তথ্য পাওয়ার দীর্ঘ সংগ্রাম by মশিউল আলম

গত বছর তথ্য অধিকার আইন বলবৎ হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আইনটি ব্যবহার করে কিছু তথ্য পেতে উদ্যোগী হয়। তথ্য কমিশন সূত্রে জানা গেল, আইনটি প্রয়োগের সর্বপ্রথম উদ্যোগ এটিই। কিন্তু প্রথম বলে নয়, যে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে বেলাকে যেতে হয়েছে, তা এককথায় দৃষ্টান্তমূলক। বাংলাদেশে জনসাধারণের তথ্য জানার অধিকার বাস্তবায়নের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে এটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হয়ে থাকবে। এ থেকে অনেক কিছু শেখার, অনেক বিষয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করার সুযোগ মিলবে।
২০০৯ সালের ১ জুলাই তথ্য অধিকার আইন বলবৎ হয়েছে, বেলা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে একটি চিঠি লিখেছে জুলাইয়ের ৮ তারিখে। রাজউকের চেয়ারম্যান বরাবর বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান স্বাক্ষরিত সে চিঠিতে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের পাশে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবনটি নির্মাণের অনুমোদনসংক্রান্ত তথ্য জানতে চায়। কিন্তু ১৭ আগস্ট পর্যন্ত বেলা সে চিঠির কোনো উত্তর পায়নি। অথচ তথ্য অধিকার আইনের ৯(১) ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, তথ্য চাওয়ার তারিখ থেকে ‘অনধিক ২০ কার্যদিবসের মধ্যে অনুরোধকৃত তথ্য সরবরাহ করিবেন।’ ৯(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘অনুরোধকৃত তথ্যের সহিত একাধিক তথ্য প্রদান ইউনিট বা কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা থাকিলে অনধিক ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে উক্ত অনুরোধকৃত তথ্য সরবরাহ করিতে হইবে।’ ৯(৩) ধারায় বলা হয়েছে, ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোনো কারণে তথ্য প্রদানে অপারগ হইলে কারণ উল্লেখ করিয়া আবেদনপ্রাপ্তির ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তিনি উহা অনুরোধকারীকে অবহিত করিবেন।’ অর্থাৎ মোট ৩০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে ১০ দিনের মধ্যে রাজউক থেকে বেলার একটি চিঠি পাওয়া আইন অনুযায়ী অবশ্য-প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু তা ঘটেনি। তথ্য প্রদানে অপারগতার কারণ উল্লেখ করে বিষয়টি রাজউকের পক্ষ থেকে বেলাকে জানানো হয়নি। অর্থাৎ তথ্য অধিকার আইনের তথ্য প্রদানসংক্রান্ত ৯ নম্বর ধারার সব উপধারার বিধান এরই মধ্যে লঙ্ঘিত হয়েছে।
প্রথম চিঠি পাঠানোর পর উত্তরের জন্য বেলা অপেক্ষা করেছে ৩৯ দিন। তারপর ১৮ আগস্ট ২০০৯ তারা রাজউককে দ্বিতীয়বার চিঠি লেখে। সে চিঠিতে বেলা তাদের প্রার্থিত তথ্যের কথা আবার উল্লেখ করে এবং তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী তথ্য সরবরাহের নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে বলে স্মরণ করিয়ে দিয়ে আবারও সেসব তথ্য সরবরাহের অনুরোধ জানায়। বেলা এবার চিঠিটি লেখে রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-৪ বরাবর এবং অনুলিপি পাঠায় রাজউকের চেয়ারম্যান ও প্রধান তথ্য কমিশনারকে। কিন্তু এবারও রাজউক থেকে বেলার কাছে কোনো উত্তর আসে না। এই নীরবতা চলে প্রায় চার মাস। ১৭ ডিসেম্বর ২০০৯ বেলা আবার রাজউকের চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি পাঠায় এবং তাঁকে জানায় যে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও বিজিএমইএ ভবনের নির্মাণসংক্রান্ত কোনো তথ্য বেলার হস্তগত হয়নি। বেলা তৃতীয়বারের মতো রাজউককে একই অনুরোধ জানায়। এবার বেলা আরও একটি তথ্য জানতে চাইল: তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী তথ্য প্রদানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদে রাজউক কাকে নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু এবারও বেলা রাজউক থেকে কোনো সাড়া পেল না।
এভাবে ৮ জুলাই ২০০৯ থেকে ১৭ ডিসেম্বর ২০০৯ পর্যন্ত অতিক্রান্ত হয় মোট প্রায় পাঁচ মাস। আইন অনুযায়ী যে প্রক্রিয়া নিষ্পন্ন করতে হবে মোট ৩০ দিনের মধ্যে, তা অনিষ্পন্ন রয়ে গেল প্রায় ১৫০ দিন। এবার বেলা আইন অনুযায়ী চিঠি লিখল আইনে উল্লিখিত ‘আপিল কর্তৃপক্ষে’র কাছে: রাজউকের ক্ষেত্রে এটা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এ বছরের ২০ জানুয়ারি বেলা এ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি লিখে তাদের আপিল জানাল। বেলা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে লিখল: ‘...বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও অদ্যাবধি এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য বেলার হস্তগত হয়নি।..রাজউক চেয়ারম্যানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে আপনার বরাবর অত্র আপিল আবেদন প্রেরণ করা হলো এবং...রাজউককে নিম্নলিখিত তথ্যগুলি ১৫ দিনের মধ্যে বেলা বরাবর প্রেরণের নির্দেশ প্রদানের জন্য আপনাকে অনুরোধ জানানো হলো...।’ বেলা এই চিঠির একটি করে অনুলিপি প্রধান তথ্য কমিশনার ও রাজউকের চেয়ারম্যানকেও পাঠায়। কিন্তু গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছ থেকেও কোনো উত্তর এল না। বেলা অপেক্ষা করল আরও এক মাস। না রাজউক, না গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়—কোনো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই বেলা কোনো উত্তর পেল না।
অতঃপর বেলার সামনে খোলা রইল মাত্র একটি পথ: তথ্য কমিশনের শরণাপন্ন হওয়া। সংক্ষুব্ধ সংস্থাটি তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর ধারা ২৫ অনুযায়ী তথ্য কমিশনের কাছে অভিযোগ নিয়ে হাজির হলো এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি। এটি একটি অদ্ভুত পরিস্থিতি: বেলা তথ্য কমিশনকে বলতে পারল না যে তারা কিছু তথ্য চেয়ে আবেদন করে সরাসরি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তাদের বলতে হলো, তারা তথ্য চেয়ে রাজউক বরাবর তিনবার আবেদন জানিয়েছে এবং রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হিসেবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বরাবর একবার আপিল আবেদন করেছে। কিন্তু রাজউক বা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়—কোনো তরফ থেকে কোনো সাড়াই মেলেনি বলে বেলা ধরে নিচ্ছে তাদের তথ্যপ্রাপ্তির অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এটা অদ্ভুত পরিস্থিতি এ কারণে যে, তথ্য অধিকার আইনে বলা হয়েছে: ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোনো কারণে তথ্য প্রদানে অপারগ হইলে অপারগতার কারণ উল্লেখ করিয়া আবেদনপ্রাপ্তির ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে তিনি উহা অনুরোধকারীকে অবহিত করিবেন।’ [ধারা ৯(৩)] কিন্তু বেলার ক্ষেত্রে যা ঘটল তাকে কী বলে বর্ণনা করা যায় জানি না; কেননা এর কোনো প্রতিকার নেই। আইনেও এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি; তথ্য কমিশনও নিজ থেকে এমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি যে কেন বেলার তথ্যপ্রাপ্তির উপর্যুপরি অনুরোধের ব্যাপারে কোনো কিছু বেলাকে অবহিত করা হলো না। জনস্বার্থ মামলার ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে খ্যাতিমান ও যথেষ্ট প্রভাবশালী একটি সংস্থার উপর্যুপরি আবেদনই যদি এভাবে মাসের পর মাস উপেক্ষা করা হয়, কোনো উত্তর দেওয়ারই প্রয়োজন বোধ না করা হয়, তাহলে একজন সাধারণ নাগরিক কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন জানালে তার সে আবেদন কতটুকু গুরুত্ব পেতে পারে, তা ভেবে আগে থেকেই হতাশ বোধ হতে পারে।
পরিস্থিতি অদ্ভুত আরও একটি কারণে। বেলা বিজিএমইএর ভবনটি সম্পর্কে রাজউকের কাছে তথ্য চাওয়ার ক্ষেত্রে আইনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯। এ আইন অনুযায়ী কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চাইতে হলে আবেদন জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তথ্য প্রদানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর। কিন্তু বেলা যখন রাজউকের কাছে প্রথম আবেদন জানায়, তখন রাজউক তথ্য প্রদানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা নিয়োগ করেনি। তৃতীয়বারের চিঠিতে বেলা রাজউকের কাছে তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম জানতে চায়। কিন্তু রাজউক বেলাকে তাও জানায়নি। তথ্য কমিশন বেলার অভিযোগ পাওয়ার পর ১২ এপ্রিল ২০১০ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বরাবর একটি চিঠি লিখে মন্ত্রণালয়ের জন্য তথ্য প্রদানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও তার আপিল কর্তৃপক্ষের নাম, পদবিসহ বিস্তারিত তথ্য ছক আকারে চেয়ে পাঠায়। তথ্য কমিশন কোনো সাড়া না পেয়ে ২৫ মে ২০১০ আবার ভারপ্রাপ্ত সচিবকে একটি চিঠিতে আগের চিঠির কথাগুলো স্মরণ করিয়ে দিয়ে লেখে, ‘...আপনার ব্যক্তিগত দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক আপনার মন্ত্রণালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও তার আপিল কর্তৃপক্ষের নাম, পদবিসহ বিস্তারিত তথ্যাদি ছক মোতাবেক পত্রপ্রাপ্তির ৭ (সাত) দিনের মধ্যে তথ্য কমিশনকে অবহিত করার জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় বেলা কর্তৃক দাখিলকৃত অভিযোগটি কমিশন আমলে নিয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।’ তথ্য কমিশনের এই চিঠির অনুলিপি তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজউকের চেয়ারম্যান, বেলার নির্বাহী পরিচালক এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিবের কাছেও পাঠানো হয়। একই সঙ্গে বিষয়টি প্রতিমন্ত্রীর নজরে আনার জন্য তাঁর একান্ত সচিবকে অনুরোধ জানায় তথ্য কমিশন।
কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হলো না। মে ও জুন মাস চলে গেল। জুলাইয়ের ২২ তারিখে বেলা রাজউকের চেয়ারম্যান বরাবর আবার একটি চিঠি লিখল, যার বিষয়: ‘নোটিশ অব ডিমান্ড ফর জাস্টিস’। সে চিঠিতে বেলা তার তথ্য চাওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে স্মরণ করিয়ে দিল এবং শেষে লিখল: ‘...তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর ধারা ৯ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে দাবিকৃত তথ্য প্রদান না করা এবং ধারা ২৪ অনুযায়ী আপিল নিষ্পত্তি না করা আপনার ব্যর্থতার পরিচায়ক। এমতাবস্থায় বেলা দাবিকৃত তথ্যগুলি আগামী ৭ (সাত) দিনের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারী বরাবর প্রদানের দাবি জানাচ্ছে। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা প্রহণ করা হবে।’
এরপর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউক তথ্য প্রদানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে তাঁদের নাম, পদবি ইত্যাদি তথ্য কমিশনে পাঠায়। কিন্তু বেলা যে তথ্য চেয়েছে, তা সরবরাহ করেনি। তথ্য কমিশন ২৬ জুলাই ২০১০ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ও রাজউকের চেয়ারম্যানকে একই চিঠিতে লেখে, ‘বেলার অভিযোগ সম্পর্কে কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো, তা পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে তথ্য কমিশনকে জানাতে হবে। অন্যথায় তথ্য কমিশনের কাছে বেলার দাখিলকৃত অভিযোগটি আমলে নিয়ে কমিশন পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
তারও প্রায় দুই মাস পর ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১০ বেলা রাজউকের কাছ থেকে বিজিএমইএ ভবনটির নির্মাণ সম্পর্কে প্রার্থিত তথ্যগুলো পেয়েছে। এ সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় যেসব খবর এরই মধ্যে ছাপা হয়েছে, তথ্যগুলো মোটের ওপর সে রকমই। যেমন—নকশা অনুমোদনের আগেই বিজিএমইএ ভবনটি নির্মাণ করা করেছে; হাতিরঝিল লেক উন্নয়ন প্রকল্পের ৫ দশমিক ২৩ কাঠা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; বুয়েটের সমীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভবন নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ অমান্য করে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়া, নির্মাণাধীন ভবনের নকশাবহির্ভূত অংশ ভেঙে ফেলার উদ্যোগ না নেওয়া বা এ বিষয়ে অঙ্গীকারনামা দাখিল না করা ইত্যাদি।
অবশ্য এসব বিষয় আমাদের এ লেখার আলোচ্য নয়। তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটি বাস্তবে কতটা দুরূহ এবং কী কী কারণে তা দুরূহ বলে দৃশ্যমান ও প্রতীয়মান হচ্ছে, তা ভেবে দেখা দরকার। নাম প্রকাশ না কারার শর্তে সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিজেএমইএ ভবনটি একটি “স্পর্শকাতর” ভবন। আইন লঙ্ঘন করে, লেকের অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত করে ভবনটি নির্মিত হয়েছে—এমন খবর প্রচারিত হলে বহির্বিশ্বে আমাদের তৈরি পোশাকশিল্প সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি হতে পারে; ফলে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’ নাগরিক সমাজের একজন বিশিষ্ট নেতা কথাচ্ছলে সেদিন বললেন, যে ভবনে দু-দুজন প্রধানমন্ত্রীর নামফলক রয়েছে, সেটির নির্মাণে নিয়মকানুন মানা হয়েছে কি না, এসব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা কে পছন্দ করবে?
রাজউক কর্তৃপক্ষ বেলার চাওয়া তথ্য সরবরাহ করতে দীর্ঘদিন গড়িমসি করেছে কি এসব কারণেই? গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ও কী নিষ্ক্রিয় থেকেছে একই কারণে? কিন্তু সরকার যখন জনগণের হাতে গোপনীয়তা ছিন্ন করার একটি আইনি হাতিয়ার তুলে দিয়েছে, তখন কি সব পক্ষেরই জানা থাকার কথা ছিল না যে, কোনোভাবেই বেলার চাওয়া তথ্যগুলো গোপন রাখা সম্ভব নয়? যদি বিজেএমইএ ভবনটি এক বিশেষ ব্যতিক্রমী বিষয়ও হয়ে থাকে, তবু তথ্য অধিকার আইন অনুসরণের যে ঢিলেঢালা প্রবণতা বেলার আবেদনের ক্ষেত্রে লক্ষ করা গেল, তা থেকে সংশয় জাগে: খোদ তথ্য কমিশনসহ আইনটি প্রয়োগের সমুদয় ব্যবস্থা দুর্বল বলে জনমনে প্রতিভাত না হয়।
মশিউল আলম: সাংবাদিক।
mashiul.alam@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.