে, গানের-নাচের-আলোচনার অনুষ্ঠান কোনোটাই আমাদের বাদ দিযে নয়। পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতি তো আছেই। এর মধ্যে বাংলার দর্পণের দায়িত্বটি পেয়ে বর্তে গেলাম আমরা চারজন: রইস মনরম (ছড়াকার, এখন মোহনগঞ্জবাসী শিক্ষক), আতাউল করিম সফিক ছড়াকার- এখন আমেরিকা প্রবাসী), আজহারুল ইসলাম হিরু ( গল্পকার, ইতালি প্রবাসী) আর আমি।
ছাত্ররাজনীতির বাইরে আমার তখনকার পরিচয় ছড়াকার আর সাংস্কৃতিক সংগঠক। তুমুল উত্তেজনা আমাদের। হাবিব ভাইয়ের নির্দেশনায় প্রতি সপ্তাহে একজনের দায়িত্ব পালন করার কথা, কিন্তু আমরা চারজন কাজ করি একাট্টা হয়ে। একমাস শেষে ঈদের আগে প্রথম মাসের সন্মানি পেলাম চারজনে, সাকুল্যে ২০০ টাকা। প্রতিজনের ভাগে ৫০ টাকা করে। হাবিব ভাই ততদিনে আমার মাথায় নেশাটা ঢুকিয়ে দিয়েছেন। আমার অন্য তিন সহযোগী হিসাব করে সময় দেন, আমি প্রায় পুরো সময় ঢুকে গেছি বাংলার দর্পণে। সম্ভবত বুধবারে পত্রিকা ছাপা হয়, ৪৭ বাউন্ডারি রোডের বাড়িতে বিকেল থেকেই আমরা অপেক্ষমাণ, কখন ছাপানো পত্রিকা আসবে আর আমরা বসবো ভাঁজ করতে। সে এক এলাহী কারবার, লুঙ্গি পরেই বসে গেছেন হাবিব ভাই, আর আমরা তো আছিই। আমার উত্তেজনা আরো বেশি, কারণ ছোটদের পাতায় ছাপা হয়েছে ছড়া, গল্প, কবিতা আমাদেরই সম্পাদনায়। নিজেদের লেখাই কোথাও ছাপা হয় না আর হয়ে গেছি সম্পাদক, অন্যদের লেখা সম্পাদনা করি ! পুরো পত্রিকার সম্পাদক হাবিব ভাই, আর আমরা তার অধীনে ছোট সম্পাদক। এভাবেই হয়ে ওঠলাম বাংলার দর্পণের অংশ।
হঠাৎ করেই দেখলাম ৪৭ বাউন্ডারি রোডে দর্পণ অফিসের সামনে কাঠের বিশাল বক্সসমেত এক পিকআপ, জানলাম হাবিব ভাই প্রেস (ছাপাখানা) কিনেছেন, তার কিছুদিন পরে জানলাম হাবিব ভাই বের করছেন এ অঞ্চলের প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র- দৈনিক জাহান। আমি তখন সাপ্তাহিকের সাংবাদিকতার নেশায় আপাদমস্তক ডুবে গেছি। শুরু থেকেই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেলাম দৈনিক জাহানের সঙ্গে। এর ফাঁকে মাসিক চন্দ্রাকাশ, পুরো এই সাহিত্য পত্রিকার দায়িত্ব নিয়ে বুদ হয়ে রইলাম। চন্দ্রাকাশ প্রথম ঢাকার বাইরের নিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা যা প্রকাশ করেছিল পূর্ণাঙ্গ ঈদসংখ্যা। শোয়েব সিদ্দিকীর পুরো উপন্যাস, আতা সরকারসহ অনেকের অনেকগুলো গল্প, খ্যতিমানদের কবিতা, যতীন সরকারের আত্মজীবনী, প্রণব চৌধুরীর সাময়িক কথকতা- এসব দিয়েই সাজানো চন্দ্রাকাশ। আজ ময়মনসিংহের বিখ্যাত লেখকদের প্রায় সবাই ছিলেন বাংলার দর্পণ, দৈনিক জাহানের বা চন্দ্রাকাশের নিয়মিত লেখক। অনেকের হাতেখড়ি হয়েছে এসব কাগজেই। বাউন্ডারি রোড আর নতুন বাজার হয়ে মাসকান্দায় স্থায়ী ভিত গাড়লো দৈনিক জাহান।
আজ দৈনিক জাহানের প্রথম সংখ্যাটি হাতে নিয়ে অনেকেই অবজ্ঞায় ঠোঁট ওল্টাবেন, কিন্তু ওই ছোট সংখ্যাটির সঙ্গে আমাদের প্রথম তারুণ্যেও আবেগ কতটা জড়িত তা কাউকে বুঝানো যাবে না। আজকের জনারণ্য মাসকান্দা শিল্পনগরী তখন জনমানবশূন্য, সেখান থেকে মধ্যরাত অবধি কাজ শেষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের লাশকাটা ঘরের সামনে দিয়ে দম বন্ধ করে কতদিন বাসায় আসতে ভোর হয়ে গেছে তার হিসাব মনেও রাখিনি। দৈনিক জাহানের প্রথম দিকে হেডিং করার বড় ফন্টের টাইপ আমাদের ছিল না। হাবিব ভাই এক নিরীহ নিপাট ভদ্রলোক আইয়ুব ভাইকে ধরে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তিনি সিটি প্রেসের কর্ণধার। নিউজ লেখার আগেই আমরা ঠিক করতাম হেডিং, আইয়ুব ভাই সেই হেডিং নিয়ে যেতেন সিটি প্রেসে, পকেটে করে আনতেন প্রয়োজনীয শীশার টাইপ, সাজানো হতো দৈনিক জাহানের মূল হেডিং। পরদিন কাকডাকা ভোরে সিটি প্রেসে দিন শুরু হওয়ার আগেই আগের রাতের পৃষ্ঠা ভেঙে হাবিব ভাই সেই টাইপগুলো তুলে দিতেন আইয়ুব ভাইয়ের হাতে। এভাবেই চলেছে দৈনিক জাহানের প্রথম দিককার দীর্ঘদিন।
তখন বুঝিনি কিন্তু আজ ভেবে আশ্চর্য হই, ভালো একজন সাংবাদিক হওয়ার ভিত গড়তে আমাকে কিভাবে একের পর এক সুযোগ দিয়েছেন হাবিব ভাই। তার এই উদারতা আমাকে দিয়েছে সাংবাদিকতার বিশাল আকাশে ডানা মেলে ওড়ার অপার শক্তি।
পত্রিকার বাইরে যদি বলি, ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার কথা। হাবিবুর রহমান শেখকে বাদ দিয়ে এ ইতিহাসও সম্পূর্ণ হবে না। তখন ঐক্যবদ্ধ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ইউনিট হিসেবে ময়মনসিংহে সাংবাদিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা, নেতৃত্বে ইমাম ভাই (এ জেড এম ইমাম উদ্দিন মুক্তা ) আর আমি। সঙ্গে আছেন কাজী ইয়াসিন, সুলতান উদ্দিন খান, এম এস দোহা প্রমুখ। কেন্দ্রের সঙ্গে আমারই মূল যোগাযোগ, বিএফইউজে’র কেন্দ্রের নেতা তখন হাবিবুর রহমান মিলন (সভাপতি) আর সৈয়দ জাফর (মহাসচিব)। কঠিন সব পদ্ধতি মানতে হতো বিএফইজে’র অনুমোদন পেতে। সব আইন-কানুন মেনে নিয়োগপত্র লাগবে সব সাংবাদিকের, বেতন ভাতা নিয়মিত দেয়া হয় তার সনদ লাগবে। শ্রম অধিদপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে সাংবাদিক ইউনিয়ন গড়ে তোলা যাবে ঠিকই, কিন্তু বিএফইউজে’র অনুমোদন তখন খুবই কঠিন। রেজিস্ট্রেশন মিললেও বিএফইউজে’র অনুমোদন মিলবে তাদের সরেজমিন তদন্ত শেষে। ময়মনসিংহে সাংবাদিক ইউনিয়ন গড়তে সব কিছুর জন্যই আমাদের ভরসা হাবিব ভাই। চাহিদা অনুযায়ী সব কাগজ তৈরি করে দিলেন তিনি। কেন্দ্র থেকে বিএফইউজে থেকে পাঠানো হলো ডাকসাইটে দুই সাংবাদিকের প্রতিনিধি দল: আজিজ মিসির এবং সন্তোষ গুপ্ত-কে। তারা দেখবেন সবকিছু ঠিক আছে কি না। আমরা সবকিছু নিয়ে তৈরি আর হাবিব ভাই নেপথ্যে অপেক্ষমাণ কখন কি লাগে তাই নিয়ে। চিন্তা করা যায়, একজন মালিক একটি ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তুলতে এভাবে সহায়তা দিচ্ছেন?
এই ইউনিয়ন নিয়ে অনেক ঝামেলা তাকে পোহাতে হয়েছে। কিন্তু কখনো তাকে অনুতাপ করতে দেখিনি এই বলে যে, তার সহায়তা না হলে ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়ন হয়তো সে সময় জন্ম নিতো না । অনেক পরে আমি যখন বিএফইউজে’র মহাসচিব বা সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি তখন স্মিত হেসে হাবিব ভাই বলতেন: “তুমি তো বড় নেতা, এইডাই আমরার গর্ব।” অকপটে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই সাংবাদিকতার পাশাপাশি আমার ইউনিয়ন জীবনের ভিতটাও গড়ে দিয়েছেন হাবিব ভাই।
হাবিব ভাই কি শুধুই অর্থবিত্তকে সামনে রেখেই সাংবাদিকতা করতেন? তার কি কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ছিল? তার আরো ঘনিষ্ঠজনেরা হয়তো এ সম্পর্কে বিশদ বলতে পারবেন। কিন্তু ময়মনসিংহের সংবাদপত্র জগতের এক সময়ের অপ্রতিদ্বন্দ্বী এই সম্পাদক-মালিক যে পরিমাণ বিজ্ঞাপন মূল্য পেয়েছেন তা দিয়ে শুধু ময়মনসিংহে নয়, রাজধানীতেও তার বিত্তবৈভব গড়ে তুলতে পারতেন। ঢাকার বাইরের অনেক সংবাদপত্র মালিক-সম্পাদকের যে বিত্ত রাজধানীতেই দেখি তার ধারে কাছেও নেই হাবিব ভাই। আর এক সময়ের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (বাকসু) ভিপি হাবিব ভাই রাজনীতির মাঠের ধারে কাছেও যে ভিড়তে পারেননি সেতো খুবই প্রত্যক্ষ। কিন্তু তার মাথায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছিল সব সময়ই। ঢাকা-ভালুকা-ময়মনসিংহ সড়ক চালু, ব্রহ্মপুত্র নদ খনন, ময়মনসিংহে গ্যাস সরবরাহ, আনন্দমোহন কলেজকে বিশ্ববিদ্যলয়ে উন্নীতকরণ, সবশেষে ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণার বিষয় নিয়ে দৈনিক জাহান যে ধারাবাহিক সাংবাদিকতা করেছে তার নেপেথ্যে ছিল হাবিব ভাইয়ের ময়মনসিংহ প্রেম। এর সঙ্গে নেত্রকোনাকেন্দ্রিক নানা চিন্তা তো ছিলই।
হাবিব ভাইয়ের সঙ্গে কখনো ঝগড়া হয়েছে আমার? কল্পনা করতে পারি না। ইউনিয়ন করতে গিয়ে ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করার আন্দোলনে কখনো কখনো মতান্তর হয়েছে, কিন্তু মনান্তর কখনো নয়।
আমার ময়মনসিংহ জীবন শেষ হলেও বিন্দুমাত্র ছিন্ন হয়নি হাবিব ভাই বা তার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক। ফিলিপাইনে আঞ্চলিক পত্রিকার সম্পাদকদের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি পাঠানোর ক্ষেত্রে আমার সামান্য ভূমিকা ছিল, প্রেস কাউন্সিলে সদস্য মনোনয়নে ছিল দায়িত্ব -প্রথম সুযোগেই প্রস্তাব করেছি হাবিব ভাইয়ের নাম। তার উচ্ছ্বসিত হওয়ার একমাত্র দৃশ্যমান বিষয়টি হচ্ছে তার আকর্ণ বিস্তৃত হাসি। তার এই হাসিটি প্রত্যক্ষ করেছি দুই ক্ষেত্রেই।
জীবনের সব পর্যায়ে হাসিমাখা এই হাবিব ভাইকেই ধরে রাখতে চাই। কারণ এতক্ষণ হাবিব ভাইয়ের কথা বলতে গিয়ে নিজের কথাই বললাম, নাকি আমার জীবনের কথা বলতে গিয়ে হাবিব ভাইয়ের কথা বললাম? আমার পেশাগত জীবনের ভিত গড়ে দিয়ে আমার জীবনে কোথায় তার অবস্থান তা বোধ করি কিছুটা তুলে ধরতে পারলাম। শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কি এই ঋণ শোধ করা যায়? হাবিব ভাইয়ের প্রতি বিনীত শ্রদ্ধা।
মনজুরুল আহসান বুলবুল: প্রধান সম্পাদক, বৈশাখী টেলিভিশন।
ইমেইল: bulbulahsan@gmail.com
No comments