বহুমাত্রিক আনন্দের অন্বেষণে by জাফরিন গুলশান
‘আমাদের সময়ে আমরা শিল্পী-সাহিত্যিক-কবি সকলে একসঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দিতাম। ফলে পরস্পরের মধ্যে মতের আদান-প্রদান হতো। কিন্তু এই প্রজন্মে তোমরা বিচ্ছিন্ন। এই বিচ্ছিন্নতার প্রভাব তোমাদের কাজেও পাওয়া যায়।’ নবীন প্রজন্মের শিল্পচর্চাবিষয়ক পর্যবেক্ষণ বিনিময় করলেন বাংলাদেশের বরেণ্য শিল্পী মুর্তজা বশীর। মুর্তজা বশীরের জীবন বর্ণাঢ্য। শিল্পচর্চা, শিক্ষা, গবেষণা, অভিজ্ঞতা, নিরীক্ষায় ব্যাপক বিস্তৃত এক জীবনে তিনি প্রতিনিয়ত আনন্দের অন্বেষায় ঘুরছেন। প্রতিটি মুহূর্তে নিজেকে কিছু না কিছুতে ব্যস্ত রাখা—কখনো ছবি আঁকা, কখনো বই পড়া কিংবা কবিতা-গল্প-উপন্যাস লেখা, কখনো ডাকটিকিট সংগ্রহ, কখনো হয়তো শুধুই বসে গল্প বা উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়ানো—এসব শুধুই আনন্দের অন্বেষণে।
বর্তমানে শিল্পী খুব মনোযোগ দিয়ে বিভিন্ন দেশের কাগজের মুদ্রা সংগ্রহ করছেন। তাঁর মতে, ‘আনন্দ হলো সোনার হরিণ, আবার একরকম অ্যাডভেঞ্চারে জীবন ব্যস্ত রাখাও।’ ছবি আঁকা তাঁর কাছে প্রার্থনার মতো। বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেরিয়েছেন। নিজেকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। ফলে নিজেকে খুঁজেছেন। নিজের ইতিহাস জানার চেষ্টায় ১৯৮১-৮৭ সাল পর্যন্ত কোনো ছবি আঁকেননি শিল্পী। একটা সময় ইউরোপীয় জীবনাচার প্রভাবিত করেছিল তাঁকে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে নিজের সভ্যতার বিকাশে ও এর শিকড় খুঁজতে মনোযোগী হলেন। দেখলেন, কালীঘাট, পালযুগের ইতিহাস ও চিত্রকলা; এবং আরও ব্যাপক বিস্তৃত করলেন গবেষণা। ছেলেবেলায় কখনোই ইচ্ছা ছিল না ছবি আঁকার বা শিল্পী হওয়ার। কিন্তু পার্টিতে যোগ দিয়ে তিনি ছবি আঁকতে চাইলেন সমাজ বদলানোর সংকল্পে। এই সংকল্প নিয়ে তিনি আঁকতে লাগলেন ছবি। প্রচুর ফিগারেটিভ কাজ করেছেন। ফিগারেটিভ কাজে একসময় তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যকে সমন্বয় করার চেষ্টা করেছেন। বাইজানটাইন রীতি থেকে নিয়েছেন, আবার পালযুগের লোক-চিত্রকলা থেকেও নিয়েছেন রং ও টোন। শিল্পী বলেন, ‘আমি সব সময় সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ একজন শিল্পী। সেই দায়বদ্ধতা থেকে আমি এঁকেছি দেয়াল সিরিজ; এঁকেছি শহীদের স্মরণে। বিষয় নির্বাচনে দীর্ঘদিনের ভাবনা/দর্শন, সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা প্রভাব ফেলেছে।
‘আমি প্রজাপতির ডানা আঁকছি নতুন জীবনের স্বপ্নে। প্রজাপতির ডানার কম্পন, রং মানুষের মনে আনন্দ দেয়। আমি ১৩৭টি ক্যানভাস এঁকেছি প্রজাপতির ডানার খুব সূক্ষ্ম অংশ নিয়ে। হুবহু।’
বর্তমানে শিল্পী মুর্তজা বশীর ভবিষ্যতের কাজ নিয়ে চিন্তায় আছেন। নিজেকে একজন ‘সান ডে পেইন্টার’ (যাঁরা শখের ছবি আঁকেন) বললেন। জানালেন, তিনি প্রতিদিন আঁকেন না। সারা বছর ধরে আঁকেন না। কারণ, শিল্পকলা তাঁর কাছে পরিপূর্ণ শিশুর মতো। শিল্পকলাকে সঠিকভাবে জন্ম দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় গর্ভে ধারণ করতে হয়। ‘আমার মাথার মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে ছবি আঁকাটা খেলতে থাকে। যখন আঁকা শুরু করি, তখন একবারে দু-তিনটি ক্যানভাসে হাত দিই। ছবি আঁকাটা প্রার্থনার মতো। রাতে আঁকতে পারি না। যখন আঁকি, তখন সকাল ৯টা থেকে দুপুরে খাওয়ার আগ পর্যন্ত। খেয়ে খানিকটা বিশ্রামের পর এক কাপ চা খেয়ে আবারও আঁকি। আজানের সময় আঁকি না। সন্ধ্যা থেকে রাতের খাবারের আগ পর্যন্ত আঁকতে থাকি। আমার কোনো স্টুডিও নেই আলাদা করে। কখনোই ছিল না। আমি ঘরেই আঁকি (চারদিকে অসংখ্য বই, পড়ার টেবিল, ছবি আঁকার আনুষঙ্গিক জিনিসে সমৃদ্ধ একটা ঘরে বসে কথা বলছিলেন শিল্পী)। মাছ যেমন পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না, আমাকেও সারাক্ষণ ছবির মধ্যে বাস করতে হয়। রাত দুইটায় ঘুম ভাঙলে চোখ মেলে যে ক্যানভাসে কাজ করছি, সেটা দেখতে পাই। ক্যানভাসকে দেহ-মন দিয়ে ভালোবাসতে হয়।’
মুর্তজা বশীর বলেন, ‘আমি সব সময়ই নিজের মতো আঁকতে চেয়েছি। নিজের ভাষা তৈরি করতে চেয়েছি। এবং যখন শিক্ষক ছিলাম, তখনো ছাত্রদের নিজেদের মতো কাজ করতে উৎসাহিত করেছি। আর যে ছাত্রটা ভালো কাজ করছে না মনে হয়েছে, তাকে উৎসাহিত করে ভালোর দিকে নিতে পারলেই আমি সার্থক। কখনো সিন্দাবাদের ভূতের মতো ঘাড়ে চেপে বসতে চাইনি। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সবচেয়ে বড় সার্থকতা, তিনি শিক্ষক হিসেবে অতুলনীয় ছিলেন। ছাত্রদের কখনোই তাঁর মতো আঁকতে বলতেন না।’
শিল্পী মুর্তজা বশীরের জীবনকর্মের দর্শনের বিস্তৃতি মোহহীন। ছবি আঁকার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করছেন। আবারও ফিগারেটিভ কাজ করবেন এবং তা অবশ্যই ভিন্ন রকম হবে।
শিল্পী মুর্তজা বশীর ১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে চারুকলা থেকে স্নাতক করেন। ১৯৫৬-৫৮ সালে ফ্লোরেন্সে একাডেমি দ্যোল বেললে আরতিতে পড়তে যান। প্যারিসের ইকোল নাসিওনান সুপরিরিয়র দ্য বোঁজ আর্তে ১৯৭১-৭৩ সালে পড়েন। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ ইউরোপে বিভিন্ন প্রদর্শনী করেছেন। গল্প-উপন্যাসসহ বিভিন্ন গবেষণাধর্মী বই লিখেছেন। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যের জগৎ।
‘আমি প্রজাপতির ডানা আঁকছি নতুন জীবনের স্বপ্নে। প্রজাপতির ডানার কম্পন, রং মানুষের মনে আনন্দ দেয়। আমি ১৩৭টি ক্যানভাস এঁকেছি প্রজাপতির ডানার খুব সূক্ষ্ম অংশ নিয়ে। হুবহু।’
বর্তমানে শিল্পী মুর্তজা বশীর ভবিষ্যতের কাজ নিয়ে চিন্তায় আছেন। নিজেকে একজন ‘সান ডে পেইন্টার’ (যাঁরা শখের ছবি আঁকেন) বললেন। জানালেন, তিনি প্রতিদিন আঁকেন না। সারা বছর ধরে আঁকেন না। কারণ, শিল্পকলা তাঁর কাছে পরিপূর্ণ শিশুর মতো। শিল্পকলাকে সঠিকভাবে জন্ম দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় গর্ভে ধারণ করতে হয়। ‘আমার মাথার মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে ছবি আঁকাটা খেলতে থাকে। যখন আঁকা শুরু করি, তখন একবারে দু-তিনটি ক্যানভাসে হাত দিই। ছবি আঁকাটা প্রার্থনার মতো। রাতে আঁকতে পারি না। যখন আঁকি, তখন সকাল ৯টা থেকে দুপুরে খাওয়ার আগ পর্যন্ত। খেয়ে খানিকটা বিশ্রামের পর এক কাপ চা খেয়ে আবারও আঁকি। আজানের সময় আঁকি না। সন্ধ্যা থেকে রাতের খাবারের আগ পর্যন্ত আঁকতে থাকি। আমার কোনো স্টুডিও নেই আলাদা করে। কখনোই ছিল না। আমি ঘরেই আঁকি (চারদিকে অসংখ্য বই, পড়ার টেবিল, ছবি আঁকার আনুষঙ্গিক জিনিসে সমৃদ্ধ একটা ঘরে বসে কথা বলছিলেন শিল্পী)। মাছ যেমন পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না, আমাকেও সারাক্ষণ ছবির মধ্যে বাস করতে হয়। রাত দুইটায় ঘুম ভাঙলে চোখ মেলে যে ক্যানভাসে কাজ করছি, সেটা দেখতে পাই। ক্যানভাসকে দেহ-মন দিয়ে ভালোবাসতে হয়।’
মুর্তজা বশীর বলেন, ‘আমি সব সময়ই নিজের মতো আঁকতে চেয়েছি। নিজের ভাষা তৈরি করতে চেয়েছি। এবং যখন শিক্ষক ছিলাম, তখনো ছাত্রদের নিজেদের মতো কাজ করতে উৎসাহিত করেছি। আর যে ছাত্রটা ভালো কাজ করছে না মনে হয়েছে, তাকে উৎসাহিত করে ভালোর দিকে নিতে পারলেই আমি সার্থক। কখনো সিন্দাবাদের ভূতের মতো ঘাড়ে চেপে বসতে চাইনি। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সবচেয়ে বড় সার্থকতা, তিনি শিক্ষক হিসেবে অতুলনীয় ছিলেন। ছাত্রদের কখনোই তাঁর মতো আঁকতে বলতেন না।’
শিল্পী মুর্তজা বশীরের জীবনকর্মের দর্শনের বিস্তৃতি মোহহীন। ছবি আঁকার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করছেন। আবারও ফিগারেটিভ কাজ করবেন এবং তা অবশ্যই ভিন্ন রকম হবে।
শিল্পী মুর্তজা বশীর ১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে চারুকলা থেকে স্নাতক করেন। ১৯৫৬-৫৮ সালে ফ্লোরেন্সে একাডেমি দ্যোল বেললে আরতিতে পড়তে যান। প্যারিসের ইকোল নাসিওনান সুপরিরিয়র দ্য বোঁজ আর্তে ১৯৭১-৭৩ সালে পড়েন। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ ইউরোপে বিভিন্ন প্রদর্শনী করেছেন। গল্প-উপন্যাসসহ বিভিন্ন গবেষণাধর্মী বই লিখেছেন। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যের জগৎ।
No comments