তাজের ‘আমেরিকান’ ঝামেলা এবং হাসিনার ‘লেবুচেপা’ by সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা কারণে দলের অনেক প্রবীণ এবং জাদরেল নেতাকে দল থেকে বের করে দিয়েছেন বা বের হয়ে যেতে বাধ্য করেছেন। যেমন- ড. কামাল, কাদের সিদ্দিকী, আবুল আহসান চৌধুরী প্রমুখ।
আবার আব্দুল জলিল, তোফায়েল আহমদ, আব্দুর রাজ্জাক, শেখ সেলিম, আমির হোসেন আমু, মোহাম্মদ নাসিম, আসাদুজ্জামান নূর, সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো অনেক নিবেদিত নেতাকে নিষ্ক্রীয় করে রেখেছেন। অপর দিকে আখতারুজ্জামান, মাহমুদুদুর রহমান মান্না, খ ম জাহাঙ্গীর, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মতো বহু তুখোড় সাবেক ছাত্রনেতাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। আবার তুলনামূলক কম ‘গুরুত্ত্বপূর্ণ’ নেতানেত্রীকে গুরুত্ত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বানিয়েছেন। সেই ভাগ্যবানদের তালিকায় তরুণতম সোহেল তাজ অন্যতম।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ও স্বনামধন্য জহুরা তাজউদ্দিনের পুত্র হিসেবে এবং প্রতিশ্রুতিশীল তারুণ্যের প্রতি আশাবাদী হয়ে তাকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মান দিয়েছেন। কিন্তু সেই সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা না করে তিনি ‘বেয়াদবি’ করেছেন। আওয়ামী লীগের মতো একটি বৃহৎ দলের নির্বাচনী মনোনয়ন পাওয়াই যেখানে দুর্লভ ব্যাপার, সেখানে তাজকে দলের এমপি করা হয়েছে এবং তার এলাকা কাপাসিয়ার জনগণ ‘নৌকা মার্কা’য় বিপুল ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করেছেন। পরে কাপাসিয়ার জনগণের ভালোবাসাকে আরো সম্প্রসারিত করে তাকে দেশের মানুষের জন্য মন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
তারপরও তাজ একের পর এক উদ্যত আচরণ করে যাচ্ছেন। মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ, এমপি থেকে পদত্যাগ, রাজনীতি থেকে পদত্যাগ, বেতন-ভাতা প্রত্যাখ্যান, প্রেস কনফারেন্স, মনের খায়েস মিটিয়ে খোলা চিঠি, হাটে হাড়ি ভেঙে দেয়ার হুমকি-ধামকি দিয়েই যাচ্ছেন।
কয়েক মাস আগে সাপ্তাহিক কাগজে লিখেছিলাম, সাহেরা-রাজু-তাজ: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিন মন্ত্রী। কারণ, তার মন্ত্রিত্ব এখনো আছে। এটা তো সরকারের জন্য বিব্রতকর।
তাজউদ্দিন-জহুরা তাজউদ্দিন থেকে মাইনাস করলে ‘হিরো’ তাজের রাজনৈতিক ফলাফল জিরো। লেখার শুরুতে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, রাজনৈতিক ভাবে তিনি তাদের নখের যোগ্য নন। তারপরও তার অহমিকা বিস্ময়কর।
এই ব্যক্তিগত এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়ে তাজ ‘ছেলে মানুষী’ না করে শালীনভাবে আলোচনা স্বাপেক্ষে সমাধান নিতে পারতেন। তা না করে তিনি ক্ষোভের ‘ইগো’ দেখিয়েই যাচ্ছেন। দেশ, দেশের মানুষ, দলের প্রতি তার বিন্দুমাত্র ভালোবাসা বা শ্রদ্ধাবোধ নেই। আর সরকারও তার মন্ত্রিত্বের পদত্যাগ গ্রহণ করেনি, বরং বছরের পর বছর তার প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে যাচ্ছে, ব্যাংকে জমা হচ্ছে বেতন-ভাতা। যা তিনি ঢোল পিটিয়ে প্রত্যাখ্যান করে অর্থ ফিরিয়ে নেয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তা কার্যকরী হয়নি, কার্যকরী হয়নি এমপিত্বের পদত্যাগ পত্র। সবই ঝুলে আছে বাদুরের মতো। কিন্তু কেনো! প্রশ্ন জাগছে, এতো ঘটনার পরও সরকারই বা কেনো তাকে এতো গুরুত্ব দিচ্ছেন? উচ্চ পর্যায়ের অনেক বিষয় আমাদের বোধগম্য নয়। অভিজ্ঞমহল মনে করেন, তাজের কোনো অজানা ‘আমেরিকান’ ঝামেলায় আছে। তাই দলের দড়ি ছেঁড়ার জন্য মারিয়া হয়ে উঠেছেন। আর সে জন্যই হয়তো সরকার তাকে নাকানিচুবানি দিয়ে একটু ‘লেবু চেপা’ করছেন।
তাজউদ্দিনের মতো একজন মানুষের সন্তান, উন্নত বিশ্বের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আমেরিকায় বেড়ে ওঠা ‘আমেরিকান’ তাজের ‘অভিমান’, অবজ্ঞার কথা ভাবলে অবাক হতে হয়! জন্মভূমির প্রতি তার এমন আচরণে দেশের মানুষ বিস্মিত হয়েছে। আমেরিকা আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন, তা কী সোহেল তাজ জানেন না?ৎ
অনেকেই তাজকে রাজনৈতিক ‘দেবদূত’ আখ্যা করে কলাম লিখেছেন। ‘দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার’ বিরুদ্ধে তার অমূল্য খোলা চিঠির মূল্যায়ন করেছেন। কারণ তিনি নাকি ‘রাষ্ট্রের সঙ্গে, জাতির সঙ্গে তিনি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি’, তাই চলে গেছেন চাঁদের দেশে! যেহেতু সোহেল তাজের ফিরে যাওয়ার জায়গা আছে। বাংলার মানুষের তো আর যাবার জায়গা নেই। এই দরিদ্র দেশের মানুষের তো দুঃখ-কষ্ট-সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে, থাকতে হয়। তাজ তো তাদের পাশে থাকলেন না!
বাংলাদেশের মতো একটি দেশকে কিভাবে প্রতি মুহুর্তে নানামুখী সংকটের ভেতর দিয়ে এগুতে হচ্ছে, ‘রাজপুত্র’ তাজকে তো সেই সংকট কখনোই ষ্পর্শ করেনি। বাংলাদেশের জন্মলগ্নের সংকট থেকে শুরু করে যুদ্ধোত্তর দেশ গড়ার সংকট ও ষড়যন্ত্র তাজউদ্দিন জানতেন। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জেলখানায় জীবন দিয়েছেন।
হ্যাঁ, তাজউদ্দিনও বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগ আজ দেশ ও জাতির কাছে ভিন্ন ভাবে মূল্যায়ন ও মর্যাদা বহন করে। কিন্তু তাজের পদত্যাগ তা করে না।
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল : কবি ও সাংবাদিক
ইমেইল: saifullahdulal@gmail.com
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ও স্বনামধন্য জহুরা তাজউদ্দিনের পুত্র হিসেবে এবং প্রতিশ্রুতিশীল তারুণ্যের প্রতি আশাবাদী হয়ে তাকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মান দিয়েছেন। কিন্তু সেই সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা না করে তিনি ‘বেয়াদবি’ করেছেন। আওয়ামী লীগের মতো একটি বৃহৎ দলের নির্বাচনী মনোনয়ন পাওয়াই যেখানে দুর্লভ ব্যাপার, সেখানে তাজকে দলের এমপি করা হয়েছে এবং তার এলাকা কাপাসিয়ার জনগণ ‘নৌকা মার্কা’য় বিপুল ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করেছেন। পরে কাপাসিয়ার জনগণের ভালোবাসাকে আরো সম্প্রসারিত করে তাকে দেশের মানুষের জন্য মন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
তারপরও তাজ একের পর এক উদ্যত আচরণ করে যাচ্ছেন। মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ, এমপি থেকে পদত্যাগ, রাজনীতি থেকে পদত্যাগ, বেতন-ভাতা প্রত্যাখ্যান, প্রেস কনফারেন্স, মনের খায়েস মিটিয়ে খোলা চিঠি, হাটে হাড়ি ভেঙে দেয়ার হুমকি-ধামকি দিয়েই যাচ্ছেন।
কয়েক মাস আগে সাপ্তাহিক কাগজে লিখেছিলাম, সাহেরা-রাজু-তাজ: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিন মন্ত্রী। কারণ, তার মন্ত্রিত্ব এখনো আছে। এটা তো সরকারের জন্য বিব্রতকর।
তাজউদ্দিন-জহুরা তাজউদ্দিন থেকে মাইনাস করলে ‘হিরো’ তাজের রাজনৈতিক ফলাফল জিরো। লেখার শুরুতে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, রাজনৈতিক ভাবে তিনি তাদের নখের যোগ্য নন। তারপরও তার অহমিকা বিস্ময়কর।
এই ব্যক্তিগত এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়ে তাজ ‘ছেলে মানুষী’ না করে শালীনভাবে আলোচনা স্বাপেক্ষে সমাধান নিতে পারতেন। তা না করে তিনি ক্ষোভের ‘ইগো’ দেখিয়েই যাচ্ছেন। দেশ, দেশের মানুষ, দলের প্রতি তার বিন্দুমাত্র ভালোবাসা বা শ্রদ্ধাবোধ নেই। আর সরকারও তার মন্ত্রিত্বের পদত্যাগ গ্রহণ করেনি, বরং বছরের পর বছর তার প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে যাচ্ছে, ব্যাংকে জমা হচ্ছে বেতন-ভাতা। যা তিনি ঢোল পিটিয়ে প্রত্যাখ্যান করে অর্থ ফিরিয়ে নেয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তা কার্যকরী হয়নি, কার্যকরী হয়নি এমপিত্বের পদত্যাগ পত্র। সবই ঝুলে আছে বাদুরের মতো। কিন্তু কেনো! প্রশ্ন জাগছে, এতো ঘটনার পরও সরকারই বা কেনো তাকে এতো গুরুত্ব দিচ্ছেন? উচ্চ পর্যায়ের অনেক বিষয় আমাদের বোধগম্য নয়। অভিজ্ঞমহল মনে করেন, তাজের কোনো অজানা ‘আমেরিকান’ ঝামেলায় আছে। তাই দলের দড়ি ছেঁড়ার জন্য মারিয়া হয়ে উঠেছেন। আর সে জন্যই হয়তো সরকার তাকে নাকানিচুবানি দিয়ে একটু ‘লেবু চেপা’ করছেন।
তাজউদ্দিনের মতো একজন মানুষের সন্তান, উন্নত বিশ্বের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আমেরিকায় বেড়ে ওঠা ‘আমেরিকান’ তাজের ‘অভিমান’, অবজ্ঞার কথা ভাবলে অবাক হতে হয়! জন্মভূমির প্রতি তার এমন আচরণে দেশের মানুষ বিস্মিত হয়েছে। আমেরিকা আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন, তা কী সোহেল তাজ জানেন না?ৎ
অনেকেই তাজকে রাজনৈতিক ‘দেবদূত’ আখ্যা করে কলাম লিখেছেন। ‘দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার’ বিরুদ্ধে তার অমূল্য খোলা চিঠির মূল্যায়ন করেছেন। কারণ তিনি নাকি ‘রাষ্ট্রের সঙ্গে, জাতির সঙ্গে তিনি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি’, তাই চলে গেছেন চাঁদের দেশে! যেহেতু সোহেল তাজের ফিরে যাওয়ার জায়গা আছে। বাংলার মানুষের তো আর যাবার জায়গা নেই। এই দরিদ্র দেশের মানুষের তো দুঃখ-কষ্ট-সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে, থাকতে হয়। তাজ তো তাদের পাশে থাকলেন না!
বাংলাদেশের মতো একটি দেশকে কিভাবে প্রতি মুহুর্তে নানামুখী সংকটের ভেতর দিয়ে এগুতে হচ্ছে, ‘রাজপুত্র’ তাজকে তো সেই সংকট কখনোই ষ্পর্শ করেনি। বাংলাদেশের জন্মলগ্নের সংকট থেকে শুরু করে যুদ্ধোত্তর দেশ গড়ার সংকট ও ষড়যন্ত্র তাজউদ্দিন জানতেন। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জেলখানায় জীবন দিয়েছেন।
হ্যাঁ, তাজউদ্দিনও বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগ আজ দেশ ও জাতির কাছে ভিন্ন ভাবে মূল্যায়ন ও মর্যাদা বহন করে। কিন্তু তাজের পদত্যাগ তা করে না।
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল : কবি ও সাংবাদিক
ইমেইল: saifullahdulal@gmail.com
No comments