হিলারি-কথন আমাদের রাজনীতি এবং নেতৃত্ব by ড. মাহবুব হাসান
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে আসছেন অথচ সরকারের মধ্যে কোনোরকম উচ্ছ্বাস নেই, এটা দেখে আমি কিছুটা হতাশই হয়েছিলাম। বরং সরকারি তরফে ওই সফরকে অনেকটাই ‘রাখঢাক’ করে রাখার চেষ্টা হয়েছিল। কেন এটা করা হয়েছে, তখন বুঝিনি।
হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন পৃথিবীর ক্ষমতাবান নারীদের একজন, সাবেক মার্কিন ফার্স্টলেডি, বর্তমানে ওবামা প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার চার বছরের মেয়াদের শেষ দিকে বাংলাদেশে আসছেন- তাকে ইগনোর করা বা তার সফর লোকোছাপা করার কোনো কারণও নেই, উপায়ও নেই। কিন্তু সরকার সেটাই করেছেন। কেন এটা করেছেন সরকার এখন তা অনেকটাই পরিষ্কার আমাদের কাছে।
‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে হিলারি’ সরকারে অনুচ্ছ্বাসের মূল কারণ এটাই। সরকার বুঝতে পেরেছিল যে বিরোধী দলীয় নেত্রী ও সংসদের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া মানবেন না বলে যে দাবি করে আসছেন, ওবামা প্রশাসনও সেটা চায়। সেই কথাটা হিলারি এই সফরে এসে হাসিনা সরকারকে বলেছেন। সেটা বোঝা গিয়েছিল আরো আগেই যখন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাও মার্কিন সরকারের প্রত্যাশার কথা বলেছিলেন। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে এ-রকম কথাই বলে আসছিলেন যে আমেরিকা চায় এ-দেশের জাতীয় নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ অবাধ ও কারচুপিহীনভাবে হোক। আর সেটা সম্ভব নিরপেক্ষ সরকারের পক্ষেই।
হাইকোর্টের যে রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন মহাজোট সরকার, সেই রায়েও বলা হয়েছে আগামী আরও দুইবার নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই করা ভালো হবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এখনও কোনো রাজনৈতিক সরকার ‘উপযুক্ত’ হয়ে ওঠেনি জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও কারচুপিহীনভাবে সম্পন্ন করার। কিন্তু বর্তমান সরকার সেটা না মেনে এই ব্যবস্থা বাতিল করেন। এটা যে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি থেকে করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ওই ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার জন্য সরকারের কাছে দাবি করে আসছে। কিন্তু সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের উদাহরণ টেনে বলেছেন, নির্বাচন তারা নিরপেক্ষভাবেই করতে পারবেন। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো তারা সুষ্ঠুভাবে করেছেন। কিন্তু স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক জিনিস নয়- এই সত্যটি সরকার মেনে নিচ্ছে না। তারা নির্বাচন করবেন তাদের সরকারের অধীনেই।
আমাদের দেশের বর্তমানে রাজনৈতিক সঙ্কট এখানেই। দেশের আপামর জনগণের নানামুখী সঙ্কটের বিষয়ে তারা কনসার্ন, কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার উপস্থিতি সামান্যই। বিএনপির মুখে এখন আর উৎপাদনের রাজনীতি, কৃষকের স্বার্থে লাগাতার রাজনৈতিক কর্মসূচি নেয়া তাদের মূল রাজনৈতিক এজেন্ডায় নেই। বিষয়টা এখন সাইড লাইনে চলে গেছে। একটা উদাহরণ দিলে পাঠকের বুঝতে সহজ হবে।
চলমান আইপিএল- খেলায় ‘কেকেআর’র অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে না খেলিয়ে রেস্টে রাখা হয়েছে। পৃথিবীর সেরা অলরাউন্ডারকে যখন সাইড লাইনে ফেলে রাখা হয় তখন বোঝা যায় টিম ম্যানেজমেন্ট বোঝেই না যে কোনটা প্রধান কাজ তাদের। বাংলাদেশের রাজনীতিও ঠিক এই রকম। সরকারও বোঝে না যে বিএনপিই কেবল নয়, দেশের শিক্ষিত সচেতন মানুষ চাইছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হোক। সরকার দেশের মানুষের জন্য কাজ কি করবেন, নিজেদের ইগো আর রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা টিকিয়ে রাখার জন্যই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আর সেই সব এজেন্ডা বাস্তবায়নে যেহেতু বিরোধী দলগুলো বাধা, তাই রাজনৈতিক দমন আর দলনের সমস্ত ক্রিয়া-পদ্ধতি প্রয়োগেই মেধা খাটাচ্ছেন তারা। ফলে রাজনীতি ‘ব্রেনড্রেনে’ পড়ে গেছে। রাজনীতির মধ্যে যে ক্রিয়েটিভিটি আছে, তাতে চরা পড়েছে আজ। সেটা বোঝা যায় যখন গণতান্ত্রিক সরকার ঔপনিবেশিক স্টাইলে দেশের বিরোধী রাজনীতিকদের ওপর জুলুম-নির্যাতন করে। তাদের সাংবিধানিক অধিকার নস্যাৎ করে, তাদের আইনের আশ্রয় নেবার সামান্য অধিকারকেও পুলিশ দিয়ে ঠেকা দিতে কসুর করে না, উচ্চ-আদালতের দুয়ারে পুলিশ মোতায়েন করে যাতে রাজনৈতিক মামলার আসামি রাজনীতিকরা ‘জামিন’ নিতে আদালতে যেতে না পারেন।
এদিকে ‘না-হক’ মামলা-খাওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কেন যে জেলে যাওয়ার ভয় ধরেছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। জেল-জুলুম তো কর্মীরা অহরহই ভোগ করছে, কেন্দ্রীয নেতা হিসেবে রিজভী সাহেবকেই প্রথম পছন্দ হয়েছে মহাজোট সরকারের। আরামে আন্দোলন করার অভ্যাসের কারণেই বিরোধী রাজনীতিকরা জনগণের প্রত্যাশানুযায়ী ‘অ্যাক্ট’ করতে পারছে বলে মনে হয় না আমাদের কাছে। তবে এটাও ঠিক যে যতটুকু তারা করছে সেটুকুই বা কম কিসে? ক্ষমতায় না থেকেও যে ক্ষমতার ভাগ পাওয়া যায় তাহলে কে কষ্ট করে রাজপথে ঘাম ঝরিয়ে, পুলিশের গুতা-নাতা খেয়ে [ এক্ষেত্রে মতিয়া চৌধুরী অনন্য উদাহরণ] নিজের খেয়ে বনের মোষ [মোষ এখানে জনগণ] তাড়াতে চায়? রাজনীতিটা এখন অনেকটাই ব্যবসায় পরিণত হওয়ায় এই আরাম বোধের জন্ম হয়েছে। আমরা জানি রাজনীতিকরা বলবেন আমরা যদি জেলে ঢুকে যাই তাহলে জনগণকে নেতৃত্ব দেবে কে। এটা একটি অনিবার্য প্রশ্ন। এই প্রশ্নের জবাব দুরূহ নয়। আজকের রাজনীতিকদের পক্ষে মেনে নেয়া কঠিন। জাতি যখন দেখে সরকারের ফ্যাসিবাদি জুলুমেরর শিকার হয়ে বিরোধী দলগুলো নেতৃত্বশূন্য হয়ে গেছে, তখন জাতিসত্তার ভেতর থেকে প্রতিবাদী-প্রতিরোধকারী জনগণের নেতার জন্ম হয়ে যায়। কারণ মূলত জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের নেতারা নেতৃত্ব ছাড়তে রাজি নন। তিনি বা তারা যদি জেলে গিয়ে জনগণের আন্দোলনের শরিক হওয়া থেকে বঞ্চিত হন, তাহলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শূন্যতার সৃষ্টি হবে। রাজনীতিকদের এই বিশ্বাস অমূলকই কেবল নয়, আকাশ কুসুমের মতো শোনায়। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে- ৬ দফা জারি করার পর শেখ মুজিবকে জেলে পোরা হয়। তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতি ও নেতৃত্ব দান থেকে। কিন্তু দেখা যায় ভিন্ন মতাবলম্বী বাঙালি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা তাকে মুক্ত করতে গণঅভ্যুত্থান ঘটান এবং তাকে মুক্ত করে আনে। একই রকমভাবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক সরকার ২৫ মার্চ রাতে আটক করে তাকে জেলে পোরে। তিনি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে পারেননি। কিন্তু জাতিসত্তা তার নামেই দেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছে। এ-কারণেই বলছি রাজনীতিকরা যদি জেলের ভয় করেন, যদি জেলের ভয়ে আত্মগোপনে চলে যান, তাহলে গণতান্ত্রিক রাজনীতি হালে পানি পাবে না। সেটা হবে রাজনীতির জন্য খারাপ উদাহরণ।
আমরা সেটা চাই না। আমরা চাই এখনকার বিরোধী রাজনীতিকদের উচিত মামলাকে রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে তা প্রতিহত করা। আইনি ব্যবস্থায় নয়। হাইকোর্টে দলীয় বিচারপতিদের উপস্থিতির কারণেই দেশের আইনের শাসন এমনিতেই বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। মানুষ তাদের মানবাধিকার রক্ষার বিষয়গুলো আদালত থেকে যথাযথভাবে পাচ্ছে না। এটা সত্যই একটি খারাপ সময় আমাদের জন্য।
অপহৃত বা গুম হয়ে যাওয়া রাজনীতিক ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের না করে উল্টো বিরোধী দলের কাঁধেই দোষ চাপানোর চেষ্টা করে আসছে মহাজোট সরকার। এই সব রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতাই বলে দেয় সরকার মুখে গণতন্ত্রের বুলি আওড়িয়ে চালাচ্ছেন স্বৈরতান্ত্রিক শাসন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে বাংলাদেশে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেটা স্বীকার করে না সরকার। বিরোধী দলগুলোকে রাজনৈতিক প্রতিবাদের মিছিল-মিটিং পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না। পুলিশ দিয়ে মিটিংয়ে লাঠিচার্জ করা হচ্ছে। তাদের মিছিলে টিআর গ্যাস ছোঁড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিবাদও করতে দেবে না সরকার। এই চিন্তা-চেতনা যে গণতান্ত্রিক নয়, স্বৈরতান্ত্রিক এটা বুঝেও যে সরকার সেই পথে নিজের শাসন কায়েম রাখতে চায়, তারা যে জনগণের ধিক্কার ছাড়া আর কিছুই পাবে না নির্বাচনের সময়, এটা না বললেও চলে।
এ-বিষয়গুলা ভালোভাবেই জেনে এসেছিলেন হিলারি ক্লিনটন। জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে বিমানেই তিনি মিটিং করেছেন তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে। জেনেছেন গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে। জেনেছেন বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর অপহরণ ও গুম হওয়া সম্পর্কে।
সরকারের সাথে তিনি যেসব মিটিং ও চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, তার চেয়ে বেশি প্রধান্য ও আলোচিত হচ্ছে এই বিষয়গুলো। সরকারকে এই আলোকেই তাদের পরামর্শ দিয়েছেন হিলারি। বেগম খালেদা জিয়াকে কোনো সুযোগই দেননি অভিযোগ তুলে ধরার। কারণ তিনি সব কিছুই পুরোপুরিভাবে কনসার্ন। বরং হিলারির বাংলাদেশ সফরে সব চেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে বেগম জিয়ার বাসভবনে গিয়ে তার সঙ্গে একঘণ্টা আলোচনা করা। সেই সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনাটি এমনই বর্ণাঢ্য হয়ে উঠেছিল যে, হিলারি তার ব্যক্তিগত বন্ধু হিসেবে বেগম জিয়াকে সম্মানিত করেছেন। মার্কিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য কেবল গুরুত্বপূর্ণই নয়, বিএনপির এক বড় পাওনা বলেই ধারণা করা যায়।
হিলারির এই সফরের মূল উদ্দেশ্য যাই হোক, আমরা দেখতে পাচ্ছি নতুন এক রাজনৈতিক ফেনোমেনা যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে রাজনীতির অন্ধগলি থেকে। রাজনীতিকে ইতিবাচক পথে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে গেছেন তিনি। নির্বাচন নিয়ে সংসদে ও সংসদের বাইরে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান বের করার কথাই তিনি বলে গেছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা তার অধিকারে কুলোবে না। বা এটা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারও নয়। হিলারি সেটা ভালো বোঝেন। সেটা তিনি লঙ্ঘন করেননি।
কিন্তু এই আলোচনার ভেতর দিয়ে সমাধানে পৌঁছানোর রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমাদের রাজনীতিকদের কথায় থাকলেও কর্মে তার লেশমাত্র আমরা অতীতে যেমন দেখিনি, তেমনি আজও দেখছি না। আলোচনার অন্য কোনো বিকল্প নেই গণতন্ত্রে। এটা আমাদের রাজনীতিকদের অনুধাবন করতে হবে। রাজনীতিকদের এটাও বুঝতে ও মানতে হবে যে এই আধুনিককালে জনগণ ম্যান্ডেট দিয়েছে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলোকে ‘একসঙ্গে’ দেশের বৃহত্তর কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য। এককভাবে দেশ শাসন করার জন্য নয়। ‘দোহে’ মিলেই কাজ করার রীতি। কিন্তু আমাদের দেশ শাসিত হচ্ছে বা হয় কেবলমাত্র সরকারের হাতে। বিরোধী দল সেখানে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। সরকারে দূরে থাক, সংসদেই বসতে দিতে চায় না ক্ষমতাসীনরা। এর অবসান হওয়া জরুরি। সেই জরুরি বার্তাটাই হিলারি দিয়ে গেছেন।
সংসদে যদি নিয়মিত যোগ দিতো বিরোধী দল, সেখানে ক্ষমতাসীনদের গালিগালাজ ও অপমানজনক আচরণও যে দেশবাসী দেখতে পেতো, জানতে পারতো মহাজোটের ক্ষমতার দাপট, তাতেও কিন্তু বিরোধী দলের ইতিবাচকতা প্রকাশ পেতো। সংসদ বর্জনের মধ্যে কোনো ইতিবাচকতা নেই। রাজনীতির নেতিরই পথ ওইটি। বিএনপিকে সেখান থেকে ফিরে আসতেই বলেছেন হিলারি। এ-কথাটাও মনে রাখতে হবে বিএনপিকে। শুধু যে আওয়ামী মহাজোটের সমালোচনা হয়েছে এটা ভাবা ঠিক না। উভয় পক্ষকেই সংসদে ও সংসদের বাইরে নির্বাচনী সঙ্কট নিরসনে আলোচনায় বসতে হবে।
বেগম জিয়া বেশ কয়েকবারই এ-নিয়ে সংলাপে বসার কথা বলেছেন সরকারকে। কিন্তু সরকার আলোচনায় বা সংলাপেই বিশ্বাস করে না। রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নিলেন সিইসি/ইসি নিয়োগে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের। সেই সংলাপেও বিএনপি সহ অধিকাংশ দলই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি তুলে ধরেছে। কেবল আওয়ামি লীগ ওই দাবি করেনি। কিন্তু রাষ্ট্রপতি কোনো সুফলই দিতে পারেননি। সরকার যা চাইছেন, তিনি সেটাই করেছেন। এই ক্ষেত্রে বিএনপিকে দোষারোপ করা যাবে না। আমি কেবল দোষ দেবো বিএনপিকে সংসদে না যাওয়ার জন্য। শত প্রতিকূলতার মধ্যে হলেও বিএনপির উচিত ছিল সংসদে যাওয়া। ভোটারদের প্রতি সম্মান ও সমর্থন জানানোর জন্যে হলেও এটা জরুরি ছিল।। তাদের স্বার্থে কথা বলার তো তারাই একমাত্র প্রতিনিধি। এই পজেটিভ ভাবনার প্রয়োজন ছিল।
আমি এবং আমরা জনগণের অংশ। আমরা চাই সরকার এবং বিরোধী রাজনীতিকরা আলোচনায় বসে আগামী নির্বাচনে তত্ত্বাবধায় সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালে কি কি উদ্যোগ আয়োজন নেয়া যায় সেই আলোচনায় বসা। এর কোনো বিকল্প নেই।
ড. মাহবুব হাসান: কবি ও কলামিস্ট
‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে হিলারি’ সরকারে অনুচ্ছ্বাসের মূল কারণ এটাই। সরকার বুঝতে পেরেছিল যে বিরোধী দলীয় নেত্রী ও সংসদের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া মানবেন না বলে যে দাবি করে আসছেন, ওবামা প্রশাসনও সেটা চায়। সেই কথাটা হিলারি এই সফরে এসে হাসিনা সরকারকে বলেছেন। সেটা বোঝা গিয়েছিল আরো আগেই যখন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাও মার্কিন সরকারের প্রত্যাশার কথা বলেছিলেন। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে এ-রকম কথাই বলে আসছিলেন যে আমেরিকা চায় এ-দেশের জাতীয় নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ অবাধ ও কারচুপিহীনভাবে হোক। আর সেটা সম্ভব নিরপেক্ষ সরকারের পক্ষেই।
হাইকোর্টের যে রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন মহাজোট সরকার, সেই রায়েও বলা হয়েছে আগামী আরও দুইবার নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই করা ভালো হবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এখনও কোনো রাজনৈতিক সরকার ‘উপযুক্ত’ হয়ে ওঠেনি জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও কারচুপিহীনভাবে সম্পন্ন করার। কিন্তু বর্তমান সরকার সেটা না মেনে এই ব্যবস্থা বাতিল করেন। এটা যে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি থেকে করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ওই ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার জন্য সরকারের কাছে দাবি করে আসছে। কিন্তু সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের উদাহরণ টেনে বলেছেন, নির্বাচন তারা নিরপেক্ষভাবেই করতে পারবেন। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো তারা সুষ্ঠুভাবে করেছেন। কিন্তু স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক জিনিস নয়- এই সত্যটি সরকার মেনে নিচ্ছে না। তারা নির্বাচন করবেন তাদের সরকারের অধীনেই।
আমাদের দেশের বর্তমানে রাজনৈতিক সঙ্কট এখানেই। দেশের আপামর জনগণের নানামুখী সঙ্কটের বিষয়ে তারা কনসার্ন, কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার উপস্থিতি সামান্যই। বিএনপির মুখে এখন আর উৎপাদনের রাজনীতি, কৃষকের স্বার্থে লাগাতার রাজনৈতিক কর্মসূচি নেয়া তাদের মূল রাজনৈতিক এজেন্ডায় নেই। বিষয়টা এখন সাইড লাইনে চলে গেছে। একটা উদাহরণ দিলে পাঠকের বুঝতে সহজ হবে।
চলমান আইপিএল- খেলায় ‘কেকেআর’র অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে না খেলিয়ে রেস্টে রাখা হয়েছে। পৃথিবীর সেরা অলরাউন্ডারকে যখন সাইড লাইনে ফেলে রাখা হয় তখন বোঝা যায় টিম ম্যানেজমেন্ট বোঝেই না যে কোনটা প্রধান কাজ তাদের। বাংলাদেশের রাজনীতিও ঠিক এই রকম। সরকারও বোঝে না যে বিএনপিই কেবল নয়, দেশের শিক্ষিত সচেতন মানুষ চাইছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হোক। সরকার দেশের মানুষের জন্য কাজ কি করবেন, নিজেদের ইগো আর রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা টিকিয়ে রাখার জন্যই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আর সেই সব এজেন্ডা বাস্তবায়নে যেহেতু বিরোধী দলগুলো বাধা, তাই রাজনৈতিক দমন আর দলনের সমস্ত ক্রিয়া-পদ্ধতি প্রয়োগেই মেধা খাটাচ্ছেন তারা। ফলে রাজনীতি ‘ব্রেনড্রেনে’ পড়ে গেছে। রাজনীতির মধ্যে যে ক্রিয়েটিভিটি আছে, তাতে চরা পড়েছে আজ। সেটা বোঝা যায় যখন গণতান্ত্রিক সরকার ঔপনিবেশিক স্টাইলে দেশের বিরোধী রাজনীতিকদের ওপর জুলুম-নির্যাতন করে। তাদের সাংবিধানিক অধিকার নস্যাৎ করে, তাদের আইনের আশ্রয় নেবার সামান্য অধিকারকেও পুলিশ দিয়ে ঠেকা দিতে কসুর করে না, উচ্চ-আদালতের দুয়ারে পুলিশ মোতায়েন করে যাতে রাজনৈতিক মামলার আসামি রাজনীতিকরা ‘জামিন’ নিতে আদালতে যেতে না পারেন।
এদিকে ‘না-হক’ মামলা-খাওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কেন যে জেলে যাওয়ার ভয় ধরেছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। জেল-জুলুম তো কর্মীরা অহরহই ভোগ করছে, কেন্দ্রীয নেতা হিসেবে রিজভী সাহেবকেই প্রথম পছন্দ হয়েছে মহাজোট সরকারের। আরামে আন্দোলন করার অভ্যাসের কারণেই বিরোধী রাজনীতিকরা জনগণের প্রত্যাশানুযায়ী ‘অ্যাক্ট’ করতে পারছে বলে মনে হয় না আমাদের কাছে। তবে এটাও ঠিক যে যতটুকু তারা করছে সেটুকুই বা কম কিসে? ক্ষমতায় না থেকেও যে ক্ষমতার ভাগ পাওয়া যায় তাহলে কে কষ্ট করে রাজপথে ঘাম ঝরিয়ে, পুলিশের গুতা-নাতা খেয়ে [ এক্ষেত্রে মতিয়া চৌধুরী অনন্য উদাহরণ] নিজের খেয়ে বনের মোষ [মোষ এখানে জনগণ] তাড়াতে চায়? রাজনীতিটা এখন অনেকটাই ব্যবসায় পরিণত হওয়ায় এই আরাম বোধের জন্ম হয়েছে। আমরা জানি রাজনীতিকরা বলবেন আমরা যদি জেলে ঢুকে যাই তাহলে জনগণকে নেতৃত্ব দেবে কে। এটা একটি অনিবার্য প্রশ্ন। এই প্রশ্নের জবাব দুরূহ নয়। আজকের রাজনীতিকদের পক্ষে মেনে নেয়া কঠিন। জাতি যখন দেখে সরকারের ফ্যাসিবাদি জুলুমেরর শিকার হয়ে বিরোধী দলগুলো নেতৃত্বশূন্য হয়ে গেছে, তখন জাতিসত্তার ভেতর থেকে প্রতিবাদী-প্রতিরোধকারী জনগণের নেতার জন্ম হয়ে যায়। কারণ মূলত জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের নেতারা নেতৃত্ব ছাড়তে রাজি নন। তিনি বা তারা যদি জেলে গিয়ে জনগণের আন্দোলনের শরিক হওয়া থেকে বঞ্চিত হন, তাহলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শূন্যতার সৃষ্টি হবে। রাজনীতিকদের এই বিশ্বাস অমূলকই কেবল নয়, আকাশ কুসুমের মতো শোনায়। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে- ৬ দফা জারি করার পর শেখ মুজিবকে জেলে পোরা হয়। তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতি ও নেতৃত্ব দান থেকে। কিন্তু দেখা যায় ভিন্ন মতাবলম্বী বাঙালি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা তাকে মুক্ত করতে গণঅভ্যুত্থান ঘটান এবং তাকে মুক্ত করে আনে। একই রকমভাবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক সরকার ২৫ মার্চ রাতে আটক করে তাকে জেলে পোরে। তিনি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে পারেননি। কিন্তু জাতিসত্তা তার নামেই দেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছে। এ-কারণেই বলছি রাজনীতিকরা যদি জেলের ভয় করেন, যদি জেলের ভয়ে আত্মগোপনে চলে যান, তাহলে গণতান্ত্রিক রাজনীতি হালে পানি পাবে না। সেটা হবে রাজনীতির জন্য খারাপ উদাহরণ।
আমরা সেটা চাই না। আমরা চাই এখনকার বিরোধী রাজনীতিকদের উচিত মামলাকে রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে তা প্রতিহত করা। আইনি ব্যবস্থায় নয়। হাইকোর্টে দলীয় বিচারপতিদের উপস্থিতির কারণেই দেশের আইনের শাসন এমনিতেই বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। মানুষ তাদের মানবাধিকার রক্ষার বিষয়গুলো আদালত থেকে যথাযথভাবে পাচ্ছে না। এটা সত্যই একটি খারাপ সময় আমাদের জন্য।
অপহৃত বা গুম হয়ে যাওয়া রাজনীতিক ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের না করে উল্টো বিরোধী দলের কাঁধেই দোষ চাপানোর চেষ্টা করে আসছে মহাজোট সরকার। এই সব রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতাই বলে দেয় সরকার মুখে গণতন্ত্রের বুলি আওড়িয়ে চালাচ্ছেন স্বৈরতান্ত্রিক শাসন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে বাংলাদেশে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেটা স্বীকার করে না সরকার। বিরোধী দলগুলোকে রাজনৈতিক প্রতিবাদের মিছিল-মিটিং পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না। পুলিশ দিয়ে মিটিংয়ে লাঠিচার্জ করা হচ্ছে। তাদের মিছিলে টিআর গ্যাস ছোঁড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিবাদও করতে দেবে না সরকার। এই চিন্তা-চেতনা যে গণতান্ত্রিক নয়, স্বৈরতান্ত্রিক এটা বুঝেও যে সরকার সেই পথে নিজের শাসন কায়েম রাখতে চায়, তারা যে জনগণের ধিক্কার ছাড়া আর কিছুই পাবে না নির্বাচনের সময়, এটা না বললেও চলে।
এ-বিষয়গুলা ভালোভাবেই জেনে এসেছিলেন হিলারি ক্লিনটন। জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে বিমানেই তিনি মিটিং করেছেন তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে। জেনেছেন গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে। জেনেছেন বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর অপহরণ ও গুম হওয়া সম্পর্কে।
সরকারের সাথে তিনি যেসব মিটিং ও চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, তার চেয়ে বেশি প্রধান্য ও আলোচিত হচ্ছে এই বিষয়গুলো। সরকারকে এই আলোকেই তাদের পরামর্শ দিয়েছেন হিলারি। বেগম খালেদা জিয়াকে কোনো সুযোগই দেননি অভিযোগ তুলে ধরার। কারণ তিনি সব কিছুই পুরোপুরিভাবে কনসার্ন। বরং হিলারির বাংলাদেশ সফরে সব চেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে বেগম জিয়ার বাসভবনে গিয়ে তার সঙ্গে একঘণ্টা আলোচনা করা। সেই সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনাটি এমনই বর্ণাঢ্য হয়ে উঠেছিল যে, হিলারি তার ব্যক্তিগত বন্ধু হিসেবে বেগম জিয়াকে সম্মানিত করেছেন। মার্কিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য কেবল গুরুত্বপূর্ণই নয়, বিএনপির এক বড় পাওনা বলেই ধারণা করা যায়।
হিলারির এই সফরের মূল উদ্দেশ্য যাই হোক, আমরা দেখতে পাচ্ছি নতুন এক রাজনৈতিক ফেনোমেনা যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে রাজনীতির অন্ধগলি থেকে। রাজনীতিকে ইতিবাচক পথে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে গেছেন তিনি। নির্বাচন নিয়ে সংসদে ও সংসদের বাইরে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান বের করার কথাই তিনি বলে গেছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা তার অধিকারে কুলোবে না। বা এটা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারও নয়। হিলারি সেটা ভালো বোঝেন। সেটা তিনি লঙ্ঘন করেননি।
কিন্তু এই আলোচনার ভেতর দিয়ে সমাধানে পৌঁছানোর রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমাদের রাজনীতিকদের কথায় থাকলেও কর্মে তার লেশমাত্র আমরা অতীতে যেমন দেখিনি, তেমনি আজও দেখছি না। আলোচনার অন্য কোনো বিকল্প নেই গণতন্ত্রে। এটা আমাদের রাজনীতিকদের অনুধাবন করতে হবে। রাজনীতিকদের এটাও বুঝতে ও মানতে হবে যে এই আধুনিককালে জনগণ ম্যান্ডেট দিয়েছে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলোকে ‘একসঙ্গে’ দেশের বৃহত্তর কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য। এককভাবে দেশ শাসন করার জন্য নয়। ‘দোহে’ মিলেই কাজ করার রীতি। কিন্তু আমাদের দেশ শাসিত হচ্ছে বা হয় কেবলমাত্র সরকারের হাতে। বিরোধী দল সেখানে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। সরকারে দূরে থাক, সংসদেই বসতে দিতে চায় না ক্ষমতাসীনরা। এর অবসান হওয়া জরুরি। সেই জরুরি বার্তাটাই হিলারি দিয়ে গেছেন।
সংসদে যদি নিয়মিত যোগ দিতো বিরোধী দল, সেখানে ক্ষমতাসীনদের গালিগালাজ ও অপমানজনক আচরণও যে দেশবাসী দেখতে পেতো, জানতে পারতো মহাজোটের ক্ষমতার দাপট, তাতেও কিন্তু বিরোধী দলের ইতিবাচকতা প্রকাশ পেতো। সংসদ বর্জনের মধ্যে কোনো ইতিবাচকতা নেই। রাজনীতির নেতিরই পথ ওইটি। বিএনপিকে সেখান থেকে ফিরে আসতেই বলেছেন হিলারি। এ-কথাটাও মনে রাখতে হবে বিএনপিকে। শুধু যে আওয়ামী মহাজোটের সমালোচনা হয়েছে এটা ভাবা ঠিক না। উভয় পক্ষকেই সংসদে ও সংসদের বাইরে নির্বাচনী সঙ্কট নিরসনে আলোচনায় বসতে হবে।
বেগম জিয়া বেশ কয়েকবারই এ-নিয়ে সংলাপে বসার কথা বলেছেন সরকারকে। কিন্তু সরকার আলোচনায় বা সংলাপেই বিশ্বাস করে না। রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নিলেন সিইসি/ইসি নিয়োগে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের। সেই সংলাপেও বিএনপি সহ অধিকাংশ দলই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি তুলে ধরেছে। কেবল আওয়ামি লীগ ওই দাবি করেনি। কিন্তু রাষ্ট্রপতি কোনো সুফলই দিতে পারেননি। সরকার যা চাইছেন, তিনি সেটাই করেছেন। এই ক্ষেত্রে বিএনপিকে দোষারোপ করা যাবে না। আমি কেবল দোষ দেবো বিএনপিকে সংসদে না যাওয়ার জন্য। শত প্রতিকূলতার মধ্যে হলেও বিএনপির উচিত ছিল সংসদে যাওয়া। ভোটারদের প্রতি সম্মান ও সমর্থন জানানোর জন্যে হলেও এটা জরুরি ছিল।। তাদের স্বার্থে কথা বলার তো তারাই একমাত্র প্রতিনিধি। এই পজেটিভ ভাবনার প্রয়োজন ছিল।
আমি এবং আমরা জনগণের অংশ। আমরা চাই সরকার এবং বিরোধী রাজনীতিকরা আলোচনায় বসে আগামী নির্বাচনে তত্ত্বাবধায় সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালে কি কি উদ্যোগ আয়োজন নেয়া যায় সেই আলোচনায় বসা। এর কোনো বিকল্প নেই।
ড. মাহবুব হাসান: কবি ও কলামিস্ট
No comments