প্রণোদিত কথামালা by কাজল রশীদ
অনিরুদ্ধের কলাম—সন্তোষ গুপ্ত \ প্রকাশক: আগামী \ ফেব্রুয়ারি ২০১১ \ প্রচ্ছদ: শিব কুমার শীল \ ৫১৯ পৃষ্ঠা \ ১০০০ টাকা। প্রগতিপন্থায় আমৃত্যু সমর্পিত ছিলেন সন্তোষ গুপ্ত। চড়াই-উতরাই, টানাপোড়েনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপস্থিতিতে তিনি কখনোই বৃন্তচ্যুত হননি। আদর্শের সঙ্গে আপস করেননি। দেশভাগ পরবর্তী সময় স্বেচ্ছায় কলকাতা থেকে ঢাকা আসেন। বাম রাজনীতির জন্য তখন নিজেকে উৎসর্গ করেন। জেল-জুলুমে উত্তরোত্তর আদর্শের পথে নিবেদন ও নিবিষ্ট হন। যাপিত জীবন অধ্যয়নে সেই চিত্রই পাওয়া যায়।
বাম রাজনীতি, বিশেষ করে ষাট ও সত্তর দশকে এ দেশের মাটি ও মানুষের কল্যাণে কতটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে, এ নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ হয়তো রয়েছে। সংগত বিতর্ক রয়েছে, যা হয়তো অপ্রাসঙ্গিক নয়। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের প্রাক-পর্বের দুই দশকের বাম রাজনীতির কিছু উজ্জ্বল মানুষের জন্ম দেয়। যাঁরা সত্যিই আলোকিত, সৎ ও আদর্শের পতাকাবাহী। সন্তোষগুপ্ত তাঁদেরই একজন। রাজনীতির সঙ্গে তিনি সাংবাদিকতায়ও জড়িয়ে পড়েন সেই ষাটের দশকেই। সমান্তরালে কিছুটা সময় পাড়ি দিলেও, একসময় তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন শুধুই একজন সাংবাদিক হিসেবে, রণেশ দাশগুপ্ত, শহীদুল্লা কায়সার, জহুর হোসেন চৌধুরী প্রমুখের প্রযত্নে কিংবা সহাতায় তিনি হন ধ্রুবতারা। সন্তোষ গুপ্তের সংবাদকক্ষের ভেতর-বাহির সম্পর্কে ছিল নিবিড় পাঠ, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। একসময় স্থিত হন সম্পাদকীয় বিভাগে। নিয়মিত কলাম লিখতেন। নিজ নামে নয় ছদ্মনামে। সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতা হিরন্ময় স্বাক্ষর প্রতিভাত হয় ‘অনিরুদ্ধ’ নামের কলামে।
সন্তোষ গুপ্ত জীবনের প্রায় পুরোটা সময় সংবাদ পত্রিকায় চাকরি করেছেন। দুই যুগ (১৯৭৮-২০০২) ধরে উপসম্পাদকীয় লিখেছেন ‘অনিরুদ্ধ’ নামে সংবাদ-এর পাতায়। সেসব কলামের মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু কলাম নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য বই অনিরুদ্ধের কলাম, যেখানে স্থান পেয়েছে (১৯৭৮-১৯৯০) সময়কালের কলাম। বিশিষ্টতা হলো, গ্রন্থভুক্ত কলাম প্রচলিত কলাম থেকে ব্যতিক্রম। কলাম প্রধানত সাম্প্রতিক ও সমকালীন প্রয়োজন মেটানোর জন্য লেখা হয়। অনিরুদ্ধের কলাম সমকালীন হয়েও সর্বকালীন। বিষয় নির্বাচন, যুক্তি-তর্কের অবতারণা, প্রাসঙ্গিক উদাহরণ প্রভৃতিতে সেই সত্য স্পষ্টত। সন্তোষগুপ্ত রাজনীতি ও সাংবাদিকতার বাইরে গভীর অভিনিবেশে সাহিত্যচর্চা করতেন। কবিতা লিখেছেন, শেক্সপিয়ারের সনেট অনুবাদ করেছেন। নাটক-চলচ্চিত্র সমালোচনা করেছেন। চিত্রকলা বিষয়ে লেখালেখি করেছেন। ভ্রমণ কাহিনি রচনা করেছেন। সাহিত্যের নানা রূপকে তিনি ধারণ করেছেন মেধা ও মননে। যার স্বতঃস্ফূর্ত উৎসারণ রয়েছে অনিরুদ্ধের কলামে। সাহিত্যের ব্যঞ্জন এখানে সহজ ও স্বাভাবিকতায় উপস্থিত হয়েছে। রাজনীতি, সমাজ, মানুষ সর্বোপরি দেশকে ঘিরে, বিশ্ব মানচিত্রকে সমন্বিত করে নানা ভাবনা, বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন, ভবিতব্য কথন প্রভৃতির নিবিড় নির্যাস তাঁর কলামে উপস্থিত। দালিলিক না হয়েও এই কলাম পেরিয়ে আসে সময়ের মুখপাত্র হিসেবে, আগ্রহ জাগায়। প্রণোদিত করে ভেতরের চালিকাশক্তিকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে, সত্য বলতে, শিরদাঁড়া সোজা রাখতে। অনিরুদ্ধের কলাম ধারণ করেছে এমন একজন স্রষ্টার সৃষ্টিকে। যিনি একাধারে ভাষ্যকার, বিশ্লেষক, সমালোচক ও ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা। যাঁর কলামে চিত্রিত হয়েছে সত্তর ও আশির দশকের বাংলাদেশ, সামরিক শাসন, স্বৈরতন্ত্র ও সাংস্কৃতিক দীনতা। নব্বইয়ের দশকের গণতন্ত্রে উত্তরণ ও হোঁচট, দুর্নীতি, আত্মপ্রবণতার পাশাপাশি নিষ্ঠুর বিশ্ববাস্তবতা, সমাজতন্ত্রের পতন, পুঁজিবাদের সর্বগ্রাসী প্রবণতা ইত্যাদি।
সন্তোষ গুপ্ত জীবনের প্রায় পুরোটা সময় সংবাদ পত্রিকায় চাকরি করেছেন। দুই যুগ (১৯৭৮-২০০২) ধরে উপসম্পাদকীয় লিখেছেন ‘অনিরুদ্ধ’ নামে সংবাদ-এর পাতায়। সেসব কলামের মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু কলাম নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য বই অনিরুদ্ধের কলাম, যেখানে স্থান পেয়েছে (১৯৭৮-১৯৯০) সময়কালের কলাম। বিশিষ্টতা হলো, গ্রন্থভুক্ত কলাম প্রচলিত কলাম থেকে ব্যতিক্রম। কলাম প্রধানত সাম্প্রতিক ও সমকালীন প্রয়োজন মেটানোর জন্য লেখা হয়। অনিরুদ্ধের কলাম সমকালীন হয়েও সর্বকালীন। বিষয় নির্বাচন, যুক্তি-তর্কের অবতারণা, প্রাসঙ্গিক উদাহরণ প্রভৃতিতে সেই সত্য স্পষ্টত। সন্তোষগুপ্ত রাজনীতি ও সাংবাদিকতার বাইরে গভীর অভিনিবেশে সাহিত্যচর্চা করতেন। কবিতা লিখেছেন, শেক্সপিয়ারের সনেট অনুবাদ করেছেন। নাটক-চলচ্চিত্র সমালোচনা করেছেন। চিত্রকলা বিষয়ে লেখালেখি করেছেন। ভ্রমণ কাহিনি রচনা করেছেন। সাহিত্যের নানা রূপকে তিনি ধারণ করেছেন মেধা ও মননে। যার স্বতঃস্ফূর্ত উৎসারণ রয়েছে অনিরুদ্ধের কলামে। সাহিত্যের ব্যঞ্জন এখানে সহজ ও স্বাভাবিকতায় উপস্থিত হয়েছে। রাজনীতি, সমাজ, মানুষ সর্বোপরি দেশকে ঘিরে, বিশ্ব মানচিত্রকে সমন্বিত করে নানা ভাবনা, বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন, ভবিতব্য কথন প্রভৃতির নিবিড় নির্যাস তাঁর কলামে উপস্থিত। দালিলিক না হয়েও এই কলাম পেরিয়ে আসে সময়ের মুখপাত্র হিসেবে, আগ্রহ জাগায়। প্রণোদিত করে ভেতরের চালিকাশক্তিকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে, সত্য বলতে, শিরদাঁড়া সোজা রাখতে। অনিরুদ্ধের কলাম ধারণ করেছে এমন একজন স্রষ্টার সৃষ্টিকে। যিনি একাধারে ভাষ্যকার, বিশ্লেষক, সমালোচক ও ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা। যাঁর কলামে চিত্রিত হয়েছে সত্তর ও আশির দশকের বাংলাদেশ, সামরিক শাসন, স্বৈরতন্ত্র ও সাংস্কৃতিক দীনতা। নব্বইয়ের দশকের গণতন্ত্রে উত্তরণ ও হোঁচট, দুর্নীতি, আত্মপ্রবণতার পাশাপাশি নিষ্ঠুর বিশ্ববাস্তবতা, সমাজতন্ত্রের পতন, পুঁজিবাদের সর্বগ্রাসী প্রবণতা ইত্যাদি।
No comments